X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

পরিচয়ের অভিজ্ঞান

মোস্তফা তারিকুল আহসান
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:০০আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:০৪

পরিচয়ের অভিজ্ঞান
সৈয়দ শামসুল হক বাংলাদেশের একজন প্রধান লেখক। বাংলা ভাষাকে যে গুটিকয়েক লেখক সৃজনশীলতার উৎকর্ষে ব্যবহার করেছেন, শাসন করেছেন তাদের মধে তিনি অন্যতম। বাংলা সাহিত্যের কোনো কোনো শাখায় তিনি পথিকৃত। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, কলাম, অনুবাদ, শিশু সাহিত্য প্রভৃতি শাখায় তিনি দক্ষতার সাথে লিখেছেন। পঞ্চাশ দশকের এই লেখক আমাদের সাহিত্যকে যে উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন তা কোনো একক ব্যক্তির জন্য ঈর্ষণীয় সফলতা। সব্যসাচী নামটি তাঁর জন্য সত্যিকার অর্থে প্রযোজ্য। অসামান্য এই লেখককে নিয়ে খুব বেশি সিরিয়াস ও সদর্থক আলোচনা হয়েছে এমন বলা যাবে না। অনেক বিরূপ সমালোচনাও লক্ষ্য করা গেছে। সবই আমাদের অপরিপক্কতার উদাহরণ। একজন অনুজ লেখক হিসেবে, একজন গবেষক হিসেবে বিভিন্ন সময়ে তাঁর সান্নিধ্যে আসার সুযোগ আমার হয়েছিলো। অনেক কথা অনেক আলাপ এবং স্মৃতি; তারই কিছু অংশ নিচে বয়ান করা হলো।

নব্বই দশকের মাঝামাঝি আমার একজন শিক্ষক সম্মান শ্রেণির শেষ বর্ষের মৌখিক পরীক্ষার সময় তিনি ধরে নেন যে আমি লেখাপড়ায় ভালো এবং তিনি তার কাছে এম এ শ্রেণিতে গবেষণা করার প্রস্তাব দেন। আমি খুব হতচকিত হয়ে গেলাম। আমি লেখাপড়া করতাম মনোযোগ দিয়ে তবে কখনো গবেষণা করতে হবে বা করতে পারবো তা ভাবিনি। নব্বই দশকের একজন লেখক হিসেবে তখন আমার লেখা প্রতি সপ্তাহে বের হয় বিভিন্ন দৈনিকে ও সাময়িকীতে। শৈলি ও সুন্দরম পত্রিকায় নিয়মিত প্রবন্ধও লিখতাম। আমার শিক্ষককে আমি বললাম, আমার পক্ষে গবেষণা করা সম্ভব নয়। তিনি আমাকে বললেন, তোমাকে এমন একটি বিষয় দেবো যে তুমি খুব সহজে লিখতে পারবে, তোমার মতো করে লিখবে। আমি বললাম, তাহলে হয়তো পারবো। তিনি বললেন, তোমার বিষয় সৈয়দ শামসুল হকের কাব্যনাট্য। আমি রাজি হলাম।

সেই থেকে সৈয়দ শামসুল হক আমার পাঠ্যবস্তু হয়ে উঠলো। আর শুরু হলো তাঁর সাথে সম্পর্কের অভিজ্ঞান। তারপর থেকে দুই দশকের অধিক সময়ে সৈয়দ শামসুল হক হয়ে উঠলেন অন্যদের মতো আমারও হক ভাই। তিনি হক ভাই বললে খুশি হন। কারণ তিনি হয়তো চান যে সবাই তাকে যুবক বা তরুণ ভাবুন। আমিও তাই ভাবি। তার পোশাক-আশাক, চালচলন, এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপে তাঁকে তরুণই মনে হয় সব সময়। একজন নতুন প্রজন্মের লেখক হয়ে একরম মহা উচ্চতার লেখকের সান্নিধ্য পাওয়া সৌভাগ্যের বটে। তবে দুটো কারণে এটাকে খুব বড় করে আমি দেখতে পারিনি। প্রথমত, অন্যদের কাছ থেকে আমি জেনেছিলাম যে তিনি মানুষ হিসেবে খুব কড়া ধরনের এবং মেজাজি। এমনকি আমার একজন শিক্ষক বলেছিলেন, গবেষণা করছ ভালো কথা, তবে তার কাছে যাবার দরকার নেই। আমি এম এ থিসিস করার সময় সত্যি সত্যি তার কাছে যাইনি । কিছুটা ভয়েই বলতে হবে। দ্বিতীয়ত, কোন বিখ্যাত লেখক বা বিশিষ্ট মানুষের সাথে কথা বলার আলাদা কোনো আকর্ষণ আমার কখনো ছিলো না। আমার পাশ দিয়ে বিখ্যাত সব মানুষেরা চলে গেছেন আমি কখনো তাদের পথ আগলে দাঁড়িয়ে কথা বলার চেষ্টা করিনি। অহমিকা নয়, এই হাঙ্গামা আমার পছন্দ না। এমনি কথা বলেছি স্বাভাবিক পরিচয়সূত্রে।

