X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওলট-পালট

বাশার খান
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৫৩আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭:০৯

সরকারি অফিসের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা মুহাম্মদ জামিল উদ্দিন। বয়সটা ষাট পেরিয়েছে। ডায়াবেটিসের মাত্রাটা বেড়ে গেলে অফিসের দায়িত্ব পালনে মাঝেমধ্যে ব্যাঘাত ঘটে। এছাড়া অফিসের কাজ ঠিকমতই করে চলেছেন তিনি। ভদ্রলোক হিসেবে কর্মস্থলে তার বেশ সুনাম।

মঙ্গলবার সকালে আজিমপুর থেকে অফিসের উদ্দেশে বেরুলেন জামিল উদ্দিন। সড়ক অনেকটাই ফাঁকা। সপ্তাহের এদিনটা নিউমার্কেট, ধানমন্ডি ও শাহবাগসহ আশপাশের অনেক এলাকায় বিপণিবিতানে সাপ্তাহিক ছুটি। এ কারণে মঙ্গলবার এইদিকে যাতায়াতে স্বস্তি মেলে। নইলে জ্যামের কারণে দশ মিনিটের পথ যেতে এক ঘণ্টাও লেগে যায়।

জামিল উদ্দিন রিকশায় উঠে চালকের মুখ থেকে যা শুনলেন, এ রকম ঘটনা আর কখনও শুনেনি তিনি। রিকশাচালককে দেখেই জামিল উদ্দিন অবশ্য ভাবনায় পড়ে গিয়েছিলেন। ‘চ...’ বলে যেই রিকশায় উঠবেন, নজর পড়ল যে- রিকশাচালকের একটি হাত নেই। কনুইর কিছুটা উপরে বাম হাতটি কাটা। তাতে হাফশার্টের হাতা ঝুলছে। জামিল উদ্দিন কিছুটা সময় নিলেন। রিকশায় উঠবেন কি না- ভাবনায় পড়ে গেলেন। যদি এক্সিডেন্ট করে- এ আশঙ্কায়।

জামিল সাহেবের রিকশায় ওঠা বিলম্ব ও তাকে চিন্তিত দেখে বিষয়টা বুঝতে পারল রিকশাচালক। ‘টেনসন লইয়েন না সাব। সব উপরওয়ালার ইশারা। এক হাত দিয়া রিকশা চালাই আজ সতের বছর হইল। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটে নাই। সব মাবুদের ইচ্ছা। এক হাত দিয়াই রোজগার করি। মাইয়া দুইডারেই বিয়া দিছি। ছেলেটা ছোড। আজিমপুর স্কুলে কেলাস সেভেনে পড়ে। সব মালিকের ইচ্ছা। আমি খালি চেষ্টা কইরা যাইতাছি সাব।’ রিকশাচালকের কথায় বুকে ভরসা এল জামিল উদ্দিনের। একটা নিঃশ্বাস ফেলে উঠলেন রিকশায়। ‘চলো!’ চালক পেডেল ঘুরাতে লাগল।

রিকশা দ্রুত ছুটে চলল। ‘এই আস্তে চালাও। এত তাড়াহুড়ার কী আছে?’ রিকশাচালক বলল, ‘সাব, এই টাইমে ভাড়া পাইলে জোরে চালাই। অভ্যাস হইয়া গেছে। লোকজন অফিসে যায় তো। ঠিক টাইমে অফিসে পৌঁছতে অয়। ঢাকা শহর ত আর শহর নাই। যানজটের আগামাথা নাই। রোড কিলিয়ার থাকলে অফিস সময়ে আমি গাড়ি জোরে চালাই। আপনার মনে হয় অফিস নাই সাব?’

‘অফিস আছে।’ ঘড়িতে সময় দেখে নেন জামিল। ‘আস্তেই চালাও। অসুবিধা নাই। হাতে যথেষ্ঠ সময় আছে।’ রিকশাচালক গতি কমিয়ে রিকশা থামায়। পাশের ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ রিকশার গ্যারেজ। ‘তাইলে সাব, চাক্কায় একটু হাওয়া দিয়া লই। ডাইন চাকায় হাওয়া কম। দুই-তিন মিনিটের বেশি লাগব না।’ ‘ঠিক আছে তাড়াতাড়ি করো।’ রিকশাচালক এক হাতেই চাকায় হাওয়া দিতে শুরু করল। ডান পায়ে পাম্পারে পা দিয়ে ডান হাতে চাপছে পাম্পারের হাতল। ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলেন জামিল উদ্দিন। রিকশাচালক পাম্পারটা রেখে গ্যারেজওয়ালাকে পকেট থেকে টাকা দিয়ে রিকশায় উঠে বসল।

‘বুঝলেন সাব, শহরটা আর ভাল্লেগে না। লোকজন কেমন ওলট-পালট কাম শুরু করছে।’ ‘ওলট পালট কাম। সেইটা আবার কী?’ ‘ভোর বেলা নিউমার্কেট মোড় থেইকা রিকশায় ওঠা এক শয়তান আমার মাথাটা আউলাইয়া দিছে। নতুন স্টাইলের সন্ত্রাসের পাল্লায় পড়ছিলাম সাব।’

‘নতুন স্টাইলের সন্ত্রাস!’ ‘জি সাব, আমার সাথে করল কেমন একটা সন্ত্রাসী। ঘটনাটা হইল, পুলাডা চল্লিশ টাকা ভাড়া পুরাইয়া আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ যাবে বইলা রিকশায় উঠে। আজিমপুর গিয়া নাইমাই হাঁটা ধরল। আমি ভাড়া দিয়া যান কইয়া ডাকলাম। পোলা কয়- “ভাড়া কয় টাকা জানি?” আমি কইলাম- ক্যান, চল্লিশ টাকা পুরায়া উঠলেন না? চোখ দুইডা কেমন বাইর কইরা কইল- “দে, চল্লিশ টাকা দে।” আমি চল্লিশ টাকা দেমু! মাথাডা ঘুইরা গেল সাব। এরপর কোমর থেইক্কা কী একটা বাইর কইরা কইল, “শালা, চল্লিশ টাকা দিবি নাকি ক, মালডা দেখছস? শালা বানচুত।” আমি ভয়ে পকেট থেইকা চল্লিশ টাকা দিয়া দিলাম। বুঝলেন সাব, ঢাকা শহরে আসলাম দুই যুগ পারায় গেল। চোখের সামনে বহুত ছিনতাই দেখছি। তবে এমন ঘটনা এই প্রথম দেখলাম। ঘটনাডা আবার আমার সাথেই ঘটল।’ জামিল সাহেব বললেন, ‘রিকশায় চড়ে গন্তব্যে পৌঁছে রিকশাচালকের কাছ থেকে টাকা নেয়া- কী অদ্ভুত কথা। এ রকম ঘটনা আমিও জীবনে প্রথম শুনলাম। তবে তুমি চিৎকার দিলানা কেন? লোকজন জড়ো করতা।’

‘সাব, জানের একটা ভয় আছে না। যদি চাক্কু মারে। ভোর বেলা রাস্তায় লোকজনও বেশি আছিল না।
কয়দিন আগে আরেক ঘটনা সাব। নিউমার্কেট মোড় থেইকা এক পোলা চল্লিশ টাকা ভাড়া পুরাইয়া উঠছিল রিকশায়। ইনবার্সিটির শহীদুল্লাহ হলে যাইব। পুলাডা কইল, “ভাই আপনে সিটে বসেন, আমি রিকশা চালাই। শহীদুল্লাহ হলের গেইটে গিয়া থামব।” পুলার কথা শুইনা মাথা গেল আউলাইয়া। আমি রাজি না হওয়ায় পুলাডা জোর কইরাই রিকশা চালাইতে শুরু করল। আমি সিটে বইয়া রইলাম। খুব লজ্জা লাগতাছিল আমার। করতাছে কী এই শিক্ষিত পোলা? ভয় পাইয়া গেছিলাম। সিটে বইসাও আমার শরীর ঘাইমা গেছে। জীবনভর রিকশার প্যাডেল মাইরা অভ্যাস তো, সিটে বইসা থাকাটা সহ্য করতে পারতাছিলাম না। শহীদুল্লাহ হলে আইসা আমাকে বিশ টাকা দিয়া কইল, “যেহেতু আমি চালাইয়া আসছি তাই ভাড়া অর্ধেক। আপনে চাইলে পুরো চল্লিশ টাকা দিতে আমার আপত্তি নাই।” আমি আর কিছু কইলাম না সাব। পুলাডা হলে ঢুকল, আমি ফ্যাল ফ্যাল কইরা ম্যালাক্ষণ তাকাই থাকলাম।’

এই ঘটনায় রিকশাচালক অবশ্য বেশ খুশি। হেসে হেসে বলছিল। ‘বুঝলেন সাব, সতের বছর পারায় গেল রিকশা চালাই। এমন চান্স মাগার এই পরথম পাইলাম। যদিও তখন আমার খারাপ লাগতাছিল। তয় গ্যারেজ গিয়া ঘটনাডা লগের বাকী ডাইভার গ কইলাম। এক প্যাসেন্দার আইজগা আমারে সিটে বসাইয়া অয় রিকশা চালাইছে। কেউ বিশ্বাস করবার চাইল না।’

ঘটনাটি শুনে ছেলেটিকে জামিল উদ্দিনের কাছে মাতাল বলেই মনে হল। ছেলেটি যে মাতাল ছিল সেটা রিকশাচালক হয়তো বুঝতে পারেনি। রিকশাচালকও মাথাল কিসিমের হবে বোধহয়। নইলে ছেলেটির এমন প্রস্তাবে সে রাজি হল কীভাবে।

জামিল উদ্দিন অফিসে এসে তার বসার ডেস্কটি গুছগাছ করে নিলেন। হাজিরা খাতার সই দিয়ে ঢুকলেন বড় কর্তার রুমে। বড় কর্তা তার সিটে নেই। মৃদু শব্দে বিড়ালের মিউ মিউ ডাক শুনা গেল। জামিল উদ্দিন উঁকি মেরে দেখেন- ইঁদুরের হাত থেকে অফিসের কাগজপত্র রক্ষা করতে কয়দিন আগে কিনে আনা বিড়ালটি বড় কর্তার সিটে বসে আছে। ‘বড় সাহেব গেল কই?’ জামিল উদ্দিন চোখ ঘুরালেন। কানে ভররর ভররর নাক ডাকের শব্দ শুনা গেল। বড় সাব পত্রিকা মুখের উপর রেখে সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। জামিল উদ্দিন একটা বড় নিঃশ্বাস ফেললেন। আগের বড় সাহেবও টেবিলে বসে ঝিমাতেন। ওনার সমর্থিত দল ক্ষমতায় আসার পর অবশ্য টেবিলে মাথা কাত করেই ঘুমাতে শুরু করেছিলেন। তবে এই সাহেবের মত টেবিল ছেড়ে গিয়ে ঘুমাননি।

এ সময় অফিসের টি-বয় রমিজ গ্লাসে দুধ নিয়ে প্রবেশ করে। রমিজ পরিস্থিতি দেখে মিটিমিটি হাসছিল। ‘আস্সালামু আলাইকুম স্যার!’ নিয়ন্ত্রিত আওয়াজে বিড়ালটিকে সালাম দেয় রমিজ। ‘বড় সাব ঘুমাইতেছে। আজ আপনেই আমাদের বড় সাব। ফাইলপত্র সব সিগনেচার কইরা ফালান। অনেক ফাইল জইমা গেছে। সিগনেচার করতে গিয়া গড়িমসি কইরেন না কিন্তু। কোনো টেনশন নাই। বাম হাত দিয়া পকেটে কিছু দিয়া দেমুনে। দেরি কইরেন না। সিগনেচার শুরু কইরা দেন।’ রমিজের ফিসফিস শব্দে কথাগুলো শুনে জামিল উদ্দিন না হেসে পারলেন না। তবে সেটা মুচকি হাসি। নিয়ন্ত্রিত আওয়াজে।
বড় সাহেবের ভররর ভররর আওয়াজ আরও বাড়তে লাগল। রমিজের মুখও থেমে রইল না।

‘বিলাই স্যার, আপনে এই চান্স কিন্তু ম্যালা দিন পাইবেন। বড় সাবের ওঠা-বসা বড় বড় মাইনসের লগে। ওনার দল সদ্য ক্ষমতায় আইছে। কারো কোনো কিছু বলবার সাহস নাই। সোফায় ঘুমানো চলতেই থাকব। বিলাই স্যার, তয় আমি কইলাম মাঝেমধ্যে বড় সাবরে খোঁচা মারি। আমার কোনো সমস্যা অয় না। কারণ খোঁচা মাইরা কেমনে শরীর চুলকায় দেওন লাগে, এইডা আমার এক্কেবারে মুখস্থ। তাছাড়া বড় সাবের বহুত ব্যক্তিগত কাম আমিই কইরা দেই। এইজন্য আমার খোঁচায় তেমন রাগে না। বিলাই স্যার, এমন কইরা তাকায় আছেন ক্যান? ডরাইয়েন না। অসুবিধা নাই। জামিল স্যার কিন্তু খারাপ না। তবে এইসব দেইখা কিছু বলেন-টলেন না। খালি চাইয়া চাইয়া দেখেন আর ভিতরে ভিতরে ফুলেন। বেলুনের মত। কিন্তু প্রকাশ করে না। উনি কোনো দলই করে না। বিরোধী দলও না, সরকারি দলও না। এই জন্য প্রকাশ করার টাইমও আসে না। অন্যায় দেখে গরম দেখাইতে পারে না। নিরীহ কিসিমের লোক। খালি চুপ মাইরা থাকে। তয় আমারে ইট্টু বেশি ভালোবাসে। আমার কথা কি বুঝতে পারছেন বিলাই স্যার।’ শেষ বাক্যটি বলতে গিয়ে রমিজের গলার আওয়াজ কিছুটা বেড়ে যায়। বড় কর্তা হঠাৎ জেগে উঠে।

‘এই কে? কে?’ থতমত খেয়ে উঠে বড় সাব। ‘স্যার, কেউ না। বিলাই।’ ‘বিড়াল, কোথায় বিড়াল? কোথায়?’ ‘আপনার সিটে।’ ‘আমার সিটে, কোথায়, কোথায়?’ বড় সাহেব উঠে গিয়ে দেখল। বিড়ালটিকে তাড়িয়ে দিল। ‘বেত্তমিস বিড়াল। আমার সিটে এসে বসে আছে। তোমরা এটিকে তাড়ালে না কেন হ্যাঁ, তাড়ালে না কেন? তোমাদের না কোনো দায়িত্বজ্ঞান নেই?’ বড় কর্তার কথায় জামিল উদ্দিন এক রকম বিরক্তই হল। বললেন, ‘আপনি তো ঘুমিয়ে পড়েছিলেন স্যার।’

‘ভররর ভররর করে নাকও ডাকছিলেন স্যার’- রমিজ বলল। ‘না মানে, পত্রিকা পড়তে পড়তে...শরীরটা টায়ার্ড। না না ঘুমায় পড়িনি। চোখটা বন্ধ করেছিলাম আরকি। তোমরা আসছো, আমি কিন্তু এটা ঠিকই টের পেয়েছিলাম।’

রমিজ বলল, ‘কী কন স্যার, আপনে তো ঘুমের ঠ্যালায় ভররর ভররর, ভররর ভররর কইরা নাক ডাকছিলেন।’ বড় সাব এবার ক্ষেপে গেলেন। ‘এই তুমি এত বেশি কথা বল কেন হ্যাঁ, বেশি বকো?। জামিল সাহেব ত কিছু বলছে না। তাকে ওভারটেক করে কথা বলছ। যাও দুই কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসো।’

‘চা বসাইছি স্যার।’ দুধের গ্লাসটি টেবিলে রেখে বলল রমিজ। ‘গ্রাম থেকে খাঁটি দুধ আনছি স্যার। গরম গরম এক গ্লাস মারেন আগে। নিজেগো গরুর দুধ। অফিসের পরতেকরে এক গ্লাস কইরা দিছি।’ ‘তাই নাকি? চমৎকার। আগে বলবা না। তোমার বুদ্ধি একটু কম হলেও তুমি খুব ভালো ছেলে। কি বলেন জামিল সাহেব?’ ‘জি স্যার।’ জামিল মাথা নাড়ে তবে প্রকাশভঙ্গিতে বিরক্তির ভাব থেকে যায়।

‘রমিজ তুমি যাও। অ আচ্ছা, আপনার তো আজ দুপুর পর্যন্ত ছুটি।’ ‘জ্বি স্যার। ডায়াবেটিসটা বেড়ে গেছে। বারডেম হাসপাতালে ডাক্তার দেখাব।’ ‘ঠিক আছে, যান। কাজ সেরে আসেন।’

 শাহবাগ মোড়ে এসে ফুটওভারব্রিজে ওঠার সিঁড়ির কাছে ময়লার ড্রামের উপর নজর পড়ায় জামিল উদ্দিন নড়েচড়ে উঠলেন। চোখ কপালে উঠে যায় তার। একটি কাক ময়লার ড্রামের উপর প্রান্তে বসে ভিতরে হাকু দিচ্ছে। কাকটি ওঠার পর আরেকটা কাক একই কাজ করল। পরপর তিনটি কাক একই কায়দায় হাকু দিল।

জামিল উদ্দিন মাথা চুলকালেন। তিনি কি ঠিকই এ সব দেখছেন নাকি কোনো ঘোরের মধ্যে আছেন। কাক গাছের ডালে বসে মানুষের জামা কাপড় নষ্ট করে। সেই কাক আজ লাইন ধরে ডাস্টবিনে হাকু দিচ্ছে। এই ঘটনা কি কেউ কখনো দেখেছে!

এমন সময় জামিল উদ্দিনের মাথার উপর ভাজা ডালের খালি প্যাকেট পড়ল। ফুটওভারব্রিজের উপরে জাতীয় জাদুঘরের কোনের দিকের অংশে ঘনিষ্ঠ তরুণ-তরুণী। প্রেমালাপে মগ্ন দুজন। মেয়েটি ডাল খেয়ে খালি প্যাকেটটি ডাস্টবিনে না ফেলে, ছুঁড়ে মারল। ছেলেটির হাত ধরে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে মেয়েটি। ছেলেটি পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করল। একটি সিগারেট হাতে নিয়ে খালি প্যাকেটটি ছুড়ে মারল। জামিল উদ্দিন অবাক হলেন। তাকালেন কাকগুলোর দিকে। কাকগুলো ময়লার ড্রামটির আশেপাশে হাঁটাহাঁটি করছিল তখনো। মনে মনে বললেন, ‘আজ সকাল থেকেই এসব কী শুনছি, দেখছি। সব কিছু ওলট পালট লাগছে।’

একটা নিঃশ্বাস ফেললেন জামিল উদ্দিন। তবে তরুণ-তরুণী কাউকেই কিছু বললেন না। পা বাড়ালেন। ওভারব্রিজটির মাঝখানে পৌঁছে জামিল উদ্দিন এক রকম ধাক্কাই খেলেন। ওভারব্রিজ ফাঁকা। লোকজন নিচ দিয়েই রাস্তা পার হচ্ছে। ওভার-ব্রিজের রেলিংএ একলোক তোষক রোদে দিচ্ছে। জামিল উদ্দিন বললেন, ‘ভাই, এখানে তোষক ঝুলাচ্ছেন কেনো?’ লোকটি বলল, ‘বাচ্চাটা রাতে হিস্সু কইরা ভিজায় ফালাইছে। থাকি পরিবাগের চিপার মইধ্যে। রইদের কোনো ব্যবস্থা নাই। ওভার-ব্রিজ তো ফাঁকাই। সমস্যা কী?’

জামিল উদ্দিন এবার আঙ্গুল দিয়ে কান চুলকিয়ে দেখে নিলেন। ‘আমি কি পৃথিবীতে নাকি অন্য কোনো গ্রহে আছি।’ ভাল করে উঁকি মেরে সূর্যটা দেখে নিলেন। ‘না সূর্য তো ঠিকই আছে। পূর্বদিকেই উঠেছে। পশ্চিমদিকে উঠে নাই।’ ওভারব্রিজ থেকে নামলেন। ভাল করে দেখে নিলেন সড়কের পূর্বপাশে বারডেম হাসপাতালটা। ভুল করে উল্টো ঢাকা মেডিকেলে কলেজে চলে যাননি তো, এ আশঙ্কায়।

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার, নদীতে ঝাঁপিয়ে পালালো পাচারকারীরা
ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার, নদীতে ঝাঁপিয়ে পালালো পাচারকারীরা
তীব্র গরমে কাজ করার সময় মাথা ঘুরে পড়ে দিনমজুরের মৃত্যু
তীব্র গরমে কাজ করার সময় মাথা ঘুরে পড়ে দিনমজুরের মৃত্যু
বাংলাদেশে সামাজিক বিমা প্রবর্তনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে: মন্ত্রিপরিষদ সচিব
বাংলাদেশে সামাজিক বিমা প্রবর্তনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে: মন্ত্রিপরিষদ সচিব
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড