X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
জোনাকি পোকাই প্রকৃত জ্যোতির্ময়

প্রসঙ্গ একজন বিনয় মজুমদার

হেনা সুলতানা
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৩:৩৪আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৩:৩৪

তিনিই তো বলেছিলেন, ‘ভালবাসা দিতে পারি তোমরা কী গ্রহণে সক্ষম?
জৈবিক মিথুন সত্তায় বিনয় মজুমদার অপ্রাপ্তির সুতীব্র বেদনা উপস্থাপন করে গেছেন অনাবিল শব্দ মাধুর্যে—কবিতার আকাশ। বাংলা কবিতার জগতে সে আকাশ অন্যরকম। আর আমরা পরিণত বয়সে যথেষ্ট সচেতন ও শ্রদ্ধায় তাঁর রচনা পাঠের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ হওয়ার পর বুঝতে পারি—সে আকাশ আরো বিশাল, এক অন্য ভাবের সীমাহীন জগৎ, সতত প্রবহমান।
কবিতাঅন্ত বিনয় জীবনের চালচিত্র আর বিনয়-প্রাণ সুধীজনের স্মৃতিচারণ আলোচ্য গ্রন্থের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলেও ঋদ্ধ সম্পাদকদ্বয়ের সুরভিত গাথা কথামালায় উঠে এসেছে স্পষ্ট ভাবেই—‘এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার।’
জীবন ধর্মে বাউল অথচ বয়সে গাণিতিক কবি ব্যক্তিত্বের নাম বিনয় মজুমদার। একদিকে আত্মসমাহিত অন্যদিকে আত্মঘাতী কবি বিনয়কে তুলে আনা সত্যিই কী সম্ভব?
কবি বিনয় মজুমদারকে নিয়ে বিস্তর আলাপ-আলোচনা, তাঁর সাহিত্যকর্মের রসাস্বাদন তাঁর জীবন, জীবনের প্রাপ্তি, অপচয়, অপ্রাপ্তি, তাঁর জনপ্রিয়তা সমগ্র বিষয়াশই যেন এক প্রাচীন প্রত্নতত্ত্ব খননকার্য, ভেতরকার বিনয় মজুমদারকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা। আমরা তাঁকে পাই জীবন-শিল্পের এক অকৃত্রিম প্রতিমা হিসেবে। দুই বাংলার সাহিত্য ব্যক্তিত্বদের স্মৃতি-বিস্মৃতির কথামালা ও বিপুল বিশ্লেষণ নিয়ে প্রকাশিত এই সংকলনটি প্রকৃতপক্ষেই বিনয় মজুমদারকে নিয়ে এযাবৎকালের সবচেয়ে বৃহৎ প্রকাশনা।
কবি বিনয় মজুমদার যতটুকু পেরেছেন তাঁর সামাজিক জীবনকে আচ্ছন্ন করেছেন মানসিক জীবনের নির্যাস দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছেন অনায়াস চেষ্টায়। কবিতার মাঝেই তার চিত্তের লীলা—আপনার বিহার ক্ষেত্র রচনা করেছেন। তাঁর কবিতায় সে প্রতিধ্বনি শুনতে পাই—‘এই জন্য চিন্তার চর্চায় সেই আনন্দ থাকা চাই যাহাতে সে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হইয়া জন্মিতে পারে’- (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
বিনয় কবিতার পরতে পরতে অতি স্পর্শে আপন স্ফুলিঙ্গ বের হতে থাকে তার চিন্তার ঢেউ, কেবলই নানা দিক থেকে নানা আকারে পাঠকের মনকে আঘাত করতে থাকে, ক্রমশ উদ্বেলিত করতে থাকে। বিনয়ের ঝকঝকে অক্ষরের শব্দের, বাক্যের ও বাগধারার নতুন বোধের সন্ধান দেয়—‘ফিরে এসো, চাকা’, ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’, ‘আমার ঈশ্বরীকে’, ‘নক্ষত্রের আলো’, ‘কবিতা বুঝিনি আমি’, ‘আমিই গণিতের শূন্য’ ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থে। কিন্তু তাঁর কবিতা পাঠক কীভাবে নেয়?
কোলাহলের মধ্যে নৈঃশব্দ্য—ষাট দশকের মধ্যভাগে যাপিত জীবনের মধ্যে স্বয়ং বিনয় ছিলেন সেই ভাবনার প্রায় সার্বক্ষণিক অধিবাসী, আশ্রয় প্রার্থী। খুঁইয়েছেন জীবনের অনেকগুলো দিন এমনকি মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ কোন জালের অংশ যা মানুষের স্থিরতা ধরে রাখে—এই সব অপরিমেয় ক্ষয়-ক্ষতির মধ্যেই ‘ফিরে এসো, চাকা’ কাব্যের কবিতাগুলির সূত্রে বিরহে যাপিত জীবন ধরা পড়ে। তাঁর গাণিতিক সূত্রগুলো সত্যিই কী নক্ষত্রের আলোয় মিশে যায়।
 
