X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙালির শোকাবহ মর্মন্তুদ একটি দিন

শিহাব শাহরিয়ার
১৫ আগস্ট ২০২১, ০০:১২আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২১, ০০:২২

১৫ আগস্ট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস। প্রতি বছরই ফিরে ফিরে আসে মর্মান্তুদ দিনটি। এইদিন—নদী-মেখলার এই নরম-শ্যামল মাটির প্রতিটি বাঙালির হৃদয় কেঁদে ওঠে, মন ভারী হয়ে ওঠে, মননে আঘাত লাগে। কতিপয় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ছাড়া সকলের অন্তর পোড়ে সারাটা দিন। ঐদিন আরো বেশি কষ্টের জল ঝরে যখন সকলের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে তাঁর বজ্রকণ্ঠের সেই বলিষ্ঠ উচ্চারণ—‘তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে... রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো, এদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ... এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ লক্ষ বাঙালির জনসমুদ্রে দেওয়া এই জগদ্বিখ্যাত ঐতিহাসিক অমর ভাষণটি যখন বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে, পাড়া-মহল্লায় মুজিবপ্রেমিকরা বারবার বাজান তখন আমাদের চেতনার নির্জীব, মলিন ও মেঘাচ্ছন্ন পথটি রৌদ্রকরোজ্জ্বল হয়ে ওঠে। চেতনার আকাশে তাকিয়ে তখন আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা থেকে শুরু করে নবীন প্রজন্মের সকলেই মনে মনে বেদনায় ও হৃদয়-নিঙড়ানো উচ্চারণ করেন—কেন এই বিশাল হৃদয়ের মানুষটিকে জঘন্য কায়দায় হত্যা করা হলো? কেন? কেন? কেন? অজস্রবার এই প্রশ্ন সকলের মনকে দগ্ধ করে। অনেকেই বলেন, বজ্রকণ্ঠের সেই মহান পুরুষটি আজ আমাদের নয়নের সমুখে নেই, বিশ্বাসই হতে চায় না যেন। যন্ত্রণায় যেন উচ্চারণ করেন রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত চরণ—‘তুমি কী কেবলই ছবি, শুধু পটে আঁকা?’ আহা, প্রাণের মুজিব নেই, কেবল বুকে বুকে রেখে দিয়েছি তাঁর স্মৃতিময় ছবি!

আজ থেকে ৪৫ বছর আগে ১৯৭৫ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী ও স্বাধীনতাবিরোধী একদল কুচক্রী-ঘৃণ্য নরপশুর দল। যারা দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আদর্শ-বিচ্যুত স্বার্থবাদী ও বিকৃত মানসিকতার কয়েকজন বিপদগামী সেনাসদস্য। এই ঘৃণ্য সদস্যরা ঐদিন ভোর রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িতে ভারী অস্ত্রের আঘাতে বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের ১৭ জন মানুষকে এক এক করে নির্মমভাবে হত্যা করে। কাপুরুশোচিত এই হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে যায়। ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণ, কিউবার ফিদেল ক্যাস্ট্রো, যুগস্লাভিয়ার মার্শাল টিটোসহ সে সময়কার সেরা সেরা রাষ্ট্রনায়ক ও সরকারপ্রধানরা স্তম্ভিত, হতবম্ভ, মর্মাহত হয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টম্বর যিনি জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ প্রদান করে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করে যেমন বাংলা ভাষাকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছিলেন, তারপর বঙ্গবন্ধু পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রুতিমধুর ভাষা বাংলায় জাতিসংঘে ভাষণ দিয়ে বাঙালি জাতিকে ঐশ্বর্য দান করলেন। আজ বাংলা ভাষা বিশ্বের ষষ্ঠতম ভাষা। এরপর তিনি কমনওয়েলথ সম্মেলনের ভাষণে বলেছিলেন, ‘পৃথিবী আজ দুই ভাগে বিভক্ত শোষিত ও শাসিত—আমি শোষিতের পক্ষে’। এই উচ্চারণ শোনে বিশ্বনেতারা মুজিবের সাহসী ও মানবপ্রেমের শ্রেষ্ঠ আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখেছেন। যেমন—১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ায় জোট-নিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল বিশ শতকের জীবন্ত কিংবদন্তি কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর, তিনি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয়কে দেখেনি, তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এ মানুষটি ছিলেন হিমালয়ের সমান। সুতরাং, হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা আমি লাভ করেছি।’

বঙ্গবন্ধু রাজনীতির এক অমর কাব্যের কবি। যাঁকে কবি নির্মলেন্দু গুণ সেই ১৯৭১ সালেই কবি আখ্যা দিয়ে সাত মার্চের ঐতিহাসিক জনসভায় আসার পূর্ব মুহূর্তকে স্মরণে এনে কবিতায় বলেছেন : ‘কখন আসবেন কবি..’। এই অমর কবি মাত্র ৫৫ বছরের জীবনে অনেক ত্যাগ-তিতীক্ষা, আন্দোলন-সংগ্রাম, জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে, মৃত্যু-ভয় উপেক্ষা করে শোষিত বাঙালিদের জন্য এনে দিয়েছিলেন হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত মুক্তি ও স্বাধীনতা। দীর্ঘ ২৪ বছরের পাকিস্তানি শোষণ, বঞ্চনা, অত্যাচার ও অবহেলা থেকে জাতিকে মুক্ত করার লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানের কারাগারের প্রকোষ্ঠে বন্দি ছিলেন। সেই কারগারে তাঁকে মৃত্যু-ভয় দেখানো হলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি।’ তিনি আরো বলেছিলেন যে, তাকে যদি কারাগারে মেরে ফেলা হয়, তবে তাঁর লাশ যেন বাংলার মাটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সাহসী-বীর মুজিবকে পাকিস্তানি কুচক্রী মহল মারতে পারেনি। অথচ দেশীয় কুচক্রীরা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সহায়তায় মুজিবকে হত্যা করল তাঁর আপন আলয় ৩২ নম্বরের সেই বিখ্যাত ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে আর স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের শ্যামল মাটিতে। ভাবা যায়!

স্মৃতিঘেরা সেই বাড়ির সিঁড়িতে এখনও তাঁর রক্তের দাগ রয়েছে, ঘরের দেয়ালজুড়ে এখনও বুলেটের আঘাত রয়েছে। সেদিন ঘরের ছোট্ট শিশু থেকে অসহায় নারীরাও ঘৃণিতদের পরিকল্পনা ও হত্যাকাণ্ড থেকে বাদ পড়েনি। ছোট্ট শেখ রাসেল, জাতির পিতার স্নেহের কনিষ্ঠপুত্র—ওই নিষ্পাপ মানুষটি ভয়ে ও অসহায় অবস্থায় গুলি খাওয়ার আগে আত্মচিৎকার করে বলেছিল, ‘আমি আমার মায়ের কাছে যাবো’। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়নি স্নেহময়ী, মমতাময়ী মায়ের কাছে, বুলেটে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে ছোট্ট বুকটিকে। আরেকটি দিনের আলো তার চোখে আর পড়েনি। কী গভীর চক্রান্ত ও পরিকল্পনা ছিল নরপশু ঘাতকদের। কী অপরাধ ছিল বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের প্রতিটি মানুষের?

