ভাষাবোধ বিনিময়
ক্রমক্ষয়িষ্ণু অসুখে হারাচ্ছি ভাষাবোধ
চমস্কির বিশ্বব্যাকরণও আমাকে সুস্থ রাখেনি
মণ্ডলের কাল গত হচ্ছে আর আমার সক্ষমতা
লোপ পেতে পেতে শূন্যবিন্দুতে বিলীন-প্রায়
আমার বোধের ছাউনিতে বিষম কার্বনের স্তর
স্বগোত্রীয় ধ্বনিগুলো অদ্ভুত অচেনা লাগে,
সমধ্বনি ও সংকেত খুব বিমূর্ত এখন;
অথচ পাখি, ফুল, বৃক্ষ কুৎসিত বনজ চিৎকারও স্পষ্ট
বসু যেমন জেনেছিলেন লজ্জাবতীর সমাজভাষা
মাটির বুলি ভুলে যাচ্ছি তাহলে?
না কি অক্ষর বর্ণমালা বদলে যাচ্ছে
আমার এ অসুস্থতায় কারো কথা শুনতে বা
বলতে ইচ্ছে করে না, জানি না বাইনারি বাচনকলা
এর চেয়ে সহজ পথে কুড়ানো ঝাপসা ঠোঙার পাণ্ডুলিপি বা
কারো ফেলে যাওয়া বাজার-সদাই তালিকা
উচ্ছ্বাসে পড়ে ফেলি, ডিকোড করতে ব্যর্থ হই বারবার—
যখন কেউ তত্ত্বকথার বিবর্ণ কিছু সৎকার পড়তে বলে
অথবা শ্মশানপোড়া কাগজি প্রেমের গান শোনায়;
ক্ষমা করো! আমার মাথার নিউরনে ক্ষয় ধরেছে
সাটারে মেঘ জমেছে, তোমাদের কথা,
সুন্দর অক্ষর চিনতে পারছি না, ব্যর্থ
বিফল সমগোত্রীয় শব্দ-বাক্য বুঝি না
কোডহীন শব্দের বলয়ে হারাতে অনিচ্ছুক আমি;
আমার সামর্থ্যহীন স্তব্ধতা, নীরবতা নিয়ে
সান্ধযাত্রায় যেতে চাই
আমি তবে ভীত, সন্ত্রস্ত তোমাদের কথা নিয়ে,
তোমাদের টেরাকোটা বংশভাষা, সুন্দর শব্দচয়ন
জীবনানন্দীয় অভিসম্পাতে বন্যপ্রাণীর খাদ্য হয় কি না?
ভূগোলের প্রণালির মতো না-বোঝার ফারাক
থাক না অবশেষ আমার অক্ষমতার
কিছু না-মানুষ, অবোধ, অবাধ্য, ভাষাহীন
অক্ষমতার সংকেতে আমি গর্বিত
আমি এক বোধহীন বধির
তোমাদের সাথে বিনিময়ের ধ্বনি নেই, নেই আবেগ;
একমাত্র অভিশপ্ত জাঁ জেনের সাক্ষাতে আমার বোধহীন
শব্দগুলো জানাতে পারি;
ক্ষমা করো সকলে!
কেঁপে ওঠা বৃক্ষপাতার বন্দনা উতলা করে,
রুদ্ধকণ্ঠে অনুচ্চারিত থাকুক, আমার অক্ষমতা—
তোমাদের ভাষা বুঝি না।
বৈঠক
বৈঠক! কার সাথে কে বসে...
তোমার-আমার, জন্ম থেকে শত্রুতার রুইতন গলে ঝোলানো,
কিম ও ট্রাম্প হাত মিলিয়ে বসেন, হাসেন আরো কতজন
আর আমরা আনন্দে উচ্ছ্বাসে
শান্তির জয়ধ্বজা উড়াই; দুই মেরুর সকল পাথর বসাই থাকে
কখনো জলের স্রোতে নেমে আসে তৃণদলের কাছে
যেখানে একদল হরিণ জিভযোগে কসরৎ করছিল বহুদিন
পাথর চাপায় মুছে যাচ্ছে হরিণদলের জিহ্বা, পা ও নখের চিহ্ন
ক্ষুধার শব্দও কেউ শোনেনি, শুধু হিংস্রতার সুন্দরে স্মৃতিগুলো ম্লান;
অতি ক্ষুদ্র বাসনায় আমরা বসতে চাই, বসা হয় না
তেমন উঠান নেই
আহারে বিনয় সরকারের বৈঠক, সামান্য প্রেমের আলাপন।