X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

নায়িকার একদিন || শাহনাজ নাসরীন

.
১১ মে ২০১৬, ১৪:২৮আপডেট : ১১ মে ২০১৬, ১৪:৩৬


অলঙ্করণ : মোস্তাফিজ কারিগর লিপিকা চোখ খুলে দেখে রুমের দরজা দিয়ে তেরচা এক টুকরো সূর্য তার পায়ে নাচানাচি করছে। কেমন একটা অস্বস্তিতে সে দ্রুত চোখ বন্ধ করে পরিস্থিতি বুঝতে চেষ্টা করে। মাথাটা ভীষণ ভারী হয়ে আছে। তার মনে পড়ে আজ স্যুটিং নেই বলে কাল সারারাত তাস খেলে ভোর চারটায় শুতে এসেছিল। এখন পায়ে তেরচা আলো চলে এসেছে অর্থাৎ বেশ বেলা হয়েছে। বাড়িটির সুনসান নীরবতা জানান দেয় যে সবাই ভোরে উঠে চলে গিয়েছে স্যুটিং স্পটে। খোলা ঘরে সে একা রয়ে গিয়েছে বুঝতে পেরে তার রাগ হয়। যদিও বাড়িটা যথেষ্ট নিরাপদ এবং স্যুটিং স্পট খুর দূরে নয় । তাছাড়া প্রোডাকশানের একটি ছেলেকে তার ফুটফরমাশ খাটার জন্য ঠিক করে দেয়া হয়েছে, মোবাইলে কল দিলেই ছেলেটি তাকে নাস্তা দেবে, গোসলের জন্য গরম পানি চাইলে গরম পানি করে দেবে এরপর তার জিনিসপত্রসহ তাকে স্যুটিং স্পটে পৌঁছেও দেবে। কিন্তু লিপিকার মনে হয় সে নতুন নায়িকা বলেই তাকে অবহেলা করা হলো। তাই তখনি তার স্যুটিংস্পটে যেতে ইচ্ছে করলো না। সে চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকলো কী করা যায়।

কিছুক্ষণ পর আত্মগতভাবে বললো, হুম কিছু খাবার কিনতে হবে। স্যুটিং এর খাবার খেয়ে খেয়ে ডায়েটিং এর বারোটা বাজছে। বিকল্পধারার নায়িকারা কমার্শিয়ালের নায়িকাদের মতো স্পেশাল ট্রিটমেন্ট পায় না তার ওপর এই ছবির পরিচালকের নিয়ম হলো পরিচালক থেকে প্রোডাকশান বয় সবাই একই খাবার খাবে। কিন্তু তার তো প্রতি বেলা পরোটা, ভাত, মাংস খেলে চলবে না। গ্ল্যামার না থাকলে কমার্শিয়াল ছবিতে কাজ পাবে কী করে। অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিতে গেলে শুধু বিকল্পধারা দিয়ে চলবে না কমার্শিয়ালেও কাজ করতে হবে। কিন্তু এখন খাবার নিয়ে নাক তুললে ইন্ডাস্ট্রিতে বদনাম রটে যাবে যে লিপিকার অনেক প্যানা। সে এখনও নবীনের আওতাভূক্ত। একবার বদনাম হয়ে গেলে আর উঠতে পারবে না। তাছাড়া বিকল্পধারাকে হেলা করার প্রশ্নই ওঠে না, পয়সা না থাক ক্যারিয়ারের পালকগুলো তো এখান থেকেই আসে। যে কাজ সে করবে নিখুঁতভাবে করবে কোথাও ফাঁক রাখবে না এবং প্রথম স্থানটি দখল করবে এই তার নিয়ত। এরপর হয়তো ছেড়ে দেবে যেভাবে র‌্যাম্পে হাঁটা ছেড়েছে।

