বসন্তদিন
ধু ধু পশ্চিয়া বাতাসে—
অবদমিত ওড়নার গোটা প্রান্তটাই উড়ে যাচ্ছে।
ঠোঁটে নিয়ে কামরাঙা যত, বলো,
কিভাবে পেরিয়ে যাব জামরুল ফলের বাগান,
জোনাকির ডানার নিচে জীয়ন্ত রাত,
ধাবমান কুকুর, দীর্ঘ পদ্মা, একলক্ষ প্রেতেদের ছায়া?
আর তুমি নিজে
কতটা চেনো মর্মাহত জবাফুল?
চিরপুষ্প ও রমণ ব্যাপার?
শুধু উজ্জ্বলতা ধরে এমন ফুল চিনে উঠতে পারো?
জোনাকি ও মৃদুমগ্ন আগুন?
চেনোনি কিছুই। নিম ও মধুরতা চেনো নাই।
রক্তস্রোতে শুধু আমি ভেসে যাই।
দূর ও অভিজ্ঞান
যাচ্ছি বলেই হয়ত যাওয়া হলো না
গুটি থেকে বের হয়ে প্রথম অরণ্যের দিকে।
খোলস ছেড়ে মাতৃভূমিতে
পরিভ্রমণ হলো মায়ার চোখে।
সাঁওতাল সবুজাভ আধামাঠ
এমনকি মৃত সাদা কবরগুলিও
আমাকে শেখালো দূরের অভিজ্ঞান
প্রাক-পরবর্তী
পৃথিবীর অমিলিত ইতিহাস।
অগ্রহায়ণ
ধানকাটার মৌসুমে কখনো বৃষ্টি ঝরে।
যেমন আজ
দুপুরঅব্দি
ঝরছেই—
ফটফটে রোদের আশায় হেমন্তের মাঠ জাগে।
আমার একা ঘর এসব দেখে পাতার বাঁশি বাজায়,
বাঁশি কোথাও পৌঁছায় না,
ধানকাটা শেষ হলে মাঠ তার সুষমা হারায়।
মাঠের কিনারে কোনো পাখি দেখি না।
ধানকাটা শেষ হলে গাঁয়ের মানুষের
গায়ে আর মাংস থাকে না। তাদের
কাটা নখ পড়ে থাকে,
কিছুদিন ব্যথা থাকে,
ধানকাটা শুরু হলে,
গাঁয়ের মানুষেরা রক্ত পানি করে।
এইসব ভেবে অঘ্রাণে আমার অসুখ করে। বৃষ্টি ঝরে।
হেমন্তের কোনো সোনালি সম্ভাবনা আর চোখে পড়ে না।
বন, মন ও লাল পিঁপড়ারা
বাড়ির দিকে ফিরছি—
শালবনটা সারেঙ্গী বাজাচ্ছে।
ফ্রকের কোঁচায় শালফুল,
অতিদীর্ঘ স্বপ্ন দেখছি।
তুমি কি তেমনই আছ মহামিলন?
বনের বিভা ও বেলিফুল,
আমার হারানো ধূসর সব?
আমগাছটা আর নেই—
ঝুমকো জবার পাপড়ি
গেছে গলে। সেই পথে
বালক আর নেই।
সে এখন আগরবাতির গন্ধ জ্বালে।
সে এখন মৃত্যুসমান। অপরিমেয়।
বনের লাল পিঁপড়ারা সুযোগ পেলে
আমাকে কি ফের কামড়ে দেবে?
ফলগাছ
বাড়িতে সুরম্য ফলজ বাগান।
বাবা ফলফলাদির স্বপ্ন দেখেন।
আমি তাঁর সন্তান,
দিনে দিনে বাড়িয়েছি ফলের বাহার।