X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

রবিউল হুসাইনও চলে গেলেন : নির্মলেন্দু গুণ

শ্রুতিলিখন : আবীর আদনান
৩০ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:২১আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:২৩

রবিউল হুসাইনও চলে গেলেন : নির্মলেন্দু গুণ

রবিউল হুসাইন ওয়াজ অ্যা ভেরি সোশ্যাল পারসন। তিনি অনেক মানবিক এবং আবেগপ্রবণ মানুষ ছিলেন। তার সঙ্গে যারা মিশেছেন তারা তার দিলখোলা চেহারাটা সবসময়ই দেখেছেন। তার মধ্যে কোনো ধরনের কুটিলতা ছিলো না। তিনি ফ্রেন্ডলি ছিলেন এবং খুব জেন্টেলম্যান ছিলেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার একটি স্টেটমেন্ট ছিলো, স্বাধীনতা এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তার একটি বিশ্বাস ছিলো, তিনি কখনো ওই গৌরব-রেখাকে অতিক্রম করেননি। বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আমি যে ধরনের বিশ্বাস পোষণ করি, তিনি ঠিক সেরকম বিশ্বাস করতেন, ফলে আমি তাকে পছন্দ করতাম। কিন্তু কবিতার জায়গায়—তার কবিতার ভাষা, কবিতার প্রকরণ—কোনো দিক থেকেই পাঠকচিত্তকে সেই অর্থে বড় পরিসরে আন্দোলিত করতে পেরেছে কিনা সে প্রশ্ন রয়েই যায়। তবে কবিতা নিয়ে তিনি আন্দোলন করেছেন, যদিও সেই চেষ্টার ফসল হিসেবে তিনি যা রেখে গেছেন তা কেউ সেভাবে পাঠ করছে কিনা আমার জানা নেই।

সাহিত্যকর্মী হিসেবে তিনি প্রথম থেকেই সমাদৃত ছিলেন। জাতীয় কবিতা পরিষদ সহ নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক-সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। আমার সঙ্গে তার পরিচয় হয় স্বাধীনতার আগেই। তারা ‘না’ নামে একটি পত্রিকা বের করতেন। তখন তারা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তেন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শরীফ মিয়ার ক্যান্টিন-কেন্দ্রিক যে সাহিত্যচর্চা বা আড্ডা ছিলো সেখানেই প্রথম আমার ওই ‘না’ গোষ্ঠীর সঙ্গে পরিচয় হয়। ইন্টেলেকচুয়ালদের আড্ডা ছিলো ওখানে। তারা আর্ট কলেজ থেকে আসতেন—আর্ট কলেজ তখন আলাদা ছিলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ছিলো না, আর ওদিকে মেডিকেল কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি থেকে এসে সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিলিত হতেন।

ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি, মেডিকেল কলেজ এবং আর্ট কলেজে যারা সাহিত্যচর্চা করতেন তারা কিন্তু মনে করতেন তারা মেইন-ট্রাকে নেই, অফ-ট্রাকে। মেইন-ট্রাকটা ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক, সুতরাং তারা এখানে এসে আড্ডা দিতেন। আমরা কিন্তু কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে মেডিকেল কলেজ কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে আড্ডা দেইনি। এর মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি থেকে যারা আসতেন তাদের মধ্যে ছিলেন রবিউল হুসাইন। আরো ছিলেন—জামাল খান, চলচ্চিত্র নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন ঘটানো খসরু—বোহেমিয়ান এবং ক্ষুব্ধ একজন মানুষ—স্যাড, হাংরি, এংরি; এদের সকলের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে আমার পরিচয় হয়।

তারা ঐ সময়ে একটি সাহিত্য আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, স্যাড জেনারেশন নামে, তবে ওইসময় থেকেই আমার মধ্যে যত স্পষ্টতা ছিলো অন্যদের মধ্যে তেমন ছিলো না। শেখ মুজিবকে নিয়ে কবিতা লেখার কথা বলি, শেখ মুজিব যে কবিতার বিষয় হয়ে উঠবেন এটা আমি ছাড়া ওইসময় আর কেউ ভাবেননি, তারপর শেখ মুজিব যখন বঙ্গবন্ধু উপাধি পেলেন তখন জসীম উদ্‌দীনের হাত দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দ্বিতীয় কবিতাটি লেখা হলো ‘বঙ্গবন্ধু’ নামে। তার মানে বঙ্গবন্ধু যখন বঙ্গবন্ধু হলেন তখন জসীম উদ্‌দীন নিশ্চিত হলেন, তাঁকে কাব্যের বিষয় করা যেতে পারে। কিন্তু আমি তা টের পেয়েছিলাম ছয় দফা পাঠ করেই।

রবিউল হুসাইন ও ষাটের কয়েকজন কবি স্যাড জেনারেশন নামে একটি সাহিত্য আন্দোলনের সূত্র স্থাপন করেন। আমার জানা নেই, কে এটার প্রবক্তা ছিলেন। তবে আমি তাদের সঙ্গে ছিলাম না, আমার ভাবনার প্রকরণ ছিলো ভিন্ন, আমি আমাকেই তৈরি করতে চেয়েছি। তবে অ্যালেন গিন্সবার্গের সঙ্গে কথা এবং তাদের বিট জেনারেশনের যে সাহিত্য-আন্দোলন তার নির্যাস আমার মধ্যে ছিলো।

ষাটের কয়েকজন কবি মিলে যে স্যাড জেনারেশন করেছিলেন বা করতে চেয়েছিলেন তা পরবর্তীকালে শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা, উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধের মতো বড় প্রভাবের নিচে চাপা পড়ে যায়। পাকিস্তান থেকে বাঙালির মুক্তিটাই হয়ে পড়ে প্রধান বিষয়।

ষাট দশকের অনেক কবিই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, রবিউল হুসাইনও চলে গেলেন। চলে যাওয়াটাই নিয়ম। এই নিয়ম আমাদের সবাইকে পালন করতে হবে। ব্যতিক্রম ঘটানোর কোনো সুযোগ নেই।

তার প্রতি রইলো আমার শুভ কামনা, নিরন্তর।

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৫)
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
পাবনায় দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
পাবনায় দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে রয়েছে বিশ্বকাপে খেলার হাতছানিও!
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে রয়েছে বিশ্বকাপে খেলার হাতছানিও!