X
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫
২৬ বৈশাখ ১৪৩২

অমৃতকথা—১১

শামিম আহমেদ
২২ মে ২০২৩, ১৩:২১আপডেট : ২২ মে ২০২৩, ১৩:২১

চন্দ্রবংশীয় রাজা বিশ্বামিত্র সূর্যবংশের কুলগুরু বশিষ্ঠের সঙ্গে বিরোধে মাতোয়ারা হলেন।

বশিষ্ঠকে বলা হল, কেন তিনি বিশ্বামিত্রের কাজে বাধা দিচ্ছেন না। জবাবে ঋষি বললেন, ব্রাহ্মণের বল ক্ষমা। তাঁর যৌথ মালিকানাতন্ত্রের যদি বল থাকে, সে আপনাআপনিই টিকে যাবে। তখন পহ্লব, দ্রাবিড়, শক, যবন, শবর, পৌণ্ড্র, কিরাত, সিংহল, বর্বর, খোশ, পুলিন্দ, চীন, হূন, কেরল, ম্লেচ্ছ প্রভৃতি সৈন্যরা বশিষ্ঠের হয়ে যুদ্ধ করলেন এবং বিশ্বামিত্রকে পরাজিত করলেন। কারা যুদ্ধ করেছিলেন নন্দিনীকে বা যৌথতন্ত্রকে রক্ষা করতে, নামগুলো দেখে আন্দাজ করা যায় যে তাঁরা কেউই সে যুগের নিরিখে তথাকথিত উন্নত জাতি বলে চিত্রিত নন। বিশ্বামিত্র তখন ক্রুদ্ধ হয়ে বশিষ্ঠের প্রতি নানা রকমের শর নিক্ষেপ করতে লাগলেন। বশিষ্ঠ কেবলমাত্র দণ্ডনীতি বা রাজনীতি দিয়ে সে সব রুখে দিতে সক্ষম হলেন। সেই দণ্ডের নাম ছিল ব্রহ্মদণ্ড। বিশ্বামিত্র ও বশিষ্ঠ কিন্তু সেখানেই থামলেন না। তাঁরা এই লড়াইকে নিয়ে গেলেন রক্তপাতের অঙ্গনে। বিশ্বামিত্রের শত পুত্র বশিষ্ঠের দ্বারা নিহত হয়। আবার বিশ্বামিত্রের প্ররোচনায় শাপগ্রস্ত কল্মাষপাদ রাক্ষস বশিষ্ঠের শত পুত্রকে ভক্ষণ করেন। রক্তপাতের রাজনীতিতে দুজনেই তখন সমানে পাল্লা দিচ্ছেন কিন্তু তাত্ত্বিক যুদ্ধে বিশ্বামিত্র বার বার বশিষ্ঠের কাছে পরাজিত হচ্ছেন। নন্দিনীকে বা যৌথতন্ত্রকে কোনোভাবেই বিশ্বামিত্র ভেঙে দিতে পারছেন না। জল, জঙ্গল, জমি কোনো প্রকারেই অরণ্যচারী ‘বর্বর’ মানুষের যৌথ মালিকানা থেকে নিজের মালিকানায় আনতে পারছেন না। বিশ্বামিত্র ক্রমে বুঝতে পারলেন, ব্রাহ্মণ বা মেধাজীবীর সঙ্গে লড়তে গেলে শুধু তেজ বা ক্ষত্রিয়ের অস্ত্রবল দিয়ে লড়া সম্ভব নয়। বশিষ্ঠের রাজনীতি বা ব্রহ্মদণ্ডের আশ্চর্য ক্ষমতা দেখে নিজের ক্ষত্রিয় বলের প্রতি ধিক্কার জন্মালো তাঁর। তিনি সম্যকরূপে বুঝতে পারলেন এই রাজনৈতিক তথা অর্থনৈতিক যুদ্ধ তাত্ত্বিক, অতএব তিনি সাধনায় বসলেন।