=বেশি কিছুকাল হলো চলে গেছে প্লাবনের মতো একবার এসো ফের; চতুর্দিকে সরস পাতার মাঝে থাকা শিরীষের বিশুদ্ধ ফলের মতো আমি জীবন যাপন করি;
 
=বরং ছিলাম দীর্ঘ—দীর্ঘকাল, হাসি ভুলে হেসে করুণ ফলের মতো; কেউ চায় আত্মবলিদান। অবশ্য তোমরা কাছে যাবার সময়ে আলো লেগে নীলাভ হয়েছে দেখি অনেক আকাশ দীর্ঘকাল শীতল আঁধারে থেকে গবেষণা শেষ হয়ে আসে।
বিনয় মজুমদারের ঝকঝকে অক্ষরের শব্দের বাক্যের ও বাগধারার নতুন বোধের সন্ধান দেয় ‘ফিরে এসো, চাকা’ প্রথম কাব্যগ্রন্থই যা বাংলা কবিতায় একটি স্থায়ী পাঠ রচনা করে দিয়ে গেছে—‘যে পাঠ থেকে বাংলা ভাষার সাহিত্য-পাঠক পেয়ে যান এক বিরহীর চিরকালীন বার্তা যা অবশ্যই ঢাকা থাকে কখনো কখনো নানা রূপকল্পে উপমায় দর্শন ভাবনায় শরীর নির্মাণের সচেতন অসচেতন আয়োজনে।’
অতএব কবিতাপ্রেমীরা তাঁর কবিতা ভালোবেসেই গ্রহণ করে। কবি মানেই কী বেহিসেবি, তবে অংকে হিসাব মেলান কী করে তিনি? কবি বিনয় মজুমদারের স্বীকারোক্তি—‘আমি যে আমার গণিত নিয়ে প্রমাণ করেছি যতই বুড়ো হবে ততই দেশ ভ্রমণ করো। আমার কথা শুনে আমাকে পাগলা গারদে পুরলো। আমি এবং আমার গণিত দু’টোই তারা পরিত্যাগ করলো। আমি কোন কারণে গণিত দিয়ে প্রমাণ করতে গেলেই, আমাকে পাগলা গারদে পোরে।’
লোকটি আপোষহীন, একগুয়ে, মানসিক বিকারগ্রস্ত। তাঁকে নিয়ে জনশ্রুতি আছে খুব মেজাজি। মানসিক বিক্রিয়া দেখা দিলে নাকি দাঁ নিয়েও তাড়া করতে পারেন এই সব আবোলতাবোল বিষয়। তবু বিনয় পাঠ চলতে থাকে। পাঠকের কাছে আজও বিস্ময় বিনয়। 
 
তবুও কেন যে আজো, হায় হাসি হায় দেবদারু,
মানুষ নিকটে গেল প্রকৃত সারস, উড়ে যায়।
আত্মকথনে নিমগ্ন, অসহায় ভূতগ্রস্থ—যেন জীবনের এক ধংসস্তূপ। মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়? পাঠকের ভালোবাসা, অভিমান অথবা বিরহ অশ্লেষ। বিনয় যেন কবিতার চেয়ে আরো বেশি কিছু। কিছুটা বোধে, কিছুটা উপলব্ধি করে আবার অনেক কিছুই রয়ে যায় আয়ত্বের বাইরে। অথচ অনির্বচনীয় আচ্ছন্নতা থেকে সে বেরুতে পারে না। কারণ তো সেই কি না শিমুলপুর নিবাসী, মেন্টাল অ্যাসাইলাম বারবার ঘুরে আসা গণিতবিদ একজন আগাপাশতলা কবি ও দার্শনিক—
‘হে আলেখ্য, অপচয় চিরকাল
পৃথিবীতে আছে—
এই যে অমেয় জলÑমেঘে মেঘে অনুভূত জল
এর কতটুকু আর ফসলের দেহে আসে বলো’
এভাবেই বিনয় মজুমদার উঠে এসেছেন আভায় আলাপচারিতায়, জনপ্রিয়তায়, তাঁর সাহিত্য-কর্মের রসাস্বাদন চলছে নিরন্তর, থেমে নেই। তাঁর কবিতার অনন্য মাধুর্য হচ্ছে মানবতা জীবনের প্রতি, সৃষ্টির প্রতি আসক্তি এবং আশা ছত্রে ছত্রে। তিনি যেন তাঁর মর্মের গভীরে উপলব্ধি করেন তার ভাবের ভাষা প্রকাশে। শব্দের যন্ত্রণা এক সুখ থেকে আরেক সুখে লুটিয়ে পড়ছে। তার ভাষা এবং মেজাজ এত প্রচ্ছন্নভাবে নিজস্ব, যেন শব্দ তার হুকুমে চলে—এভাবেই নিজেকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন আবার কখনো সংহত করে আনতে চেয়েছেন লিমেরিকে।
 