তবে এম এ থিসিস নিয়ে পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হয়ে তাঁর সাথে দেখা করতে একরকম আদেশ দিলেন আমার স্যার সফিকুন্নবী সামাদী। ঠিকানা সংগ্রহ করে গুলশানে তাঁর মঞ্জুবাড়িতে হাজির হলাম একদিন। আগেই ফোনে কথা হয়েছিল। যিনি ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়ে’র লেখক তাঁর সাথে দেখা করা, কথা বলা তো নতুন লেখকের জন্য রীতিমত বিস্ময়ের। তিনি আমাকে ভালোভাবে তাঁর গৃহে অভ্যর্থনা করলেন। দেয়ালে তাঁর নিজের করা কিছু চিত্রকর্ম দেখলাম, একটি কুকুর ছিলো ফটকের কাছে। সেটাকে দেখে আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। তিনি খুব সহজে কুকুরটিকে বশে এনে অন্যদিকে পাঠিয়ে দিলেন। তাঁর কাব্যনাট্য নিয়ে লেখা থিসিসটি তাঁর হাতে দিয়ে আমার পরবর্তী পরিকল্পনার কথা তাঁকে বললাম। তিনি উৎফুল্ল হলেন শিশুর মতো (পরবর্তীকালে উপলব্ধি করেছি তাঁর মধ্যে শিশুসুলভ স্বভাব রয়েছে)। স্ত্রী আনোয়ারা সৈয়দ হককে ডাকলেন। বললেন, দ্যাখো, এই ছেলে কী বলে। সে আমার ওপর একটা থিসিস করেছে, এখন নাকি পিএইচডি করবে। তোমার দেশের ছেলে (আপার দেশের বাড়ি ছিলো যশোরে আর আমার সাতক্ষীরা)। আনোয়রা সৈয়দ হক এলেন, তিনিও খুব খুশি হলেন। আমরা চা খেতে খেতে অনেক কথা বললাম। হক ভাই বাংলাদেশের ছোটগল্পের ইংরেজি একটি সংকলন আমাকে দিলেন। সেখানে তাঁরও গল্প ছিলো। তবে বললেন, কোন বই-টই আমি তোমাকে দিতে পারবো না। লাইব্রেরি বা বাংলাবাজারে খোঁজ কর। আমার কাছে কোনো বই থাকে না। পরে বুঝেছিলাম এটা তাঁর একটা কৌশল।

সেই শুরু। তারপর অনেক বার তাঁর সাথে যোগাযোগ হয়েছে, আলাপ হয়েছে নানাভাবে, অনেক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি। পরিচয়ের সূত্র পোক্ত হয়েছে। তাঁর জন্মদিনে পত্রিকার অনুরোধে লিখেছি। বিশেষ করে দৈনিক সংবাদে। তিনি পড়ে মন্তব্য করেছেন। ধন্যবাদ দিয়েছেন।

প্রতিবার যখন তাঁর জন্মদিন আসে আমি তাকে নিয়ে লিখতে চাই।  প্রতিবার লিখিনি তবে অনেকবার লিখেছি। বলতে দ্বিধা নেই তাঁকে নিয়ে লিখতে আনন্দ পাই তবে মাঝে মাঝে দ্বিধান্বিত হয়েছি। কেনো দ্বিধান্বিত হয়েছি সেটা অনেকটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। স্বীকার করছি মানুষ সৈয়দ হকের চেয়ে লেখক সৈয়দ হক আমার কাছে বেশি প্রিয়। বাংলাদেশের সাহিত্যে তিনি নিঃন্দেহে এক মহীরূহ আবার এমন মহীরূহ যে তার সাথে অন্য বড় বড় গাছের তুলনা করা  চলে না। আজকে হক ভাইয়ের লেখালেখি নিয়ে খুব কথা বলার ইচ্ছে নেই। বরং তাঁকে নিয়ে, তার সাথে পরিচয়ের সূত্র নিয়ে কিছু কথা বলি।

