অনন্যা আট শিরোনামে ৮জন কবির কবিতা প্রকাশ করা হল। নির্দিষ্ট কারোর কবিতা পড়তে ক্লিক করুন- ফেরদৌস নাহার, কচি রেজা, শেলী নাজ, সাকিরা পারভীন, জুনান নাশিত, রহিমা আফরোজ মুন্নী, জিনাত জাহান খান, তিথি আফরোজ।
ফেরদৌস নাহার
জল ও ফুলের আলিঙ্গন
সবার থেকে সরে গিয়ে একটা মেঘলা নদীর দেশে
ডুব দিতে যাই। ডুব দিতে থাকি স্তন ভাঁজে
পাখির ডাকে, আবছা আঁধার
ভুজলতা, তোমরা আমাকে চিনবে না, আমি নতুন
এ তল্লাটে প্রথম নয়, তবুও প্রথম
ঝকঝকে নদী হয়ে বয়ে গেছি, এখনো যাই
সারাক্ষণ ডুবো-জাহাজের সন্ধানে উভচর
খুলে ফেলি পুরানো চামড়ার ঘর
গোপন সঙ্গম থেকে জল ও ফুলের আলিঙ্গন
জেনে নিও নিরখা করার দিন করাতে চিরেছি এই দেহ
ফের যদি ফেরিঘাট ডাকে তবে চলে যাব নেই সন্দেহ
বেড়িবাঁধের রাস্তায়
সেই হারিয়ে যাওয়া চিঠিগুলো আজও বাতাসে উড়ছে
এমন তো কথা ছিল না! হারায় না কেন
বছরের পর বছর কেটে গেছে যে নাম উচ্চারণ করিনি
সে এখনও ভেতরে ভেতরে ঘুরে মরে
সারারাত হেঁটে বেড়ায় বেড়িবাঁধের রাস্তায়
সেখানে অনেক রাতে টিমটিম আলো জ্বালিয়ে
কয়েকটি দোকান খোলা থাকে
বিড়ি সিগারেট পাওয়া যায় বলে চিনি তাদের
তারাও আমাকে
আর যখনই ঝড় ওঠে, তৃষ্ণার চৌহদ্দি তোলপাড়
তীর্থের সব ছবি আঁকাবাঁকা অচেনা
তখনই সেই বেড়িবাঁধ টেনে নিয়ে যায়
দোকানের কোল ঘেষে রিকশা দাঁড় করাই
দড়ির আগুন টেনে সিগারেট ধরিয়ে আবারো পথ চলা
কতটা জীবন গেল বাড়াবাড়ি
আগুনের উত্তাপ খুঁজে নির্জন রাতে বেড়ি পরা পায়ে
যেতে যেতে চমকে উঠি তুমি কি এই লোকালয়ে
কয়েকশো বছরের পুরানো ডিকস্টা
কবিতাগুলো ভেঙে যাচ্ছে, যা কিছু দিতে চাই তাই ভেঙে যায়
টানা গদ্যের আলখেল্লা গায়ে কবিতারা সটান হেঁটে চলছে
আমার বয়স যখন বৃষ্টিদিন, সাইকেল চালিয়ে যাব বলে
প্যাডেলে চাপ দিয়েছি, সে যাওয়া এখনো থামেনি
ঝরাপাতার সাথে উড়ে উড়ে বৃষ্টি গায়ে মেখে
আমার সাইকেল যায় দূর কোনো পর্তুগিজ শহরে
যেখানে গিটার বাজিয়ে গান গায় কয়েকশো বছরের পুরানো ডিকস্টা
নদীদের নামের আগে মহান শব্দটি যিনি ব্যবহার করেন
তাঁর সন্ধানে কত দিনরাত্রি। এখন কবিতারা ভেঙে যাচ্ছে
গদ্য এসে হাপরে বাতাস নিচ্ছে, আমাদের জানালা ধুয়ে মরুবৃষ্টি
আমি জানতাম এভাবেই পুবের বৃষ্টিরা পথ ভুলে কারো কাছে নয়
কবিতার কাছেই যাবে, আর তার হাড় ভেঙে ডুগডুগি বাজাবে
কচি রেজা
জলেশ্বরী সিরিজ
এক.
ইচ্ছে করে, আপেল বাগান পেরিয়ে তোর কাছে যাই, তোর দিকে চেয়ে থাকি
যতক্ষণ না ম্লান বিকেল আসে পায়ের কাছে। যে বিষাদ আর বিষণ্নতা আমি
বিচ্ছিন্ন করতে পারিনি, সেই দৃষ্টি ও চোখ বিস্মিত ভঙ্গিতে দেখে মুখমণ্ডল।
ধাতুর হাড়ে ভর দিয়ে যে শিরদাঁড়া তাদের যৌথসংঘর্ষও আমাকে চমকে দেয়।
রোদের ঝাঁঝ তখন গিটারের ধ্বনি, কেমন একস্বরে কথা বলে পাথুরে কুয়াশা।
বিশ্বাস হয়, নিজেরও আছে গায়ের গন্ধ। কোনও এক শীতের ভোরে জামার
ঝুল টানতে টানতে ঠিক একদিন পৌঁছে যাব, আমার হাতের ভঙ্গি ছুঁয়ে চলবে
তোকে। তোর জামার রঙ টের পাবে আমার জিভ। তখন কী যে একটা অসুখ
আকাঙ্ক্ষা গাঢ় করে মুছে নেবে সন্ধ্যাবেলাটা।
দুই.
অপেক্ষা এমন এক শিস যা কখনও বাজে না। দু’একটি নীল ট্রেন তবু আসে।
কেউ বিদায় নিলে কিছুক্ষণ থমকে থাকে ছাতিমের ঘ্রাণ। ছাতিমের গলায় যে
ফুল সেও হয়ত দু’জন দেবতার কথোপকথন, দেওয়াল ফেটে গজানো চন্দন
কলরব শুনে নির্ধারিত অন্ধকারে এসে দাঁড়ায়। হাত থেকে হাতের যাত্রায় যে
নিঃসঙ্গ তিমি, সেও হয়ত ঘুম আবিষ্কারের পর জেনেছে এই অচেনা ক্লান্তি!
তিন.
আমার মৃত্যু সংবাদ লেখা হচ্ছে পাখিদের ভোরের দৈনিকে, ঘর-দোর আর কড়িকাঠে,
ছাদের নিচে লেখা হচ্ছে কাঙাল মাথাটি। নিজের মৃত্যুও আমি টাঙিয়ে রাখি।ব্যথা
পেলে কেন যে ঘুম আসে, এখন বালিশ পালটে একটি উসকানি রঙের জামা পরি, চশমা
মুছে স্টেশনে যাবার আগে যখন প্রণাম করছে সবাই, আমি সারি ভেঙে দিই লাল
পিঁপড়ের, দেখি, চারদিকটার ভিজে ভিজে শ্বাস নিচ্ছে একটি সদাত্রস্ত পাখি।
শেলী নাজ
সুপুরুষ
কান্তিময় সুপুরুষ, ছোট জার, আমি তাতে তরঙ্গ তুলেছি
জাগিয়েছি ফুজিয়ামা জামার ভেতর, ভরেছে বাগান
তৃষ্ণাফুলে, অমিয় বর্ষণে খননের শ্রমে ও মেধায়
তার অশ্বমেধ সম্পন্ন করেছি যজ্ঞের আগুনে
আমি তুলে ধরেছি নরোম কৃষ্ণাভ তার ইগো
ইস্পাত এখন জ্বলে, কাঁপে
ভেঙে ভেঙে গড়িয়ে পড়তে চায় অপরিসীমায়
তীব্র জলাশয়ে, জাগিয়ে তুলছি তার পেশি, নেশা
মদের সঙ্গেই মিশে থাকা মোহ আত্মার গেলাসে ঢেলে
করতে দিযেছি পান, বলেছি এখানে উল্লাস বললে
কীভাবে উৎক্ষিপ্ত বান ও তীরেরা
হরিণকে গাঁথবে আনন্দে, যন্ত্রণায়,
কীভাবে একটা গুপ্ত সিন্ধুনদের ভাষা, শীৎকার চিনবে
তুমি সুপুরুষ, বীর্যবান, ঠিক কোন অহমিকা দিয়ে
বাজাবে ম্যান্ডারিন বলেছি কীভাবে বাজাতে হয় নারীর বেদনা
আজ তার আঙুল, বধির, বরফ, আমাকে চিনছে না!
