X
শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪
২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কোয়ারেন্টাইন ইন হসপিটাল

ফারজিনা মালেক স্নিগ্ধা
১৭ এপ্রিল ২০২০, ০৯:০০আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২০, ০৯:০০

করোনায় আমরা ভীত নই। বরং মোকাবেলা করছি গৃহে অন্তরীণ থেকে। এতে হয়ত কিছুটা বাড়তেও পারে মানসিক চাপ। তাই আসুন, খুলে দেই মনঘরের জানালা। নিজেকে চালিত করি সৃজনশীলতায়। আপনি নিয়মিত লিখছেন, বা এটাই হতে পারে আপনার প্রথম গল্প। লিখুন ফেসবুকে। চটজলদি ৫০০ শব্দের গল্প, বাংলা ট্রিবিউনের জন্য। একইসঙ্গে নমিনেট করুন আপনার পছন্দের আরও ১০ জন লেখককে। সেরা ১০ জন লেখক পাচ্ছেন কাগজ প্রকাশনের বই। আর অবশ্যই হ্যাশট্যাগ দিন #বাংলাট্রিবিউনসাহিত্য

কোয়ারেন্টাইন ইন হসপিটাল

শাহনাজ আপার সাথে এটা আমার সেকেন্ড ইন্টারভিউ। প্রথম ইন্টারভিউটা ছিল তার বাসায়।

'আপা, শোনেন, রাজধানী নাইলে ইতিহাস বাসে আসবেন। একেবারে শেষ স্টপেজ, নন্দন পার্ক পার হইয়া আরো সামনে। চান্দুরা বাস স্ট্যান্ড, মোড়েই দেখবেন মুজিবের কলেজ আছে, নতুন হইছে, মানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ।’
শাহনাজ আপার এক দমে কথা বলার অভ্যাস আছে। এটা অবশ্য আমার জন্য ভালো। আমার রিসার্চটা কুয়ালিটেটিভ। উত্তরদাতা যত কথা বলে তত ইনডেপথ তথ্য আসে।
ভালো কথা! এই ফাঁকে জানিয়ে রাখি। আমি শানু রহমান। ভ্যানক্যুইবারে যখন পিএইচডি করতে যাই, আমার সুপারভাইজাররা কোনোরকম ‘টাং টুইস্ট’ না করেই নামটা বলে ফেলেন! আমার নামের মতো, আমার রিসার্চ প্রজেক্টও তাদের পছন্দ হয়। আমার প্রজেক্ট হলো বাংলাদেশের মায়েদের অভিজ্ঞতা জানা; যাদের প্রতিবন্ধী বাচ্চা আছে।
বুঝতেই পারছেন, শাহনাজ আপা হলো তেমন একজন; রিসার্চ পারটিসিপেন্ট। প্রথম ইন্টারভিউ শেষ হলো, কী যেন একটা জিজ্ঞেস করা হলো না! ফেরার পথেই মনে পড়ল—ওনার হাত কাঁপছিল খুব। দ্বিতীয় ধাপে তিন মাস পর আরেকটা ইন্টারভিউ নেয়ার কথা। এরমধ্যেই লকডাউন। এবার ফোনেই সেরে নিতে হবে প্রশ্নোত্তর। আগেই নোট নেয়া ছিল, তাই একেবারেই প্রথম প্রশ্ন ছিল, ‘আপা, আপনার হাত কাঁপে কেন?’

শাহনাজ আপা আচমকা এই প্রশ্নে একটু থেমে গেলেন। আমার অভিজ্ঞতা বলে এই অপ্রত্যাশিত প্রশ্নগুলো ডিটেইল উপাত্ত বের করতে ওস্তাদ। তাই আমিও চুপ থাকি, সেও সময় নেয়। খানিকক্ষণ পরে বলে, ‘সেই সময়ের পর থেকেই। নার্সরা তো প্রথম তিন-চার দিন ব্যান্ডেজ খুলে গোসল করাইছে। তারপর তো আমিই করাইতাম। যেইদিন গোসল করাইতাম সেইদিন একটা সাবান পুরা লাগত। বিছানায় শুয়াইয়া ব্যান্ডেজ খুলা লাগত; রক্তে ভাইসা যাইতো। চিক্কুর পাইরা কানতে পারতো না; খালি গোঙ্গাইতো। সরকারি হাসপাতাল, তুলা স্যাভলনের অভাব নাই। এক বালতি পানিতে এত্তগুলা তুলা ভিজাইতো। আমার শাড়ি, বিছানা, বালিশ, আয়ার শাড়ি, নার্সের শাড়ি সব রক্তে একাকার হয়ে যাইত। নার্সরে দিয়া পরে আর ব্যান্ডেজ খুলাইতাম না। কেন জানেন? ওরা কেচি দিয়া ব্যান্ডেজ আর চামড়া একসাথেই কাটত। আমার সারা শরীর শিরশিরায়ে উঠত। উনারা বলে, পোড়া চামড়ার চেয়ে কাটা চামড়া শুকায় তাড়াতাড়ি, তাই এইটাই করা লাগবে। সাত বছরের বাচ্চা। আপনার মেয়ের বয়সও ওর মতোই। ক্যামন লাগবো যদি শরীরের চামড়া কেউ কেচি দিয়া কাটে?’

আমার গায়ে কেমন একটা কাঁটা দিয়ে গেল। আমার মেয়ে? শাহনাজ আপাও একটু চুপ রইল। ধীরে ধীরে আবার বলা শুরু করলেন, ‘আমি আর পরে ওদের হাতে দিতাম না মেয়েরে। ছয় মাস হাসপাতালে ছিলাম। ওর শুকাইতে তো আরো দুই বছর লাগছে। এই পুরা সময় আমি ব্যান্ডেজ খুইলা দুই-তিন দিন পরপর গোসল করাইতাম। রক্ত আপা। সব ভাইসা যাইত রক্তে। মানুষের শরীরে এত রক্ত! প্রথম দিকে তো সারা শরীর থরথরায়ে কাঁপত। এখন তো শুধু হাত। ঐ যে কাঁপা শুরু করছে, এই সাত বছর পরে আইসাও সেই কাঁপা থামে না।’
—‘ছয় মাস ঐ বার্ন ইউনিটেই ছিল?’

—‘হ, আমি আর ও। বাপ তো খালি আইতো আর যাইতো। চোখটাও বন্ধ করি নাই এইসময়, একবারের জন্যও না। হাসপাতালের বাইরেই দোকান, আমি যাই নাই কোনোদিন। কেন জানেন? খালি আজরাইলরে দেখতাম ওয়ার্ডে। প্রত্যেকটা দিন কাওরে না কাওরে নিয়া যাইতাছে। আমি চোখ বন্ধ করলেই যদি ওরে নিয়া যায়? সারাক্ষণ পাহারা দিতাম। এই পুরা ছয় মাস।’

ভীষণ ক্লান্তিতে একটা সময় ইন্টারভিউ শেষ হয়। নাহ! আজ অনেক পরিশ্রম গেছে। ইউনির ইমেইল খুলি। এই হোম কোয়ারেন্টাইনের দিনে যেন মানসিকভাবে হেলদি থাকি তার জন্য একগাদা সাজেশন দেয়া। যাক, সব স্ট্রেস বাদ! মুভির লিস্ট বানাই, এমন ছুটি আবার কবে পাবো, কে জানে!

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তানজিদের কারণেই ঝুঁকি নেননি সৌম্য
তানজিদের কারণেই ঝুঁকি নেননি সৌম্য
সংস্কৃতিতে আরও মেধা বিনিয়োগ করতে হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
সংস্কৃতিতে আরও মেধা বিনিয়োগ করতে হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সদস্য করার পক্ষে ভোট দিলো সাধারণ পরিষদ
ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সদস্য করার পক্ষে ভোট দিলো সাধারণ পরিষদ
কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলের বিস্ময় জাগানিয়া দল
কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলের বিস্ময় জাগানিয়া দল
সর্বাধিক পঠিত
২০ মিনিটে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর, চলবে না অটোরিকশা-বাইক
২০ মিনিটে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর, চলবে না অটোরিকশা-বাইক
চীন বিষয়ে বিশেষজ্ঞকে ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
চীন বিষয়ে বিশেষজ্ঞকে ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
একই গ্রাম থেকে নির্বাচিত হলেন তিন চেয়ারম্যান
একই গ্রাম থেকে নির্বাচিত হলেন তিন চেয়ারম্যান
প্রশ্নফাঁস: বিমানের ডিজিএমসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র
প্রশ্নফাঁস: বিমানের ডিজিএমসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র
দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে উদ্বেগ কতটা?
দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে উদ্বেগ কতটা?