X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

চক্রব্যূহ

মিনার মনসুর
২৩ জুলাই ২০২২, ০৯:২৫আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২২, ১০:৪০

অভিমন্যু জানত না তাতে কী, আপনি তো জানতেন সব! মহাভারত যাঁকে ত্রাতা বলে জানে আপনার অভিন্ন হৃদয় সেই মহান সারথি—যাঁর অঙ্গুলি হেলনে খাণ্ডবদাহন হলো, কুরু-পাণ্ডবের রক্তে রচিত হলো অন্য এক মহাভারত—তাঁরও অজানা ছিল না কিছুই। সর্বোপরি, মাথার ওপর ছিল ভগবৎ-ছায়া। তারপরও কী অবলীলায় যে ছিল আপনার ছায়াসঙ্গী সেই গাণ্ডীবও অবাধ্য হলো। খড়কুটোর মতো উড়ে গেল দেবদত্ত অব্যর্থ অস্ত্রশস্ত্র যত। তুচ্ছ রাখালবালকের হাতে লুণ্ঠিত হলো আপনার যত শৌর্য ও সম্ভ্রম।

অভিমন্যু অর্বাচীন, কিন্তু আপনি তো কৃষ্ণসারথি, সব্যসাচী! (আপনার কর্ণযুগল সাক্ষী) জগদ্বিখ্যাত একটি মহাকাব্য লেখা হয়ে গেছে আপনার উছিলায়।

বলুন কীই-বা ফারাক তবে?

দুই

যে-নামের ওপর মহাভারতের আভূমিলুণ্ঠিত বন্দনা ঝরে পড়ে—ক্ষুধাতৃষ্ণা ভুলে আবালবৃদ্ধবনিতা সুপেয় জলের মতো পান করে যাঁর চরণামৃত সুধা—দেখো, মহাপ্রস্থানের পথে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে তাঁর অপ্রতিরোধ্য রথখানি। পার্থসারথি মন্দিরের বেয়াড়া বলদও মাড়িয়ে যায় তাঁকে।

কর্মেই তোমার অধিকার—কেবল কর্মেই তোমার অধিকার—আহা, এ গূঢ়তত্ত্ব আপনার চেয়ে ভালো কে আর জানে! কুরুক্ষেত্র সাক্ষী, কর্মের করোটি আর রক্তস্রোতে আপনিই তো ঢেকে দিয়েছেন মহাভারতের জটিল মানচিত্র।

এখন কূলে একা বসে আছেন, কোথায় ভরসা!  

তিন

পেছনে ফেরার কথা ভাবছেন? ওসব ভাবা-টাবার কাজ যুধিষ্ঠিরের ওপর ছেড়ে দিন—পথের কুকুরও যার ওপর ভরসা রেখে ঠিক পার হয়ে যায় স্বর্গ ও নরকের জটিল গোলকধাঁধা। আপনার তো ছিল কেবল গাণ্ডীব আর এক কৃষ্ণ বাজিগর। সব পাখি উড়ে গেছে। পড়ে আছে জংধরা খাঁচা।

খাঁচার আবার কিসের এত মরা-বাঁচা!

চার

পার্থসারথি মন্দিরে যথারীতি উপচে পড়বে জনতার ভিড়। পাঁঠার করুণ মুণ্ডুখানি ঘিরে ক্রমেই উদ্দাম হয়ে উঠবে পাণ্ডার খড়্গ-নৃত্য। বেয়াড়া বলদেরা দাপিয়ে বেড়াবে মন্দিরের চারপাশ। মুহুর্মুহু উলুধ্বনি হবে। ঘণ্টার শব্দে প্রকম্পিত হবে আসমুদ্রহিমাচল।

কেবল আপনিই হাঁটু ভেঙে পড়ে থাকবেন মহাপ্রস্থানের পথে।

পাঁচ

চারটিই দরজা। তিনটি তার বেদখল হয়ে গেছে। জরায়ুমুখ বন্ধ করে উধাও হয়ে গেছেন জন্মদাত্রী। (‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি/বিচিত্র ছলনা-জালে,/হে ছলনাময়ী’) সম্মুখে গর্জমান কুরুক্ষেত্রের তরল অন্ধকার। হয়তো সেখানেই ওত পেতে আছে গোপালক দস্যুদল—যাদের উদর থেকে অবিরাম ঝরে পড়ছে ক্ষুধা ও বঞ্চনার ক্রুদ্ধ লালা। গাণ্ডীব বিগড়ে গেছে। তার চেয়েও বিশ্বস্ত আর লক্ষ্যভেদী যে দুটি চোখ তারাও বিমুখ আজ। অসূর্যস্পশ্যা যাদব নারীরা লুট হয়ে গেছে আগেই। তাহলে আর কীই-বা থাকল বাকি?

চলুন, সামনেই যাওয়া যাক।


ধানমন্ডি, ১৯ জুলাই ২০২২

/জেডএস/
সম্পর্কিত
প্রিয় দশ
দোআঁশে স্বভাব জানি
প্রিয় দশ
সর্বশেষ খবর
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক