X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এই ভ্রমণ আর কিছুই নয়

জফির সেতু
২৫ আগস্ট ২০১৯, ১৫:৫২আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০১৯, ১৫:৫৫

এই ভ্রমণ আর কিছুই নয় ১.

আমরা যখন জম্মুতে নামলাম

আর শেয়ারে-ভাড়া টেক্সিতে আবিষ্কার করলাম

এক দীঘলদেহী কাশ্মীরি যুবককে

আমরা ভাবলাম, এ নিশ্চয়ই র্টেররিস্ট!

 

আমি হামিদ শেখ! যুবাটি হাত বাড়িয়ে দিল

আমিও হাসলাম

আর সারাটা পথ আফসোস হলো কেন যে

হ্যান্ডশেক করলাম!

 

২.

আমি হামিদের সঙ্গে ফের কথা বলতে চাইনি!

কিন্তু সে নাছোড়বান্দা!

লোভ দেখিয়ে কথা শুরু করল, আহা!

এপ্রিলে আসলেই ভালো করতেন।

এখনকার টিউলিপের বাগানগুলো বেশ সুন্দর।

তবু মরশুমটা মন্দ নয়!

জানেনই-তো কাশ্মীরকে সাহেবরা বলেছে, ভূ-স্বর্গ!

 

কথার ফাঁকে হামিদ আমার হাত স্পর্শ করল

আর আমিও শিহরিত হলাম ভয়ে

 

আমার স্ত্রীর চোখও শক্ত হতে চলেছে।

 

৩.

একটা জায়গায় ট্যাক্সি থামল।

পাহাড়ি রাস্তায় একটা বিরতি। জানতাম না।

পূর্বালাপ ব্যতীতই হামিদ আমার স্ত্রীকে ইশারা করল নামতে।

আমিও ইঙ্গিত করি।

এবার হামিদ একটা কাঠের ঘরের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে,

এখানে পানাহার করতে পারেন।

তারপর সে হাওয়া।

আমি আমার স্ত্রীর হাত মুঠোতে নিয়ে বললাম,

ছেলেটা খুব ভালো, দ্যাখো।

 

৪.

ট্যাক্সি স্টার্ট দিতেই কোথা থেকে এসে হামিদ নিজের সিটে বসে।

এই প্রথম লক্ষ করি তার মুখ ফোলা, চুল উস্কখুস্ক আর চোখদুটি লাল।

আমার তাকানো দেখেই হামিদ নিজ থেকেই বলে,

মা অসুস্থ, তাই ছুটে এলাম।

টানা তিনদিন ধরে আমিও জ্বরে ভুগছি।...

মা হয়ত এবার আর বাঁচবে না।

হামিদ কি প্রলাপ বকছে?

আমি নিশ্চিত নই।

বাড়িতে তাকে দেখার তো আর কেউ নেই!

 

৫.

কাঠের খাবার ঘরে হামিদকে দেখিনি আমি।

আমার স্ত্রীও ইতিউতি করে খুঁজেছিল তাকে।

এখন দেখছি ট্যাক্সিতে বসে বারবার বোতলের পানি খাচ্ছে!

আমাদের সাথে কিছু আখরুট ছিল,

শিমুল তা-ই দিল খেতে, বলল নিন!

র্টেররিস্টের প্রতি দয়া দেখে আমি অবাক হলাম।

হামিদ সলজ্জ গ্রহণ করল, থ্যাংকস্!

 

তারপর খেতে খেতে বলল

জানেন, ভারতবর্ষে আমাদের জন্য একটা চাকরিও থাকবে না।

ছয়টা বছর রাস্তার কুকুরের মতো ঘুরছি,

সব অফিসেই ওরা বলে, তোমাদের তো ৩৭০ আছে! আছে না?

 

৬.

লাঞ্চের সময় আরেকটা বিরতি।

শিমুলকে সরাসরিই বলে হামিদ, কী খেতে পছন্দ করেন?

এসব অঞ্চলে তাজা ভেড়ির গোস্তের বল সব পর্যটকেরই পছন্দ।

ওটা না-খেয়ে যাবেন না।

আমরা গোস্তের বলই নিলাম। অপূর্ব তার স্বাদ। সঙ্গে রুটি।

কিন্তু হামিদ আবারও লা-পাত্তা।

এবার ফিরল তাড়াতাড়ি, হাতে ড্রিংকস্-জাতীয় কিছু।

ইয়ে লিজিয়ে দিদি! হামিদের গলাটা কাঁপল বলে মনে হলো।

আমি গোস্তের বলে শেষ কামড়টা দিচ্ছিলাম।

ওরা আমাদের শরীরের সবটুকু মাংস খুবলে খেয়েছে।

এখন হাড়টুকু বাকি।

হামিদ ফিসফিস করে বলল।

 

৭.

হামিদকে আমরা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

একজন টেররকে বিশ্বাস করা যায় না।

 

সে বলছিল, আপনারা মেহমান!

আমাদের বাড়িটা শ্রীনগর থেকে একটু দূরে।

যদি নিয়ে যেতে পারতাম মা খুব খুশি হতো।

আমাদের একটা আপেল বাগানও আছে।

কিন্তু জানেন তো, ওরা শুধুই সন্দেহ করে

আর আপনারাও হয়ত যেতে চাইবেন না!

হামিদের কাছে আমরা ধরা পড়ে গেলাম!

 

শিমুল পাইনগাছের দিকে তাকিয়ে বলল, ইস্ কি সুন্দর!

 

৮.

ওরা প্রথমে তুলে নিয়ে গেল আমার বোনকে।

তারপর বাবা একদিন নিখোঁজ হলো।

আমার ছোটো ভাইটার তখন গোঁফ গজাচ্ছে

সেও একদিন স্কুল থেকে ফেরত আসল না।

আমি পালিয়েই বাঁচি!

 

একটা হামিদের গল্প। আবদুল হামিদ শেখ।

বলেছিল বিদায়ের কালে, শ্রীনগর পৌঁছার আগেই।

 

৯.

হামিদের গল্প শেষ হয়ে যায়নি।

শেষ হয়ে যায় না।

সে বলেছিল, আমরাও ইনসান।

আর ইনসান জাত কখনো হারে না।

আমরা লড়াই করে বাঁচব।

এই মাটি দেব, কিছুতেই দেবনা।

এই মাটিতে আমাদের পূর্বপূরুষেরা ঘুমিয়ে আছেন।

 

আজও হামিদের কণ্ঠ বাজে, হামারা ইনসান হ্যায়!

 

১০.

হামিদ বারবার বলছিল, সাবধানে থাকবেন।

আমাদের ভয় আরও বেড়ে গিয়েছিল।

এই সবুজ উপত্যকার ভেতরে কেবলই রক্তের ফোয়ারা?

 

ট্যাক্সি থেকে নামতে নামতে সেল ফোনের নম্বরটি

একটা পৃষ্ঠায় টুকে দেয়, দরকার হলে কল দেবেন।

আমাদের কল দেওয়া হয়নি।

 

কিন্তু হামিদের চলে যাওয়ার দৃশ্য ভুলতে পারি না।

 

১১.

সুড়ঙ্গ ভেদ করে আমরা যখন কাশ্মীরে পৌঁছলাম,

মনে হলো এটা মর্ত্যভূমি নয়।

সারাটা আকাশ নীলের পরিবর্তে সবুজে-ভরা

বাতাসটাও অদ্ভুত শীতল,

আর পাইনগাছের ভাঁজে ভাঁজে কুচি কুচি বরফ,

পাহাড়ের ঢালুতে বরফের নদী এঁকেবেঁকে চলছে

আমরা দুজন তো প্রায় চিৎকার করে উঠলাম,

হামিদ বলল, ওরা সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে

আগের কিচ্ছুটি আর এখানে নেই!

হয়ত বরফে হাত দিলেন, বেরিয়ে এল মানুষের হাড়।

 

১২.

ড্রাইভার শুনছিল আমাদের আলাপন।

আকাশের দিকে তাকিয়ে শুধু বলল,

এখন এখানে বৃষ্টিও হয় না

ঝরনাও ছোটে না

এখন এখানে শুধু গুলি ঝরে

 

আর ঝরনার পরিবর্তে বুটের আওয়াজ।

 

১৩.

জাফরান চিনেন তো?

তার রং ও খুশবু শ্রেষ্ঠ জানবেন।

কিন্তু পোড়া কপাল, ওরা সেটাকেও কেড়ে নিল

 

এখন জাফরানের গন্ধে আঁতকে ওঠে উপত্যকার মানুষ

কারণ তাতে শুধু পোড়া বারুদের গন্ধ লেগে আছে

 

আর ওই যে যাকে বলে জাফরানি রং

আমাদের মেয়েরা তা পছন্দও করত বেশ

পুরো গা-ঢাকা পোশাক বানাতো নিজ হাতে

এখন জানবেন তা কেবলই রক্তের রং

 

আমি মূর্খ মানুষ জনাব

যতটা জানি এই আমাদের ইতিহাস।

 

গাড়ি চালাতে চালাতে আমাদের মাঝবয়েসি

ড্রাইভার জব্বার আলি কথাগুলো বলল,

তার চোখেও বাষ্প জমে উঠেছে

আমার মনে হলো, এ-রক্ত নয়তো?

...

//জেডএস//
সম্পর্কিত
প্রিয় দশ
দোআঁশে স্বভাব জানি
প্রিয় দশ
সর্বশেষ খবর
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
প্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
ভারতে দ্বিতীয় দফায় ভোটপ্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি