X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

যে লোকটি Dog, দুঃখিত, কুকুর হয়ে গিয়েছিল || ওসবালদো দ্রাগুন

ভাষান্তর : সৌম্য সরকার
২৮ মে ২০১৯, ০৮:০০আপডেট : ২৯ মে ২০১৯, ১৬:২৫

ওসবালদো দ্রাগুন জন্মেছেন আর্হেন্তিনার এন্ত্রে রিওস-এ, ১৯২৯ সালে। বুয়েনোস আইরেস-এ যান ১৯৪৫-এ যেখানে তিনি কয়েকটি নিরীক্ষাপ্রবণ থিয়েটার দলের সাথে যুক্ত হন। কিছুদিন পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা ছাড়েন থিয়েটার করার জন্য। পরপর বেশ কয়েকটা ইতিহাসভিত্তিক নাটক লেখেন তার মধ্যে আছে লা পেস্তে বিয়েনে দে মেলোস এবং তুপাক আমারু। ১৯৫৬ সালে তিনি অনেকগুলো একাঙ্ক লেখেন যাদের প্রধান সুর প্রায় একই—মেনে নিতে নিতে এবং মানিয়ে চলতে চলতে ব্যক্তির না-মানুষে (সব সময়ই পশু অর্থে নয়) পরিণত হওয়া এবং তার ফল। যে লোকটি কুত্তা, দুঃখিত, কুকুর হয়ে গিয়েছিল সেই সিরিজের নাটক। দ্রাগুনের অন্যান্য নাটকের মধ্যে আছে লস দে লা মেসা দিয়েস, হিসতোরিকা দে মি এসকেনা, এল হারদিন দেল ইনফিয়েরনো, আমোরেত্তা, উন মালদিতো সাবাদো যে লোকটি Dog, দুঃখিত, কুকুর হয়ে গিয়েছিল || ওসবালদো দ্রাগুন

চরিত্র

প্রথম অভিনেতা

দ্বিতীয় অভিনেতা

তৃতীয় অভিনেতা

অভিনেত্রী

 

দ্বিতীয় অভিনেতা : প্রাণপ্রিয় বন্ধুরা আমার, চলো গল্পটা এভাবে বলি...

তৃতীয় অভিনেতা : যেভাবে ওরা আমাদের গল্পটা বলেছিল, এই তো, এই বিকালেই...

অভিনেত্রী : গপ্পোটা হচ্ছে সেই লোকটার যে কুত্তা, দুঃখিত, কুত্তা বললে ওরা মাইন্ড করে, কুকুর হয়ে গিয়েছিল...

তৃতীয় অভিনেতা : খোলা চত্বরের ঐ যে বেঞ্চটা গল্পটার শুরু ঠিক ওখানে—দুই বছর আগে। দেখুন, ঐ যে ওখানটায়... যেখানটায় বসে আপনি একটি পত্রের মর্মার্থ উদ্ধার করতে চাচ্ছেন (কেমন কাব্যিক হলো, বলুন!)

অভিনেত্রী : এবং ওখানে, আমাদের দুই হাত প্রসারিত করে একহাতে পৃথিবীর মুড়ো আর অন্যহাতে পা ধরে ঠিক অ্যাকর্ডিয়নের মতো করে আমরা বলেছিলাম ‘বাজো অ্যাকর্ডিয়ন, বাজো’—কোনো মানে দাঁড়াল কি?

দ্বিতীয় অভিনেতা : এইখানে তার সাথে আমাদের দেখা। [প্রথম অভিনেতা ঢোকে]। সে ছিল... [প্রথম অভিনেতাকে দেখিয়ে]... যেমন দেখছেন, এমনই, বেশি কিছু নয়। এবং একটু বেশি বিষণ্ন। একটু।

অভিনেত্রী : আমাদের সাথে দোস্তি হয়ে গেল তার। সে খুঁজছিল কাজ আর আমরা... আমরা তো করি অভিনয়।

তৃতীয় অভিনেতা : স্ত্রীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তার, আর আমরা করি অভিনয়

দ্বিতীয় অভিনেতা : জীবন নিয়ে সে স্বপ্ন দেখত—অন্যদের মতো এবং রাতে চিৎকার করে ঘুম থেকে উঠতো অথবা ঘুম ভেঙে গেলে চিৎকার করে উঠতো অথবা দুটো একসাথে—অন্যদের মতো। আর আমরা করি অভিনয়।

অভিনেত্রী : আমাদের সাথে তার দোস্তি হয়ে গেল, স্বভাবতই। সে ছিল এমনই... [দেখিয়ে] এর চেয়ে বেশি কিছু না।

সবাই : এবং একটু বেশিই বিষণ্ন!

তৃতীয় অভিনেতা  : সময় চলে গেল। হেমন্ত... 

দ্বিতীয় অভিনেতা  : গ্রীষ্ম...

অভিনেত্রী : শীত...

তৃতীয় অভিনেতা : বসন্ত...

প্রথম অভিনেতা : মিথ্যা কথা! আমি কোনো বসন্ত দেখিনি!

দ্বিতীয় অভিনেতা : হেমন্ত...

অভিনেত্রী : শীত...

তৃতীয় অভিনেতা : গ্রীষ্ম। এবং আমরা গেলাম তাকে দেখতে। কারণ সে আমাদের বন্ধু। বন্ধুদের এসব করতে হয়। তাই আমরা গেলাম...

দ্বিতীয় অভিনেতা : গিয়ে আমরা জিজ্ঞেস করলাম আমাদের বন্ধু কেমন আছে। তার স্ত্রী আমাদের বলল...

অভিনেত্রী : আমি জানি না...

তৃতীয় অভিনেতা : অসুস্থ নাকি?

অভিনেত্রী : জানি না।

দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অভিনেতা : এখন কোথায়?

অভিনেত্রী : কুত্তার, মানে কুকুরের খোঁয়াড়ে [প্রথম অভিনেতা ঢোকে চার পায়ে]

দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অভিনেতা : উহ্হ!

তৃতীয় অভিনেতা : [ভালো করে দেখে] আমি এই খোয়াড়ের প্রধান কর্মকর্তা।  কাজটা ভালোই। এখানে সে কুত্তার, মানে কুকুরের মতো ডাকতে ডাকতে এসেছিল (কুকুরের মতো করে ডাকাটা কুকুর হওয়ার প্রধান শর্ত এখানে) যদিও সে সুট-প্যান্ট পরা ছিল তবুও নিঃসন্দেহে, নির্দ্বিধায় বলা যায় সে কুকুরই

দ্বিতীয় অভিনেতা : [তোতলিয়ে] আমি হচ্ছি গিয়ে প-প-পশু চিকিৎসক। আর এটা আমার কাছে প-প-পরিষ্কার। যদিও তাকে দেখতে মা-মা-মানুষের মতো। এ হচ্ছে আসলে একটি নি-নি নিরেট কু-কু কুত্তা, মানে, কু-কু-কুকুর।

প্রথম অভিনেতা : [দর্শকদের প্রতি] আর আমি? আমি কী বলতে পারি বলুন? আমি নিজেই জানি না আমি কুত্তা মানে ভদ্র ভাষায় কুকুর না মানুষ। আমার বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত আপনারাও বলতে পারবেন না। খুব সাধারণভাবে ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল—যেভাবে হয় আরকি। আমি একটা কারখানায় গেলাম কাজের খোঁজে। তিনমাস হলো কোনো কাজ পাচ্ছি না এবং আমি গেলাম—যেভাবে আপনি হলে যেতেন, বা আপনি অথবা আপনি।

তৃতীয় অভিনেতা : চোখের মাথা খেয়েছো? পড়োনি, কী লেখা? ‘কর্ম খালি নাই’! এত্ত বড় করে লেখা!

প্রথম অভিনেতা : পড়েছি তো! কিন্তু দেখুন, কিছু কি নেই আমার জন্য?

তৃতীয় অভিনেতা : যদি লেখা থাকে ‘কর্ম খালি নাই’ তার মানে নেই!

প্রথম অভিনেতা : অবশ্যই, অবশ্যই। কিন্তু আমার জন্য কি কিছু নেই?

তৃতীয় অভিনেতা : তোমার  জন্য না, স্বয়ং প্রেসিডেন্টের জন্যও না!

প্রথম অভিনেতা : আচ্ছা, কিন্তু কিছু একটা কি আমার জন্য নেই?

তৃতীয় অভিনেতা : না।

প্রথম অভিনেতা : লেদ অপারেটর...

তৃতীয় অভিনেতা : না!

প্রথম অভিনেতা : মেশিন...

তৃতীয় অভিনেতা : না!

প্রথম অভিনেতা : সে-সে-সে সেক্রেটারি

তৃতীয় অভিনেতা : না!

প্রথম অভিনেতা : টুকটাক কাজের লোক...

তৃতীয় অভিনেতা : না!

প্রথম অভিনেতা : স-স-সর্দার...

তৃতীয় অভিনেতা : না আ আ!

প্রথম অভিনেতা : নৈশ প্রহরী! নৈশ প্রহরী! নৈশ প্রহরী যদি হয় তা-ও!

অভিনেত্রী : [যেন বাঁশি বাজাচ্ছে] টুউউউট, টুউউউট, টুউউউউউউট। বস! [দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিনেতা একে অপরকে কীসব সংকেত দেয়]

তৃতীয় অভিনেতা : [দর্শকদের] ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ, নৈশ প্রহরীর কুত্তা, মানে, কুকুর গত পরশু রাতে ইন্তেকাল ফরমাইয়াছেন দীর্ঘ পঁচিশ বছরের প্রাণান্ত আত্মনিবেদনের পর।

দ্বিতীয় অভিনেতা : তিনি ছিলেন একজন প্রবীণ কুত্তা মানে কুকুর

অভিনেত্রী : আমিন

দ্বিতীয় অভিনেতা : [প্রথম অভিনেতাকে] তুমি কি জানো কীভাবে কুত্তার, মানে, কুকুরের মতো করে ডাকতে হয়?

প্রথম অভিনেতা : লেদ অপারেটর...

দ্বিতীয় অভিনেতা : তুমি কি জানো কীভাবে কুত্তা মানে কুকুরের মতো করে ডাকতে হয়?

প্রথম অভিনেতা : মেশিন...

দ্বিতীয় অভিনেতা : তুমি কি জানো কীভাবে কুত্তা মানে কুকুরের মতো করে ডাকতে হয়?

প্রথম অভিনেতা : রাজমিস্ত্রী...

দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিনেতা : কর্ম খালি নাই!

প্রথম অভিনেতা : [থেমে, দম নিয়ে] ঘেউউউউউ... ঘেউ... ঘেউউউউউউ...

দ্বিতীয় অভিনেতা : চমৎকার, চমৎকার, চলবে! অভিনন্দন...

তৃতীয় অভিনেতা : আমরা তোমাকে দিনে একশ টাকা, কুকুরের ঘর আর খাবার দেব।

দ্বিতীয় অভিনেতা : আপনারা দেখলেন, সে দিনে একশ টাকা আয় করা শুরু করল। একটা আসল কুকুরের প্রতিদিনের আয়ের বেশি।

অভিনেত্রী : যখন ঘরে ফিরল সে তার চাকরির গল্প করল। সে তখন মাতাল।

প্রথম অভিনেতা : [স্ত্রীর প্রতি] কিন্তু ওরা আমাকে বলেছে যখনই কোনো শ্রমিক অবসর নেবে বা মারা যাবে বা ছাটাই হবে আমি কাজটা পাব। হাসো মারিয়া, নাচো মারিয়া! ঘেউউউ, ঘেউউউউ, ঘেউউউউ... আনন্দ করো, মাস্তি করো, চিল্ করো মারিয়া!

দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিনেতা : ঘেউ, ঘেউউউ... ঘেউউউউ, ঘেউউউউউউ, হাসো মারিয়া, আনন্দ করো, মাস্তি করো, চিল...

অভিনেত্রী : ও ছিল মাতাল। বেচারা...

প্রথম অভিনেতা : পরের রাতে আমি কাজ শুরু করলাম... [সে চার পায়ে হাঁটা শুরু করে]

দ্বিতীয় অভিনেতা : কুত্তাঘরটি, মানে, কুকুরের বাসস্থানটি তোমার জন্য কি বেশি ছোটো?

