মিলান কুন্দেরা আর নেই। আজ ৯৪ বছর বয়সে তার মৃত্যু হলো। আধুনিক সাহিত্যের নিন্দিত ও নন্দিত এই ঔপন্যাসিক তার এক ঝাঁক রঙিন চরিত্র পৃথিবীতে জাগিয়ে রেখে নিজে ঘুমাতে গেলেন।
প্রতিবছর নোবেল পুরস্কারের সময়ে তার নাম আসে সিরিয়াস পাঠক-লেখকদের আলাপ আলোচনায়, ‘কুন্দেরা কি বেঁচে আছেন?’ হ্যাঁ, তিনি বেঁচে ছিলেন, তবে তার নোবেল প্রাপ্তি তামাদি হয়ে গিয়েছিল; যেমন তামাদি হয়ে গিয়েছিল তলস্তয়ের।
তার ‘দি আনবিয়ারেবল লাইটনেস অফ বিইং’১৯৮৪ সালে রচিত। এই উপন্যাসে ১৯৬৮ সালে চেকোস্লোভাকিয়ায় সোভিয়েতের দখলদারিত্বের প্রেক্ষাপটে দুজন নারী, দুজন পুরুষ এবং একটি কুকুরের জীবন দেখতে পাই।
কেন্দ্রীয় চরিত্র টমাস, শল্য চিকিৎসক; তিনি সোভিয়েত কবলিত চেক সরকারের সমালোচনা করে পত্রিকায় নিবন্ধ লেখায় একের পর এক ঘটনা ঘটতে শুরু করে। ডাক্তারি ছেড়ে তার পেট চালাতে হয় বাড়ি বাড়ি গিয়ে জানালা মোছার কাজ করে। যিনি স্ত্রীকে নিজের বহুগামিতার কথা বলতেও ছিলেন অকপট।
মিলান কুন্দেরা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন, কিন্তু পার্টির সঙ্গে শিল্পীর স্বাধীনতা প্রশ্নে বারবার বিরোধ ঘটে। পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে প্যারিসে চলে আসেন। চেক নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়। যদিও অনেক পরে তাকে চেক নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু তিনি নিজেকে ফরাসি লেখক হিসাবে পরিচয় দিতেন। গত চল্লিশ বছর ধরে তিনি ফ্রান্সেই বসবাস করেছেন।
১৮৮৪ সালে ‘দি আনবিয়ারেবল লাইটনেস অফ বিইং’কুন্দেরাকে পরিচিত করায় ‘দার্শনিক লেখক’হিসাবে। ‘ইম্মর্টালিটি’, ‘আইডেন্টিটি’ও ‘ইগনোর্যান্স’ উপন্যাস তাকে দর্শনের দিকেই নিয়ে যায়।
উপন্যাস নিয়ে তিনি প্রচুর পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন, তার ‘স্লোনেস’ উপন্যাসের ধারণার সকল সীমাকে অতিক্রম করে গেছে। তার ডার্ক হিউমার এবং সিচুয়েশনাল কমেডি তো বিখ্যাতই। স্ট্যালিনকে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করার জন্যই তিনি বিখ্যাত।
তার মৃত্যুতে চেক প্রধানমন্ত্রী পিটার ফিয়ালা বলেছেন, ‘মিলান কুন্দেরা লেখক হিসেবে সব মহাদেশের সকল প্রজন্মের পাঠকদের কাছে পৌঁছেছিলেন।’
১৯২৯ সালের ১ এপ্রিল চেকস্লাভাকিয়ার ব্রানোতে জন্মগ্রহণ করেন মিলান কুন্দেরা। তার লেখা চল্লিশের অধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। অস্তিত্বের অসহনীয় লঘুতা ছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে: অমরত্ব, জীবন অন্য কোথাও, মস্করা, বিদায়ী ভোজসভা, হাসি ও বিস্মরণের বই ইত্যাদি।