X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০
দেবেশ রায়ের গল্পপাঠ

‘হাড়কাটা’ থেকে ‘উদ্বাস্তু’ ।। পর্ব-৩

প্রশান্ত মৃধা
২১ মার্চ ২০২২, ১১:০০আপডেট : ২১ মার্চ ২০২২, ১১:০৩

এবছর একুশে গ্রন্থমেলায় কাগজ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে দেবেশ রায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প। সম্পাদনা করেছেন সমরেশ রায়। বইয়ের শেষে একটি দীর্ঘ পাঠ-অভিজ্ঞতা লিখেছেন প্রশান্ত মৃধা। সেই লেখাটি পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো।
দ্বিতীয় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন: ‘হাড়কাটা’ থেকে ‘উদ্বাস্তু’

এরপর-পরই, এই ১৯৫৭ ও এরপর ১৯৫৮-এ দুটো বিস্ময়কর গল্প লেখেন দেবেশ রায়। একটি ‘আহ্নিক গতি ও মাঝখানের দরজা’ ও অন্যটি ‘দুপুর’। দুটোই ‘দেশ’-এ প্রকাশিত, এবং, এখনও পর্যন্ত এই দুটো গল্প দেবেশ রায়ের প্রতিনিধিত্বশীল গল্প হিসেবে বিভিন্ন সংকলনে জায়গা পায়। একইসঙ্গে এটিও খুবই বিস্ময়কর যে পঁয়ষট্টি বছরের কথাসাহিত্যিক জীবনে, ছোটোগল্প লেখক হিসেবে একেবারে প্রথম জীবনে লেখা গল্পকে মান্যতা দেওয়া হয়ে, আর তা যথাক্রমে তার তৃতীয় ও ষষ্ঠ গল্প।
‘আহ্নিক গতি ও মাঝখানের দরজা’ মূলত শিশির আর তটিনীর অব্যক্ত সম্পর্কের টানাপড়েনহীন টানাপড়েনের গল্প। সম্পর্কে তারা দেবর-বৌদি। আর আছে তটিনীর বিছানপড়তা স্বামী, যে ধীরে ধীরে আরও, একেবারেই চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়ছে আর ওই স্বামী-স্ত্রীর কয়েকটি সন্তান। শিশির-তটিনী সমবয়সি। দাদার এই সন্তানগুলোর দিকে তাকিয়ে শিশির বিয়ে করেনি, যদিও গল্পে সেকথা বলা নেই, বুঝে নিতে হয় যেন। আর, দুটো ঘরের মাঝে মাঝখানের দরজা। এ দরজায় দাঁড়িয়ে প্রতিটি রাতে তটিনী একবার করে শিশিরকে শুধায়, ‘ঠাকুরপো, তোমার কিছু লাগবে?’ আর শিশির উত্তর দেয়, ‘না।’ এইভাবে আহ্নিক গতি, অর্থাৎ প্রতি চব্বিশটি ঘণ্টা বহমান, এভাবেই চলছে। দেবেশ রায়, গল্পজুড়ে এই দুই নারী-পুরুষের সম্পর্কে ইঙ্গিতগুলো ছড়িয়ে রাখেন, যেন দুজন নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল হয়েও, এতটা কাছে থেকেও ছুটির দিনে দুপুরবেলায় এক বিছানায় গড়াগড়ি দিয়েও, ওই মাঝখানের দরজাটা এড়িয়ে কোনো দিনও কাছে আসতে পারে না। আসা হয় না। ফলে, শিশিরের অব্যক্ততা আর তটিনীর ব্যক্ততার মাঝেও আমাদের শেষ পর্যন্ত তাদের জন্যে দুঃখ আর করুণাও যেন জমা হয়। জমা হয় এই জন্যে এত ইঙ্গিত ছড়িয়ে দিয়েও দেবেশ রায় সেই বাস্তবেই থাকেন, অথবা মানুষের সেই অব্যক্ততার সংকটকেই দাগিয়ে দেন যার বাইরে হয়তো কখনো কখনো কোনো কোনো মানুষের কোনোভাবেই যাওয়া সম্ভব হয় না। একটি-দুটি ইঙ্গিত :

“‘কাকা’—সংস্কৃত ব্যাকরণ থেকে খোকন মুখ তোলে। শিশির খোকনের দিকে তাকায়।
—‘কাকা, জনক মানে তো বাবা?’
—‘হ্যাঁ, সেটাও জানিস না?’
—‘পিতা মানেও তো বাবা?’
—‘হ্যাঁ।’
—‘তবে যে লিখেছে জনক ও পিতার অর্থ পার্থক্য কী?’
—‘জনক মানে জন্মদাতা, আর—’ হঠাৎ শিশির তটিনীর দিকে তাকায়। তটিনীও তারই দিকে তাকিয়ে আছে। একটু নিশ্চুপ। অত হাসির পর নীরবতাটা কানে খারাপ লাগে। খোকন ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে। বিল্টুও। রিতু বাবু, তিতুুও সব খেলা ভুলে এদিকে তাকিয়ে। হঠাৎ চারদিক চুপচাপ। যেন এই প্রশ্নটারই জবাবের জন্য।
—‘বৌদি, এক কাপ চা কারো তো!’”