সে এবার উঠে বসে। ঠিক করে এখনি ছেলেটিকে ডাকবে না। নিজের কফি মগে ছোট্ট হিটারটি দিয়ে এক মগ গ্রীন টি বানিয়ে খাবে। তারপর বের হবে শহরটি ঘুরে দেখতে। দু’দিন হলো এসেছে, স্যুটিং এর ধাক্কায় শহর তো দূর এই বাড়ির আশপাশও ঘুরে দেখা হয়নি। বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখার কথা মনে হতেই সে তড়াক করে উঠে পায়ে স্লিপার গলিয়ে বের হয়ে পড়ে। ছায়াময় উঠোনে হাঁটে কিছুক্ষণ। বড় বড় গাছ উঠোনে। কিন্তু এই সব গাছ ফলের নয়, যেমন ছিল তার গ্রামের বাড়িতে। সফেদা, বেদানা, আমড়া, জামরুল, কামরাঙা, লিচু, গাব বিভিন্ন জাতের পেয়ারা কয়েক রকমের লেবু আর কুল আরও বিচিত্র সব ফলগাছে সমৃদ্ধ সেই উঠোন এখনও তার স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে। সে মনে মনে ভাবে কতকাল যাওয়া হয়না, চমৎকার ঐ উঠোনটি কেমন আছে এখন? তার চাচা নানা জায়গা ঘুরে বেড়াতেন আর গাছ বা বীজ সংগ্রহ করে আনতেন। ভালবাসার সেই চাচা লিপিকার ভেতর গাছ চেনার আকাঙ্খা ও অভ্যাস তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এই উঠোনটি সেরকম নয়। এখানে সারিবদ্ধ করে মেহগনি, গর্জন, কড়ই আর সেগুন লাগানো। সব অর্থকরী বৃক্ষ। সেদিক থেকে এই উঠোনটি সম্পদশালী। সে মনে মনে সমৃদ্ধ সমৃদ্ধিশালী, সম্পদ সম্পদশালী শব্দ দু’টি আওড়ায় কয়েক বার। সম্পদেই তো সমৃদ্ধি তাহলে দু’টো বাগানের ভাবনায় কেন পৃথক দু’টি শব্দ মনে হলো তার, এই ভাবনাটি ঘুরপাক খেতে থাকে মাথায়।

বিশাল বিল্ডিংটা ঘুরে পেছনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে খানিকটা দূরে দুজন মানুষ দেখে এগিয়ে যায় ও, আর মুগ্ধ হয়ে দেখে পরিপুষ্ট ফসলে ভরা বিশাল এক সবজির ক্ষেত। সব তার প্রিয় সবজি। বাংলাদেশে এগুলো কৃষকরা সচরাচর তাদের ক্ষেতে ফলায় না বলে বাজারে পাওয়াও যায় না। চেইন শপগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হয়। ব্রকোলি, ক্যাপসিকাম, বিট, বেবিকর্ন, লেটুস, শালগম, লাল বাঁধাকপি দেখে সে পাগল হয়ে ওঠে প্রায়। লোক দুটোর কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে এগুলো কৃষি অধিদপ্তরের পরীক্ষমূলক সবজি। বিক্রির জন্য নয়। ফসলের ক্ষেত ধরে হাঁটে সে, তরতাজা সবজিগুলোর দিকে লোলুপ তাকায়। আহা বিক্রি হলে ক্যামিক্যাল ফ্রি এসব সবজি প্রতিদিন কিনতো সে। ভাপিয়ে খেতে পারলে ডায়েটিং নিয়ে আর ভাবতেই হতো না। ঘুরে ঘুরে বাগানটিকে যেন রেকি করে সে। তারপরেই একটা দুষ্টু হাসি ফুটে ওঠে তার ঠোঁটের কোণে। যারা তাকে চেনে তারা বুঝে যাবে সে মনে মনে বলছে, বিক্রি করলে পয়সা পেতে এখন সবজিও যাবে পয়সাও পাবে না। আমি তো কিনতেই চেয়েছি আমার কী দোষ!
ক্ষেতের শেষ মাথায় পৌঁছে সে দেখে একটি সরু গলি। সেটি ধরে এগোতে থাকে সে। লোকজন তার দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে লক্ষ করে। এই এলাকায় কি সবাই সবার পরিচিত, তাই সে অপরিচিত বলে তাকাচ্ছে, নাকি তার মতো সুন্দরী, আধুনিক মেয়ে দেখা যায় না এ শহরে? সে পরনের পোষাকের দিকে তাকায়। তার খুব পছন্দের একটা ড্রেস পরে আছে। ইন্ডিয়া থেকে এনেছিল। কাল রাতে শুতে দেরি হয়ে যাওয়ায় বাইরের পোশাক পরেই শুয়ে পড়েছে। তবু ঝকমক করছে দামি বলেই। হাঁটতে হাঁটতে গলির শেষ মাথায় পৌঁছে আচমকাই শহরে উপস্থিত হয় সে। শহরের চওড়া রাস্তার একটু ডানেই চার রাস্তার মোড়। অনেক গাড়ি, বাস, রিকশা জমে আছে সেখানে। তাদের অস্থির হর্ন, গালাগাল, কোলাহল সরু গলিটিতে পৌঁছয় না বলে শহরের আভাস সেখান থেকে পাওয়া যায় না। গলির কোনটিতে এক বৃদ্ধ চায়ের টং দিয়েছে। এক কোণে চা হচ্ছে দুটি বয়ামে বিস্কিট সাজানো। বাঁশের দুটি বেঞ্চ সামনে তবু তিন-চারজন লোক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে। লিপিকা একটি বেঞ্চে বসে বৃদ্ধকে এক কাপ রং-চা দিতে বললে বৃদ্ধ বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। বৃদ্ধকে আরও একটু ভড়কে দিতে সে হাত বাড়িয়ে বিস্কিটের বয়াম খুলে একটি বিস্কিট নেয়। এই সময় এক লোক পোষা বানর নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলে বানরটি লাফ দিয়ে তার হাতের বিস্কিটটি নিতে চেষ্টা করে। কিন্তু লোকটি বেশ দক্ষ হাতে বানরটিকে টেনে নিয়ে বেশ জোরে একটি থাপ্পড় দেয়। সে আহা থাক থাক বলে বিস্কিটটি বানরকে খেতে দেয়। শহীদুল জহিরের মাঙ্কি বয়ের কথা মনে পড়ে তার, আহা বানরের কত মমত্ব অথচ এই লোকটি বানর দিয়ে উপার্জন করে তবু কী নিষ্ঠুরভাবেই মারলো! দোকানের চালার সাথে চারটি কলা দড়ি দিয়ে ঝুলানো। সে একটি কলা নিয়ে বানরকে দেয়। বানরটি গভীর আগ্রহে খায় আর খুশিতে কৃতজ্ঞতায় তার পায়ের কাছে সরে এসে চপেটাঘাতের দুঃখ ভুলে লাফালাফি করে। দেখতে এত ভালো লাগে তার যে এক এক করে চারটি কলাই বানরকে খাইয়ে দেয়।