আমি দাবি করতে পারি আমার মতো  সৈয়দ হক কেউ পড়েননি; কারণ আমি খুটে খুটে তাঁর সব লেখা পড়েছি। আজও পড়ি। হয়তো কেউ বলবেন একাডেমিক দায়িত্ব থেকে পড়েছি তবে কথাটা সম্পূর্ণ ঠিক নয়। কারণ  সৈয়দ হকের লেখাই আমাকে টেনে গিয়েছিল তাঁর কাছে। ১৯৯৪ সালের শেষের দিকে তাঁকে নিয়ে আমার যাত্রা শুরু। শুরু হলো তাঁর কাব্যনাট্য নিয়ে। তাঁর কাব্যনাট্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখি তিনি অসাধারণভাবে আমাকে পরাজিত করে ফেলেছেন। তখন তাঁর অন্য লেখা পড়া শুরু হলো।‘তাস’নামক গল্পগ্রন্থ এবং ‘অনু বড় হয়’উপন্যাস দিয়ে তাঁর রচনা পড়া শুরু করলাম। কাব্যনাট্যের তত্ত্ব নিয়ে পড়তে হলো টি এস এলিয়টের নির্বাচিত প্রবন্ধ। সৈয়দ হক বলেছিলেন, এলিয়টের নাট্যভাবনা আমাকে ক্রয় করে ফেলে। একই সঙ্গে তিনি মৈমনসিংহ গীতিকাকে  আমাদের নাটকের আদিপাঠ হিসেবে ঘোষণা দিলেন। সৈয়দ হক বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন মধ্যযুগের অন্যতম সেরা পাঠক ও বোদ্ধা। এ বিষয়ে তাঁর পঠন পাঠন ঈর্ষণীয় । তিনি আমাদের সাহিত্যের মৌল আধার থেকে ঋণ নিতে চেয়েছেন। তাঁর আধুনিক সাহিত্য পড়লে সাধারণ পাঠক হয়েতো বুঝবেন না তিনি কী গ্রহণ করেছেন বাংলা সাহিত্য থেকে। তবে যাদের কিঞ্চিৎ অনুধ্যান আছে তারা বুঝবেন তাঁর কবিতা নাটক এমনকি গল্পে বিশেষত যেখানে গ্রামীণ পটভূমিতে রচিত লেখাগুলোর রচনাকৌশল তিনি গ্রহণ করেরেন আমাদের প্রাচীন সাহিত্যধারা থেকে। এ এক গুণী লেখকের গুণপনা যিনি অনবরত সাহিত্যকে নতুন দৃষ্টি দিয়ে দিয়ে দেখেন।

সৈয়দ হক প্রধান লেখক হলেও খুব জনপ্রিয় নন, সেটা হবার কথাও নয়। তবে তিনি যেখানে প্রতিষ্ঠত হয়েছেন সেখানে সব সময় ছিলেন না। তাকেও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। আবার একদল লেখক সমালোচক ছিলেন বা আছেন যাঁরা তাকে সহ্য করতে পারেন না। তাঁর লেখালেখি নিয়ে ভ্রুকুঞ্চন করেন। আমি বলবো সেটা ছিল তাদের অসূয়াবোধ থেকে। ১৯৯৭ সালে যখন সৈয়দ হককে নিয়ে পরিপূর্ণ গবেষণার কাজ শুরু করি তখন আমাকে নানা কথা শুনতে হয়েছে। আমার শিক্ষকেরা পর্যন্ত আমাকে নিষেধ করেছেন। কাব্যনাট্য নিয়ে কাজ করার সময় আমার একজন শিক্ষক বলেছিলেন, ওর সাথে দেখা করতে যাবে না, দুর্ব্যবহার করবে। তাঁকে নিয়ে গবেষণা করছি, তিনি খুব খুশি তবে কোনো দিন কোনো বইপত্র বা তথ্য দিয়ে সাহায্য করেননি। আমি বছরের পর বছর তাঁর লেখা খুঁজেছি হন্যে হয়ে। আমি জানি না তাঁর কাছে কোনো কপি ছিল কি না। তবে গবেষণা শেষে তিনি আমাকে আমাকে একটা দীর্ঘ চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠি খুঁজলে হয়তো পাবো, কখনো প্রয়োজন মনে করলে হয়তো ছাপতেও দেব। আজ শুধু তার সারমর্ম বলছি স্মৃতি থেকে। তিনি বলেছিলেন, তোমাকে গবেষণার কাজে সাহায্য করিনি বলে হয়তো আমার ওপর রাগ করেছ, রাগ করা খুবই স্বাভাবিক। কারণ আমাকে নিয়ে তুমিই প্রথম এতবড় কাজ করছো। আমার তো উচিত ছিলো তোমাকে বইপত্র দিয়ে সাহায্য করা। আসলে আমি চেয়েছিলাম আমাকে নিয়ে গবেষণা হোক আমার প্রভাব ছাড়াই, গবেষণা হোক নিরপেক্ষভাবে। আমি দেখতে চাই আমার ব্যাখ্যা ও প্রভাব ছাড়াই আমার লেখা সম্পর্কে গবেষক বা সমালোচক কী বলছেন। সত্যিকার অর্থে এর পরে আর তেমন রাগ করার থাকে না। তাঁর অনেক সাক্ষাৎকার আমি ব্যবহার করেছি অনেক পত্রিকা থেকে। আমি নিজেও অনেক আলাপ করেছি। ঠিক অফিসিয়ালি স্বাক্ষাৎকার নয় সেগুলো।