এটা একটা। এমন আরও আছে। এই কাহিনি, আপনাতেই এমন ইঙ্গিত ছড়িয়ে দিয়েছে। হয়তো কোনোটাই দেবেশ রায়ের তৈরি করতে হয়নি, তা দুজন মানুষের জীবনকে যাপন করার তাগিদেই তৈরি হয়েছিল। তেমনি একটি সহজে ঘটে যাওয়া জায়গা :

“শিশির চোখ বুজে বসে। মাথায় তটিনীর হাত তেল বসাচ্ছে, শরীরটা একটু-একটু কাঁপে, তটিনী বাহুটা কাঁপে, কনুইয়ের ওপরের অংশটা দোলে। শিশিরের নাকে তটিনীর শাড়ির গন্ধ আসে—ঘাম, তেল, মালিশ। তটিনী কাজ করেছে, তটিনী তার মাথায় তেল দিচ্ছে, তটিনী দাদার গায়ে মলিশ বসিয়েছে।
—‘আচ্ছা ঠাকুরপো, সত্যি তুমি বিয়ে করবে না?’
—‘এইরে সেরেছে।’ আত্মরক্ষার ভঙ্গিতে শিশির পালায়, বারান্দায় তারের ওপর থেকে তোয়ালেটা টেনে নেয়, চেঁচিয়ে বলে, ‘বৌদি, আমি কুয়োর পাড়ে স্নান করছি,—তুমি বাথরুমে যাও, খিদে পেয়েছে।”

এই সব, এমন সব টুকরো দিনযাপনের ভিতরে ছড়িয়ে আছে শিশির আর তটিনীর সম্পর্ক। মাঝখানে যেন ওই একটি দরজা, অন্তত শিশিরের দিক থেকে। যেন সেই কথাটা জানিয়ে দেওয়ার জন্যে ওই একটি বাক্য দেওর-বউদির এই মুহূর্তটার ভিতরে : ‘তটিনী কাজ করছে, তটিনী তার মাথায় তেল দিচ্ছে, তটিনী দাদার গায়ে মালিশ বসিয়েছে।’ এই বাক্যটার ভিতরে অনেকগুলো ইঙ্গিত ছড়িয়ে আছে। শিশিরের মাথায় তেল দেওয়া, আর তার চলনশক্তিহীন দাদার গায়ে মালিশ বসানো। তটিনী ওই মাঝখানের দরজাটার ভেদ, মুছে ফেলতে চায়, আর একইসঙ্গে স্বামী-দেওর পাঁচটি সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। ওদিকে প্রতিটি দিন রাত্রিতে অর্থাৎ এক আহ্নিক গতিতে ওই মাঝখানের দরাজটাই শিশির কখনো তটিনীকে পেরুতে দিতে পারে না। গল্পের শেষের ঠিক আগে আর একটি জায়গা। যেখানে আজও তটিনী সেই প্রশ্নটাই করল আবার :

“—‘ঠাকুরপো, তোমার কিছু চাই?’ দু-ঘরের মাঝখানের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে হাতে লন্ঠন ঝুলিয়ে তটিনী প্রশ্ন করল।
—‘না।’
তবু তটিনী দাঁড়িয়ে রইল, আর চারটে জালের ভিতরে চোখ বুজে পড়ে রইল শিশির। এই তো স্বাভাবিক। ওই উত্তর আর তটিনীর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকো। আর তারপর : ... দরজা খোলা রইল। মশারির কোনা তুলে হামা দিয়ে তটিনী ভেতরে ঢুকল। অনন্ত বায়ু সমুদ্র থেকে হাঁসফাঁস করে নিশ্বাস নিচ্ছে যে-ক্ষয়ে-যাওয়া বুকের হাপরটা, তারই পাশে নিজের দেহটাকে ছড়িয়ে দিলো। বুকভরে শ্বাস টাইল।
দরজা খোলা রইল।
শিশির নিশ্বাস টানল।
দরজা খোলা রইল।
তটিনী কান পেতে রইল।
দরজা খোলা থাকবে।
শিশির নিশ্বাস টানবে।
দরজা খোলা থাকবে।
তটিনী কান পেতে থাকবে।
দরজা খোলা থাকবে।
শিশির কান পেতে থাকবে।
সারা রাত ভরে দুজন দুঃসাহসী পদধ্বনির কাল গুনবে, সারাটা রাত ধরে দুজন দুঃসাহসী পদক্ষেপের শক্তি সঞ্চয় করবে। সেই প্রতীক্ষা আর শক্তি সঞ্চয়ের সঙ্গে মিশে অস্বস্তিভরা অন্ধকার নিয়ে পৃথিবীটা নিজের মেরুদণ্ডের চারপাশে ঘুরবে। প্রভাত হবে।