প্রথম অভিনেতা : আমি এতটা নিচু হতে পারি না

দ্বিতীয় অভিনেতা : বেশি আঁটোসাঁটো লাগে?

প্রথম অভিনেতা : হ্যাঁ!

দ্বিতীয় অভিনেতা : ঠিক আছে, কিন্তু শোনো, আমাকে হ্যাঁ, ট্যা এসব বলবে না। তোমার ‘নতুন তুমি’র সাথে নিজেকে মানিয়ে চলতে শুরু করতে হবে। বলো, ঘেউউউ, ঘেউউউউ!...

দ্বিতীয় অভিনেতা : আঁটোসাঁটো লাগে? [প্রথম অভিনেতা জবাব দেয় না]। এখানে কি আঁটোসাঁটো লাগে?

প্রথম অভিনেতা : ঘেউউউউ... ঘেউউউউ...!

দ্বিতীয় অভিনেতা : বেশ... [সে চলে যায়]

প্রথম অভিনেতা : সে রাতে বৃষ্টি হলো খুব এবং আমাকে কুত্তাঘরে মানে কুকুরের ঘরে থাকতে হলো

দ্বিতীয় অভিনেতা : [তৃতীয় অভিনেতাকে] এ ঘরে ওর আর আঁটোসাঁটো লাগে না...

তৃতীয় অভিনেতা : এবং সে এখন কুত্তাঘর ওরফে কুকুরের ঘরে।

দ্বিতীয় অভিনেতা : [প্রথম অভিনেতাকে] দেখলে তো, কীভাবে একজন কিছু একটাতে অভ্যস্ত হয়ে যায়?

অভিনেত্রী : লোকজন যে কোনো কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে যায়...

দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অভিনেতা : আমিন...

অভিনেত্রী : এবং সে এটাতে অভ্যস্ত হয়ে যেতে শুরু করে।

তৃতীয় অভিনেতা : এখন, শোনো, যখন তুমি কাউকে আসতে দেখবে, ঘেউ-ঘেউ করবে, বুঝলে? দেখি করতো!

প্রথম অভিনেতা : [দ্বিতীয় অভিনেতাকে দৌড়ে পাড় হতে দেখে] ঘেউ-ঘেউ-ঘেউ, ঘেউউউউ, ঘেউউ! [দ্বিতীয় অভিনেতা এবার চুপি চুপি পাড় হতে চেষ্টা করে] ঘেউউ, ঘেউউ, ঘেউউউউ। [প্রথম অভিনেতা চলে যায়]

তৃতীয় অভিনেতা : একশ টাকা আমাদের বাজেটের হিসাবে বেশি হয়ে যাচ্ছে

দ্বিতীয় অভিনেতা : হুমমমম!

তৃতীয় অভিনেতা : ...কিন্তু লোকটা খুব দায়িত্ববান

দ্বিতীয় অভিনেতা : হুমমমম!

তৃতীয় অভিনেতা : তাছাড়া মৃত কুত্তা মানে কুকুরটার চেয়ে সে বেশিও খায় না

দ্বিতীয় অভিনেতা : হুমমমম!

তৃতীয় অভিনেতা : ওর পরিবারকে আমাদের একটু সাহায্যও করা কর্তব্য

দ্বিতীয় অভিনেতা : হুমমম! হুমমম! হুমমমমমম!

[তারা চলে যায়]

অভিনেত্রী : কিন্তু তবুও, ও সবসময় বিষণ্ন থাকতো। বাসায় ফিরলে আমি চেষ্টা করতাম কিছুটা আনন্দ দিতে। [প্রথম অভিনেতা ঢোকে] আজ বাসায় আমার কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন এসেছিল।

প্রথম অভিনেতা : তাই নাকি?

অভিনেত্রী : ক্লাবে যে আমরা নাচতাম, মনে আছে তোমার?

প্রথম অভিনেতা : হুম!

অভিনেত্রী : কোন গানের সাথে আমরা নিয়মিত নাচতাম বলো তো?