ভিড় জমে যায় তাকে ঘিরে। অবশ্য আজ বলে নয়, সবসময়েই জমে। সে নায়িকা বলে জমে তা না। নায়িকা হিসেবে এখনো সে এমন কিছু পরিচিত না। আসলে ভিড় জমানোর কলাকৌশল সে জানে এবং ভিড় জমিয়ে উপভোগ করে। ‘তোর চেহারা, কাজকর্ম সবই অদ্ভুত’ তুপা বলেছিল র‌্যাম্পে থাকতে, ‘তুই যখন হাঁটিস মনে হয় একটা ডামি হেঁটে বেড়াচ্ছে’... আর স্যুটিং এর অবসরে মার্কেজ পড়তে দেখে পরিচালক হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলেন কিছুক্ষণ। যেন সুন্দরী মেয়েরা বোকা বোকা কথা বলবে আর আদেখলাপনা করবে এটাই দস্তুর।

আশপাশটা একটু ঘুরে দেখার ইচ্ছায় সে উঠে দাঁড়ায়। ঐ মুহূর্তে মনে পড়ে মানিব্যাগ না নিয়েই চলে এসেছে। দোকানের এই বৃদ্ধের হতভম্ব অবস্থা এখনো কাটেনি; এর মধ্যে দুঃসংবাদটা দিতে হবে। তাকে সামলানো তার জন্য সমস্যা না তবে টাকাটা এখন দিতে পারবে না ভেবে খারাপ লাগে। সে ঠিক করে পরে যখন টাকাটা দিতে আসবে তখন বয়ামের বিস্কিটগুলি সব কিনে নিয়ে যাবে।

লিপিকা খপ করে বুড়োর হাত ধরে বলে, ‘চাচা ভুল হয়া গেলো যে! টাকার ব্যাগটা ভুলে রাইখা আসছি।’ বলে মাপ চাই মতো ভঙ্গি করে একটা। তারপর আবার বলে, ‘চাচা আমি এই রাস্তার শেষ মাথায় যে সবজির ক্ষেত আছে ঐটার সামনে যে বড় বিল্ডিং সেইখানে থাকি। চিনেন তো চিনেন না?’ বুড়ো কিছু বলে না নিষ্পলক চোখে হাতের দিকে তাকিয়ে বসেই থাকে। ‘পরে এসে আপনাকে টাকা দিয়ে যাব আর সওদাপাতি নিয়ে যাব কেমন’ বলে বুড়োকে ছেড়ে ও রাস্তা পার হয়ে শপিং মলে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু লক্ষ করে তার বোর লাগছে। টাকা আনেনি বলে কেনাকাটা করে একঘেঁয়েমি কমাবে তাও হচ্ছে না। রাস্তার সাথের পোষাকের দোকানটিতে বিভিন্ন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা ডামিগুলি দেখে হঠাৎ তার মাথায় একটা দুষ্টবুদ্ধি খেলে যায়। ভাবে সেও যদি তাদের সাথে দাঁড়িয়ে যায় তাহলে কী ঘটতে পারে, দেখবে নাকি একবার? এবং সত্যি সত্যি তাই করে সে। দোকানের ভীড়ে মিশে আস্তে আস্তে কোণের দিকে সরে কাঁচের ঘেরে ঢুকে পড়ে। এরপর কোণের আলো আঁধারিতে ওড়নাটা কায়দা করে মেলে দিয়ে একটি ডামির মতোই পোজ দিয়ে দাঁড়ায়।



কিছুক্ষণ পর একটি মেয়ে এসে দাঁড়ায় ফুটপাথে। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে আর নিজের মনেই বিড় বিড় করে, এটা একেবারে অন্যরকম। অনেক দাম হবে নিশ্চয়। দামটা লেখা থাকলে ভালো হতো। একটু পরেই আরেকটি মেয়ে বিস্মিত কণ্ঠে বলে, দেখো দেখো ঐ ড্রেসটা কী সুন্দর! অনেক দাম হবে। দামী ড্রেস পরলে চেহারাই পাল্টায়ে যায়। এই পুতুলটারেও সবচে বেশি সুন্দর আর জীবন্ত লাগতেছে।

সাথের পুরুষটি বিষাক্ত কণ্ঠে বলে পুতুলটা সুন্দর বইলা সুন্দর লাগতেছে, তোমারে লাগবো না।

মেয়েটা রেগে গেল, কেমনে বললা?

কেমনে বললাম কী? চোখ নাই তোমার? মুটকি; যা দেখো তাই চাও? এই জামায় তোমার অত্তবড় পাছা ঢাকবো? খালি টাকার খোঁটা...


স্বাস্থ্যবতী মেয়েটি হনহন করে হাঁটতে শুরু করে। লিপিকা ফিক করে হেসে ফেলতে গিয়ে সামলায় নিজেকে। আবার এক দঙ্গল মেয়ে আসছে। ইউনিফর্ম পরা। কলেজে বা স্কুলের বড় ক্লাশে পড়ে হয়তো। তারা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পোশাক দেখে আর নানারকম গল্প করে।
পোশাকের মেলা হচ্ছে কোথাও। একটি মেয়ে জানায় সে গিয়েছিল সেখানে। ত্যানার মতো সব পোশাকের দাম নাকি আকাশ ছোঁয়া। আরেকজন বলে আরে মেলা তো বসায়ই পকেট কাটার জন্য।
অন্য একটি মেয়ে বলে, তবু চল না দেখে আসি।
দেখতে যাবি নাকি ঘুরতে?
ফিল্ডিং মারতে— একজন টিপ্পনী কাটে।
অন্যজন ফোঁড়ন দেয়— রথ দেখা আর কলা বেঁচা...
এসময় একটি মেয়ে বিস্ময়সূচক শব্দ করে, ওমা দেখ ওই কোণের ড্রেসটা একদম অন্যরকম নারে?
সঙ্গে সঙ্গেই নানা রকম মন্তব্য শুরু হয় তাই তো কী সুন্দর... অনেক মডার্ন তাই না... খুব দাম হবেরে ... দাম তো হবেই, এই দোকানটা তো বড়লোকদেরই... তবু অন্য ড্রেসগুলির সাথে বেমানান তাই না... হ্যাঁ-রে একদম অন্যরকম! সবাই আলোচনা করতে লাগলো এতো মডার্ন ড্রেস কি এখানে কেউ পরবে বল দেখি!
একটি মেয়ে বলে কেন যাদের গাড়ি আছে তাদের পরতে কী? এই চল না ভিতরে গিয়ে দেখি দাম কত।
কী করে দেখবি, সেলসম্যানগুলো যা সেয়ানা। দেখতে চাইলেই দেখাবে নাকি, একশোটা প্রশ্ন করবে। তুই আসল কাস্টমার কি-না ওরা ঠিক বুঝে নেবে।
আগের মেয়েটি তখন বিষন্ণ গলায় বলে কী সুন্দর ড্রেসটা, পরতে ইচ্ছে করছে। অনেক দাম হবে— না-রে?
হুম, কিন্তু কিনতে পারলেও আমরা কি পরতে পারবো এই শহরে বল?
একটি সাহসী মেয়ে বলে চল না ড্রেসিং রুমে পরে দেখি। দুধের সাধ ঘোলেই মিটলো।
না-রে অপমান করে যদি...
চল না চেষ্টা করি বলে মেয়েটি দোকানে ঢুকলে ওর পেছনে সবাই হুড়মুড়িয়ে ঢুকেই কাউন্টারে চলে আসে। স্মার্টভাবে কাউন্টারের ছেলেটিকে বলে আপনার পেছনের ডিসপ্লের ড্রেসটির দাম কত?
লিপিকা প্রমাদ গোনে। ছেলেটি এখন এদিকে এলে সে কী করবে ভাবে।
কিন্তু ছেলেটি ফিরেও তাকায় না মেয়েগুলির দিকে। বলে এখানে শুধু পেমেন্ট নেয়া হয়। ড্রেস সেকশানে যান, ওখানে ডিসপ্লের সব ড্রেসই আছে প্রাইসকোডসহ।
