X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪

বইমেলায় হাঁটতে গেলে হোঁচট খেতে হয় : ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ

সাহিত্য ডেস্ক
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:৪৯আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:৩৪

প্রশ্ন: প্রতি বছর ‘নিষেধাজ্ঞা’, ‘ভাইরাল’ এর মতো বিষয়গুলোর জন্য বইমেলা তার মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে যাচ্ছে বলে মনে করেন?

ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ: না, নিষেধাজ্ঞা কিংবা ভাইরালের মতো বিষয়গুলোর কারণে বইমেলার মূল উদ্দেশ্য বা চেতনা নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছি না। বইমেলার মতো বড় একটা আয়োজনের জন্য কিছু নিয়ম-নীতি ও শৃঙ্খলাবোধ তো রাখতেই হবে, তা না হলে এতবড় একটা ইভেন্ট আপনি সামলাবেন কী করে? বাংলা একাডেমি যদি এই কারণে কোনো উদ্যোগ নেয় কিংবা নিষেধাজ্ঞা দেয়, সেটাকে খারাপভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে দেখার বিষয় হলো, যে সিদ্ধান্তই মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে সেটি তারা ন্যায্যতার ভিত্তিতে নিচ্ছে, নাকি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিরূপ মনোভাব থেকে নিচ্ছে? এর পাশাপাশি মেলার কিছু বিষয় নিয়ে গণ-আগ্রহ তৈরি হওয়া তো ভালো। মাসব্যাপী একটা বড় আয়োজন করবেন আর তা নিয়ে কিংবা তার মধ্যে জনগণের বিপুল আগ্রহ তৈরির মতো কোনো বিষয় বা ব্যাপার থাকবে না, তাহলে তো আর ওই আয়োজনের জনমনে কোনো প্রভাবই থাকবে না। অতএব যা হচ্ছে ভালোই হচ্ছে, শুধু মাত্রা না ছাড়ালেই হলো।


প্রশ্ন: বইমেলার এবড়োখেবড়ো মাঠ, স্টল খোঁজার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা না থাকা, ধুলোবালি এমনকি মুক্তমঞ্চে গাঁজা সেবনে মতো অভিযোগগুলো নিয়ে কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন?  এসব দায়িত্ব কার বা অবহেলা করছে কারা?  প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংঘবদ্ধ কোনো প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

উত্তর: খুবই সত্যি কথা যে এবার বইমেলায় হাঁটতে গেলে হোঁচট খেতে হয়। বরাবর বইমেলায় কাজ থাকতো ইভেন্ট কোম্পানির হাতে। এবার নাকি বাংলা একাডেমি নিজেই তা করেছে। নিশ্চয়ই তারা ভালোর জন্যই পুরো আয়োজনের দায় নিজেরাই নিয়েছিল, কিন্তু ভালো হলো কই? অন্য বছরের চেয়ে তো খারাপ হলো। মেলার স্টল বিন্যাস, মাঠের ব্যবস্থাপনা খুব বাজে। বেশ কিছু স্টল ফাঁকা পড়ে আছে। উদ্যানের মাঠে এমন কিছু প্রতিষ্ঠানকে স্টল দেওয়া হয়েছে যারা মুখ্যত প্রকাশনা নয়।
মেলায় ধূমপানের জন্য আলাদা একটা কর্ণার থাকলে কী অসুবিধা? ওটা রাখলেই তো হয়। এবার মেলায় খাবারের স্টলগুলো যেভাবে একপাশে স্থাপন করা হয়েছে সেটা বেশ ভালো।


প্রশ্ন: পাঠকের চেয়ে দর্শনার্থী বেশি, বই বিক্রি হয় না— এসব কথা শোনা যাচ্ছে প্রকাশনা সংস্থাগুলো থেকে। এমনটা কেন হচ্ছে? বই প্রকাশের ‘মান’ নিয়ে সমস্যা নাকি সমস্যা অন্য কোথাও?

উত্তর: বই বিক্রি হওয়ার জন্য বইমুখী সংস্কৃতি থাকতে হবে তো। সারা দুনিয়ার বেশিরভাগ মানুষই তো বইবিমুখ। আমাদের দুনিয়ার প্রভাবশালী সব ব্যবস্থাই চায়, অধিকাংশ মানুষ বইবিমুখ থাকুক, জ্ঞানবিমুখ থাকুক, মত্ত থাকুক। তো যেসব মানুষ মেলায় ঘুরতে আসে তাদের ঘুরতেই আসতে দিন। বই না কিনুক, অন্তত ঘুরে ঘুরে বইয়ের গন্ধ নিয়ে যাক। সেটাও যদি তাদের ভালো লাগে, তাই করুক। ব্যাপক অর্থে বইমেলা তো শুধু বই বেচাকেনার ব্যাপার নয়।
বইমেলা থেকে ঢাকার ভেতরে ও বাইরের আশপাশের এলাকাগুলোতে যাতায়াতের জন্য বিআরটিসির আলাদা বাসের ব্যবস্থা করে দিন। তারপর বইমেলায় ঢোকার জন্য সর্বনিম্ন একটা প্রবেশ ফি-এর ব্যবস্থা করুন। যে টাকাটা আসবে তা দিয়ে পরের বছর বইমেলার প্রচার ও ব্যবস্থাপনা আরো ভালো করুন। পুরনো টিনের ছাউনি আর চারটা বাঁশ পুতে প্রকাশকদের কাছ থেকে যে ফি-টা নেওয়া হচ্ছে, এটা তো বাড়াবাড়ি। আট-দশফিটের একটা স্টলের জন্য প্রকাশককে ৫০ থেকে এক লাখ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এটা তো তাদের জন্য একটা বাড়তি চাপ। বইমেলাকে তো বাণিজ্যমেলার আদলে দেখলে হবে না।
প্রকাশকদের বিচিত্র বিষয়ের বইয়ের ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। বইমেলায় তো শুধু কবিতা আর গল্প। এতো গল্প আর কবিতা দিয়ে আমরা কী করব?


প্রশ্ন: শুনছি আগামীবছর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা হবে না, এক্ষেত্রে স্থান বিবেচনায় বইমেলা আদৌ তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবে?

উত্তর: মেলা যদি উদ্যানে না হয়, তাহলে তা যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা পার্ক বা এর আশপাশেই কোথাও আয়োজনের ব্যবস্থা থাকে, কিংবা আগারগাঁওয়ে বাণিজ্যমেলার জায়গাটিতেও মেলার আয়োজন করা যেতে পারে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে যেহেতু একটা সংস্কৃতিবলয় আছে, সেখানে হলেই ভালো হয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে শুধু একটি বইমেলা নয়, বড় পরিসরে বছরের দুটি সময়ে ছয়মাসের ব্যবধানে দুটি মেলার আয়োজন করা হোক। একটি আন্তর্জাতিক বইমেলা থাকুক। দুটি মেলার একটি প্রকাশক সমিতির অধীনে থাকুক।


প্রশ্ন: বইমেলার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে একটি সুন্দর বইমেলার আয়োজন করতে?

উত্তর: একুশে বইমেলাকে মূল উৎসব ধরে বছরব্যাপী সারা দেশে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকারের একটি প্রকল্প এবং সুনির্দিষ্টি বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। এর জন্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটসহ সরকারি-বেসরকারি সবগুলো প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে কাজ করা দরকার। সারা বছর ধরে দেশের প্রতিটি উপজেলা ও জেলায় এ ব্যাপারে নিবিড় কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার। শুধু প্রকল্পের কারণে প্রকল্প নয়, কার্যকরী প্রভাব তৈরি হচ্ছে কিনা, যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সে কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না সেটিও দেখভালের মধ্যে রাখা দরকার।

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
বইমেলা শেষ, কবে স্বরূপে ফিরবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান?
ব্রহ্মপুত্রপাড়ে পণ্ডিত বইমেলা, থাকবেন ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর সাহিত্যিক ও শিল্পী
সাঙ্গ হলো প্রাণের মেলা
সর্বশেষ খবর
বিকেএসপি কাপ ভলিবলে লাল দল চ্যাম্পিয়ন
বিকেএসপি কাপ ভলিবলে লাল দল চ্যাম্পিয়ন
যে দর্শনে পাকিস্তানকে কোচিং করাতে চান গিলেস্পি
যে দর্শনে পাকিস্তানকে কোচিং করাতে চান গিলেস্পি
‘কবরস্থানের উন্নয়নে’ কেটে ফেলা হলো অর্ধশতাধিক গাছ
‘কবরস্থানের উন্নয়নে’ কেটে ফেলা হলো অর্ধশতাধিক গাছ
টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতায় চিন্তিত টিম ম্যানেজমেন্ট
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলটপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতায় চিন্তিত টিম ম্যানেজমেন্ট
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?