প্রথম অভিনেতা : জানি না

অভিনেত্রী : ‘জানি না’ মানে কী? ‘ওরে সখী, ছেড়ে গেলি...’ সত্যি মনে নেই? [প্রথম অভিনেতা চার পায়ে দাঁড়ায়] একদিন তুমি আমার জন্য কী একটা বেগুনী আর গোলাপী রঙের ফুল নিয়ে এলে [তাকায় প্রথম অভিনেতার দিকে এবং প্রচণ্ড ভয় পায়] কী করছ তুমি?

প্রথম অভিনেতা : মানে?

অভিনেত্রী : চার পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে তুমি... [অভিনেত্রী বের হয়ে যায়]

প্রথম অভিনেতা : আমি আর নিয়ে পারছি না। বসের সাথে কথা বলতে হবে!

[দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অভিনেতা ঢোকে]

তৃতীয় অভিনেতা : ব্যাপার হলো কোনো জায়গা তো খালি নেই...

প্রথম অভিনেতা : ওরা বলল একজন বৃদ্ধ শ্রমিক মরা গেছে

তৃতীয় অভিনেতা : হ্যাঁ, কিন্তু আমরা একটু ঘাঁটতি-বাজেটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আর কয়েকদিন অপেক্ষা করো, কেমন?

অভিনেত্রী : এবং সে অপেক্ষা করল। তিনমাস পর আবার গেল।

প্রথম অভিনেতা : [দ্বিতীয় অভিনেতাকে] ওরা বলল একজন অবসরে গেছে...

দ্বিতীয় অভিনেতা : হ্যাঁ, কিন্তু সে যে বিভাগে কাজ করতো ওটাই আমরা বন্ধ করে দিতে চাই। আর কিছুদিন অপেক্ষা করো, ঠিক আছে?

অভিনেত্রী : এবং সে অপেক্ষা করল। দুইমাস পর আবার গেল।

প্রথম অভিনেতা : [তৃতীয় অভিনেতাকে] শ্রমিক ধর্মঘটের সময় আপনারা যাদের বরখাস্ত করেছেন তাদের একজনের কাজটা আমায় দিন...

তৃতীয় অভিনেতা : অসম্ভব। ওই জায়গাগুলো খালি থাকবে...

দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিনেতা : শাস্তি হিসেবে [তারা চলে যায়]

প্রথম অভিনেতা : আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না... চাকরি ছেড়ে দিলাম!

অভিনেত্রী : অনেকদিন পর সে ছিল আমাদের সুখের রাত। [অভিনেত্রী প্রথম অভিনেতার হাত ধরে] এই ফুলটার নাম কী?

প্রথম অভিনেতা : ফুল...

অভিনেত্রী : আর ঐ তারাটার নাম যেন কী?

প্রথম অভিনেতা : মারিয়া।

অভিনেত্রী : [হেসে] ওটা আমার নাম জনাব!

প্রথম অভিনেতা : তারাটারও তাই, তারাটারও তাই [মারিয়ার হাত নেয় হাতে এবং চুমু খায়]

অভিনেত্রী : [হাত টেনে নেয়] কামড় দিয়ো না!

প্রথম অভিনেতা : কামড় কেন দেব, আমি তোমাকে চুমু খেতে যাচ্ছিলাম মারিয়া...

অভিনেত্রী : আহ্, আমার মনে হলো তুমি আমায় কামড় দেবে...

[সে বেরিয়ে যায়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিনেতা ঢোকে]

দ্বিতীয় অভিনেতা : অবশ্যই...

তৃতীয় অভিনেতা : ...এবং তার পরের দিন সকালে...

দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিনেতা : তাকে আবার চাকরির খোঁজে বের হতে হলো।

প্রথম অভিনেতা : আমি বেশ কয়েকটা জায়গায় গেলাম কিন্তু না। শেষে এক জায়গায়...

তৃতীয় অভিনেতা : দেখো, ...আমাদের এখানে কোনো খালি নেই। শুধু...

প্রথম অভিনেতা : শুধু কী?

তৃতীয় অভিনেতা : গত রাতে নৈশ প্রহরীর কুত্তা মানে কুকুরটি মারা গেছে

দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিনেতা : বেচারা কুত্তা ওরফে কুকুর...

প্রথম অভিনেতা :  তার মানে আমাকে আবার রাজী হতে হলো।

দ্বিতীয় অভিনেতা : আমরা তাকে দিনে একশ পঞ্চাশ টাকা করে দিলাম। [দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অভিনেতা ইতস্তত চিন্তিত হাঁটাহাঁটি করে] হুমমম! হুমমমম!... হুমমমম!...

দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিনেতা : আচ্ছা একশ পঞ্চাশ টাকাই সই! [তারা চলে যায়]

অভিনেত্রী : অবশ্যই সাড়ে চার হাজার টাকা মাসে আমাদের ঘর ভাড়াই হতো না...

প্রথম অভিনেতা : দেখো, আমি যেহেতু কুত্তাঘর মানে কুকুরঘরেই থাকতে পারি, তুমি চার-পাঁচজন মেয়ের একটা মেসে উঠে যাও, আচ্ছা?

অভিনেত্রী : এ ছাড়া আর কী করা? যেহেতু তোমার বেতনে আমাদের খাওয়া ঠিকমতো চলে না...

প্রথম অভিনেতা : দেখো, যেহেতু মাংসের হাড়েই আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি, আমি তোমার জন্য মাংসটুকু নিয়ে আসব, ঠিক আছে?

দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিনেতা : [ঢুকতে ঢুকতে] ডিরেক্টরিয়াল বোর্ড রাজি হয়েছেন।

প্রথম অভিনেতা এবং অভিনেত্রী : ডিরেক্টরিয়াল বোর্ড রাজি হয়েছেন... হুররে ডিরেক্টরিয়াল বোর্ড!

[দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিনেতা চলে যায়]

প্রথম অভিনেতা : ততদিনে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এমনকি কুত্তাঘর মানে কুকুরঘরটি আমার কাছে একটু বড়ই মনে হতে লাগল। চার পায়ে হাঁটাটা দু’পায়ে হাঁটার চেয়ে এমন কিছু পৃথক মনে হলো না। মারিয়া আর আমি খোলা চত্বরে দেখা করতে লাগলাম। [মারিয়ার দিকে আগায়] তুমি তো আমার কুত্তাঘর মানে কুকুরঘরে থাকতে পারবে না আর আমিও যেহেতু তোমার রুমে যেতে পারব না... কিন্তু এক রাতে...

অভিনেত্রী : হাঁটছিলাম আমরা। হঠাৎ কেমন অসুস্থ বোধ করাছলাম...

প্রথম অভিনেতা : কী হয়েছে তোমার?

অভিনেত্রী : কেমন অসুস্থ লাগছে।

প্রথম অভিনেতা : কেমন কী?

অভিনেত্রী : [কাঁদতে কাঁদতে] আমার মনে হয় আমাদের একটা বাচ্চা হবে...

প্রথম অভিনেতা : সেজন্য কাঁদছো?

অভিনেত্রী : আমার ভয় হচ্ছে..., আমার ভয় হচ্ছে!

প্রথম অভিনেতা : কিন্তু কেন?

অভিনেত্রী : আমার ভয় হচ্ছে..., আমার ভয় হচ্ছে! আমি কোনো বাচ্চা চাই না!

প্রথম অভিনেতা : কেন না মারিয়া, কেন না?

অভিনেত্রী : আমার ভয় হচ্ছে... যে বাচ্চাটি যদি... [ফিসফিসিয়ে বলে] যদি... কুত্তা মানে কুকুর...

[প্রথম অভিনেতা মারিয়ার দিকে তাকিয়ে এত ভয় পায় যে দৌড়ে বের হয়ে যায় ঘেউ ঘেউ করতে করতে। মারিয়া মেঝেতে পড়ে যায়। তারপর ওঠে]

  :         ও চলে গেল... দৌড়ে চলে গেল! কখনো দু’পায়ে কখনো চার পায়ে।

প্রথম অভিনেতা : কথা সত্য না। আমি দু’পায়ে দাঁড়াইনি। পারছিলাম না আর। পিঠে ব্যথা করছিল চেষ্টা করলেই! ঘেউউউউউ... গাড়িগুলো আমাকে প্রায় চাপা দিয়ে দিচ্ছিল... লোকজন আমার দিকে এমনভাবে তাকাতে লাগল! [দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অভিনেতা ঢুকল] যান! যান আপনারা! কুত্তা মানে কুকুর দেখেননি মায়ের পেট থেকে পড়ে?

দ্বিতীয় অভিনেতা : লোকটা পাগল! ডাক্তার ডাকো [চলে যায়]

তৃতীয় অভিনেতা : মাতাল, মাতাল, পিকে! পুলিশ ডাকো! [চলে যায়]

অভিনেত্রী : পরে লোকজন আমায় বলেছিল। একজন দয়ালুগোছের মানুষ ওর দিকে আগালো....

দ্বিতীয় অভিনেতা : [ঢুকতে ঢুকতে] ভাই, আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে। চারপায়ে এভাবে কি থাকা যায় বলুন? আপনি কি জানেন কত সুন্দর জিনিস আছে দেখার চারদিকে? যা আপনি দু’পায়ে দাঁড়িয়ে চোখ ঘুরিয়ে উল্টে-পাল্টে দেখতে পাবেন? আচ্ছা চলুন, আমি ধরছি... এই তো, দাঁড়ান... এভাবে...

প্রথম অভিনেতা : [দাঁড়াতে দাঁড়াতে, হঠাৎ] ঘেউউউউউ, ঘেউউউউ [দ্বিতীয় অভিনেতাকে কামড়ে দেয়] ঘেউউউউ ... ঘেউউউউ... [চলে যায়]

তৃতীয় অভিনেতা : [ঢুকতে ঢুকতে] এরপর দু’বছর পর, এতদিন ওকে না দেখে আমরা যখন ওর খোঁজ নিতে গিয়ে ওর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করি—‘ও কেমন আছে?’ সে জবাব দেয়—

অভিনেত্রী : জানি না।

দ্বিতীয় অভিনেতা : সে কি ঠিক আছে?

অভিনেত্রী : জানি না।

তৃতীয় অভিনেতা : সে কি অসুস্থ?

অভিনেত্রী : জানি না।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিনেতা : কোথায় এখন?

অভিনেত্রী : কুত্তার মানে কুকুরের খোঁয়াড়ে।

তৃতীয় অভিনেতা : আমরা যখন এখানে আসছিলাম একজন কুস্তিগীরকে চলে যেতে দেখলাম।

দ্বিতীয় অভিনেতা : লোকজন জানলো সে লেখাপড়া জানে না কিন্তু তাতে কী এসে যায় কারণ সে জানে কীভাবে কুস্তি করতে হয়।

তৃতীয় অভিনেতা : মতের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছে এমন একজন চলে গেল...

অভিনেত্রী : একজন পুলিশ চলে গেল...

তৃতীয় অভিনেতা : একজন সাংবাদিক, একজন শিক্ষক, একজন ব্যাংকার...

দ্বিতীয় অভিনেতা : ...সবাই চলে গেল, এবং সবাই চলে গেল..., এবং আপনি, এবং আপনি, এবং আপনিও চলে গেলেন। আর আমাদের মনে হলো আমাদের বন্ধুর গল্পটা আপনাদের কাছে কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাবে।

অভিনেত্রী : কারণ হয়তো আপনাদের মধ্যেই কোনো নারী যিনি এখন ভাবছেন ‘আমি হয়ত একটা... আমি হয়ত একটা... [ফিসফিস করে] কুত্তা মানে কুকুর...

তৃতীয় অভিনেতা : অথবা এমন কেউ যাকে নৈশ প্রহরীর কুত্তার, মানে, কুকুরের চাকরিটা অফার করা হয়েছে... কারণ সেটাই শুধু খালি আছে...

অভিনেত্রী : যদি না হয় ভালো, আমরা হাসি আমরা খুশি

দ্বিতীয় অভিনেতা : কিন্তু যদি সেটাই হয়, মানে কেউ যদি চায় আপনাদের মধ্যে কেউ কুত্তা বা কুকুর হয়ে যান, আমাদের বন্ধুর মতো তাহলে... তাহলে... কী আর করা... সে অন্য গল্প!

 

ইংরেজিঅনুবাদ : ফ্রানসেসকা কোলেসিয়া এবং হুলিয়ো মাতাস।

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