খুনি
ফুলদানি থেকে নেমে গেল সাপ, তীব্র ছোবলের পর
তুমি তার খোঁজে তন্নতন্ন করছ শহর
ওঝাও ডেকেছ, মাদুলি পরেছ, নাগপাশ থেকে মুক্তি
পেয়েও পাওনি, তোমারও রক্তদোষ ছিল, তার মূক তীর
বিঁধেছে পল্লব, গলাভর্তি মধু নিয়ে তুমি কাঁপছিলে
তারপর ডানা ভেঙে পড়ে আছ গোল ধাতুভর্তি ঝিলে
খুনি সে, জানছ তবু এক সূর্যহারা সূর্যমুখির বাগান
আকাশের দিকে ছুঁড়েছিল তার হৃদয়-তলানো গান
ফুলদানির নমিত শির থেকে গড়িয়ে নামছে নির্বোধ সন্তাপ
গতরে টোটেম, পরাগে রাখো ঢেকে ফুলের সকল পাপ!
নববর্ষ
তোমার কোনো বর্ষ নেই, নতুন বা পুরাতন, পুরাকীর্তির পৃথিবী
কীর্তিহীন তোমার অধ্যাস, ছিন্ন দিন, উদ্ভিন্নযৌবনা পোড়া ঘাস
তোমার কোনো হর্ষ নেই, হে মরূদ্যান, বুনছ নতুন বীজ?
তুমি বয়ে চলো অশ্রু, কলসের কানাভাঙা মিথ্যে প্রেম, রঙিন উচ্ছ্বাস
আরও এক ক্যালেন্ডার, নতুন, ঝুলছে হৃদয়ে তোমার
মাস শেষে যার পাতা ঝরে, তোমার কান্নার তিমিরে তিমিরে
ভাঙা ঘুম স্বপ্নের পারদে ভারী, টুকরো আয়না, ভাবকণা
চোখে তাম্রলিপি, কলজেকাটা কিরিচ, নিরাময়হীন বিষণ্ন আঁধারে
জানি, আলমারি ভরা রঙিন সুতোয় বোনা দুঃখ আর অসন্তোষ
নববর্ষে নতুন শাড়ির নিচে তুমি বয়ে চলো পুরাতন ক্রুশ!
সাকিরা পারভীন
ত থ দ ধ ণ
খ.
কেউ কেউ কবিতা লিখছে
কেউ কেউ ফটোগ্রাফি কিংবা পর্ণোগ্রাফি
তুমি কি-
ধর্মনিরপেক্ষতা?
বলতো
বিষপিঁপড়া?
ত.
থুথু দিয়ে পাতা উলটানো প্রাইভেট টিউটরকে
ঘৃণা করতাম।
এখন থুথু দিয়ে তোমাকে উলটাই
গণতন্ত্র...।
দ.
দেশ উলঙ্গ
দেশের শাড়িতে আগুন লেগেছে আজ
দেশে ধর্ষণ
সেই আনন্দে
সকলেই যুবরাজ।
জুনান নাশিত
যাবে? যাও
স্তবকে স্মরণ চিহ্ন এঁকে তাকে ফেলে যেতে চাও?
যাও।
ঈর্ষার আকাশ ঘেঁটে পেয়েছি সাতটি প্রলাপের স্বর
যার মধ্যভাগে বেদনার রঙ, নিম্নভাগে জিঘাংসা মেদুর
উর্ধ্বভাগে? শূন্যতার ঘর।
তাকে সাজাতেও পারো, কষ্টের সীমানা ভেঙে
দিতে পারো বুকের শীতল ওম
দেবে না, আমিও জানি, হারাতে চাও না
সন্ধ্যারাগে কুড়িয়ে পাওয়া বিনাশ বিভ্রম।
কী হবে? ধুলোর হাতল থেকে তুলে নিলে কাচঘেরা ঝড়?
পাটাতন সরে যাবে? চিরায়ত ঋণ শোধে
সাগর কি তুলে নেবে বিশুদ্ধ নোঙর?
হয়তো না, হয়তো হ্যাঁ, আকাশ ছোঁবে না আর সাগরের জল
তাতে কি? ভাঙুক, তিতির হারানো দিনে
অন্ধকার জটাবৃদ্ধ ঘোর।
তবু যাবে তুমি? যাও!
রোদের গল্পরা ছন্নছাড়া হবে
ভরসার দূর দিগন্তরা আরো দূর
আবারো দিগন্তগামী হবে
আমি ডাকবো না
দু’হাত ছড়িয়ে কাঁপছে যে পাতার সবুজ
তাকে চোখে মেখে তাকাবো সুদূরে
তুমি যাবে? যাও, আপাতত চোখটা সরাও।
হেমলক প্রেম
শিশ্নের উজানে ভাসে মৃদঙ্গ মেঘের ডাক
স্তনের নূপুরে বাজে কাঁচুলির ঘুম!
একদিন ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে তারা
হয় পরস্পরগামী আর মোহময়।
তবু কেন তোমার শিশ্নের তাপে পোড়ে আমার বেহুলা ঘোর?
দখল পুনর্দখলের ইতিহাসে ডুবে তুমি হও তুমুল বিলাসী
আর আমি ঠক ঠক
কারণ, ঘেরাটোপ ঘিরে শত ভয়
নিয়তি নির্ধারিত মেনে আমি বাঁচি মুমূর্ষু বিলাপ নিয়ে
তুমি ওড়ো জিউস ডানায়
তোমার উত্থিত লিঙ্গে আমার নিঃশর্ত অভিবাদন
অথচ তুমি দুমড়ে মুচড়ে দাও ভরাট স্তনের কোমল কোরক
তারপরও ভাবো কুহিনুর হয়ে জ্বলবে আজীবন
চাও অসীম আগ্রাসী তোমার চাওয়ায় আমি থাকি লণ্ডভণ্ড
আরো চাও বাতাবি ব্যস্ততা ভুলে তোমার পায়েই সারাদিন ঘুর ঘুর।
আমি জ্বলবো ঠিকই, পোড়াবোও নিজেকে নিজের মতো
ফিনিক্স ডানায় উড়ে খুঁজে নেবো নিজেই
অরক্ষিত বিষধর এক হেমলক প্রেম।
তবুও আমরা
আমাকে বিষণ্ন করো
প্রবল আগ্রাসী সত্তা দিয়ে ভাঙো
আমাকে বিযুক্ত করো
বিপুল বিশ্বাস দিয়ে গড়ো।
আলিঙ্গনে অবরুদ্ধ কাঁধ পরস্পরে
বুকের অগ্নিতে লকলকে দৃশ্যহীন লাভার করাত
দু’ঠোঁটের ফাঁকে নিবিষ্ট নিয়তি ঢাকা চুম্বনের শীষ
নামে অন্ধকার, দরোজাবিহীন ঘরের চৌকাঠ
শর্তহীন আলাপের ভীড়ে কেন এতো মূহ্যমান?
আমাদের সন্ধ্যার মৌবন আজীবন ফাঁকা
থাকবেও জানি
বাস্তবতা ভুলে উড়ন্ত সাহস গতি মিশবে না বাতাস প্রবাহে
আলিঙ্গনে থরো থরো, কাঁপছে যে পাতার শরীর
দু’বাহু জড়িয়ে থাকা শীতমগ্ন সময়ের অবিশ্রান্ত কণা
সেসবও মিশবে না জটিল যৌগের ভাঁজে...
তবুও আমরা, দাঁড়াবো কোথাও হাতে হাত রেখে
সমান্তরাল স্রোতের পাশে
অসমান্তরাল বিগ্রহের কোন এক দিনে।
রহিমা আফরোজ মুন্নী
বরষার আলাপ
বাংলার আকাশে কেমন নায়কোচিত নির্ণয়ে আজ ঝরতেছে বৃষ্টি। লাগাতার বারবার দিতেছে ঘোষণা সদর্পে,
শান্তির বারি ফালায়ে। রঙ্গরসে কলরবে চলকিয়ে উঠতেছে সবে, ঝর ঝর তব মত্ত বুঝি আয়োজনে। এদিকে ছুটে
বেড়াইতেছে মাথা বাঁচাইতে কিছু ভিজে মরা নাদান, প্রায় উলঙ্গ করিয়া প্রাণ। কি লজ্জা কি লজ্জা এমনই প্রেমলীলা
কার ছাতায় কে যে হান্দায় মাথা
ওগো বরষা
এমনই ছাঁটে যদি জুড়ে বসে উড়ে কেউ এসে, ভিজে একসায় গলে খুলে প্রসাধনে অন্যের উঠানে, খোদার কসম
কিচ্ছু কব না, ফিরেও চাব না।
খাদিম
এতই যদি কুণ্ঠা
জড়ালে কেন হাড়ের শরীরে
একপেশে মলম কত লাগাবে ক্ষতে
প্রশংসা তো না-ই
উল্টা ঝুলিয়ে গাঁথে
শোনো, পৃথিবী তোমারও
ঈশ্বর হওয়া তোমার কাজ নয়
মানুষেরা ভালো নাই
বাঁচতে চাই না বলেও
কেমন কাড়াকাড়ি, তবুও
আকাশ গড়িয়ে পড়ছে না
কারও মাথার উপর
ভাবছ কি সাজানো বাগান!
জন্ম থেকেই তো শুকনো
তবে?
মহীয়ান হবার নেশায়
কেন দেবে বিসর্জন?
এত নৈবেদ্যে যে স্বয়ং তাঁরও অরুচি।
বোধোদয়
যে কথাটা না ভেবেচিন্তেই বলা
তার প্রতিক্রিয়ায় মুখ থেকে নামলে মাটিতে
তারপর তার হদিশ খোঁজো তুমি?
অসীমে সসীমে দ্যুলোকে ভূলোকে
তার উৎসের খোঁজে বেরিয়ে মাঝপথে
আর কি গরম
ক্লান্ত প্রাণ দেয়ালে ঠেসে
বিস্তর চুন লাগানো পলেস্তরায় ঠাণ্ডা হতে হতে
তুমি তাকেও ভুলে গেলে!
এলোমেলো ঘুরে বেড়ালে অনেক বছর
তা হোক, তবুতো নিজেকে বোঝালে
কোথাও নিশ্চয়ই তাকে তুলে
রেখেছ ভুলে!
জিনাত জাহান খান
নির্মাণ
আঁধার কি কেবলই অন্ধকার?
তাহলে শূন্যতা!
শূন্যকে বিন্দু, আর বিন্দুতে ভর করে প্রতিনিয়ত ঘুরে ঘুরে আসাই যেন নির্মাণ।
প্রতিবার ঘুরে আসার ঘুর্ণনে, যে নারী সে-ই পুরুষ...কিংবা যে পুরুষ ছিল সে-ই নারী।
তবে প্রণয়, মিনতি, শূন্যতা, সঙ্গম!
প্রথম জন্মকান্না তবে কি শুধুই দাবি আদায়ের?
ধ্রুবতা রাখছে ধরে, দুলে ওঠা শব্দকে...
আয়োজন
সে ছিল অরণ্যের সেনাপতি।
বাসভূমি থেকে বনভূমির দূরত্ব জানে।
চেতনায় জমে থাকে অভিজ্ঞতা,
অভিন্ন আভাসের খোঁজে।
উড়ে যায় কিছু রূপালি মাছ সমুদ্র হতে...
চোখবাঁধা মানুষের কাছে...
অন্ধকার নয়, ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করে-
সিঁড়ির শূন্যতা জমে, পুতুলের ঘরে
পুরানো জামার আস্তিনে... এক চিলেকোঠা।
খাটের তলায় ট্রাঙ্ক, ফেলে রাখা পাণ্ডুলিপি
চারিদিকে অরণ্য-স্বর!
ভেঙে যাচ্ছে কিছু না হয় কিছু স্বাক্ষর করা,
শান্তি চুক্তির সমগ্র ঝর্ণা-আয়োজন
বাতাস ভারী হয়... ন্যাপথলিনের গন্ধে!
স্টেশন পেরুলেই লবণটিলা
নীলঘোড়া উড়ে যাও ঘুম থেকে,
আর আমি পড়ে থাকি হলুদ পাতার সাথে-
হাতে ছিলো দূরবীন...আলোছায়া ভুলে,
দেখি বনের ভেতরে বন উঠেছিলো দুলে।
তৃষিত হৃদয় ছুটে যায় পানপাত্র হাতে,
লোকালয় ফেলে- ঘুরে ফেরে বনপথে যারা...
অরণ্য কাঁপানো হাসি ধরে, ঢেলে দেয় তারা
এক আঁজল উদগ্র চাঁদ, পান করি ক্রমাগত-
মীনের আহার কিন্তু নুনজল নয়!
তিথি আফরোজ
পুরুষ তোমার পুরস্কার
যার নাভিমূলে এঁকেছি ঠোঁটপালিশ-
সুখকাতরতার বিনিময়ে সে পুরুষ বুক ভরা ঝড় পুরস্কার দিয়েছে
নখের পথ বেয়ে জল জড়ানো চুলের ডগায় দিয়েছে দীঘল পাথার।
একরাশ প্রেম...
শূন্যপথ পূর্ণ করেই চর্বণ করলো শিশুর কলিজা
রক্ত আর মজ্জার স্বাদ গ্রহণকারী বাঘের সঙ্গম দেখে
জেগে ওঠা ক্ষুধা মৃত্যুর মতো সহজ সাবলীল হয়
অতঃপর নির্গত হয় লোহিত কণিকা
চাঁদের গায়ে লেপ্টে থাকা অমাবশ্যার দুঃখের মতো
রাতের কাহিনিগুলো সিঁধেলচোর পাশা খেলে
তৈরি হয় আগুন আর এ্যাস্ট্রের অভিধান
যুগ ধরে শিশ্নগুলোর চাটুকারীতায় মুখর থেকে নির্লজ্জ বেহারা
পালকীর গান ভুলে এঁকে যায় হৃদয়বিলে কার্বন ডাইঅক্সাইড
আর...
বৃক্ষ জীবনের প্রেম নিয়ে লোমশ বুকজমিনে জিহ্বার পেলব শিহরণ
ছড়ায় কুশুমবুচি।
অনন্ত ক্ষুধা আর তন্দ্রার মাঝামাঝি বসে বালক জীবনের ফসিল
গ্রহণের ফলে দিয়েছে প্রেমিক উচ্চতর দক্ষতার ধ্যানমগ্নতা...
ফলে সুখদক্ষিণা দিচ্ছে নারীজন্ম,
দিবো পুর্নজন্মেও সমগ্র ইন্দ্রিয়তে
যাবতীয় স্বাদ এনে দিবো কল্কের জরায়ু ছিঁড়ে
দাঁড়কাকের জীবন
করতালিতে মুখর হয়ে ভুলে যাইনি দাঁড়কাকের জীবন
একটা সাবানের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকা দৃষ্টি
বিড়ালের সাথে মিলে যায়।
বনপ্লেটের উচ্ছ্বিষ্ট ফেলনা হলেও কৃপণতা
প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে বড় বেশি চাকচিক্যের।
আহা বিড়াল! আহা দাঁড়কাক!
তোদের সাথে সইপাতা জীবনের মর্ম আকাশে ভাসে
আর জানালা দিয়ে ভেসে আসে সাকুরার সৌরভ
এসো তালপাতা, আমরাও মাতাল হই বৃষ্টিবেলায়
যদি এক ঝাক চাঁদ পায়ে লুটিয়ে প্রণাম করে-
তবে কি ভুলে যাবো বিড়ালের সাথে উচ্ছ্বিষ্টের প্রেম!
যদি দেয়াঙ পাহাড় মাথায় করে গান করে শুক্লাপক্ষে
আর নেমে আসে ঝিরঝিরিয়ে ঝরনা দেহের ভাঁজে ভাঁজে
তবে কি ভুলে যাবো দাঁড়কাকের লোভাতুর প্রেম!
…
একদিন ভুলে যাবো, যাবো কল্কে হাতে ননীদের পাড়ায়
মহল্লা জুড়ে নাচবো- আর ভুলে যাবো দাঁড়কাকের জীবন
পাখি
পালকের স্পর্শে ভেঙে গেছে ঘুম-
এখন রাতভর জেগে থাকি পাখির স্বপ্নে
বিমূর্ত প্রেমের জৌলুস রঙ খেলে
জেগে আর ঘুমে শুধুই অঙ্কুরিত ভ্রম
আফ্রোদিতির আত্না ভর করে দেহের গহীনে
এক পেগ মদ ঠোঁটে ঢেলে ফাঁদ পেতে থাকি
সোনাপাখির আদি-অন্তে সুখ ছড়াবো বলে ।
সুখের অফুরন্ত বৃষ্টি আচ্ছন্ন করে ডুবিয়ে
তলিয়ে যায় সমস্ত জনপদ
যেখানে পাখি নেই- কেবলি তার আবেশ
পালকে কাম, পালকে প্রেম-কাহারবা, দাদরা, ঝুমুর…
বিষণ্নতার দিন ভেঙে জ্যোৎস্নার উজ্জ্বলতায় গান হবে
ও পাখি, এসো জেগে আছি মহাকালের রথে-
তোমার ধ্রুপদী রঙে আমাকে সাঁজাবে বলে
অলঙ্করণ : ইন্টারনেট অবলম্বনে
.............................................................
ঈদ সংখ্যার সূচিপত্র দেখতে ক্লিক করুন :