ক.
আমার তো বিশ্বাস নেই কর কোষ্ঠিতে।
কোনই তফাৎ নেই চৈত্রে ও জষ্ঠীতে।
তাদের পাতা ফাঁদ ফেঁসে যায়;
বলো বলো তাতে কিবা এসে যায়।
ভালো আছি এ শুক্ল পক্ষের বষ্ঠীতে।
 
খ.
ধরনীময় ফুটেছে দেখি ধবল সব গন্ধরাজ।
মিথ্যা কথা বলছে নারে, বলছে যে রণ বন্ধ আজ।
নিকট দূরে সামনে কী কী
নিজেই তুই দেখিস নি কি—
শুধালে আর কেউ বলে না দু চোখ খুলে
                              অন্ধ সাজ।
 
সাম্প্রতিককালে বিনয় মজুমদারকে নিয়ে ব্যবচ্ছেদ করার অনন্য প্রচেষ্টা ‘এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার।’ দ্রত এবং উপদ্রুত এই ব্যস্তত্রস্ত গদ্যময় জীবনে আজ পদ্যোত্তর কবিতার স্থান-মান প্রয়োজন ও ভূমিকা নিয়ে বারে বারেই প্রশ্ন উঠছে কবিতা কি নিছকই আকাশ কুসুম চয়ন, শুধুই ভাবের খেলা! একালের কবিতা বিমুখ অনেক পাঠকই হয়তো মনে করেন কবিতার দিন ফুরিয়ে আসছে। ‘এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার’ বইটি হাতে পেয়ে মনে হতে পারে কবিতাবিমুখদের বিরোধিতার মুখে অপ্রতিরোধ্য এক কণ্ঠস্বর। কবিতাচর্চা আসলে জীবনচর্চা জীবন ব্যতিরিকে কিছু নয়। কবিতার প্রয়োজন কখনো ফুরায় না। কিছু মানুষের বেঁচে থাকার শর্তই হলো কবিতার চর্চা। 
কবি বিনয় মজুমদারকে নিয়ে এই গ্রন্থ যেন বিশাল ক্যানভাসে দাঁড়িয়ে সুলতানের ছবি আঁকা। এহসান হায়দার ও স্নিগ্ধদীপ চক্রবর্তী দুই বাংলার দুই তরুণের অক্লান্ত কর্ষণের ফসল ‘এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার।’ আন্তরিক অভিনন্দন তাদের জন্য। 
 
‘৮১৭ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থে আছে ঋত্বিক ঘটক, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শামসুর রাহমান, আহমদ ছফা, অমিয় দেব, জয় গোস্বামী, বিজয় সিংহ, উৎপলকুমার বসু, কালীকৃষ্ণ গুহ, জহর সেনগুপ্ত, মনিশংকর বিশ্বাসহ বিনয়ঋদ্ধ তিয়াত্তর কবি লেখকের লেখা, বিনয়জীবনী, বিনয় মজুমদারের সাক্ষাৎকার, বিনয়ের আত্মকথন, অপ্রকাশিত ও অগ্রন্থিত বিনয়, বিনয় কবিতার অনুবাদ, কবিতা থেকে চিত্রকলা, বংশলতিকা, বিনয়ের জীবনপঞ্জি, অ্যালবাম, উবাচ—এইভাবে সমগ্র বিনয়কে তুলে আনার চেষ্টা। এ চেষ্টায় কোনো ত্রুটি নেই বরং যত্নে সম্পাদনার নৈপুণ্যে উপচে পড়া ভালবাসায় স্নিগ্ধ বইটি এক আশ্চর্য ফুল বলেই প্রতিয়মান হয়।
দিন যাপনের ব্যর্থতা কুরে কুরে খেয়েছে বিনয়কে। নিজেকে স্থিত করতে চেয়েছেন কিন্তু করতে পারেননি, প্রতিভার আগুনে জ্বলে জ্বলে নিভে গেছেন খালি স্থিতাবস্থার অভাবে, মহাগ্রন্থ লিখতে চেয়ে শেষ অবধি লিখে উঠলেন ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা।’ তাও গ্রন্থরূপ দেয়া গেল না তখনই। বোধে গেঁথে গিয়েছিল শুধু কবিতা করে শুধু প্রশংসায় ভিজে আর যা-ই হোক এদেশে দিনাতিপাত করা চলে না। বিশেষত উবাচ অংশে কবি আল মাহমুদ লিখেছেন কবি বিনয় মজুমদার সম্পর্কে যা তাঁর হৃদয়ের একান্ত নির্যাস—‘বিনয় মজুমদার অগোছালো কবি—এটা বলব আমি। দারুণভাবে মেধাবী—এই কবি তাঁর নিজের মেধাকে কিংবা জীবনকে সুবিচার করলে আরও ভালো ভালো কবিতার জনক হতে পারতেন তিনি। আমরা হয়তো ‘ফিরে এসো, চাকা’র থেকে আরও উচ্চ পর্যায়ের কিছু পেতাম। হতে পারতো আরো একখানা ‘অঘ্রাণের অনুভূতি মালা; বিনয় বড় কবি কিন্তু জীবনের কাছে দারুণভাবে হেরে যাওয়া এক জীবন তিনি—যে জীবনে কেবল আমার মতো কষ্ট পেয়েছেন। এতো যন্ত্রণা নিয়ে তিনি যা লিখে রেখে গেছেন তা-ও একেকটি রত্ন বলব আমি। বিনয়ের মধ্যে নিজের জন্যে কোনো চাওয়া ছিল না বলে এতোটাই ঢেলে দিতে পেরেছিল বুঝি। তাঁর সব বন্ধুরাই তো নিজেদের সকল সাধ পূরণ করেছিল, ভালবাসার প্রতি তাঁর নিবেদন যে কবিতা তা মহৎ না হয়ে যায় কী করে। বিনয় একজন, সকলেই কী বিনয় হয়!’ একথার—অনুরণন হয়েছে নানা জনের লেখায়, নানা আঙ্গিকে।
রমাপদ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্যে খুঁজে পাই স্বয়ং বিনয় মজুমদারের ‘আমার কথা’ রচনাটিতে—‘বিনয় মজুমদার যা বলে এবং লেখে তা এতো বেশি উচ্চস্তরের এবং দুর্বোধ্য যে লোকে বিনয় মজুমদারকে পাগল বলে।’ সত্যি কী তিনি পাগল? না কী তাঁকে যারা বুঝতে পারিনি—তাই এমন অপবাদ দিই।