ব্রাহ্মণ বশিষ্ঠ তখন ভাবছেন, চন্দ্রবংশীয় তথা ব্যক্তিমালিকানার পক্ষাবলম্বীদের শায়েস্তা করতে কী করা উচিত তাঁর? তিনি ভাবছেন, শূদ্ররা তাঁর সঙ্গে রয়েছে। পহ্লব, দ্রাবিড়, শক, যবন, শবর, পৌণ্ড্র, কিরাত, সিংহল, বর্বর, খোশ, পুলিন্দ, চীন, হূন, কেরল, ম্লেচ্ছ—তাঁরা তো সকলে শূদ্র। বাকি রইল বৈশ্য বর্ণ। ক্ষত্রিয় বিশ্বামিত্রের সঙ্গে লড়াইয়ে বশিষ্ঠদেব পাশে পেতে চাইলেন বৈশ্যদের। বৈশ্য চিত্রমুখ তখন ওই বর্ণের নেতা। তাঁর একটি সুন্দরী কন্যা আছে—নাম ‘অদৃশ্যন্তী’। বশিষ্ঠ তাঁর পুত্র শক্ত্রির বিবাহের প্রস্তাব পাঠালেন। সেই সময়ের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিধি অনুযায়ী, এই বিবাহ অসংগত। কেননা, ব্রাহ্মণ শক্ত্রির সঙ্গে বৈশ্যকন্যা অদৃশ্যন্তীর মিলনে যে সন্তান উৎপন্ন হবে, সে হবে বর্ণবহির্ভূত, তার জাতি হবে সঙ্কর। সেই সন্তান ‘অম্বষ্ঠ’ বলে পরিচিত হবে। অম্বষ্ঠরা হয় বৈদ্যের কাজ করবেন নয়তো মাহুতবৃত্তি হবে তাঁদের জীবিকা নির্বাহের উপায়। বশিষ্ঠ ভাবলেন, অত ভেবে কাজ নেই। বৈশ্যদের পাশে পেতে গেলে তাঁকে এই বিবাহ দিতেই হবে।

রাজনীতির অঙ্গ হিসাবে যথাকালে বশিষ্ঠপুত্র শক্ত্রির সঙ্গে বৈশ্য চিত্রমুখের কন্যা অদৃশ্যন্তীর বিবাহ সম্পন্ন হল। অদৃশ্য শক্তি রচনা করেও শেষরক্ষা হল না। চন্দ্রবংশীয় ক্ষত্রিয় রাজা বিশ্বামিত্রের প্ররোচনায় কল্মাষপাদ রাক্ষস ভক্ষণ করল সূর্যবংশের কুলপুরোহিত বশিষ্ঠপুত্র শক্ত্রিকে। গর্ভবতী চিত্রমুখকন্যা বিধবা হলেন। যথাকালে তিনি একটি পুত্রের জন্ম দিলেন, সেই পুত্রের নাম ‘পরাশর’। মনুসংহিতা অনুযায়ী, এই পুত্র চতুর্বর্ণের মধ্যে পড়েন না, তিনি সংকর। পরাশর হলেন অম্বষ্ঠ। পিতামহ বশিষ্ঠ তাঁর ব্রাহ্মণ্যকরণ করলেন। পরাশর এই বার সূর্যবংশের কুলপুরোহিত বশিষ্ঠের রাজনীতির হাল ধরলেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, তাঁর পিতা ও পিতামহ ব্রাহ্মণ বা মেধাজীবী হলেও মা হলেন বৈশ্যা, মাতামহ চিত্রমুখও প্রখ্যাত ব্যবসায়ী। ব্রাহ্মণ-বৈশ্যের হাত ধরে রচিত হল রাজনীতির নতুন সংহিতা, কালক্রমে যা চন্দ্রবংশীয় রাজাদের রাজধর্ম ও সামাজিক ধর্মের মূল গ্রন্থ মনুসংহিতার জায়গা দখল করে নিল। কীভাবে তা সম্ভব হল, সেই রাজনৈতিক আলোচনায় প্রবেশ করা যাক। 

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সরকার আ.লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে: প্রেস উইং
সরকার আ.লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে: প্রেস উইং
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশ শুরু
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশ শুরু
আগুনে পুড়ে গেছে রাজবাড়ীর এক ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টার
আগুনে পুড়ে গেছে রাজবাড়ীর এক ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টার
বায়তুল মোকাররম থেকে যমুনার পথে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা
বায়তুল মোকাররম থেকে যমুনার পথে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা
সর্বাধিক পঠিত
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো’
‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো’
নৌ পুলিশের অভিযানে ২৭৬ জন গ্রেফতার, ১০ মরদেহ উদ্ধার
নৌ পুলিশের অভিযানে ২৭৬ জন গ্রেফতার, ১০ মরদেহ উদ্ধার
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ৫৬ জনের পদত্যাগ, তুলেছেন দুর্নীতির অভিযোগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ৫৬ জনের পদত্যাগ, তুলেছেন দুর্নীতির অভিযোগ