এরপরও শিশির আর তটিনীকে নামহীন রেখে তাদের দুজনার এই অনন্ত আকাক্সক্ষার দিনযাপন নিয়ে আরও কিছু কথা। তিন-চারটি ছোট্ট অনুচ্ছেদ। কিন্তু সেইখানে গল্প শেষ হওয়ার পরে ওই মাঝখানের পেরুতে না-পারা দরজাটা মাঝখানে থেকে যায়, ওই দুটো মানুষের যেমন আমাদেরও। আর পৃথিবী তার আহ্নিক গতিতে বহে চলে। দেবেশ রায় কলম এখানে ভীষণ অমানবিক। দীর্ঘ ওই গল্পটা শুরু হবার পর থেকেই শিশির-তটিনী আমাদের কাছে যতই অনুমোদন পাক, তাঁর কলমের কাছে অনুমোদনহীন। পৃথিবী বহু পাওয়া, যা তাদের পাওয়া উচিত ছিল, এই সবই তার বাইরে থেকে যাায় আর মনে হয়, এও বাস্তব, এই হওয়া উচিত ছিল। মনে থাকে ওই মাঝখানের দরজাটাকে। চিরটাকাল সে তেমনই থাকবে, হয়তো ওই দরজাটা না থাকাই ছিল ভালো।
কিন্তু, ‘দুপুর’ এর বিপরীত মেরুর গল্প। একেবারে উলটো। হয়তো, পড়তে দিয়ে মনে হতেই পারে, এটি পরিচিত এই লেখকের গল্প নয়, এ তার হতে গল্প হতে পারে না। অন্তত দুটো-তিনটে কারণে তা মনে হতে পারে। দেবেশ রায়ের ভাষা। গল্পের ভাষা নিয়ে শুরু থেকেই তার এই পরীক্ষার প্রবণতা। ফলে, ‘আহ্নিক গতি...’-র ভাষা আর ‘দুপুরে’র ভাষার ফারাক চোখে পড়ার মতন, নিশ্চয়ই তা বিষয়ের কারণে। কিন্তু এই জনপ্রিয় সাহিত্যপত্রে দেবেশ রায় একেবারে প্রথম জীবনে গল্পচর্চায় এই যে ক্ষমতা দেখিয়েছেন, তা বিস্ময়কর আবার একইসঙ্গে ‘ছোটোগল্প : নতুন রীতি’র ঝোঁক, যে ঝোঁক সেই সময়ের প্রতিষ্ঠিত কথাসাহিত্যকদেরও প্রভাবিত করেছিল, দেবেশ রায় লিখেছেনও সেকথা। সেটি তাদের সমবেত সাহিত্যচর্চার ফলাফল। কিন্তু শেষতক সাহিত্যচর্চা তো একারই কাজ, অথবা সমবেততা সেখানে সেই কাজের মাধ্যমে একক আকৃতি পায়।
একটি পরিবারের দুপুরকে যাপন করা এই গল্পের বিষয়। সেই দুপুরটা ধীরে ধীরে একসময়ে বিকালের দিকে গড়িয়ে যায়। সেই দিক থেকে দিনের এই গনগনে সময়টাই গল্পের বিষয়, একটি বাড়ি, শতগুলো মানুষ আর পরিবেশ প্রতিবেশ শুধু সহগামী, ওই দুপুরের সঙ্গে মানুষের যে স্বাভাবিক দিনযাপন তাই, এর বাইরে আর যে কিছু নেই। অথবা, এর সঙ্গেই বাকি সবকিছু জুড়ে আছে।