ঘাতকরা তাঁকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, সামরিক হেলিকপ্টারে করে নিয়ে গেছে টুঙ্গিপাড়ায় সমাধিস্থ করতে। তাদের ধারণা ছিল বঙ্গবন্ধুকে ঢাকায় সমাধিস্থ করলে কিছুদিনের মধ্যেই বাঙালির এই অবিসংবাদিত নেতার সমুদ্রসমান জনপ্রিয়তার কারণে ঘাতকদের পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে এবং জনগণ ঘুরে দাঁড়াবে। সেজন্য তাঁর বাবা-মা’র পাশে কবর দেয়ার নামে—৫৭০ সাবান, কাফনের কাপড়ের জন্য লুঙ্গি অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো স্থানীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুরই বন্ধু-বান্ধব ও পাড়া-প্রতিবেশীদের মাধ্যমে জোগাড় করে টুঙ্গিপাড়ার নির্জন গ্রামে কোনো রকম মাটিচাপা দিয়ে চলে আসে খুনিরা। একটি দেশের জাতির পিতাকে কতটা অবহেলায় দাফন করা হলো সেটিও দেখার বিষয়। অথচ, পরিবারের বাকি সদস্যদের বনানি কবরস্থানে দাফন করা হয়। একমাত্র বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যাওয়া হয় অজপাড়াগাঁয়ে, যেখানে হয়তো কোনো বাঙালি কিম্বা কোনো মানুষ যাবে না ঘাতকদের এরকমই ধারণা ছিল। কিন্তু তাদের ধারণা ও সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হয়েছে। যে পবিত্র মাটিতে ‘খোকা’ নামের ছোট্ট মুজিবের জন্ম হয়েছিল—নদী মধুমতীর শাখা স্রোতস্বিনী বাইগারের কলকল ধ্বনির পাশে সেই টুঙ্গিপাড়া এখন বাঙালির তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন নান্দনিক বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সে পরিদর্শনে আসে শত শত মানুষ। অসংখ্য বিদেশি অতিথিরাও বাংলাদেশের জাতির পিতার সমাধিস্থলে ছুটে যাচ্ছেন। সে সময়ের অবহেলিত জনপদ টুঙ্গিপাড়া এখন উন্নত জনপদে পরিণত হয়েছে। মানুষ হৃদয়ের ভালোবাসা অর্ঘ্য ঢেলে দেওয়ার জন্য সমাধিস্থ জনবহুল করে তুলেছে।

স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় যখন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত একটি দেশকে সোজা করে দাঁড় করানোর জন্য, প্রাণের সম্পূর্ণ আবেগ দিয়ে দেশটিকে গড়ে তোলার অভিপ্রায়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখন তাঁর সাগরের মতো বিশাল বুকটিকে নির্মম বুলেট দিয়ে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। তাঁর বুকের রক্তে ভিজে যায় ধানমন্ডির ঐতিহাসিক সেই বাড়িটির সিঁড়ি, রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যায় বঙ্গপোসাগরে। এই বেদনার রক্ত ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে, আনাচে-কানাচে, ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের হৃদয়ে হৃদয়ে। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে পারেনি। ঘাতকরা স্তব্ধ করে দিয়েছিল সারা দেশ। কোনো প্রতিবাদ করতে দেয়নি। পথে নেমে আসতে পারেনি কেউ। নীরব কান্নায় শ্যাখ-সাহেব ভক্তরা বুক ভারী করেছে। ঘরের কোনায় বসে হাহাকার করেছে। রাস্তায় এসে প্রতিবাদ করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর সমস্ত ঘনিষ্ট সহযোগীদের ধরে নিয়ে কারাগারে বন্দি করা হয়েছে। খুনিচক্র সদর্পে হাজির হয় বঙ্গভবনে। বঙ্গবন্ধুর আজন্মের শত্রু পাকিস্তানের দোসর কুখ্যাত নরপশু খোন্দকার মোশতাক আহমদকে বঙ্গভবনে বসিয়ে দেয়। তারা এক এক করে দখল করে বেতার-টেলিভিশনসহ সরকারি সবকিছু। সেনাপ্রধান শফিউল্লাহর সেই মর্মান্তিক ভোরে কিছুই কি করার ছিল না? তাহলে ঘাতক জুনিয়র সেনা সদস্যদের নেতৃত্ব কে দিলো? শোনা যায় সেনাবাহিনীর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মেজর জিয়াউর রহমান ক্লিনসেভ করে ভোরের বাতাসে গা এলিয়ে অপেক্ষা করছিলেন কখন আসবে মুজিব হত্যার চূড়ান্ত খবর। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমদ সম্প্রতি জাতীয় সংসদে এক ভাষণে জানালেন, ‘এই জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রদূত করে পাঠানোর জন্য বঙ্গবন্ধু উদ্যোগ নিয়েছিলেন। জিয়া এটি জানার পর একদিন তাকে ফোন করে বলল, সে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে চায়। সেসময় বঙ্গবন্ধু গণভবনে বিশ্রাম করছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে জানালে, বঙ্গবন্ধু, জিয়াকে আসার অনুমতি দেন। জিয়া এলে তাকে নিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর কামরায় নিয়ে যান। তিনি বেরিয়ে এলে, জিয়া কিছুক্ষণ কথা বলে বেরিয়ে আসেন। তারপর বঙ্গবন্ধু তাকে ডেকে বলেন, জানিস জিয়া কেন এসেছিল? তোফায়েল বললেন, না স্যার। বঙ্গবন্ধু তখন বললেন, জিয়া পকেটে করে একটি ছোট্ট কুরআন শরীফ এনেছিল, সেটি পকেট থেকে বের করে আমার হাতের উপর রেখে বলল, স্যার আমাকে রাষ্ট্রদূত করে দেশের বাইরে পাঠায়েন না, আমি কথা দিচ্ছি জীবনে কোনো দিনই আপনার সঙ্গে বেইমানি করব না! তাহলে এই দেখা করার কিছুদিনের মাথায় জিয়াউর রহমান কি তার কুরআন শপথ রক্ষা করল? অনেক নাটকীয় ঘটনা ও অসংখ্য হত্যাকাণ্ডের জন্ম দিয়ে লোভী, অকৃতজ্ঞ, বেইমান, চরম স্বার্থপর ও ক্ষমতালিপ্সু জিয়া কী সুকৌশলে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেছে? তাহলে হত্যাকাণ্ডের পিছনে তার গোপন হাত ছিল নিশ্চয়? তৎকালীন তথ্যপ্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরের ভাষ্য অনুযায়ী জানা যায়, এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের আগে জিয়াউর রহমান কুমিল্লা ও রাজেন্দ্রপুরে বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের সঙ্গে একাধিক গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে তার এক শ’ শতাংশ প্রমাণ মেলে। কারণ যে কর্নেল তাহের তাকে কারামুক্ত করে বাঁচায় সেই তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে। ৩ নভেম্বর জেলখানার ভিতরে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী চার জাতীয় নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মুহূর্তে একমাত্র প্রতিবাদকারী সেনা অফিসার যিনি হত্যাকারীদের প্রতিরোধ করতে ৩২ নম্বরের দিকে ধাবিত হয়েছিলেন সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল শাফায়াত জামিল, সেক্টর কমান্ডার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর হায়দারও কুচক্রীদের হাত থেকে রেহাই পাননি, এবং পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা অসংখ্য সেনা সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে জিয়াউর রহমানের নির্দেশেই। শুধু তাই নয় জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই প্রখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করে রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী বানিয়েছিলেন। এত এত নির্মম হত্যাকাণ্ড ও স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য ইতিহাস কি তাকে ক্ষমা করেছে? করবে? করবে না। করেনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্যদিয়ে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতাবিরোধীদের যে উত্থান ঘটিয়েছিলেন তার মাশুল জাতি এখন হাড়ে হাড়ে দিচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে বাংলাদেশকে এখন তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা চলছে। এই অবস্থার ষোলোকলা পূর্ণ করেছে পরবর্তীতে জিয়ারই উত্তর-সুরী বেগম খালেদা ও তারেক জিয়া গংরা।

বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেই কলঙ্কময় রাতে দেশের বাইরে থাকায় তারা বেঁচে গেছেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে একটি কালো মেঘাচ্ছন্ন ও বৃষ্টিভেজা দিনে স্বদেশে ফিরে এসে শেখ হাসিনা তাঁর প্রিয়তম পিতা, মমতাময়ী মা, আদরের ভাই, ভাইদের প্রেমময়ী বধূদের না পেয়ে বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁর মর্ম-যাতনা সবাই কি অনুধাবন করতে পারবে ওভাবে। ১৯৬১ সাল থেকে যে বাড়িটিতে পরিবার নিয়ে নিজের দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে এবং আপামর বাঙালিদের মুখর পরিবেশে বঙ্গবন্ধু কাটিয়েছেন (১৯৬১-১৯৭৫) দীর্ঘ ১৫ বছর—সেই স্মৃতিময় বাড়িটিতে ঢুকতে গিয়ে হৃদয়ে হাহাকার করে উঠেছিল শেখ হাসিনার। কীভাবে বোঝাবেন নিজেকে? বিরানভূমির মতো নিঃসীম-নির্জন-শূন্য বাড়িটি তাঁকে কাঁদিয়েছে এবং এখনও কাঁদায়। ছোটবোন রেহানাকে নিয়ে যতবারই এই স্মৃতিঘেরা বাড়িতে ঢোকেন ততবারই নিশ্চয় বেদনা ও কান্নায় ভেঙে পড়েন। কারণ কবির বেদনার মতই হয়তো তাঁদের দুবোনকে নাড়ায় এবং তাড়ায় যে, ‘হাঁটিহাঁটি শিশুটিকে আজ আর কোথাও দেখি না...’। সত্যি না দেখার বেদনা, না পাওয়ার হাহাকার হৃদয়কে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। স্নেহের রাসেলকে আঙিনায় ছুটে দেখতে না পেরে মনোকষ্টে বুক ভারী হয়, মায়ের মমতাময়ী মুখচ্ছবি না দেখতে পেয়ে, ভাইদের মুখর পরিবেশ আর বাবার বুকের মধ্যে লুকিয়ে আদর নেওয়ার চির অভাব দুজনকে দারুণভাবে পীড়িত করে। মনে করেন, কত শত দিনের কত শত সুখ-দুঃখের ঘটনা জড়িয়ে আছে এই বাড়িকে ঘিরে। বাড়ির সামনের সেই রাস্তা, সেই লেকের জলপ্রবাহ, সেই গাছগাছালি, সেই সবুজ আঙিনা, সেই সিঁড়ি, সেই কক্ষসমূহ, সেই খাওয়ার টেবিল, সেই আলমিরা, সেই খাট, সেই আসবাবপত্র, সেই পবিত্র কুরআন শরীফ, জেলখানায় থাকা বাবাকে লেখা মা রেণুর সেই আবেগঘন কালো অক্ষরের চিঠি সবই আছে, শুধু নেই খুব প্রিয় সেই মুখগুলো...। আমরা ধারণা করি, রক্তমাখা সিঁড়ি দেখে তাদের দুবোনের বুক হয়তো আগুনের মতো দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। জ্বলে উঠলেও বুকের ভিতর পাথর বেঁধে নতুন করে পথ হাঁটতে শুরু করলেন তারা। এই পথের সামনে রাখলেন পিতা ও জাতির পিতার মহান আদর্শ। প্রথমেই বাড়িটিকে জনগণের উদ্দেশ্যে দিয়ে দিলেন। এটিকে স্মৃতি জাদুঘর বানালেন। এখানে এখন প্রতিদিন শত শত মানুষ এসে ইতিহাসের মুখোমুখি হয়। অবলোকন করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের। স্মৃতির জল থেকে তুলে আনে বাঙালির সমৃদ্ধ ইতিহাসের অসংখ্য ঘটনা। মনে করতে চেষ্টা করে প্রিয় নেতার, প্রিয় জাতির পিতার বর্ণাঢ্য জীবনকে।

জীবন থেমে থাকে না। তাই শেখ হাসিনাও থেমে থাকেননি। দেশে ফিরেই পিতার প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরলেন। ধীরে ধীরে দীর্ঘ সংগ্রাম ও আন্দোলনের পথ পাড়ি দিয়ে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসীন হলেন। এসেই ১৫ই আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর ১৯৯৬ সাল—দীর্ঘ ২১ বছরে অনেক জল গড়িয়ে গেছে আমাদের নদীগুলো দিয়ে। এই সময়গুলোতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা নানাভাবে নানা জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাদেরকে পুনর্বাসিত করেছে পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশবিরোধী ক্ষমতাসীনরা। তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর বদলে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। শুধু তাই-ই নয় নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার যাতে না হয়, সেজন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ করা হয়। ফলে আত্মস্বীকৃত খুনিরা বীরদর্পে দেশে-বিদেশে অবাধ বিচরণ ও ঘোরাফেরা করেছে। হত্যাকাণ্ডের বিচারের আগে তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা কোনো অপরাধবোধ কোনো বিবেকের দংশন কোনো যন্ত্রণা লক্ষ করা যায়নি।

আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে কুখ্যাত ইনডেমনিটি বিল বাতিল করে হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে। সাধারণ আইনেই বিচারকার্য সম্পন্ন হয় এবং আসামি মধ্যে ৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি কয়েকজন আমেরিকা, কানাডা, ভারত, কেনিয়াসহ কয়েকজন আসামি পালিয়ে থাকায় এখনো তাদের ফাঁসি কার্যকর করা যায়নি। এই বিচার ও খুনিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার মধ্যদিয়ে জাতি কিছুটা কলঙ্কমুক্ত হতে পেরেছে। কিন্তু যে ক্ষতি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর রাতে হয়েছে তা কোনো দিনই পূরণ হবার নয়। কারণ জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ড বাঙালি জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তাঁর অনেক কিছু দেয়ার ছিল দেশের জন্য। তিনি বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত করে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। পৃথিবীর মানচিত্রে একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশের মর্যাদা দিতে চেয়েছিলেন। অনেক প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যদিয়ে তিনি দেশ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। তখনো আমেরিকা, চীন, সৌদি আরবসহ অনেক দেশ স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নিতে না পেরে স্বীকৃতি প্রদান করেনি। খাদ্যের জাহাজ বাংলাদেশের সমুদ্র-বন্দরে ভিড়তে দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। দেশে কৃত্রিম খাদ্য-সংকট তৈরি করে দুর্ভিক্ষ কবলিত করেছিল বাংলাদেশকে। মার্কিনি হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিল, বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি। বঙ্গবন্ধুর কথা, তাঁর কর্ম, তাঁর আন্দোলন-সংগ্রাম, তাঁর দেশ গঠনের উদ্যোগ কোনোটিই তারা মেনে নিতে পারেনি। পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়ে হেরে যাওয়ার গ্লানি তাদের ভিতর থেকে কোনো অবস্থাতেই যাচ্ছিল না। ফলে দ্বিতীয় পরিকল্পনায় তারা বঙ্গবন্ধুর অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র করে। তাই আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা দেশীয় কুচক্রীদের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যার পরে পরেই পরাজিত উল্লিখিত দেশগুলো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। এতে স্পষ্ট হয়ে যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক এবং দেশ পরিচালনার ভূমিকা তারা মানতে পারেনি, মেনে নেয়নি। যদি বঙ্গবন্ধুর স্বাভাবিক মৃত্যু হতো, যদি তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের স্বীকার না হতেন, তাহলে আজ বাংলাদেশ সোনার বাংলায় পরিণত হতো। তাই প্রতি বছর জাতীয় শোক দিবস আমাদেরকে বেদনায় ভারাক্রান্ত করে।

এই জাতীয় শোক দিবস কেবল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই পালন করে এবং তারাই এই বেদনার দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে প্রবর্তন করেছেন। জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের দিনটি জাতীয় শোক হিসেবে পালন করা অবশ্যই জাতির দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী দলগুলোসহ আইএসআই-এর ছত্রছায়ায় জিয়াউর রহমান প্রবর্তিত দল বিএনপি এই দিনটিকে পালন করে না। বরং জঘন্যভাবে এই বড় দলটির প্রধান জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া তার সত্যিকারের জন্মদিনটিকে আড়াল করে গত কয়েক বছর যাবৎ (রাজনৈতিক হিংসার বশবর্তী হয়ে কি না?) ১৫ আগস্ট শোক দিবসে বড় বড় কেক কেটে জন্মদিন পালন করা শুরু করে। এই যে হিনম্মন্যতা, জেদ, হিংসা, বিদ্বেষ, রাজনৈতিক ঈর্ষা, অহংকার, দাম্ভিকতা, পরশ্রীকাতরতা এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতায় শোকাবহ দিনটির মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা এটা নিশ্চয়ই সুস্থ মানসিকতার পরিচয় নয়। রাজনৈতিক শিষ্টাচার, ভদ্রতা, সহিষ্ণতা, উদরতা, গণতান্ত্রিক মানসিকতা যদি না থাকে, তবে জাতির কর্ণধার হয়ে গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় নিশ্চয়ই অবদান রাখা যায় না। মানুষকে মিথ্যা দিয়ে অযথা বিভ্রান্ত করলে, সেটি নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে টিকবে না। এই যারা করেন, তারাও অবশ্যই জানেন যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একটি সাধারণ দিন নয়। ওই দিনের হত্যাকাণ্ড নিশ্চয়ই সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়। আমরা বলেছি, সেই হত্যাকাণ্ড শুধু বাঙালি জাতিকে নয়, সারা পৃথিবীর মানুষকে স্তব্ধ ও নির্বাক করে দিয়েছিল। মানুষের মনে এখনও প্রশ্ন দানা বেঁধে রয়েছে যে, নিরপরাধ, অসহায় ও নিরীহ মানুষগুলোকে কেন ঘুম থেকে উঠিয়ে ভয়কাতর পরিবেশ ও পরিস্থিতির সৃষ্টি করে এক এক করে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হলো? এর উত্তর এখনও মেলেনি। ভবিষ্যতেও উত্তর পাওয়ার আশা নেই। কারণ পাপীরা কখনও সত্য কথা বলে না, সঠিক উত্তর দেয় না। বরং স্বার্থের নেশায় অন্ধ হয়। তারা মনে রাখে না যে, মিথ্যা টিকে না। পাপ ও অন্যায় করলে প্রকৃতি তাকে ক্ষমা করে না। তারা শিক্ষা নিতে চায় না ইতিহাস থেকে যে, অত্যাচারী, জুলুমকারী আর হত্যাকারীকে একদিন না একদিন বিচারের কাঠ গড়ায় দাঁড়াতে হয়ই। আর প্রতিদিন বিবেকের ভীষণ যন্ত্রণায় তিলে তিলে ধ্বংস হতে হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদেরও সেই পরিণতই হয়েছে। নেপথ্যের পরিকল্পকদেরও একই পথে যেতে হয়েছে। সুতরাং, অন্যায়কারীকে মানুষ কখনও ক্ষমা করে না।

বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে কিছুটা কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। কারণ যে মানুষটি এই ব-দ্বীপাঞ্চলকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে সেই সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির ঋণ কখনও শোধ করার মতো নয়। প্রখ্যাত লেখক অন্নদা শংকর রায়ের উচ্চারণ দিয়েই শেষ করি—‘যতকাল রবে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, গৌরি বহমান/ ততকাল রেব কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেললাইনে ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেললাইনে ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা