ভারতের একতরফা সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার বিষয়টি ওয়াশিংটনের সামনে তুলতে ফেডারেল সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা। শনিবার (১০ মে) যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর পর, এই বিষয়টিতেও ট্রাম্প প্রশাসনের সাহায্য চাইছেন তারা। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন এ খবর জানিয়েছে।
পাকিস্তানের পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য জাওয়েদ লতিফ বলেন, ‘তাদের (পাকিস্তান সরকার) উচিত এই বিষয়ে অবিলম্বে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা, যাতে ২৪ এপ্রিল ভারতের অবৈধ একতরফা সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার নিশ্চিত করা যায়।’
ডন-কে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এখনই সঠিক সময় এই বিষয়টি অবিলম্বে উত্থাপন করার।’
১৯৬০ সালের এই চুক্তি নদীগুলোর পানিবণ্টন নিয়ন্ত্রণ করে। এই চুক্তির আওতায়, ভারত পূর্বাঞ্চলের রাভি, বেয়াস ও শতদু নদীর পানি ব্যবহার করতে পারে, যার কিছু অংশ পাকিস্তানে প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে পাকিস্তান পশ্চিমাঞ্চলের সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব নদীর পানি ব্যবহার করার অধিকার রাখে।
পাকিস্তানের সিন্ধু পানি বিষয়ক সাবেক কমিশনার সৈয়দ জামাত আলী শাহ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের হস্তক্ষেপ শুধু যুদ্ধবিরতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আমি মনে করি যুদ্ধবিরতি হলো প্রথম ধাপ। আর আমি নিশ্চিত যখন তারা (পাকিস্তান ও ভারত) মার্কিন মধ্যস্থতায় একসাথে বসবে, তখন পাকিস্তানকে এই বিষয়টি তুলতেই হবে।’
শাহ আরও বলেন, সরকারের উচিত যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করা যাতে তারা কাশ্মীরসহ পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান অন্যান্য সমস্যা সমাধানেও ভূমিকা রাখে।
যদি উল্লিখিত বিষয়গুলো সমাধানের দিকে অগ্রসর হয়, তবে পাকিস্তানের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে একটি গ্যারান্টি চাওয়া যাতে ভারত ভবিষ্যতে এটি লঙ্ঘন না করে।
এদিকে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ভারত সরকারের এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলেছে, কয়েক দিনের প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর শনিবার যুদ্ধবিরতির চুক্তি সত্ত্বেও পানিবণ্টন চুক্তি এখনও স্থগিত রয়েছে।
তবে পাঞ্জাব সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, পানিপ্রবাহে কোনও বাধা না থাকায় সব নদী স্বাভাবিক গতিতেই প্রবাহিত হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা শনিবার ডন-কে চেনাব নদীর বিষয়ে বলেন, ৫ মে ভারত তার বাঁধগুলো পূর্ণ করার জন্য নদীর প্রবাহ বন্ধ করার পর পানির গতি ৩১০০ কিউসেকে নেমে আসে। তবে পরদিন তা ছেড়ে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, পানি সম্পর্কিত তথ্য সাধারণত বর্ষা বা বন্যার সময় ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে ভাগাভাগি করা হয়। তারা (ভারত) এই সময়ে আমাদের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করছে না। কারণ সাধারণত তারা বর্ষা মৌসুম বা অন্য কোনও অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সিন্ধু চুক্তির অধীনে তথ্য দেয়। তবে যেহেতু চেনাব নদীর প্রবাহ বর্তমানে স্বাভাবিক, তাই আমরা কোনও দুশ্চিন্তায় নেই।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভারত তথ্য শেয়ার করবে।