X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

মলয় রায়চৌধুরী, ক্ষুধাকাতর স্রষ্টা

গৌতম গুহ রায়
১৬ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:৫২আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ২১:১৮

হাংরি প্রজন্মখ্যাত মলয় রায়চৌধুরী সম্পর্কে সমকালীন উৎপলকুমার বসু লিখেছিলেন– ‘গত চল্লিশ বছরে, বাংলা সাহিত্যের রণক্ষেত্রে যা যা ঘটছে, তা লিপিবদ্ধ করার যোগ্যতা বা ধৈর্য আমার নেই। তবে, সংক্ষেপে বলা যায় যে মলয় রায়চৌধুরী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়েই যুদ্ধে নেমেছিলেন। বাংলা আধুনিক কবিতার প্রসঙ্গটি নিয়ে যদি ভাবা যায়, তবে দেখব, জীবনানন্দই সেই অঞ্চলের প্রধান পুরুষ। তাঁকে পিছনে ফেলে এগিয়ে না গেলে পরবর্তী একটা নতুন যুগের পত্তন হওয়া সম্ভব ছিল না। মলয় রায়চৌধুরী ও তাঁর প্রজন্মের লেখকদের ওই পাঠশালাতেই হাতেখড়ি হয়েছিল। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাদের অন্য ধরনের পথসন্ধান শুরু হয়। বাংলা সাহিত্যের প্রধান ধারা একপ্রকার স্থিতাবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল। তার বাঁধ ভেঙে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।’ এই ‘বাঁধ ভাঙার’ উসকানিদাতা অবশেষে বিদায় নিলেন প্রত্যক্ষ রণক্ষেত্র থেকে, ৮৪ বছর পর্যন্ত ভীষণভাবে যুদ্ধে থাকা মানুষটি চলে গেলেন যখন বাংলা শারদ উৎসবে মাতোয়ারা।

গালগল্পের ভূমিকায় মলয় রায়চৌধুরী লিখেছিলেন– “...বেঁচে থেকে আমরা প্রত্যেকেই একটা ‘আখ্যান’ তৈরি করি আর এই আখ্যান হল ‘আমরা’। ...শেষ পর্যন্ত আমরা আত্মজীবনীমূলক আখ্যান হয়ে উঠি, যার সিঁড়ি বেয়ে, বেঁচে থাকার মাধ্যমে, জীবনের আকাশের কথা বলি। আমরা বাঁচার মাধ্যমে সময়ের খাতায় লিখে কেটে পড়ি...”। তিনি, মলয় রায়চৌধুরী ৮৪-তেও পূর্ণভাবে জীবন্ত থেকেই ‘কেটে পড়লেন’। বরাবর ছটফটে তারুণ্যের ঝান্ডা নিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বয়ানে নিজেকে গড়েছেন, ভেঙে চলেছেন। ক্রমাগত বিতর্ক ও বিরোধিতার হার্ডল পার হতে হতে এই ৮৪-তে এসে থেমে গেলেন, তিনি মলয় রায়চৌধুরী, বাংলা কবিতার চিরক্ষুধা কাতর স্রষ্টা। বেশ কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু তাঁর অজস্র অনুগামীর কেউই ভাবতে পারেননি তিনি সত্যিই শেষ বিদায় নিয়ে নেবেন, এই শারদ উৎসবের মাঝেই।

মলয় রায়চৌধুরী, জন্মেছিলেন পাটনা শহরে, ২৯ অক্টোবর, ১৯৩৯; তিনি সুতানুটি-গোবিন্দপুর কলিকাতা-খ্যাত সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের উত্তরপাড়া শাখার সন্তান। বাবা রঞ্জিত রায়চৌধুরী (১৯০৯-১৯৯১) ছিলেন চিত্রশিল্পী এবং মা অমিতা (১৯১৬-১৯৮২) ছিলেন পাণিহাটিস্থিত নীলামবাটির কিশোরীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (রোনাল্ড রস-এর সহায়ক) জ্যেষ্ঠ কন্যা। কলকাতার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিষদ কর্তৃক সংরক্ষিত সংগ্রহশালার (জাদুঘর) তথ্য অনুযায়ী মলয় রায়চৌধুরীর পিতামহ লক্ষ্মীনারায়ণ রায়চৌধুরী ছিলেন ভারতবর্ষের প্রথম ভ্রাম্যমাণ আলোকচিত্রী। মলয় রায়চৌধুরীর ভাই সমীর রায়চৌধুরী বাংলা সাহিত্যের একজন বিতর্কিত কবি।

পাটনার সেইন্ট জোসেফ কনভেন্টে প্রাথমিক এবং রামমোহন রায় সেমিনারিতে ম্যাট্রিকুলেশনের পর অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন মলয় রায়চৌধুরী। গ্রামীণ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ দলে প্রশিক্ষণের পর প্রথমে রিজার্ভ ব্যাংক ও তারপর এআরডিসি এবং নাবার্ডে গ্রামীণ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞের উচ্চপদে ভারতের বিভিন্ন শহরে ১৯৯৭ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ‘যুগশঙ্খ’ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের রিডার ডক্টর শঙ্কর ভট্টাচার্য বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন যে, মলয় রায়চৌধুরী সমগ্র জীবন ভারতের চাষি, তাঁতি, জেলে ও হস্তশিল্পীদের মাঝে কাটিয়ে প্রভূত অভিজ্ঞতা লাভ করেন, এবং তা তার সাহিত্যকর্মে গভীর প্রভাব ফেলেছে। কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক এবং সর্বোপরি ১৯৬০-এর দশকের হাংরি আন্দোলন—হাংরিয়ালিজম—তথা বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার জনক হিসাব তাঁকে চিহ্নিত করা হয়। 

১৯৬০ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের ছাত্র, বিষয় ছিল অর্থনীতি। এই সময়েই তাঁর মাথায় সাহিত্যের ভিন্নপথে পদচারণার নেশা কায়েম হয়। এরপর কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ নিবিড়, হাংরি  ইশতেহার প্রকাশ। সেই ষাটের দশক থেকেই ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন আধুনিক বাংলা কবিতার ইতিহাসের এই বিতর্কিত ব্যক্তিটি। গতানুগতিক চিন্তাধারা সচেতনভাবে বর্জনের মধ্যদিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যে উত্তরাধুনিকতাবাদ চর্চা এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। এই সম্পর্কে রবীন্দ্র গুহর বয়ান– ‘কবিতায় জীবনের কোনো অর্থ বার করার বিরুদ্ধে আমরা কয়েকজন মিলে একটা আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। মলয় তার নাটের গুরু ছিল। মলয় বলেছিল মানুষ, ঈশ্বর, গণতন্ত্র এবং বিজ্ঞান পরাজিত। এখন, এই সময়, ক্ষুধার লালনকর্তা একমাত্র কবিতা। অল্পদিনের মধ্যেই মলয়ের সঙ্গে আমার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। আমি চিৎকার করে ডাকলাম– ম-ল-য়। কেউ দাঁড়ালো না। ফিরে তাকাল না। ঝিম হাওয়া অসহ্য আত্মার ভিতর গড়াল। থামল। তবু, কোনো উত্তর নেই। চতুর্দিক ঘিরে আলো-আলো আধো অন্ধকারে ক্রমাগত ভাষাবদলের খেলা। বুকের পাশ দিয়ে অনেক দালাল, ফড়ে, ফেউ পুলিশ চলে গেল। উপেক্ষা উপহাস করে গেল। উঁকিঝুঁকি দিয়ে যুবতী রমণীরা সরে গেল। হঠাৎ একটু দূরেই মলয়। এক অন্ধ ভিকিরির হাত ধরে হাঁটছে। পায়ের নিচে পথ। হ্যাঁ, রাস্তা নয়, আমি পথই বলব। এই পথই শ্রেষ্ঠ এবং শেষতম কবিতা।’

এই কবিতার প্রথাভাঙা পথেই বাংলা সাহিত্যে যার প্রবেশ ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’-এর মতো। মাত্র ২৪ বছর বয়সে লেখা একটি ৯০ লাইনের কবিতা দিয়েই তিনি বাংলা সাহিত্যে নতুন ও বাঁকবদলের ভিন্নতার ইতিহাস রচনা করেছেন। আর তিনটা দিন পরেই আরেকটা জন্মদিন আসত, তার আগেই চলে গেলেন।  আমৃত্যু নানা মাধ্যমে প্রবলভাবে থাকা মলয় রায়চৌধুরীর এই শারীরিক মৃত্যু যেন হঠাৎ বিদ্যুৎহীন হয়ে গেলো সাহিত্যের ময়দান।

১৯৬৪ সালে এই ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতার জন্য রাষ্ট্রবিরোধী মামলায় গ্রেফতার ও কারাবরণ করেন। এই কবিতার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ ওঠে। আদালতে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভারতীয় দণ্ড বিধির ১২০বি (রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র), ২৯২ (সাহিত্যে অশ্লীলতা) এবং ২৯৪ (তরুণদের বিপথগামী করা) ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। ১৯৬৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর হাংরি আন্দোলনকারী ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং লেখালেখির কারণে স্বাধীন ভারতের সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে উৎপলকুমার বসুকে অধ্যাপকের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। প্রদীপ চৌধুরীকে বিশ্বভারতী থেকে বহিষ্কৃত করা হয়। সমীর রায়চৌধুরীকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। ৩৫ মাস ধরে এই মামলার শুনানি চলে, তিনি কারান্তরালে থাকেন। সেই সময় তার অনেক স্বজন তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেন, অনেকে পক্ষে। ১৯৬৭-তে তিনি উচ্চ আদালতে অভিযোগ থেকে মুক্ত হন। এরপর কিছুদিন তিনি স্বেচ্ছায় সাহিত্য জগৎ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। আবার সম্পূর্ণরূপে লেখালেখিতে ফিরে আসেন। এবং যথাপূর্ব সেই তীব্র ‘বৈদ্যুতিন’ প্রতিক্রিয়ায় মাতিয়ে দেন এই চিরজাগরুক চিরতরুণ এবং আদ্যন্ত প্রতিবাদী এক কবি। ডাডা আন্দোলনের একজন প্রধান সাহিত্যিক ফ্রান্সিস পিকাবিয়ারকে বলা হয়– aristocrat of disorder, মলয় রায়চৌধুরীকে সেই অভিধায় অভিহিত করে যায়। তিনি লিখেছিলেন– ‘কবিতা এখন জীবনের বৈপরীত্যে আত্মস্থ। সে আর জীবনের সামঞ্জস্যকারক নয়। অতিপ্রজ অন্ধ বল্মীক নয়, নিরলস যুক্তি-গ্রন্থন নয়। এখন, এই সময়ে অনিবার্য গভীরতার সন্ত্রস্তদৃক ক্ষুধায় মানবিক প্রয়োজন এমনভাবে আবির্ভূত যে, জীবনের কোনো অর্থ বের করার প্রয়োজন শেষ। এখন প্রয়োজন অনর্থ বের করা, প্রয়োজন মেরু বিপর্যয়, প্রয়োজন নৈরাত্মসিদ্ধি। প্রাগুক্ত ক্ষুধা কেবল পৃথিবী বিরোধিতার নয়, তা মানবিক দৈহিক এবং শারীরিক। এ ক্ষুধার একমাত্র লালনকর্তা কবিতা, কারণ কবিতা ব্যতীত আর কী আছে জীবনে।’

মলয় রায়চৌধুরীর ঠাকুরদা লক্ষ্মীনারায়ণ রায়চৌধুরী লাহোরে গিয়ে সেখানে মিউজিয়ামের কিউরেটার জন লকউড ক্লিপার্ডের কাছে ছবি তোলা ও ছবি আঁকার তালিম নেন। উল্লেখ থাকে যে, এই লকউড ছিলেন বিখ্যাত রুডিয়ার্ড কিপলিং-এর বাবা। মলয় রায়চৌধুরীর মা ছিলেন পাণিহাটীর নীলামবাটির কিশোরীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জ্যেষ্ঠ কন্যা। এই কিশোরীমোহন ছিলেন নোবেলজয়ী ও ম্যালেরিয়ার প্রতিশোধক আবিষ্কর্তা রোনাল্ড রসের সহায়ক। ওদিকে লক্ষ্মীনারায়ণ ও তার পুত্র রণজিৎ রায়চৌধুরী পেশা হিসেবে নেন বিভিন্ন রাজা মহারাজার পোট্রেট আঁকার কাজ। এই কাজের সূত্রেই দ্বারভাঙার মহারাজার পোট্রেট আঁকতে পাটনা আসেন। এখানেই লক্ষ্মীনারায়নের মৃত্যু হয়। এরপর পাটনা শহরেই রঞ্জিত রায়চৌধুরী একটি ফোটোগ্রাফির দোকান খোলেন ও ছবির কাজ করতে থাকেন। পাটনা মিউজিয়ামের সঙ্গেও জড়িয়ে থাকেন। এখানেই পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মলয় রায়চৌধুরী অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন। মিউজিয়ামের অন্দরে বেড়ে ওঠা মন নতুনত্বের পথ খুঁজে নিতে চাইছিল ছাত্রকাল থেকেই।

একবার, গদ্যের তৎকালীন সমস্ত রেখাচিত্র ভেঙে দিয়ে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন তাঁরা, হাংরি জেনারেশন। বাংলা সাহিত্যে স্থিতাবস্থা ভাঙার আওয়াজ তুলে, ইশতেহার প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের যে একমাত্র আন্দোলন হয়েছে, তার নাম হাংরি জেনারেশন। ১৯৬১ সালের নভেম্বরে পাটনা শহর থেকে একটি ইশতেহার প্রকাশের মাধ্যমে হাংরি আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিলেন সমীর রায়চৌধুরী, মলয় রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং হারাধন ধাড়া ওরফে দেবী রায়। শক্তি, শৈলেশ্বর, সমীরের পর কদিন আগে চলে গেলেন দেবী রায়। এবার মলয় রায়চৌধুরী। ‘হাংরি প্রজন্মকে’ বিদায় জানাচ্ছি আমরা।

ইশতেহার প্রকাশের পর হাংরি আন্দোলন ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠানবিরোধী সেই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল মূলত মলয় রায়চৌধুরীর হাত ধরেই। জিওফ্রে চসারের একটি লেখা থেকে হাংরি শব্দটিকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। মলয়ের দাদা সমীর রায়চৌধুরী, শক্তি, দেবী রায় ছাড়া পরে এই আন্দোলনে যুক্ত হন বিনয় মজুমদার, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, এরপর সুভাষ ঘোষ, ফাল্গুনী রায়, অরুণেশ প্রমুখ।

ক্ষুধার্ত প্রজন্মের কবিতা বাংলা কবিতার দিকচিহ্ন শুধু নয় এক উজ্জ্বল স্তম্ভ। প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার আওয়াজ তুলে এঁরাই প্রথম বাংলা সংস্কৃতিতে বিকল্প এক রাস্তার সন্ধান দিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠান বিরোধী বিশ্বাস হল এটাই যা সমাজের প্রচলিত সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক নীতির বিরোধিতা করে এবং সামষ্টিক মানুষের শুভবোধের কথা বলে। এই আওয়াজ বহু পরে অন্যান্য দেশে প্রতিষ্ঠানবিরোধী আন্দোলন চোখে পড়ে। যেমন প্যারিসের ছাত্র আন্দোলন।

১৯৬১ সালে বাংলা সাহিত্যে হাংরি আন্দোলন শুরু হয়। বলা যায় বাংলা ভাষার সবচেয়ে প্রভাবশালী ও সমালোচিত এই হাংরি আন্দোলন, যার প্রধান স্থপতি অবশ্যই মলয় রায়চৌধুরী। ১৯৬১-তে প্রথম লিফলেট প্রকাশ করা হয়, এই আন্দোলনের ‘ক্রিয়েটার’ মলয় রায়চৌধুরীই ১৯৬৪ সালে এর পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৫৪ সালের হাংরি বুলেটিনে প্রকাশিত তাঁর ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ সংক্রান্ত মামলায় সুভাষ ঘোষ ও শৈলেশ্বর ঘোষ মুচলেকা দেওয়ায় বা অনেক সঙ্গী এই আন্দোলনের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক অস্বীকার করায় মলয় এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন। মলয় রায়চৌধুরী তাঁর ‘হাংরি প্রতিসন্দর্ভ’ প্রবন্ধে লিখেছিলেন ‘সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে ব্যক্তিমালিকানার উদ্ভব ও বিকাশ ইওরোপিয় আধিবিদ্যাগত মনন বিশ্বের ফসল।’ তিনি মনে করতেন মঙ্গলকাব্যের গুরুত্বের কথা, তার মতে প্রাক ঔপনিবেশিক কালখণ্ডে এই মাইক্রোপরিসরগুলো ছিল গুরুত্বপূর্ণ, তার রচয়িতা নন। রচনাগুলো দিলদরেজে বিলি করে দেওয়া হতো। যে প্রক্রিয়াটি হাংরি আন্দোলনের শুরুর দিকে ফালি কাগজে প্রকাশিত রচনা প্রক্রিয়াটি হাংরি আন্দোলনকে দিয়েছিল প্রাক-উপনিবেশ সনাতন ভারতীয় নশ্বরতা বোধের গর্ব।

ষাটের সূচনায় ঘোষিত এই ‘হাংরি জেনারেশন’ আন্দোলনে পাশ্চাত্য প্রভাব ছিল স্পষ্ট। এর পেছনে ইউরোপের ডাডা আন্দোলনের ছায়া প্রকট। ১৯১৪ থেকে ১৯২১, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আবহে ইউরোপে ত্রস্তা জারা, আর্তুর ক্রাভা, জ্যাক ভাশে, মার্সেল ডুশা, ফান্সিস পিকাবিয়া, ফিলিপ সোপা প্রমুখের তীব্র আঘাতমুখী আন্দোলনের ফলে ডাডা আন্দোলনের অভিঘাত ইউরোপের সাহিত্য সংস্কৃতিতে প্রবলভাবে ক্রিয়াশীল হয়। ষাটের এই ‘হাংরি’রা বাংলার সাহিত্যেও তেমন আলোড়ন তুলতে চেয়েছিলেন। ডাডা আন্দোলনের ইশতেহারে ১৯১৮-তে ত্রিস্তা জারা লিখেছিলেন– ALL Pictorial or Plastic art is useless; art should be a monster which Casts servile minds into terror’. মলয় রায়চৌধুরী হাংরি ইশতেহারে লিখেছিলেন, ‘শিল্পের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কবিতা সৃষ্টির প্রথম শর্ত।’ আর এক হাংরিয়ান শৈলেশ্বর ঘোষ লিখেছিলেন, ‘সমস্ত ভণ্ডামীর চেহারা মেলে ধরা; সভ্যতার নোনা পলেস্তারা মুখ থেকে তুলে ফেলা, যা কিছু গড়ে তোলা হয়েছে তাকে সন্দেহ করা’ ছিল হাংরি জেনারেশনের অভিপ্রায়। “ডাডাবাদ যেমন প্রচলিত সাহিত্যনীতি ও শিল্পবোধকে নির্মম আক্রমণ করেছিল, অসামাজিক ও দৃষ্টি-আকর্ষক কাজের মধ্য দিয়ে সর্বব্যাপী বিবমিষা, বিরক্তি, নির্বেদ ও ক্রোধকে দিতে চাইছিল তাত্ত্বিক বুনিয়াদ– তেমনি হাংরি জেনারেশনও স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতবর্ষের চূড়ান্ত স্বপ্নভঙ্গ-জনিত মূল্যবোধের বিপর্যয়, আর্থসামাজিক কাঠামোর ভাঙনজনিত অভিজ্ঞতার ফলে ব্যঙ্গ কষায় শ্লেষকে বিস্ফোরক বারুদ হিসাবে ব্যবহার করে মুখোশজীবী অপসভ্যতার মৌল স্তম্ভগুলি উড়িয়ে দিতে চাইল। সমালোচক ডাডা-আন্দোলনে যেমন ‘Militant cynicism’ এবং nihilist humor-এর অভিব্যক্তি দেখেছেন এবং ‘Maintenant’, ‘Literature’, ‘Dada’ প্রভৃতি পত্রপত্রিকাকে যেমন প্রচলিত অর্থে সাহিত্যসাময়িকী না-বলে সমাজের বিরুদ্ধে জেহাদ পরিচালনার শানিত আয়ুধ হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন তেমনি ‘হাংরি জেনারেশন’-এর বুলেটিন, ক্ষুধার্ত, প্রতিদ্বন্দ্বী, জেব্রা, স্বকাল, অসুখ, রোবট, ফুঁ, জিরাফ ইত্যাদির মধ্যদিয়ে সত্তরের সূচনা পর্যন্ত... অব্যাহত বিদ্রোহী মনন।” (তপোধীর ভট্টাচার্য/কবিতার রূপান্তর)। শৈলেশ্বর ঘোষ, যিনি পরবর্তীকালে মলয়ের বিপ্রতীপে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি একটা মন্তব্য করেছিলেন– ‘জীবন যদি আনন্দশক্তিতে রূপান্তরিত না হয় তবে তা ধ্বংসশক্তিতে রূপান্তরিত হবেই।’ ইউরোপের বিট কবিদের যাপন শৈলিকে অনুকরণ করতে গিয়ে এই সম্ভাবনাময় সাহিত্য আন্দোলন ক্রমশ ধ্বংস শক্তিতেই রূপান্তরিত হয়েছিল। এর দায় মলয় অস্বীকার করতে পারেন না। ক্ষৎকাতরতার আস্ফালনেই শেষ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হলো বাংলা সাহিত্যের এক প্রবল জোয়ার। লক্ষ্যহীন আদর্শহীন নৈরাজ্যবাদের চোরাবালিতে তলিয়ে গেল বিদ্রোহের যাবতীয় আয়োজন।

অনেকেই গদ্যকার মলয়কে কবিতার মলয় থেকে এগিয়ে রাখেন। আমি কিছুটা দ্বিমত রাখছি এখানে, কবিতায় তিনি এক বিরাট কাজ করে গেছেন যা এই ভাষার ইতিহাসে বাঁক পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। কবিতার আধুনিকতাবাদী নির্মাণের চাকচিক্য প্রায়ই নন্দককে আচ্ছন্ন করে এটা মেনেও বলা যায় মলয়ের কবিতায় ভাষা স্বপ্রভ ও আত্মভাষ্যকার হয়ে উঠেছে। তিনি অস্বীকার করে নতুন পথ দেখিয়েছিলেন যেখানে বাচক ও বাচনের আধুনিকতাবাদী ধারণা পুরোপুরি বিনির্মিত হয়েছে। তিনি দেখিয়েছিলেন পঙক্তিতে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দই হতে পারে স্বতন্ত্র ভাষাবিশ্বের ইঙ্গিতবাহী, নিরবচ্ছিন্ন বহুরৈখিকতায় তার উৎসার। নতুন করে কবিতায় ফিরে এসেও সেই কাজ করে যেতে চেয়েছেন, কবিতা বহুবাচনিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপনের কাজ: “তাকিয়ে পাথর করে দেবার সৌন্দর্যবোধ যে আমার ছিল না/তা কাজরি মাছের জাতীয় সংগীতের ছোট-ছোট ঢেউ নিয়ে বানানো/অচেনা টগবগে মেয়েদের দেখে ভাল্লাগে এমন উড়ূ-উড়ূ দুপুরে/আকাশের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে লতিয়ে ওঠা গাছের ডগায় টের পেলুম/যে আমার শহুরে চাকরানির দোআঁসলা ইশারায় আবডালে বলেছিল/ডাকটিকিট ছাড়া জীবনে আর কিছু চাটা হয়নি নাকি গো দাদাবাবু/পাঁকে হাঁটতে পায়ের আবার কষ্ট কীসের? হ্যাপা তো সব মাথার।...” ( কবিতা সাহেব/১ জুলাই ২০০১)। ‘আত্মধ্বংসের সহস্রাব্দ’ নাম কবিতার প্রতিবেদনে মলয় রায়চৌধুরী ভাষার প্রথাগত সীমানা বিনির্মাণে তৎপর বয়ান সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদকে প্রত্যাখ্যান করছে বলে উচ্চকোটি ও নিম্নবর্গীয় অণুবিশ্বের ব্যবধান সংকুচিত করতে চেয়েছে: “আমরা দুই বুড়িবুড়ি অন্ধকার মুড়ি দিয়ে কাঁপছি একটায়। এক ঝিলিক আগে ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে নতুন সহস্রাব্দ শুরু হল নাকি? বাইরে আতস আলো আর উদাসীন উল্লাসে উন্মাদ কলকাতা। ঘুটঘুটে ঠান্ডা চিরে ছিটকে আসছে মাংস গন্ধ র‍্যালা প্রগতি উন্নতি উত্তরণের ছাদ পেটানো গর্জন।

রেনেস্যা রেফর্মেশান এনলাইটেন্মেন্ট শিল্প বিপ্লবের অক্ষর উটগুলো বালির ঝড়ে চাপা পড়ে গেছে। খুন করা ছাড়া মতার্দশ প্রতিষ্ঠার আর কোনো আলো নেই। টাটকা রক্ত আর রক্ত পচা লাশ আর কবর খোঁড়া স্যাঁতস্যাঁতে কঙ্কাল চটা ওঠে গেছে সার্বভৌম রাষ্ট্রে। কাগুজে টাকার উড়ন্ত জুয়ায় ক্ষতবিক্ষত দেশ থেকে ভিন্ন দেশে পালিয়েছে বিদ্যুৎগতি মল। বৈদ্যুতিন মাকড়জালে পিণ্ডি চটকে ঝুলছে স্থানকালের রঙিন ঘাঘরা।”

১৯৬৩-তে কৃত্তিবাস থেকে বের হয় তাঁর প্রথম কবিতার বই– ‘শয়তানের মুখ’। তবে কবিতার বইয়ের আগে একটি প্রবন্ধের বই বেরিয়েছিল, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ‘মার্কসবাদের উত্তরাধিকার’। এরপর ১৯৬৫-তে দীর্ঘ কবিতা ‘জখম’, প্রকাশিত হয় জাব্রা প্রকাশনী থেকে। এটি আমার মতে মলয়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা। এর অনেকদিন পরে ১৯৮৬-তে মহাদিগন্ত থেকে বের হয় তাঁর ‘কবিতা সংকলন’। ২০০৩-এ কবিতা ক্যাম্পাস থেকে ‘কৌণপের লুচিমাংস’। মহাদিগন্ত থেকে প্রকাশিত মলয় রায়চৌধুরীর ‘মেধার বাতানুকুল ঘুঙুর’ বাংলা কবিতার এক উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। ২০১০ সালে প্রকাশিত ‘মাথা কেটে পাঠাচ্ছি, যত্ন করে রেখো’তে অহেতুক স্টান্টের অভিযোগ ফেলে দেওয়া যায় না। সব নিয়ে মলয় অনন্য ও দুর্বিনীত বিদ্যুৎ প্রবাহ। 

মলয় রায়চৌধুরী হাংরিয়ালিজম আন্দোলনের সময় তিনটি নাটক লিখেছিলেন : ইলট , নাপুংপুং এবং হিবাকুশা , যাকে থিয়েটার অব দ্য অ্যাবসার্ড অ্যান্ড ট্রান্সহিউম্যানিজমের একটি ম্যাশ-আপ বলে মনে করা হয়। কলকাতা থেকে মুম্বাইতে স্থানান্তরিত হওয়ার পর তিনি ম্যাজিক রিয়ালিজমের দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং লাবিয়ার মাকদি, চশোমরাঙ্গর লোচা, থেকে শুতুরমুর্গ, জঙ্গল রোমিও, নেক্রোপুরুষ এবং নরোমাংশোকধোকার হালনাগড়ের মতো উপন্যাস লেখেন।

২০১৪ সালে সমীর রায়চৌধুরী ‘রাহুকেতু’  শিরোনামে তার স্বতন্ত্র শৈলীতে তার আত্মজীবনী লিখেছিলেন।

মলয় রায়চৌধুীর রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য সাহিত্যের ক্রমশ স্থবির হয়ে আসা ধারা অনুশাসনের বিরুদ্ধাচারণ মলয় রায়চৌধুীর রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য সাহিত্যের ক্রমশ স্থবির হয়ে আসা ধারা অনুশাসনের বিরুদ্ধাচারণ। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৬০ এর বেশি। প্রবন্ধসহ সবমিলিয়ে প্রায় দুইশ লেখা তিনি লিখেছেন। ১০টি কাব্যগ্রন্থ, ১০টি উপন্যাস, দুটি ডিটেকটিভ উপন্যাস, একটি ইরোটিক নভেলা, ১২টি সমালোচনা গ্রন্থ, ৪টি জীবনী এবং বহু অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে- শয়তানের মুখ, জখম, ডুব জলে যেটুকু প্রশ্বাস, নামগন্ধ, চিৎকার সমগ্র, কৌণপের লুচিমাংস, মাথা কেটে পাঠাচ্ছি যত্ন করে রেখো, বাউল-কবিতা সিরিজ ডোমনি, অ্যালেন গিন্সবার্গের হাউল ও ক্যাডিশ কাব্য-গ্রন্থের অনুবাদ। তিনি বিট নারী কবিদের রচনা অজস্র অনুবাদ করেছেন, পরাবাস্তব কবিদের অনুবাদ করেছেন এবং জাঁ জেনের সমস্ত কবিতা অনুবাদ করেছেন। তিনি জাঁ আর্তুর র‌্যাঁবোর ‘নরকে এক ঋতু’ এবং ‘ইল্যুমুনেশান্স’ অনুবাদ করেছেন। বুদ্ধদেব বসুর পর তিনিই বোদলেয়ারের সমগ্র কবিতা অনুবাদ করেছেন। বিদেশি কবি ওকতাভিও পাজ, আরনেস্তো কার্দেনাল, অ্যালেন গিন্সবার্গ, ডেইজি অ্যালডান প্রমুখের সঙ্গে মলয় রায়চৌধুরীর প্রত্যক্ষ দেখাসাক্ষাৎ ও সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। পেঙ্গুইন র‌্যাণ্ডাম হাউস থেকে তাঁকে নিয়ে 'দি হাংরিয়ালিস্টস নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, যা লিখেছেন মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য চৌধুরী। তাঁর কবিতা নিয়ে পিএইচডি করেছেন হিডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্যানিয়েলা ক্যাপেলো, আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিষ্ণুচন্দ্র দে এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদয়শঙ্কর বর্মা।

২০০৩ সালে তাঁর অনুবাদ গ্রন্থের জন্য তাঁকে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি রাষ্ট্র দ্বারা প্রদত্ত সেই পুরস্কার গ্রহণে অসম্মতি জানান। হিন্দি কবি ধরমবীর ভারতীর ‘সূরজ কা সাতওয়ান ঘোরা’ অনুবাদ করে এই স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তিনি।

মলয় রায়চৌধুরী লিখেছেন- “কী হয় কবিতা লিখে? এই প্রশ্ন মাঝেমাঝে আমাদের বিভ্রান্ত করে। কিন্তু এ কথা সত্য যে কবিতার চেয়ে ধারালো অস্ত্র পৃথিবীতে আর কিছু নেই।” হাংরি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে তা যেমন প্রমাণিত হয়েছে। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন শাসকবিরোধী অবস্থানে কবিদের নেমে আসা আক্রমণ এই সত্যকেই প্রমাণ করে। হাংরি আন্দোলনের কবিদের দলটিকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, কোমরে দড়ি বেঁধে চোর-ডাকাতের সঙ্গে পথে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, লকাপে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল এবং মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে পঁয়ত্রিশ মাসব্যাপী মামলা চালানো হয়েছিল। এই মামলায় এগারোজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল এবং গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ছয় জন ; কিন্তু সবাইকে ছেড়ে দিয়ে কেবল মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করে সরকার। শুধু কবিতার জন্য যদি এত অত্যাচার নেমে আসে তাহলে বোঝা যায় কবিতার শক্তিমত্তা। মলয় রায়চৌধুরীর কবিতার অন্তর্বয়ানে উচ্চারিত হয় ‘শস্যের শাঁসের হেঁসেলে ঢুকে-থাকা পোকার অলস আরামের খোঁজে ছুটাছুটি করা হল না’। এ আক্ষেপ নয়, একঘেয়ে আর কলাকৈবল্যের শিল্প-সাহিত্য চর্চার লীন বাংলা সাহিত্যে মলয় তার ভিন্নতা নতুন চিহ্নায়ণ ঘটিয়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিক বাংলা সাহিত্যে এই বৈদ্যুতিক স্পার্ক কোনোদিনই সহ্য করতে পারেনি। মরমি আর শ্লোগানভর্তি, ছিঁচকাঁদুনে আর মাতমকারী বাংলা সাহিত্যের বলয়ে মলয় ছিলেন দীর্ঘস্থায়ী প্রবল ঝঞ্ঝা। আজ মলয় শূন্য ভাষাপৃথিবী আর এক নিঃস্বতার ধূসরতায় চলে গেলো। যেখানে তীব্র বৈদ্যুতিক আঘাত মৃতপ্রায়ের দেহে প্রাণ সঞ্চার ঘটাবে না।

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
জোড়া আঘাতে হায়দরাবাদকে গুটিয়ে চেন্নাইয়ের জয় রাঙালেন মোস্তাফিজ
জোড়া আঘাতে হায়দরাবাদকে গুটিয়ে চেন্নাইয়ের জয় রাঙালেন মোস্তাফিজ
দিনাজপুরে ইউপি নির্বাচনে সংঘর্ষ, পুলিশের গুলিতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর চাচা নিহত
দিনাজপুরে ইউপি নির্বাচনে সংঘর্ষ, পুলিশের গুলিতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর চাচা নিহত
বাংলাদেশের ব্যাটারদের কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন রাবেয়া
বাংলাদেশের ব্যাটারদের কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন রাবেয়া
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