মেয়েগুলি আর উৎসাহ দেখায় না। বের হয়ে এগিয়ে যায় ফুটপাথ ধরে। তাদের টুকরো টুকরো কথা ভেসে আসে। দেখলি তো কী দেমাগ... কেমন ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসছিল... কেমন করে কথা বললো বদমাইশটা... বলেছিলাম না....আমাদের দেখেই তো বুঝেছে আমরা আসল কাস্টমার না ।
এভাবে নানা রকমের মানুষ আর তাদের বিচিত্র বাক্যালাপ দেখে দেখে সময় কাটে তার। লিপিকা খুব দ্রুত একঘেঁয়েমিতে আক্রান্ত হয়। পৃথিবীর যাবতীয় আয়োজন এমনকি মানুষে পর্যন্ত সে বেশিদিন তার আগ্রহ ধরে রাখতে পারে না। এজন্য তার বন্ধুবান্ধব নেই। ফলে আরো বেশি একা হয়ে পড়ে। প্রথাগতভাবে লেখাপড়া শেষ করে ভাল একটা চাকরি, সংসার এসবই তাদের প্রথাগত সংসারের জন্য স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সে প্রথা ভেঙে প্রথমে মডেলিং শুরু করলো, এরপর র‌্যাম্প। সেটা একঘেঁয়ে লাগতে ফিল্ম। ফিল্মে এখন পর্যন্ত ভালই লাগছে তার। নানা রকমের মানুষ দেখে আর যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়িয়ে সময় কেটে যায় বেশ। তবে কতদিন লাগবে জানে না। ভাল না লাগলে কী করবে তাও ভাবে না, কিছু একটা ঠিকই বের করে নেবে জানে।
কিছুক্ষণ পর কাউন্টারের ছেলেটি বের হয়ে কোথাও যায়। এই ফাঁকে লিপিকা বের হয়ে আসে। বেশ অন্যরকম একটা সময় কাটানোর আনন্দে তার মুখ ঝলমল করে। অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে কিনা ভাবে সে। সবাই কি তোলপাড় করে খুঁজছে ওকে... মোবাইলে মিস কলের পাহাড় জমে গিয়েছে?
যারা ট্রান্সপোর্টের দায়িত্বে আছে আর তার রুমমেট রীমা; এতক্ষণে কয়েকদফা ঝাড়ি খেয়ে ফেলেছে নিশ্চয়। আউটডোরে তাদেরকে অনেক শৃঙ্খলার ভেতর থাকতে হয়, অ্যাডভেঞ্চারের কোনো সুযোগ নেই। তবু সে ফেরার কোনো তাড়া অনুভব করে না। অদ্ভুত এই সময়টি কাটাতে পেরে তার একঘেঁয়েমি অনেকটাই কেটেছে। এখন ইউনিটের সবার সাথে এত মিষ্টি ব্যবহার করতে পারবে যে কেউ তার দায়িত্বহীন আচরণের কথা উল্লেখই করতে পারবে না। সে ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে গুনগুন করে গান গায় আর এগুতে থাকে চৌরাস্তার জমাট ভিড়ে; যেখানে গনগনে সূর্যের প্রখরতার মাঝে জট পাকিয়ে আছে আম-খাস সব রকমের জনতা ও যানবাহন।

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাড়িতে বিস্ফোরণে আহত স্কুলছাত্রী মারা গেছে
বাড়িতে বিস্ফোরণে আহত স্কুলছাত্রী মারা গেছে
অননুমোদিত স্টিকারে ৩৬৩ মামলা, দুই হাজার গাড়ি ডাম্পিং: ট্রাফিক পুলিশ
অননুমোদিত স্টিকারে ৩৬৩ মামলা, দুই হাজার গাড়ি ডাম্পিং: ট্রাফিক পুলিশ
অজানা তথ্য সামনে আনলেন পরিণীতি
অজানা তথ্য সামনে আনলেন পরিণীতি
আ. লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা সোমবার
আ. লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা সোমবার
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি