X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

খারাপ লেখক হবার দশটি টিপস্ || ল্যাংগস্টোন হিউজ

অনুবাদ : হামীম কামরুল হক
২৭ জুন ২০১৬, ১৮:৪৬আপডেট : ৩০ জুন ২০১৬, ১৭:৫২

ল্যাংগস্টোন হিউজ [ল্যাংগস্টোন হিউজ জন্মেছেন ১ ফেব্রুয়ারি ১৯০২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির জপলিন-এ। মূলত কবি হিসাবেই খ্যাতিমান। তিনি গল্প, উপন্যাস, নাটক, রম্যরচনা এবং আত্মজীবনীও লিখেছেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে তাঁর কবিতা ‘দ্যা নিগ্রো স্পিকস অব রিভারস’ প্রকাশিত হয়। অল্প সময়ের জন্য কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছিলেন। বাস-বয় হিসাবে কাজ করার সময় তিনি তাঁর কবিতাগুলি বিশিষ্ট কবি ভাসেল লিন্ডসে-কে দেখান, এখান থেকেই তাঁর সাহিত্যিক জীবন শুরু হয়। তাঁর কবিতার বইয়ের মধ্যে আছে ‘দ্যা উয়ারি ব্লুজ’(১৯২৬) এবং ‘মন্তাজ অব অ্যা ড্রিম ডিফারডেড’(১৯৫১)। তাঁর ‘দ্যা প্যান্থার অ্যান্ড দ্যা ল্যাস’(১৯৬৭) কৃষ্ণাঙ্গদের ক্রোধ ও বিদ্রোহী মনকে তুলে ধরেছে। তিনি ফেদেরিকো গার্সিয়া লোর্কা ও গাবরিয়াল মিস্ত্রালের কিছু কবিতাও অনুবাদ করেছেন। তাঁর সৃষ্ট চরিত্র জেসি বি. সিম্পল, যাকে সিম্পল বলে ডাকা হতো, সেটি দৈনিক পত্রিকায় তাঁর লেখা কলামের মধ্যে দিয়ে এক বিখ্যাত কমিক চরিত্র হয়ে ওঠে।
বর্তমান রচনাটি তাঁর ‘How to be a bad writer’-এর অনুবাদ। এ লেখাটি ১৯৫৮ সালে নিউ ইয়র্কের ‘George Braziller, Inc’ প্রকাশিত ‘Langston Huges Reader’ থেকে নেওয়া হয়েছে। লেখাটি রীতিমতো ব্যঙ্গাত্মক। কোথাও কোথাও এর শ্লেষাত্মক মন্তব্যে পাঠক হো হো করে হেসেও উঠতে পারেন। ২২ মে ১৯৬৭ সালে নিউ ইয়র্কে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।]

 

 

১.

সমস্ত ক্লিশে-রদ্দি-মাজুল শব্দ যতটা পারা যায় ব্যবহার করুন, যেমন ধরুন, ‘লোকটির চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছিল,’ বা ‘মেয়েটির দাঁতগুলি একেবারে মুক্তোর মতো সাদা।’

২.

যদি আপনি একজন কৃষ্ণাঙ্গ হন, তাহলে কঠিনভাবে চেষ্টা করতে থাকুন এমন এক দৃষ্টিভঙ্গিতে লিখতে যা শ্বেতাঙ্গদের বাজারে অচল মাল হয়ে গেছে- সেটাকে ‘নতুন বোতলে পুরানো মদ’-এর মতো চালাতে থাকুন- সেখানে থাকবে বিশাল দানবের মতো কৃষ্ণাঙ্গ, অপরাধী, নিম্নমানের জীবনযাপন করা লোকজন আর বেশ্যাদের কথা।

৩.

বিষয়গুলি যেন একেবারে পর্নোগ্রাফির কাছাকাছি পৌঁছে যায় ঠিক ততটাই ধর্মকর্মকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে লিখতে থাকুন। এতে আপনি হয়ে উঠবেন আগের দিনকার কেতাদুরস্ত পম্পি, ফলে বেস্টসেলার তালিকার বিরুদ্ধে চলবে আপনার একাকী লড়াই। সমস্ত দিক থেকে যেকোনোভাবেই হোক আপনাকে নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হওয়ার সুযোগ করে দিতে থাকুন, নিন্দিত হওয়ার ব্যবস্থা করুন এবং লেখা প্রকাশের আগে ও পরে সেই অবস্থা যাতে তৈরি থাকে, সেদিকে নজর দিন। অতঃপর আপনি নিজের কাছে নিজে ক্ষমা চান। আর যদি তা করতে পারেন তো জনতা বা পাবলিকের কাছেও সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করতে পারেন।

৪.

কখনো চরিত্রগুলিকে বিকশিত হতে দেবেন না। স্রেফ তাদের নাম উল্লেখ করবেন এবং তাদের নিজেদের মতো করে চরে বেড়াতে দেবেন। তারা সবাই যেন একই ভাবে-ভঙ্গিতে কথাবার্তা বলে তেমন করে লিখুন- চরিত্র অনুযায়ী তাদের কোনো স্বতন্ত্র স্বর থাকবে না। যদি পাঠকের কল্পনাশক্তি যথেষ্ট পরিমাণে না থাকে তো তার কথা তালিকা থেকে বাদ দিন- গোল্লায় যাক সে।

৫.

লিখতে থাকুন- চীন, গ্রীস, তিব্বত অথবা আর্জেন্টিনার প্যামপাস (দক্ষিণ আমেরিকার বৃক্ষহীন দিগন্ত বিস্তৃত তৃণভূমি) নিয়ে- এমন যেকোনো জায়গা বা স্থানের কথা যা আপনি কোনোদিন চোখে দেখেননি এবং সেসব সম্পর্কে কিছুই জানেন না। কখনোই সেইসব নিয়ে লিখতে যাবেন না যেগুলি সম্পর্কে আপনার জানাশোনা আছে, যেমন আপনার নিজের শহর বা আপনার বাড়ির লোকজন, এমনকি নিজের সম্পর্কে।

৬.

কোনো বক্তব্যটক্তব্য দিতে যাবেন না, সব ফাঁকা বুলি চালিয়ে যেতে থাকবেন, আর এতে ব্যবহার করবেন ভারী ভারী শব্দ- যতটা বেশি করে ব্যবহার করা সম্ভব। বিশেষ করে সেইসব শব্দ, যেগুলি বলবার সময় খুবই গুরু গম্ভীর শোনায়- কেতাবি শব্দ আর কী!

৭.

যদি নাট্যকার হতে চান, তাহলে আপনার রচনায় বিপুল পরিমাণে হাততালি পাওয়া এবং আধ্যাত্মিক কথাবার্তা থাকার দরকার; বিশেষ করে সেই সব কথাবার্তা- যেগুলি ম্যারিওন অ্যান্ডারসন থেকে গোল্ডেন গেট পর্যন্ত হাজার হাজার বার শোনা গেছে।

৮.

আর যদি কবি হয়ে থাকেন, তাহলে সবসময় ‘জুন’-এর সঙ্গে মিলিয়ে ‘মুন’ লিখুন এবং এটা যতভাবে লেখা সম্ভব। সেই সঙ্গে সব বাক্যে ঊর্ধ্বকমা ব্যবহার করুন, যেমন তো’মার এবং অ’ধিকার বা ও’টা এবং ন্যা’ওটা। কখনো বলবেন না,‘সূর্য ওঠে, উজ্জ্বল এবং ঝলমলে’, বরং বলুন,‘উজ্জ্বল ও ঝলমল করে উঠে থাকে সূর্য।’

৯.

শব্দের বানান, বাক্যের ব্যাকরণগত শুদ্ধতা-অশুদ্ধতার দিকে কোনো রকমের মনোযোগ দেওয়ার দরকার নেই। এবং যদি চিঠিও লেখেন তাহলে নিজের নাম সই করবেন না, এতে করে যে-কেউ সেটা পড়তে পারবে। আর অবিরাম অপরিচ্ছন্ন হিজিবিজি হাতে লিখুন- এতে করে লোকে বুঝতে পারবে, কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং কতই না ব্যস্ত আপনি।

১০.

আচ্ছ্বাসে কড়া মদ বা লিকার খেতে শুরু করে দিন এবং সব সময় মাতাল অবস্থায় লিখতে শুরু করুন। যখন আপনি নিজে মদ কিনতে পারবেন না, বা যদি কেনার সামর্থ্য থাকেও, তদুপরি বন্ধুবান্ধবের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেবেন, এছাড়া ভক্ত আর আলাভোলা সাধারণ লোকজন তো আছেই।
......
যদি আপনি শ্বেতাঙ্গ হন, তাহলে কী করে খারাপ লেখক হয়ে উঠতে হয়- এ নিয়ে আমি আরো অনেক উপদেশ-নির্দেশ দিতে পারতাম, কিন্তু খারাপ লেখক হওয়ার ব্যাপারটা যেহেতু কৃষ্ণাঙ্গদের বেলায়ই চলে আসছে, সেখানে আমি এমন কিছু জানি যেটা করতে বললে কৃষ্ণাঙ্গরা মেনে চলবে না, এমনকি সেটা কোনো লেখার জন্য হলেও, এজন্য তাদের সেসব কথা আর নাইবা বললাম।

................................................................

ঈদ সংখ্যার সূচিপত্র দেখতে ক্লিক করুন :

বাংলা ট্রিবিউন ঈদ সংখ্যা ২০১৬

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পুলিশের পরিশ্রম ও আত্মত্যাগে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়েছে: আইজিপি
পুলিশের পরিশ্রম ও আত্মত্যাগে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়েছে: আইজিপি
সংকট থেকে উত্তরণে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান মেননের
সংকট থেকে উত্তরণে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান মেননের
কানে ঝুলছে বাংলাদেশের দুল!
কান উৎসব ২০২৪কানে ঝুলছে বাংলাদেশের দুল!
ধোনি-জাদেজার লড়াই ছাপিয়ে প্লে অফে বেঙ্গালুরু
ধোনি-জাদেজার লড়াই ছাপিয়ে প্লে অফে বেঙ্গালুরু
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
গরমে সুস্থ থাকতে কোন কোন পানীয় খাবেন? ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন জরুরি?
গরমে সুস্থ থাকতে কোন কোন পানীয় খাবেন? ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন জরুরি?