“জ্যৈষ্ঠ মাসের রবিবারে বেলা সাড়ে ১২টার সময় ভাত খেয়ে, যতীনবাবু ঢুকলেন। ঢুকে দেখলেন, বড় মেয়ে মায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল খুলছে। ছোট মেয়ে সতী মেঝের ওপর মুকুলের পাশে শুয়ে আছে। মুকুল খালি গায়ে উপুড় হয়ে শোয়া, একটা হাতের কনুইয়ের ভাঁজে মাথা রাখা, আরেকটা হাত মাথার ওপর দিয়ে ছুড়ে দেওয়া। সতীর হাতে একটা বই। হাঁটু দুটো তুলে সতী বই পড়ছে। গামছা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে যতীনবাবু নামে চল্লিশোত্তর সেই ভদ্রলোক এইগুলি দেখে বিছানায় গিয়ে বসলেন। আর বসতেই, হুড়মুড় করে ঢুকলেন রেনুবালা, তাঁর পঁয়ত্রিশোত্তর স্ত্রী। মুখে ঘাম, আগুনের আঁচে আর গরমে মুখটা তামাটে। রেনুবালা সবেগে ঘরে ঢুকে চৌকির তলা থেকে একটা ডাব বের করলেন।”

এই থেকে গল্পের শুরু। একটি নিম্নমধ্যবিত্ত বাঙালি হিন্দু পরিবারের দুপুরের শুরু। গৃহকত্রী ছাড়া আর কারও তেমন কোনো কাজ নেই। আবার আছেও। ছুটির দিনে যার যার অবসরের কাজ যার যার মতন, আলস্যে। কিন্তু দেবেশ রায়ের বর্ণনা ভীষণ অনুপঙ্খ, একটি মানুষেরও এই অলস দিনযাপন কোনোভাবেই যেন তার চোখছাড়া হচ্ছে না। এই দুপুর যাপনই এই গল্পের বিষয়, আর সেটিই এই কজন মানুষের ঘণ্টা কয়েকের যাপনের ভিতর দিয়ে কীভাবে গড়িয়ে যাচ্ছে। ধরা পড়ছে সেই গার্হস্থ্য দিনের সবকিছু। আর এর ভিতরে দিনটা, অথবা এই সময়টা কে একইসঙ্গে ভিন্ন ভঙ্গিতে দেখিয়ে দেওয়াও বাদ যায় না।

“দুপুর। টইটম্বুর, টসটস করছে দুপুরটা। মধ্যসমুদ্রের মতো নিস্তরঙ্গ, বিরাট, ব্যাপক, চুম্বক পাহাড়ের মতো আকর্ষক, ফুলশয্যার পুরুষের মতো স্থির, সবল, জ্বলন্ত।”

এইটুকু একটি অনুচ্ছেদের সামনে হঠাৎ বর্ণনা দিয়ে, গল্পটাকে জীবনের প্রতিটি অনুষঙ্গে ছড়িয়েও যে দেওয়া যায়, অথবা গেল, অথবা এ যেন মাঝখানে কাহিনির অথবা কাহিনিহীনতাকে জুড়ে দেওয়া, মাঝখানে কাব্য পঙ্্ক্তির মতন কিছু পদ। যেভাবে গল্পটার একেবারে শেষে পৌঁছে দেখি :

“সতী বারান্দা থেকে এ ঘরে এল। মায়া ও-ঘর থেকে এ ঘরে এল। যতীনবাবু, রেণুবালা, মায়া, সতী, মুকুল-পাঁচজন পাঁচজনের দিকে স্থির হয়ে রইল। আর, মাটির বেহালাটা নিজের ছোট্ট দেহটিতে পাগলের মতো ঝোড়ো সুরের আওয়াজ এনে যেন বিদীর্ণ হয়ে নেমে যাবার আয়োজন করছে। যেন ঝড়ের সঙ্গে লড়ছে চড়ুই পাখি। হঠাৎ একটা ট্রাকের জান্তর আওয়াজে মাটির বেহালার সুরটা থেমে গেল। তারা পাঁচজন অপেক্ষা করল। সুর আর শোনা গেল না।
পাঁচজন আবার পাঁচজনের দিকে চাইল। চেয়েই থাকল। যেন পাঁচজনকে কিছু একটা বলবে, ইষদোদ্ভিন্ন পাঁচটি ঠোঁটে তার আভাস।
দুপুরটা ধীরে ধীরে বিকেল হয়ে গেল।”

গল্পটা যদিও যেন ধীরে ধীরে ক্লান্ত দুপুর থেকে চঞ্চল বিকেলের দিকে এর পাঠককে গড়িয়ে নিয়ে যায়। এই যে একটি দিনের মাঝখানের সময়টাকে নিয়ে এমন জীবনযাপনের ইঙ্গিতপূর্ণ গল্প নিশ্চিত বাংলা ভাষায় খুবই অল্প লেখা হয়েছে। বলতে গেলে প্রায় হয়ইনি। হলেও, দেবেশ রায়ের ভাষার এই ইঙ্গিতময়তা বিরল। আর সেই ইঙ্গিতময়তাকে তিনি ভরিয়ে তুলেছেন, প্রতিটি চরিত্রের জন্যে আলাদা আলাদা, মনোজগৎকে তুলে ধরে, তাও ওই একটি দুপুরে।
‘কলকাতা ও গোপাল’ (১৯৫৯) সম্ভবত, ওই পর্বে দেবেশ রায়ের কলকাতার পটভূমিতে লেখা প্রথম ও একমাত্র গল্প। একথা অবশ্য জোর দিয়ে বলার উপায় নেই, কারণ সমরেশ রায় সংকলিত দেবেশ রায়ের রচনাপঞ্জিতে কয়েকটি গল্পের উল্লেখ আছে, যার কপি পাওয়া যায়নি। সেগুলো নেইও ‘গল্পসমগ্র’র প্রথম খণ্ডে। ‘গল্পসমগ্র’ সংকলনটি গড়ে তুলবার সময়ে প্রতিটি গল্পের প্রথম প্রকাশের তারিখটি যে আনুমানিক সেকথা পরিশিষ্টে উল্লিখিত। ফলে, এটিই যে কলকাতার পটভূমিতে প্রথম গল্প তা নিশ্চিত না হওয়া গেলেও, তাঁর প্রথম দিককার গল্প ওই নগরের পটভূমিতে; আর বিখ্যাত গল্প, আর, দেবেশ রায় যে স্তরের লেখক তাতে তাঁর লেখায় যেভাবে ভূগোল জড়িয়ে থাকে, আর তিনি যেভাবে বলেন যে প্রায় কোনো কিছুই তিনি বানাতে জানেন না আর সেই প্রসঙ্গেরই উদাহরণ হিসেবে জানান যে, একটি গল্পে যেখানে একটি বাবলা বা পিপল গাছ সেখানে সেই গাছটি না হলে তার ওই ‘কল্পনা’র বর্ণনাও যথাযথ হয় না। এমন কথা তার স্মৃতিকথা ‘জলের মিনার জাগাও’তে লিখেছেন তিনি যে, একবার (সম্ভবত ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’ কিংবা ‘তিস্তাপুরাণ’) লিখতে লিখতে তিনি আটকে গেছেন, যেখানে যে বর্ণনা সেই বর্ণনাটা দিতে পারছেন না কারণ, বর্ণনা যথাযথ হচ্ছে না, সেখানে কী গাছ ছিল, সেই গাছটিকে স্মরণ করতে পারছেন না, তাই মনে হচ্ছে লেখাটা ঠিক হচ্ছে না। কারণ, নির্দিষ্ট গাছের নিচে মানুষের আচরণও নির্দিষ্ট হয়ে যায়। যেমন বাবলা গাছের নিচের আচরণ আর মেঘনিশ বা রেইনট্রির নিচের আচরণে ফারাক হতে বাধ্য। ওদিকে, দেবেশ রায় পাবনার ছেলে, বাল্যে পারিবারিক প্রয়োজনে জলপাইগুড়ি চলে গেছেন, আর কখনো পাবনায় আসা হয়নি, এর ভিতরে দেশভাগও ঘটেছে, তারা তখনও বাড়ি বলতে পাবনাকেই বুঝতেন। দেবেশ রায়ের বাল্য-কৈশোর-যৌবনের প্রথম দিনগুলি জলপাইগুড়িতেই কেটেছে। সেখানের আনন্দচন্দ্র কলেজ থেকে বিএ পাস করে কলকাতায় এমএম পড়তে আসেন। এ সময়ে দুবছর কলকাতায় ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সহপাঠীরা অনেকেই পরবর্তী কালের বিখ্যাত লেখক ও অন্যান্য শিল্পমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত। দেবেশ একটু দূর থেকে ‘কৃত্তিবাস’-এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। আর, ১৯৭৬-এর আগে ওই দুবছরই কলকাতাবাসের স্মৃতি তার সম্বল। যখন ‘কলকাতা ও গোপাল’ প্রকাশিত হচ্ছে ততদিনে তিনি (সম্ভবত) আনন্দচন্দ্র কলেজের শিক্ষক। 
এর আগে, সম্ভবত দশম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন কলকাতায় আগমনের একটি কথা লেখা আছে তার ‘প্রথম দেখা’য়। প্রসঙ্গটি তলস্তোয়ের ‘পুনরুজ্জীবন’-এর। জলপাইগুড়ির বাড়ি থেকে হঠাৎ কলকাতায় যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েছেন। বেরুনোর সময়ে সামনে পড়া একখানা বই, সেটিই হাতের কাছে, হাতে নিয়েছেন। ট্রেনে উঠে ভীষণ গদাগাদিতে দরজার কাছে বসে পড়ছেন সে বই। শিলিগুড়ির পরে, ফেরি পার হয়ে ট্রেনে উঠে পড়ছেন। কলকাতায় এসে যাকে চিঠিটা দিতে হবে, দিয়ে পড়ছেন, যেটুকু পড়া হচ্ছে সেখানে আঙুল, তারপর এক সময়ে ঘুমিয়ে পড়ছেন, আর তার ওপরে বইটা শেষ হতে ওভাবেই হাতে ধরা থাকছে। এই ‘পুনরুজ্জীবন’ পাঠের প্রক্রিয়ার সঙ্গে কৈশোরোত্তর দেবেশের কলকাতা গমনের স্মৃতি এইভাবে লেপটে আছে। এই পাঠও তো এক ভ্রমণ। যেন, উপন্যাসকে যে এক মেট্রোপলিটন প্রকল্প বলেছেন দেবেশ রায়, সেই প্রকল্পের এক বারতা ওই তারুণ্যে, তিনি পান একেবারেই ভিন্ন অর্থে। অর্থাৎ, জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতায় আগত দেবেশ রায়ের হাতে গোঁজা মহান তলস্তোয়ের ‘পুনরুজ্জীবন’-পাঠ সমাপ্ত হচ্ছে কলকাতাতে। একটি মহৎ উপন্যাস, ওদিকে দেবেশের প্রথম যেন তলস্তোয়কেও দেখা, শুরু হচ্ছে মফস্বল থেকে, শেষ হচ্ছে এক মেট্রোপলিটনে গমনে ও ঢুকে পড়ার ভিতর দিয়ে। পরবর্তী জীবনে তার উপলব্ধি এই পাঠে সামান্য হলেও মিলেমিশে যাচ্ছে। আর, অন্য অর্থে ওই উপন্যাস তো এর নামেরই মতন, পুনরুজ্জীবনই ঘটায়। আর, আমাদের আরও জানা আছে দেবেশ রায়ের সারাটি জীবনভর তলস্তোয় মুগ্ধতা ও ছাত্রত্ব কিংবা নবিশি। তিনি, সম্ভবত বাংলা ভাষার শেষ তলস্তোয়ী ঔপন্যাসিক। যিনি উপন্যাসকে তলস্তোয় সৃজিত পথে কল্পনা করেছেন, বাংলার, উত্তরবাংলার পটভূমিতে। সেখানে মানুষের মনোজগৎ মিলে গেছে প্রকৃতির সঙ্গে, যা ভূগোলকে বাদ দিয়ে কল্পনাও করা যায় না, আবার ভূগোল সেখানে জীবনযাপনের দৈনন্দিনতা ও সমাজ অনায়াসে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যায়, আর, সেখানে ব্যক্তি মানুষ ইতিহাসের চিরকালীন পটভূমিকায় স্থাপিত। তারই ভগ্নাংশ ধরা পড়ে, প্রয়াস তার গল্পেও। ফলে, গল্পের চিরকাল সমকাল, সেই সমকালকে বাদ দিয়ে ওই ছোটগল্পকেও কোনোভাবে চিন্তার বাইরে রাখা যায় না। 
‘কলকাতা ও গোপাল’ তাই কলকাতা মেট্টোপলিটন ভূগোলকে কেন্দ্রে রেখে দেবেশ রায়ের প্রথম গল্প। আর, এই গল্পের ওই বেকার গোপাল তার আনায়কেচিত পরিভ্রমণে গোটা কলকাতা শহর ভ্রমণ করে সবশেষে আত্মহত্যা করে। যদিও, এই সরল কথায় এ একেবারেই সরল করে, এক রাজা এক রানি, দুজন মরে গেল, কাহিনি শেষ হলো গোছের কথা হয়ে দাঁড়ায়। দেবেশ রায়ের গল্পে, সব সময়েই সেই সমকালীনতা থাকে, যা একইসঙ্গে মানবসংকটের দিকে থেকে চিরকালীন। আর তা তাঁর শুরুর গল্পগুলোতেও একেবারেই স্পষ্ট, এমনকি সেখানে সেই রাজনৈতিক সমকালীনতায় রাগও খুব স্পষ্ট, যদিও তা ছোটোগল্প নামক শিল্পমাধ্যমে শিল্পের শর্ত কোনোভাবেই ব্যাহত করে না, অথবা দেবেশ রায় সদা রাজনৈতিক কর্মী হওয়ার পরও, সাহিত্যচর্চা সাহিত্যচিন্তাকে রাজনৈতিক করে তোলার স্থল অভিপ্রায়ের বাইরে রাখতে পারতেন। এ জন্যে ‘বামপন্থি সাহিত্যে’র মতন প্রায় গালাগাল দিয়ে যে কথাটা বলা হয়, সেই সমস্ত রচনার সংকটা কোথায়, তা নিয়ে সাহিত্যিক জীবনের শুরুতে বন্ধু দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পার্টি মিটিঙে দুজনে কী সংকটে পড়েছিলেন, সেকথা ‘তৃপাকে এক তোড়া’ নামের ছোট্টো বইয়ে ‘দেবেশ দীপেনের দীপেন’ লেখায় ধরা আছে। এমনকি পার্টির ওই নির্দেশমাখানো প্রস্তাবনার কারণে দীপেন বন্দ্যোপাধ্যায় যে একসময়ে লেখা থেকে প্রায় হাত গুটিয়ে নিয়েছিলেন, কিংবা ‘দেশ’ পত্রিকায় কেন তারা লিখবেন—এই প্রশ্নেরও যে মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাও সেখানেও অন্যত্র উল্লেখ আছে। নিবেদিত পার্টিকর্মী বা নেতা হিসেবে দেবেশ রায় সেই প্রশ্নগুলো তুলতে কখনো পিছপা হননি। হয়তো, ইতিপূর্বে পার্টির সদস্যপদ ত্যাগ না-করেও সমরেশ বসুও এইসমস্ত প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে চিঠিতে তার জেলবাসের পরে মুক্তজীবনে পার্টির প্রতি আনুগত্য আছে, কিন্তু পার্টি থেকে আশ্রয় নেই। কারণ, ‘দেশ’ ও ‘পরিচয়’, অন্তত চিন-ভারত যুদ্ধের পরে ও কমিউনিস্ট পার্টির ভাগের পরে, সাহিত্যের কাগজ হিসেবে তো দুই অক্ষের। আর ওদিকে দেবেশ রায়ের আমৃত্যু সমরেশ বসুর রচনার প্রতি অনুরাগ আমাদের জানা।
‘কলকাতা ও গোপালে’র বেকার গোপাল, যে চাকরিহীন হয়ে বন্ধুর বাড়ি যায়, যেন সেদিনও চাকরিতেই যাচ্ছে, এরপর বিষ খোঁজে, দড়ি খোঁজে ইত্যাদি, এবং পরে, ‘আমার মরার কোনো দরকার ছিল না’ এই ভেবে শেষ করার আগেই রেলের তলে ঝাঁপ দেয়। দীর্ঘ এই গল্পের দু-তিনটে জায়গা উদাহরণ। দুজায়গাতেই উদভ্রান্ত গোপালের সঙ্গে অন্যদের সংলাপ :

১। “‘লাস্ট ট্রেন চলে গেছে?’ গোপাল জিজ্ঞেস করল।
‘হ্যাঁ, সে তো কখ—ন। কোথায় যাবেন?’ দোকানি জবাব দিল, ‘দশটায় তো লাস্ট ট্রেন ছাড়ে।’
‘গোপাল সরে এল, ‘দড়ি আছে?’
‘কীসের?’ দোকানদার জিজ্ঞেস করল।
‘পাটের।’
‘না, নারকোলের আছে।’
‘না’—বলে লাস্ট ট্রেন চলে যাওয়ার, আর পাটের দড়ি না-পাওয়ার, খবর দুটো দেখার জন্যই যদি বাড়ি ফিরে এসে এতগুলো লোকের ঘুমের নিশ্বাসের মধ্যদিয়ে এ ঘরে এসে গোপাল শুয়ে আছে।”

২। ধনী বন্ধুর কাছে গিয়েও গোপাল ভার বেকারত্বের কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না। বন্ধু চাকরিতে যাচ্ছে। সেখানে গোপাল :

“ক্লাইভ স্টিট জংশনের আগের স্টেপেজে গোপাল কেন হঠাৎ বুঝল, আর বেশিক্ষণ সমরকে সঙ্গে নিয়ে তার ঘোরা হবে না। সমর তাকে কোনো সাহায্য করতে পারে এমন আশ্বাসও তার মিলল না। অথচ পরের স্টপেজেই তাকে একলা এই কলকাতার পথে নামতে হবে। মরিয়া হয়ে সে জিজ্ঞেস করল—তুই এখন ল্যাবোরেটরিতে যাস না?’
‘হ্যাঁ, বুধ আর শুক্রবার যাই, সায়েন্স কলেজ।’
‘কাল যাবি?’
‘হ্যাঁ, কেন?’
‘আমার ঘরে বড় ইঁদুরের উৎপাত হয়েছে,’ দাঁড়িয়ে উঠে গোপাল বলল, ‘আমি এখানে নামব, একটু পয়জন কিছু এনে দিতে পারিব?’
‘যা যা ইঁদুর মারা কল কিনে নিগে যা,’ সমর বলল কথার সঙ্গে হাসি মিলিয়ে, ‘আবার যাস একদিন।’
গোপাল কথাকটি শুনল চলন্ত ট্রাম থেকে নামতে নামতে। তারপর নেমে, একটু দৌড়ে, থেমে, হঠাৎ চলে-যাওয়া ট্রামের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, ‘যা বো-অ।’ দু-চারজন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখল।
আর সবশেষে, সেই গোপালের স্বরচিত পরিণতি। যখন বেকার গোপালকে কলকাতার মতন নির্দয় শহর আর বাঁচবার যেন কোনো উপায় রাখল না।”
৩। “অত ওপর থেকে, এত লোক আর গাড়িঘোড়ার মাঝখান দিয়ে, কালকের রাতের সেই পেচ্ছাপখানাটা হঠাৎ নজরে পড়ল। কলকাতা, কলকাতা। হঠাৎ ঘুমটা যেন আরো পাকিয়ে ধরল সারা শরীটাকে, মনটাকে। কলকাতা। আমি একা নই। আমি কলকাতার নই। প্রায় নিন্দ্রিত গোপাল রেলিঙ ধরে দাঁড়াতেই ট্রেনটা এসে গেল। ওভারব্রিজের রেলিঙ ধরে গোপাল ঝুঁকে যায়, যেন ঘুমেতে গড়িয়ে পড়ে। ওভারব্রিজ আর মাটির মাঝখানের শূন্যতার মধ্যে পড়ে যাবার ঠিক পূর্বের হ্রস্বতম মুহূর্তে সে ভাবতে চেয়েছিল—‘আমার মরার কোনো মানেই হয় না।’ আর, সেই বাক্যটা পুরোপুরি উচ্চারণ ভাবতে পারার আগেই ইঞ্জিনের ধাক্কায় সে চাকার তলে চলে গিয়েছিল।”

এই উদ্ধৃতিগুলো, একটু দীর্ঘই হলো, আর তা গোপাল নামক ওই হতভাগ্য আর কিংকতর্ব্যবিমূঢ় ও সেই কারণে বোধশূন্য চাকরিহীন যুবকের নগর কলকাতা পরিভ্রমণের অংশগুলো বাদই দেওয়া হলো, তাতে উত্তরকলকাতার আংশিক আর দক্ষিণকলকাতার অনেকখানিক সে পায়ে ও ট্রামে চষে ফেলে, আসলে সে চাকরিহীন দিনটি, ভবিষ্যৎহীন দিনগুলি এইভাবে কাটিয়ে দিতে চেয়েছে আর একইসঙ্গে সে একটি চাকরির চিন্তায়ও বিভোর, যদিও সে জানে না সেটি তার কোনোভাবেই জুটবে কি না; এবং জোটেওনি; ইতিমধ্যে বার দুয়েক আত্মহত্যার রসদ সে খুঁজেছে, পেয়েও যেন পায়নি। এই গল্পটি তো দেবেশ রায়ের প্রথম পর্বের গল্প, আর তা ১৯৬১-এর আগে বা ওই সময়ের ভিতরে লিখিত, আর ভারতের স্বাধীনতার বয়েস তখন বছর বারো, সোজা বাংলায় এক যুগ, কিন্তু যুগযুগান্ত পেরিয়ে ভারতের স্বাধীনতার স্বাদ, যাতে একজন তরুণও বেকার থাকবে না, তা তো এই গোপালের ভালো, লক্ষ লক্ষ গোপালের ভাগ্যেই জুটল না। আর, তার নামটিও গোপাল, ‘বর্ণপরিচয়’ অনুযায়ী গোপাল বড়ো সুবোধ বালক, সে কাহারও সহিত কোনো কলহ করিতে জানে না, বরং অতি অনায়াসে কলহর বিপরীতে কোনো ধরনের দাবির ব্যতিরেকে সে অনায়াসে আত্মহত্যা করতে পারে। সেটিও যে কোনো, ওই হাজার হাজার গোপালের জন্য অত্যন্ত সহজ সমাধান। গত শতকের ষাটের দশকের শুরুতে, বাংলা ভাষায়, এমন গল্প কম লেখা হয়েছে। বরং, এত বেকারত্বের মাঝখানে, হিন্দি ছবির বেকারত্ব ভোলানো আর উত্তমকুমার প্রমুখের দারিদ্র্যের জয়গানের বিপরীতে এই গল্প একেবারেই ভিন্ন চরিত্রের, সম্ভবত একমাত্র নরেন্দ্রনাথ মিত্রই তার নিচুস্বরের অত্যন্ত মানবিক উদ্বাস্তুগাথায় এমন চিত্র এঁকে গেছেন। বাকি প্রায় সবাই, কিংবা অনেকেই চমকে নজরকাড়ায় মনোযোগী, অথবা, সেইসমস্ত গল্প এ দিকটা খেয়াল করেনি। চলবে

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়