‘বিনয় মজুমদারের কবিতা : আখ্যান ও শৈলী অনুভবে...’ শিরোনামে রিপন রায়ের লেখায় একটা সুরাহা খুঁজে পাওয়া যায় বিনয়ের নিজস্ব চিন্তা চেতনা মননঋদ্ধ উপলব্ধির—‘বিনয় ছিলেন বিশুদ্ধ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তিনি নতুন কাব্যতত্বের কারুকর্মা। তিনি কবিতা লেখার ১৩ রকম পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। তার কবিত্বময়তার মধ্যে রয়েছে ‘বিশুদ্ধ ফলের মতোন’ ভাব ও তন্ময়তা। তাঁর কাছে কবিতা ও গণিত একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। গণিতের মতোন কিংবা থিওরেমের মতোন তিনি কবিতা পড়তে চান, লিখতে চান। সব মিলিয়ে এক ব্যাক্তিগত কবিতা পাঠের কথা বলেন বিনয়।’
তরুণ সম্পাদকদ্বয়ের সম্পাদনা শৈলীকে সাদুবাদ জানাতে হয় এ জন্যই যে তাদের শ্রমলব্ধ এই বইটিতে শুধু লেখার গুণেই নয় বিনয়কে ঘিরে নানা সময়ে নানা বিতর্কেরও সমাধান খুঁজেছেন তাঁরা। ব্যাক্তি বিনয় ও কবিতার বিনয়কে ভালবাসায় এবং বিচারের তুলনাদণ্ডে চড়াতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রগতিপন্থি সাহিত্যকর্মী ও কবি আহমদ ছফা লিখেছেন, ‘যে সমাজের মধ্যে বিনয় মজুমদার বসবাস করে আসছিলেন সে সমাজে সাংস্কৃতিক ষড়যন্ত্রের শিকার বিনয়কে হতে হয়েছিল, এটা আপাতত সত্য; কিন্তু পুরো সত্য নয়। বিনয়কে নানা কারণে ঠাঁই নাড়া হতে হয়েছে, যা তাঁর সাহিত্যচর্চা নয় জীবনটাই আগাগোড়া পাল্টে দিয়েছে। শুরুতেই যদি বিনয় একটি সংগ্রামী অবস্থান গ্রহণ করতেন, তাঁকে অভিমানী বালকের মতো জীবনের বৃহত্তর কর্মক্ষেত্র থেকে পালিয়ে বেড়াতে হতো না।’
এজন্যেই কী তিনি বারবার হাসপাতালে থাকতে চাইতেন, শুধু নিরাময়ের জন্যে? সত্যিই কী তিনি নিরাময় চেয়েছিলেন? কবি সারা জীবন উৎকণ্ঠার মধ্যেই পীড়িত হয়েছেন। উৎকণ্ঠার মধ্যেই মগ্ন থেকেছেন। সেই অন্তর্নিহিত সামঞ্জস্যের দোলাচলকে তার কবিতায় প্রতিস্থাপন করেছেন।
এই রকম একটি অবস্থানে থেকেও বিনয়ের অধিকাংশ কবিতার মধ্যে রয়েছে চমক লাগানো প্রবাদপ্রতিম বাক্য যা সহসাই মনের অন্দর মহলে গেঁথে যায় কবিতার ভাব বীজ যেন হৃদয়ের অন্তঃক্ষরণ থেকে নিঃসৃত বেদনার গাঢ় রস আমাদের মনকে সিক্ত করে। যেমন—
‘দুঃখ ভুলে গেলে আর কবিতা লেখা যায় না’
‘মানুষ নিকটে গেল প্রকৃত সারস উড়ে যায়’
‘যে কথা শুনেছি, তাই শরীরে মাংস হয়ে থেকে যাচ্ছে।’
‘অনাদি বেদনা আছে, অক্ষত চর্মের অন্তরালে’
‘ক্ষত নিয়ে যন্ত্রণায় স্তব্ধ হবো আমি।’
‘সব মানুষ পৃথিবীর সমীকরণে আছি’
‘গণিতের প্রমাণের চেয়ে সহজ প্রমাণ হচ্ছে সাহিত্য প্রমাণ।’
এরকম আরও বহু প্রবাদোপম বাক্য মিলে মিশে আছে বিনয়ের কবিতায়। কবি বিনয় ও ব্যক্তি বিনয় যে অভিন্ন—তোমার দেহের কথা ভাবি/ নির্বিকার কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে অন্ধকার, সুখ/ এমন আশ্চর্যভাবে মিশে আছে; পৃথিবীতে বহু/ গান গাওয়া শেষ হলো, সুর শুনে, ব্যথা পেয়ে আজ/ রন্ধনকালীন শব্দ ভালবেসে, কানে কানে মৃদু/ অস্ফুট কথা চেয়ে এসেছি তোমার দ্বারে, চাকা।
ব্যক্তি ও বিশ্বের মধ্যে বিচ্ছেদ এটা তো সব আধুনিক শিল্পেরই মর্মকথা। তাহলে বিনয় অন্য কবিদের থেকে ভিন্ন কোথায়? ভিন্ন এই বিচ্ছেদ বোধের তীব্রতায়। ভিন্ন তার চিত্রকল্পে। হতাশার ভিতরেও তিনি আশার বাণী উচ্চারণ করেন তাদের জন্য যারা অনির্বাণ আঘাতে কেবলই আহত হয়—হৃদয়ে গভীরে প্রবিষ্ট হও, অভ্যন্তরে ঘ্রাণ নাও, অথবা বিশ্বের মতো ডুবে থাকো সম্মুখীন মদে। কবি বিনয় মজুমদারকে পাওয়ার এক বিশাল সমারোহ এ গ্রন্থকে বিনয় স্মারক গ্রন্থ বলাই সমীচীন।
‘রক্তমাংসের গণকযন্ত্র কবি বিনয় মজুমদার’—শিরোনামে শিবেন মজুমদার লিখেছেন—‘বিনয় মজুমদারের স্মৃতিশক্তি আর পাঁচ জন সাধারণ মানুষের মত নয়। বিরল প্রজাতির স্মৃতিধর ছিলেন এই গাণিতিক কবি।’ এই বিনয় মজুমদার যখন সকলের আলোচনায় মগ্নাতুর, সময়টা ১৯৮৮ সালে ‘আজকাল’-এ খবর, কবি বিনয় মজুমদার সরকারি সাহায্যে আবার মেডিকেলের ‘এজরা ওয়ার্ডে’ এসেছেন প্রবল মনোরোগের দাপটে।... বেডের উপর উবু হয়ে বসে থাকেন। কথা বলেন হাসেন কিংবা কখনো শুধু চুপচাপ বসে থাকেন। হাসপাতালে অন্য রোগীদের দিকে মৃদু হাস্যে তাকিয়ে থাকেন। হাসপাতালে দেখতে যাওয়া সাংবাদিক সাহিত্যিক হাসির মল্লিকদের হেসে বলেন, ‘ওরা বড় একা। আমায় পেয়ে কথা বলতে আসে।’
যেন তিনি রোগী নন। ওদের একাকিত্ব কাটাতে কাটাতে এসেছেন! বস্তুতপক্ষে সমাজিকতার বন্ধুবৎসল অভিজ্ঞানে বিনয় মজুমদার ব্যতিক্রমী নন। ব্যাক্তি জীবনে তিনি নিতান্তই আটপৗরে একজন।
এই রকম একজন কবি সম্পর্কে ‘মহাশিশুর দৌরাত্ম্যময় আগামী পৃথিবী’—লেখাটিতে কবি সাংবাদিক মৃদুল দাশগুপ্ত বিনয় বিদায় হবার পর তাঁর বিশ্বাসের জানালায় দাঁড়িয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বহু আলোচিত কবির মানসিক বৈকল্য সম্পর্কে। ‘এই অতিমানবকে অসুস্থমনা ভাবলে আপন বোধ-বিবেচনাকে খাটো করা হয়। পরিত্যক্ত নন, অবহেলিত নন। বিদ্যুৎ- বৈদ্যুতিন, বিত্ত ও ব্যবস্থা—এই সকল কিছু থেকেই তিনি বিযুক্ত হয়েছিলেন। খ্যাতি ও ক্ষয় উভয়ের থেকেই সচেতনভাবে তিনি দূরত্ব বজায় রেখেছেন।’
গণিতজ্ঞ বিনয় একটি হালকা মুঠির কবিতা আমার অসুখ হলে কবিতায় লিখেছেন :
 
আমি বলি
আমার
শরীরের
সমীকরণ।
তৎক্ষনাৎ
আমার 
অসুখ
সেরে
যায়।
 
তখন কি জানতাম বুড়ো হয়ে যাবো?
আশা করি বর্তমানে তোমার সন্তান নাতি ইত্যাদি হয়েছে।
আমার ঠিকানা আছে তোমার বাড়িতে,
তোমার ঠিকানা আছে আমার বাড়িতে,
চিঠি লিখব না
আমরা একত্রে আছি বইয়ের পাতায়।
এরকম সহজ সরল ভাবে বাংলা কবিতার নতুন একটি রাস্তা তৈরি করে দিয়েছিলেন কবি বিনয় মজুমদার। যা সহজে লেখা বড়ো সহজ নয়। গ্রন্থের কিছু লেখা পুরাতন হলেও লিখেছেন কবি বিনয়ের সহযাত্রী বন্ধু, কলেজ স্ট্রিটের বই বস্তিতে পথ চলেছেন একসাথে, কফি হাউজের আড্ডায়, যারা ছিলেন শিমুলপুর অথবা শিমুলপুরের বিনোদিনী কুঠিতে আপন ঠিকানায়। লিখেছেন বাংলাদেশের সুহৃদগণ। নিঃসন্দেহে বাংলা ভাষাভাষী বিনয়প্রেমীদের জন্য একটি দুর্লভ গ্রন্থ এটি। প্রায় ৮০টি রচনায় কোথাও চর্বিতচর্বন বোধ হয়নি। কি বিষয়বস্তুর দিক থেকে কি বোধের দিক থেকে।
কবি বিনয়ের কবিতা গঠনের কারণ সম্পর্কে জানতে আকৃষ্ট হই কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রণীত রচনাটিতে—‘বিনয়ের কবিতাগুলো সত্য ও অসত্যে ভাগ করা। অথচ সত্য সম্পর্কে কেবল বর্ণনা করা ব্যতীত বিনয়ের আর যেন কিছু বলার নেই, বারংবার সেই এক চিরন্তন অসত্য সম্পর্কেই তাঁর বাড়বিন্যাস এবং ওইসব অসত্য কারণই তাঁর কবিতা গঠনের কারণ। সেই অসত্য কারণ—অনুপযুক্ততা, কল্পনা শীরঃপীড়া ও প্রেম। ওই অসত্য অংশটিই কবির ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অথবা ব্যক্তিগত জীবনী। ওইটুকু পৃথক পৃথক ভাবে লিখে জানানোর জন্যই কবিতার উৎপাত। তাছাড়া এই দুর্দান্ত বিংশ শতাব্দীতে কবিতা রচনার আর অভিপ্রায় কেন?’ এই যে তার ব্যাক্তিগত জীবন সেই তার আটপৌরে জীবনের বাস্তবতা, সেই বাস্তবতাই বিনয় জীবনের অলংকার। সেজন্যই বিনয় কবিতার পাঠকেরা অনুভব ক্ষমতার সন্ধান পায়, ঋদ্ধ হয়, তার পরবর্তী রচনায় আকৃষ্ট হয়। কেননা তিনি আবিষ্কার করে নিয়েছিলেন বস্তুত তাঁর নিজস্ব কাব্য ভাষার অন্তঃস্থল, নিজের নির্ভুল স্বরস্থান এবং একটা সুর, যা তাঁর ভাবনারাশিকে সুসংবদ্ধভাবে স্থাপন করে দিয়েছে।
‘যাই হোক, তা সত্ত্বেও বিশাল আকাশময় বায়ু বিশাল বাতাস বয়, বিরুদ্ধ বাতাসে বেধে যায়। সর্বদা কেনো না কোনো স্থানে দেশে ঝড় হতে থাকে।’
‘এবং ছিলাম ধীর্ঘ—দীর্ঘকাল, হাসি ভুলে হেসে করুণ ফলের মতো; কেউ চায় আত্ম বলিদান। অবশ্য তোমরা কাছে যাবার সময়ে আলো লাগে।’
এই সব ধ্রুপদী প্রকাশে রয়েছে তাঁর অভিজ্ঞতারাশির, রূপ বিশুদ্ধতার, অবচেতনের, দর্শনের এবং অপার বেদনা বোধের নির্যাস। অনিবার্যভাবেই বিনয় এসবের মধ্যেই এক গীতিকবি।’
বিপ্লব চক্রবর্তী সাহিত্যের অধ্যাপক, তিনি ‘বিনয় মজুমদারের কবিতায় লোকাভরণ’ খুঁজেছেন নক্সিকাঁথার ফোঁড়ের মতো। লোকাভরণ শৈলীর মূল কথা হলো লোকচেতনার আত্তীকরণ। বিনয় মজুমদারের কবিতায় লোকাভরণ শৈলীর প্রয়োগ ঘটেছে অত্যন্ত সহজ ও স্বাভাবিকভাবে।
‘একদিন এক বৃদ্ধ আমাকে বলেছিলেন 
যে বছর আম গাছে বোল বেশি হয়
সে বছর খুব বেশি ঝড় হয়।...
তারপরে কতিপয় মাস চ’লে গেছে 
তবু বারবার মনে প’ড়ে যায় প্রকৃতির 
এই এক রহস্যের কথা, ঝড় হবার 
অনেক আগে বোল হয় কী প্রকারে, কেন?”
এক পঙক্তির কবিতাগুলো মনে দাগ কেটে যায়
‘অনাথের দৈব সহাস’
‘সাড়ে চারশ কোটি লোকের সাড়ে চারশ কোটি চেহারা তাজ্জব ব্যাপার’
‘যে সব গাছের ফল খাই, সে সব গাছের ফুল অখ্যাত’
‘যাদু বিদ্যা উলকা ভেলকি এসেছি কোথায়?’
এই প্রশ্নই বারংবার কবিকে নিয়ে যায় লোকরহস্যের শিল্পলোকে। কবি লেখেন, রচনা করেন এক শিল্পলোক, লোক ভাবনা শৈলীতে।
এভাবেই নানা মাত্রার বিনয় মজুমদার উঠে এসেছেন এই বইটিতে। মুখবন্ধের নামান্তর ‘অন্তরালে বিনয় দর্শন, শূন্য এক সত্যের ব্যথা,’ সম্পাদক এহসান হায়দারের, চমৎকার লেখাটি মনোযোগ কাড়ে সহজেই। ঝরঝরে ভাষায় বিনয়কে নিয়ে সবিনয় নিবেদনের আর্জি। এছাড়াও সংকলনের শুরুতে রয়েছে সযত্নে লেখা বিনয়জীবনী—যেখানে আছে সুখপাঠ্য উপন্যাসের মতো বিনয়জীবন আখ্যান। এছাড়াও এহসান ‘প্রকৃত বেদনায় দ্যুতিময় এক কবি’ শিরোনামে বিশ্লেষণধর্মী একটি লেখায় লিখছেন—‘বিনয় এমন এক অনুসন্ধানের অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে ভাগ করে নিয়েছেন যার সাথে আমাদের মুখ দেখাদেখি থাকলেও ঘনিষ্ঠ কোনো পরিচয় নেই।’ একথা মেনে নেই যখন বিনয় মজুমদারের লেখার গভীরে পাঠক প্রবেশ করেন। অপর সম্পাদক স্নিগ্ঘদীপ চক্রবর্তী ‘কেন বিনয় মজুমদার’ শিরোনামে লিখেছেন একটি চমৎকার মুখবন্ধ।
উৎসর্গপত্রে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ ও অধ্যাপক গণেশ বসু নাম দুটি সাদা জমিনে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করছে। সুদৃশ্য জ্যাকেটে হার্ড বাইন্ডিং চোখে পড়ার মতো। বইয়ে প্রতিটি চ্যাপ্টারে শুরুতে চোখে পড়ে হ্যান্ডমেড পেপারে বিনয় মজুমদারের একটি করে ভিন্ন ভিন্ন শিল্পীর আঁকা পোট্রেট। বইটির অঙ্গসজ্জায় রয়েছে চমৎকারিত্ব।
গ্রন্থটি দীর্ঘ পাঁচ বছরের চেষ্টার একটি রূপ। বইটি যে কেবল কাব্যপ্রেমীদের ভালো লাগবে তা নয় পাঠকমাত্রই বইটি হাতে নিলে প্রথম দৃশ্যেই চমকিত হবেন প্রচ্ছদ দেখে। প্রচ্ছদ শিল্পী রাজীব দত্ত তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন কবি বিনয় মজুমদার—প্রশ্নের উদ্রেক করে কী দেখছেন? কতদূর দেখছেন? কতটা গভীরে? অথবা চোখের ভাষা কী বলছে কতটা নিঃস্ব হয়েছি—শুধু কবিতার জন্য। অথবা উদভ্রান্ত সেই দৃষ্টি যার মালিক। একমাত্র বিনয় মজুমদারই। 
বিনয়ের কোনো বাড়ি নেই।
বিনয়দের বাড়ি থাকে না।
সূর্য অস্ত গেলে বিশ্বের ঈশ্বর বাড়ি ফেরে,
বিনয় কোথাও ফেরে না।
                     —মাহবুব কবির
কেন না স্পষ্ট ইন্দ্রিয়—অনুভূতির নাম বিনয় মজুমদার। বিনয় প্রেমের টানে আর কোনো কথা হবে না এরপর। নির্জন আকাশের নীল এখন স-বিনয়ে নীরবতা পালনে মগ্ন!

এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার ।। সম্পাদনা : এহসান হায়দার, স্নিগ্ঘদীপ চক্রবর্তী ।। প্রচ্ছদ : রাজীব দত্ত ।। প্রকাশনা : আশ্রয় প্রকাশন, ঢাকা ।। দাম : ১৪৫০ টাকা ।। প্রকাশকাল : ২০২১ 

 

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী কর্মচারীর অকস্মাৎ মৃত্যু, অভিযোগ সচিবের দিকে!
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী কর্মচারীর অকস্মাৎ মৃত্যু, অভিযোগ সচিবের দিকে!
উত্তরাসহ দেশের চার পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান
উত্তরাসহ দেশের চার পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা