X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্মৃতিতে দুর্গাপূজা

সেলিনা হোসেন
২৪ অক্টোবর ২০২০, ১৭:০৭আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২০, ১৭:৩৯

স্মৃতিতে দুর্গাপূজা ছোটবেলার ঈদ এবং পূজার আনন্দ আমার স্মৃতির সঞ্চয়। জীবনের সত্তর বছরের অধিক সময়ে কত স্মৃতি হারিয়ে গেছে, কিন্তু হারায়নি উৎসবের আনন্দের স্মৃতি। এখনো তীব্র আলোয় জেগে ওঠে সেই স্মৃতির অনির্বাণ শিখা।

মনে আছে একবার ঈদ এবং দুর্গাপূজা খুব কাছাকাছি সময়ে হয়েছিল। রোজার পরে ঈদের চাঁদ ওঠা দেখার জন্য আমরা ছোটরা মাঠের ধারে বসে থাকতাম। সূর্য ডুবে যেত। অন্ধকার নেমে আসত। আমরা বাটি ভরে মুড়ি-ছোলা-পেঁয়াজু-জিলাপি নিয়ে এসেছি। আযান হলে ইফতারি খাবো আর চাঁদের অপেক্ষায় থাকব। আকাশে চাঁদ দেখা গেলে আনন্দ-উল্লাসে ঘরে ফিরতাম। বলতাম, চাঁদ তুমি কি আমাদের সঙ্গে ঈদগাহে যাবে? সেমাই খাবে? হই-হই, রই-রই তোমার সেমাই আমরা খাই। চাঁদ মামা হাজার সালাম।

শৈশবের সেইসব দিনে বাবার সঙ্গে ঈদগাহে যেতাম। বড়রা নামাজে দাঁড়ালে আমরা ছুটোছুটি করে প্রজাপতি ফড়িং ধরতাম। ঘাসফুল ছিঁড়তাম। বুনোফুল খুঁজে গন্ধ শুকতাম। বাসায় ফেরার পথে কলাপাতা ছিঁড়ে টুকরো করে নিয়ে এসে মাকে বলতাম, মা সেমাই, জর্দা হয়েছে?

মা বলতেন, কলাপাতা ধুয়ে আনো। মা জানতেন, আমরা কার জন্য সেমাই, জর্দা চাচ্ছি।

কলাপাতা ধুয়ে আনলে মা সেমাই-জর্দা দিতেন। আমরা দৌড়াতে দৌড়াতে নিয়ে যেতাম বারুয়া কাকুর কাছে। তিনি করতোয়া নদীর খেয়াঘাটের মাঝি ছিলেন। নিম্নবর্গের হিন্দু। গরিব মানুষ। ঈদের দিনে আমাদের কাছ থেকে সেমাই-জর্দার অপেক্ষায় থাকতেন। আমরা দৌড়াতে দৌড়াতে তাঁর কাছে যেতাম। বলতাম, কাকু ঈদের সেমাই। তিনি দু’হাত বাড়িয়ে বলতেন, দে, দে সোনামণিরা। তাঁর উজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে আমরা অভিভূত হয়ে যেতাম। এই বয়স পর্যন্ত তাঁর উজ্জ্বল মুখ আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে। আমি সে স্মৃতি স্মরণ করে উৎসবের আনন্দ পাই। বুঝি উৎসব এমনই হওয়া উচিত। মানুষের আনন্দে যেন জোয়ার থাকে।

ঈদের উৎসবের পরেই পেতাম দুর্গাপূজার উৎসব। এই সময়ে আমাদের বিশেষ আনন্দ ছিল শিউলি ফুল কুড়ানো। নদীর ধারে ছিল গোঁসাইদের আখড়া। সেই আখড়ার বিশাল আঙ্গিনার দেয়াল ঘেঁষে ছিল বড় বড় দু-তিনটে বকুল গাছ। সেইসব গাছের পাশে ছিল শিউলি ফুলের গাছ। স্কুল ছুটির দিন সবাই মিলে ফুল কুড়োতে ছুটতাম। কোঁচড় ভরে ফুল নিয়ে ছুটতে ছুটতে সবাই মিলে চেঁচিয়ে বলতাম, আশ্বিন মাস, আশ্বিন মাস, সামনে পূজা। চাঁদ এবং শিউলি ফুলের উৎসব ছিল আমাদের শৈশব-কৈশোর।

আমার শৈশবে ঈদের মতো পূজাও ছিল ভীষণ আনন্দের। বিশেষ করে শারদীয় দুর্গাৎসবের কথা এখনো ভুলতে পারি না। শিশিরে মাখামাখি হয়ে গাছের নিচে পড়ে থাকা শিউলি ফুল কুড়াতে কুড়াতে শরতের স্নিগ্ধ হাওয়া গায়ে মেখে বুঝতেই পারতাম না কখন যে দুর্গাপূজা এসে গেল।

প্রতিমা বানানো হচ্ছে। মাটি, বাঁশ, খড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরি দশহাতের দুর্গা চোখের সামনে আস্তে আস্তে ফুটে উঠত। একদিন দেখতাম পায়ের নিচে মহিষাসুর, যাকে বধ করা হয়েছে। আছে আমার প্রিয় সরস্বতী। যার বাহন রাজহাঁস। আছে লক্ষ্মী। যার বাহন পেঁচা। আছে গনেশ। যার বাহন ইঁদুর। আছে কার্তিক। যার বাহন ময়ূর। আছে সিংহ। স্বয়ং দেবীর বাহন। ছোটবেলায় এসব কিছুই সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হতে দেখেছি। আজও ভুলিনি এই হয়ে ওঠার ছবি। একদিন রঙ লাগানো হয়। একদিন শেষ হয়ে যায় প্রতিমা তৈরির কাজ। এবং ঘুম ভাঙে একদিন ঢাকের শব্দে। বুঝে যাই সেদিন ষষ্ঠি। দেবীর বোধন। স্কুল বন্ধ। আমরা ছোটরা, একদল ছেলেমেয়ে, যাদের কোন ধর্ম ছিল না। যাদের কাছে উৎসবটা প্রধান ছিল, সামাজিক মেলামেশাটা প্রধান ছিল এবং পুরোহিতের কাছ থেকে প্রসাদ পাওয়ার লোভাতুর দৃষ্টি ছিল।

আমার জীবনে পূজা-পরবর্তী সময়ে চিন্তার মানবিক দরজাটাও খুলে গিয়েছিল। ছোটবেলায় ধর্মের মুখোশ-আঁটা গণ্ডিটা ছিঁড়ে ফেলেছিলাম। না বুঝেই সেটা করেছিলাম। কিন্তু বুদ্ধি হওয়ার পরে বুঝেছিলাম সেই ছোটবেলার বোধটাই আসল উপলব্ধি ছিল। সেটা কোনো ভুল অনুভব ছিল না। আমার প্রিয় সরস্বতী কৈশোরের দেবী। সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হত স্কুলে। মনে হত ঐ রাজহাঁসটা যদি আমি কখনো পেতাম। তাহলে অবন ঠাকুরের বুড়ো আংলার মতো হৃদয়ের চোখ দিয়ে পূর্ব বাংলাটা দেখার জন্য ঘুরে বেড়াতে পারতাম। এভাবেই পূজার স্মৃতি আমার ভেতরে প্রবল নষ্টালজিয়ার জন্ম দেয়।

বড় হওয়ার পরে ঢাকা শহরে অনেক পূজা অনুষ্ঠানে গিয়েছি কিন্তু শৈশব-কৈশোরের সেই আনন্দ এবং উৎসবের আমেজ নতুন করে অনুভব করতে পারিনি। নানা রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটেছে। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প নষ্ট করেছে উৎসবের অনুষঙ্গ। যে কারণে ঈদকে ঈদ হিসেবে। পূজাকে পূজা হিসেবেই ছোট থেকে দেখতে শিখেছি। দুটোর ভিতরে যে মানবিক সম্পর্কের বন্ধন, সৌহার্দ সম্প্রীতি ছিল সেটা এখন অনেক নষ্ট হয়ে গেছে। হিন্দু সমাজ সংখ্যালঘু হয়ে যাওয়ার বেদনায় নিজেরাও ম্রিয়মান হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে কষ্ট পেয়েছি রেসকোর্স ময়দানের কালি মন্দিরটি মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গুঁড়িয়ে ফেলে। তার আগের বছর আমি বাংলা একাডেমিতে যোগদান করি। সেবার অফিস পালিয়ে সেই কালি মন্দিরে পূজা দেখতে গিয়েছিলাম। মন্দিরের সামনে আয়োজিত মেলার বিভিন্ন শুকনা মিষ্টান্ন কিংবা ছোট ছোট পুতুল ইত্যাদি কিনে বাড়ি ফিরেছিলাম। মন্দিরটির একটি অসাধারণ স্থাপত্য সৌন্দর্য ছিল। ধর্মের ঊর্ধ্বে এই আসাধারণ শিল্পকর্ম আমার কাছে একটি আনন্দের ব্যাপার ছিল। পূজার বাইরেও অন্য সময়ে এই মন্দিরটিকে দেখতে যেতাম। এই সবই স্মৃতি এখন। কষ্টের স্মৃতি। শৈশবের যে আনন্দ ছিল। সে আনন্দ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কষ্ট।

ছোটবেলায় আমরা ছিলাম বাবার চাকরিসূত্রে বগুড়া জেলার করতোয়া নদীর পাড়ের একটি গ্রামে, যার নাম গণ্ডগ্রাম। আমাদের  বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে ছিল একটি গোঁসাই বাড়ি। নাম মুকুন্দ গোঁসাই আশ্রম। সেখানে পৌষ সংক্রান্তি হত। আমরা শীতকালে বকুল ফুল কুড়াতাম। এই গোঁসাই আশ্রমে পূজা হতো না। এটা ছিল সাধনার জায়গা। এখানে প্রতি সন্ধ্যায় কীর্তনের আসর বসত। খোল করতাল একতারা বাজত। এটি ছিল আমার একটি আকর্ষণের জায়গা। এই মানুষদের দেখে মনে হত এরা যেন অনেক দূরের মানুষ। কিন্তু পূজার উৎসব ছিল ভিন্ন আমেজের। এখনো মনে হয় এসব নিয়ে আমার এক সোনালি কৈশোর ছিল।

এই বয়সে মনে হয় প্রকৃতির সান্নিধ্যে উৎসবের আনন্দ আমাদের জীবনের ভিন্ন মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। আমরা ধর্ম বুঝেছিলাম। মানুষ বুঝেছিলাম। আমরা চাঁদ দেখার অপেক্ষায় থাকার পাশাপাশি ঢাকের শব্দ শোনার অপেক্ষায় থাকতাম। সে যে কি প্রবল আগ্রহ ছিল। ধর্মীয় উৎসবই ছিল আমাদের কাছে সর্বজনীন উৎসব। আমরা এই হৃদয়-চেতনার ভেতর দিয়ে শৈশব-কৈশোর পার করেছি। বুঝেছি মানব সত্য। এ দুই উৎসব ছাড়া এমন জাঁকজমকের আর কোনো উৎসব ছিল না।

বাবার চাকরি সূত্রে শৈশব-কৈশোরে বগুড়ার করতোয়া নদীর পাড়ে যে গ্রামে থাকতাম সেখানো কোনো ধরনের নাচ-গানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পাইনি। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া বাউল শিল্পীদের গান শুনেছি। কখনো পল্লিগীতি শুনেছি। উৎসব বলতে আমাদের সামনে ছিল ঈদ আর পূজা। এই দুই উৎসবে থাকত অনেক খাবার, থাকত নতুন পোশাক পাওয়ার মজা। কোনো ছেলেমেয়েদের নতুন কাপড় না পাওয়ার চোখের জলও দেখেছি।

তারপরও কান্না-হাসিতে উৎসবের ঘাটতি ছিল না। ঢাক-ঢোলের শব্দ শুনতে পেলেই আমরা ছুটতে থাকতাম যেখানে প্রতিমা বানানো হচ্ছে সেখানে। গিয়ে দেখতাম প্রতিমা বানানোর কত আয়োজন। আস্তে আস্তে গড়ে উঠতো দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশের অবয়ব। অসুর তৈরি হওয়ার সময় আমরা সেটাও মজা করে দেখতাম। মনে হতো দানবকে এভাবে মেরে ফেলা দরকার। তখন আমাদের ধর্মের আধ্যাত্মিক বিষয় বোঝার বয়স ছিল না। ধর্মের নামে হানাহানিও আমরা বুঝতে শিখিনি। আমাদের সামনে ছিল উৎসব। কখনো মনে হয়নি দুর্গাপূজা ধর্মীয় উৎসব। শুধু মনে হয়েছে এমন উৎসব আছে বলেই আমরা এক জায়গায় জড়ো হতে পারি। আনন্দ করি।

প্রতিমার গায়ে যখন রঙ লাগানো হতো, যখন নানা গয়নায় ভরিয়ে তোলা হতো তখন যে আশ্চর্য সুন্দর এক অপরূপ চেহারা ভেসে উঠতো সেটা দেখার জন্য আমরা একটানা দাঁড়িয়ে থাকতাম। মনে হতো এমনভাবে দেবী-মাকে সাজানো দেখা আরেক উৎসব। কি অপূর্ব করে টানা হচ্ছে বড় বড় চোখ। মনে হতো অমন সুন্দর চোখ দিয়ে দেবী আমাদের দেখছেন। শিউলি ফোটার দিনে দেবীর চোখ থেকে শিউলি ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে। আমরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকতাম। দেখতাম হাতে পরানো হচ্ছে শাখা, মাথায় মুকুট দেয়া হচ্ছে। সিঁথিতে সিঁদুর। সঙ্গে একটি টিকলি। প্রতিমা বানানোর শিল্পীরা যে এমন সুন্দর করে বানাতে পারেন তা আমাদের মুগ্ধতায় আটকে থাকত। আমি কিছুতেই ভাবতে পারতাম না যে এই সুন্দর দেবীকে নদীতে বিসর্জন করা হয়। কষ্টে বুক ভেঙে যেত। এভাবে ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে মাকে কেন ভাসানো হবে? দু’হাতে চোখের পানি মুছতাম।

তারপর একদিন শেষ হতো প্রতিমা বানানোর আয়োজন। মণ্ডপে শুরু হতো পূজা। আরতির ঘণ্টা বাজানো শুনলে আবার যেতাম পূজা মণ্ডপে। দেখতাম কলকি আকারের মাটির পাত্রে ধুপ ও নারকেলের ছোবড়া দিয়ে ধোয়া তৈরি করে সকাল-বিকাল নারী-পুরুষ আরতি দিতো। হিন্দু-মুসলিম সম্মিলিতভাবে দেবীর সঙ্গে নৌকায় উঠতো। মনে আছে আনোয়ার ভাইয়ের কথা। তিনি পায়ে ঘুঘুর বেঁধে অন্যদের সঙ্গে নৌকায় নাচতেন। বলতেন, এটা শুধু ধর্মীয় উৎসব না। আমাদের সবার উৎসব। বাঙালির উৎসব।

শৈশবে শোনা এমন কথার সবটা গুছিয়ে লিখতে পারিনি। শুধু শিখেছিলাম ধর্মের ঊর্ধ্বে মানুষের মিলনের বার্তা। প্রবীণ বয়সের সময় থেকে শেষ করতে চাই এই লেখা। গত কয়েক বছর ধরে ঢাকার বনানীতে আয়োজিত হয় সর্বজনীন দুর্গাপূজা। তারা প্রকাশ করে ‘বোধন’ নামে একটি সংকলন। এই সংকলনে আমাদের অভিনয়-শিল্পী ফেরদৌস চমৎকার স্মৃতিচারণ করেছেন। উদ্ধৃতি : ‘আমার এলাকা ছিল হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। নারায়ণগঞ্জে বেড়ে ওঠার সময় থেকেই পূজায় প্রচুর আনন্দ করতাম। ঈদ আর পূজা আমাদের জন্য তখন সমার্থক ছিল। প্রতিমা তৈরি, বিশাল আয়োজন, ঢাকের বাদ্য সবকিছু কি যে ভাল লাগত। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল প্রসাদ দেয়ার সময়টা। তবে কলকাতায় গিয়ে বুঝেছি, পূজা কী ও কত প্রকার। ....তারকা হবার সুবাদে ওখানে প্রায় প্রতিবছরই একগাদা পূজামণ্ডপ আমাকে উদ্বোধন করতে হয়। প্রথমবারের কথা মনে পড়ে খুব। সেবার আমি আর ঋতুপর্ণা গিয়েছিলাম শিলিগুড়ির সবচেয়ে বড় পূজামণ্ডপ উদ্বোধন করতে। আমি সেখানে গিয়ে খুব দ্বিধায় পড়ে গেলাম। অন্যধর্মের হয়ে আমি কিনা মণ্ডপ উদ্বোধন করব! এটা কি ঠিক হবে? স্থানীয় মানুষরা যদি প্রতিক্রিয়া দেখায়? খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। ঋতুপর্ণাসহ সবার সাহসে যখন ফিতা কাটলাম সবার সে যে কি হাততালি আর চিৎকার!! তখনই বুঝতে পারলাম মানুষগুলো কতটা বড় মনের, কতটা অসাম্প্রদায়িক। তাদের কাছে আমি তারকা, আমাকে তারা পছন্দ করে। ধর্ম এখানে কোন ব্যাপার নয়। শুধু আমি নই, স্থানীয় মুসলমানরাও দেখলাম চলে এসেছে পূজা মণ্ডপে। .... আমার এক প্রযোজকের অনুরোধে এবারের পূজায় বারাসাতে যেতে হতে পারে। অষ্টমীর দিন বের হয়ে কমপক্ষে ১০টা মণ্ডপতো উদ্বোধন করতেই হবে। আর আমার খুব ভাগ্য ভাল যে­—আমরা যারা এ ক্ষেত্রে কাজ করি, তারা ধর্ম বিভেদ নিয়ে খুব একটা চিন্তা ভাবনা করি না। আমাদের মধ্যে কে হিন্দু, কে মুসলমান সেটা বড় কথা নয়। উৎসবটাই আসল।’

গত কয়েক বছর ধরে আমার স্বামী আনোয়ার ঈদ-উল-আযহার সময়ে তাঁর গ্রামের বাড়িতে কোরবানি দেয়ার ব্যবস্থা করে। বলে, ঢাকা শহরে কোরবানি না দিয়ে গ্রামে দিলে গরিব মানুষেরা একদিনের জন্য মাংস খেতে পারবে। ঢাকায়তো কম-বেশি সবাই কোরবানি দেয়। গরিব মানুষেরা মাংস পায়। কেউ বাদ যায় না। আমি তাকে সমর্থন করি। ঈদের আগে টাকা পাঠানো হয় খাসি কিংবা ভেড়া কেনার জন্য। যে মাংস হিন্দু-মুসলিম উভয়ে খাবেন। এ বছরে একটি খ্রিষ্টান পরিবারের একজন এসেছিলেন মাংসের জন্য।

আমাদের খুব কাছের মানুষ নেপাল চন্দ্র কুণ্ডু, মিলন মিত্র। এ বছর মিলন আমাদের জানালো, ও মাংস বাড়িতে নিয়ে গেলে আশেপাশের আত্মীয়-স্বজন ওর বাড়িতে চলে আসে। সব মাংস রান্না হয়। প্রত্যেকে ভাত-মাংস খায়। মানুষের সংখ্যা বেশি হলে যদি এক টুকরোও পায় তাও সবাই খুশি থাকে। ওরা বলে, ‘এটাতো আমাদের কাছে কোরবানির পবিত্র মাংস।’ ঈদের উৎসব এভাবে মানুষের মিলন উৎসব হয়। অন্য ধর্মকে শ্রদ্ধা করার জায়গা তৈরি হয়।

আমাদের বাংলাদেশে ধর্মের সত্য নিয়ে মানুষের মর্যাদা অমলিন থাকবে। এই বিশ্বাস নিয়ে জীবনের শেষ দিন আমার সমাপ্ত হবে।

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
লাগাতার তাপদাহে যশোরে জনজীবন দুর্ভোগে
লাগাতার তাপদাহে যশোরে জনজীবন দুর্ভোগে
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