একটা বিষয় না বললে নয়। নিজের লেখা নিয়ে হক ভাইয়ের উচ্চ ধারণা আছে বরাবরই। আমি মনে করি না এটা খারাপ। বরং এই বোধ তাকে উজ্জীবিত করে। একদিন তিনি বলেছিলেন কবিদের পাওনা অনেক। কতটুকু তোমরা তাকে দিতে পার। অনেক সাংবাদিক তাঁকে উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করেছেন। হক ভাইয়ের রাগ খুব বেশি। অল্পতেই চটে যান। এক সাংবাদিক একবার একটা প্রশ্ন করেছিলেন, আপনার উপন্যাস বৃষ্টি  ও বিদ্রোহীগণে সবার নাম উল্লেখ করেছেন, জিয়াউর রহমানের নাম নেই কেন? হক ভাই রেগে গিয়ে বললেন, ওহে ছোকরা তোমার বয়স কত? আইয়ুব খানের বুটের তলায় আমাদের যৌবন পিষ্ট হয়েছে, তুমি আমাকে রাজনীতি শেখাও?

আমি তাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি কী মনে করেন আপনি যে পঞ্চাশটির মতো উপন্যাস লিখেছেন তার মধ্যে একটাও খোয়াবনমার সমান? তিনি রেগে গেলেন। বললেন, কী বলতে চাও স্পষ্ট করে বলো। আমি বললাম, খোয়াবনামার মতো গভীর উপন্যাস কী আপনার রয়েছে? তিনি বললেন, খোয়াবনামায় কী আছে। আমি বললাম, একটা জাতির স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষার জন্য ইলিয়াস নতুন একটা জগৎ ভাষা ও জীবনধারা তৈরি করেছেন যা মিথিকাল। তিনি রেগে গিয়ে বলেছিলেন, তাতে কী হয়? আমি আর কথা বাড়াইনি। সত্যিকার অর্থে কেউ কারো মতো নয়।

একটা ফুটনোট এখানে দিতে পারি। আমি সত্যিকার অর্থে কোনো গবেষক নই। বাংলাদেশে যারা লেখালেখি করেন তার সবাই আমার লেখার জগত সম্পর্কে জানেন। আমি একজন লেখক হিসেবে আর একজন লেখককে মূল্যায়ন করতে চেয়েছিলাম। তাঁকে নিয়ে আমাকে বিভিন্ন ফেরামে কথা বলতে হয়েছে। আমার বন্ধুরা আমাকে বাধা দিয়েছেন। আমি বাংলাদেশের পাঠকদের পাঠবোধ ও রুচি  নিয়ে আশ্চর্য হয়ে যাই। আমার সেমিনারে আমাকে সবাই প্রশ্ন করেছিল ‘খেলারাম খেলে যা ’নিয়ে। আমি বলেছিলাম, সৈয়দ হক শুধু খেলারামের লেখক নন। আর খেলারাম বাংলাদেশের উপন্যাসের একটি টার্নিং পয়েন্ট, যেখানে সৈয়দ হক প্রথম সাহসের সাথে মানুষের যৌনতাকে মর্যাদা দিয়েছেন। পঞ্চাশের এই কথাসাহিত্যিক কত বিচিত্রভাবেই না আমাদের উপন্যাস ও গল্পকে ঋদ্ধ করেছেন আর তুলে এনেছেন বাংলাদেশের সামূহিক বাস্তবতাকে। অথচ তারা শুধু পড়েন একটি উপন্যাস।

হক ভাইয়ের সাথে সম্পর্কটা ঘনিষ্ট বলতে হবে তবে তা ছিল অম্লমধুর। তাঁকে নিয়ে দৈনিক সংবাদে একবার বড় একটা লেখা লিখেছিলাম; সৈয়দ হক : জলেশ্বরীর মাঝি। সকালে তিনি ফোন করে আমার খুব প্রশংসা করলেন। এটা মনে হয় বিরল ঘটনা তাঁর জন্য। তাঁকে নিয়ে কাজ করেছি বলে তিনি বিভিন্ন জায়গাতে আমার কথা উদাহরণ হিসেবে বলেছেন, আমি নানা প্রসঙ্গে শুনেছি। তিনি যে আমাকে বেশ পছন্দ করেন সেটা বুঝেছি অনেক পরে। তিনি মুখে কখনো বলেন না। রাজশাহী যতবার এসেছেন ততবার তিনি আমাকে খুঁজেছেন। একসাথে অনেক অনুষ্ঠান করেছি। কবি আসাদ মান্নান তাঁকে একবার সম্মাননা দিয়েছিলেন। আমি তাঁর সম্পর্কে বেশ দীর্ঘ বক্তৃতা করেছিলাম। আমি উল্লেখ করেছিলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতার খবর প্রথম বিবিসি থেকে সৈয়দ হক পাঠ করেন। অনুষ্ঠান শেষে তিনি বলেছিলেন, এত কথা বলতে হয় না। মুখে তার সেই চাপা হাসি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথী হয়ে এসেছেন একবার। স্টেজে বসেই ফোন করলেন; তুমি কোথায়, দেখছি না কেন? চলে এসো। ওই অনুষ্ঠানে আমি যাবো না সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যেতে হলো তাঁর কথামতো। আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত প্রত্রিকা নিরিখ তাকে দিলাম। দিলাম আমার প্রকাশিত একটি গল্পের বই। তিনি খুব খুশি হলেন। একবার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা আমার প্রকাশিত গানের অনুষ্ঠানে (ইন্দিরা গান্ধি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, গুলশান) তিনি উপস্থিত ছিলেন। আগে ভাগে জানতেন না বোধহয় কার গান। আমিও ছিলাম না সেখানে। তিনি ফোনে আমার গানের প্রশংসা করলেন। এটাও একাট বিরল ঘটনা। আমি বললাম, হক ভাই, আমি জানি আপনি কত উঁচু মানের গীতিকার, আমরা কী বা লিখব? তিনি কথা ঘুরিয়ে নিয়ে বললেন, তুমিও ভালো গান লিখেছ। এইসব কথা হক ভাই সাধারণত বলেন না। তিনি ক্ষ্যাপাটে ধরণের মানুষ। তাকে আসলে বোঝা মুশকিল। তিনি বলেছেন, তাঁর মধ্যে এক যাযাবর মানুষ বাস করে। তিনি সবার সাথে একরকম ব্যবহার করেন না। একবার বাংলা একাডেমির বার্ষিক সভায় আমরা কজন দুপুরের খাবার খাচ্ছি। তিনি বন্ধু কাইয়ুম চৌধুরীকে নিয়ে খাবার নিতে যাচ্ছেন। এবং দেখলেন আমরা খাচ্ছি। তিনি বললেন, ও তোমরা খাওয়ার জন্যে রাজশাহী থেকে এসেছে। আমরা বললাম, হ্যাঁ, আমাদের খুব অভাব। খাবার খেতে এসেছি। তার আচার ব্যবহারে ভুল বোঝার খুব সুযোগ রয়েছে। তবে একজন কালজয়ী, সত্যিকার লেখক হিসেবে তাঁর এসব ব্যবহার নিঃসন্দেহে ভুলে থাকা যায়।


 

সৈয়দ শামসুল হকের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত।

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গ্রেনাডাতেও ওয়েবস্টার-ক্যারির ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ালো অস্ট্রেলিয়া
গ্রেনাডাতেও ওয়েবস্টার-ক্যারির ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ালো অস্ট্রেলিয়া
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৫)
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি