সম্প্রতি বিপন্নপ্রায় সুস্বাদু গাং মাগুর মাছের কৃত্রিম প্রজননে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের এক দল গবেষক। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এক বছর গবেষণা করে কৃত্রিম প্রজননে ওই সফলতা পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিতে অধ্যয়নরত নাইজেরিয়ান শিক্ষার্থী ইব্রাহীম শেহু জেগা।
কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়ায় হরমোনের বিভিন্ন ডোজ প্রয়োগ করে মাছকে প্রণোদিত করে পোনা উৎপাদনে এই সফলতা পাওয়া যায়। প্রথম সফল ট্রায়ালে একটি স্ত্রী মাছ থেকে প্রায় ৪০ হাজার পোনা পাওয়া গেছে। পোনাগুলোর বয়স প্রায় এক সপ্তাহ এবং এ পর্যায়ে বেঁচে থাকার হার প্রায় ৭০%।
তবে গাং মাগুরের কৃত্রিম প্রজননে সফলতা এটাই প্রথম নয়। এর আগে গাং মাগুরের কৃত্রিম প্রজননে সফলতা পেয়েছেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার শম্ভুগঞ্জের চর পুলিয়ামারী গ্রামের ব্রহ্মপুত্র ফিস সিড কমপ্লেক্স হ্যাচারির সত্ত্বাধিকারী এ.কে.এম.নুরুল হক। ২০১৫ সালের জুনে তিনি এ মাছের পোনা উদ্ভাবনে কৃত্রিম প্রজননে সফলতা পান।
তবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গাং মাগুরের এ কৃত্রিম প্রজনন সম্পন্ন করতে ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ ইদ্রিস মিয়া, একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হকের তত্ত্বাবধানে পিএইচডিরত শিক্ষার্থী ইব্রাহীম শেহু জেগা এ গবেষণা পরিচালনা করেন। এ গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল সুস্বাদু গাং মাগুর মাছকে সংকটাপন্ন অবস্থা থেকে ফিরিয়ে এনে চাষ প্রক্রিয়ার সাথে অন্তর্ভুক্ত করা। এ গবেষণায় উপদেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট মাৎস্য বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম। গবেষণার কারিগরি সহযোগিতায় যুক্ত আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ ফিল্ড ল্যাবরেটরী কমপ্লেক্সের টেকনিশিয়ান মোঃ আযাদুল ইসলাম।
গাং মাগুরের বৈজ্ঞানিক নাম Hemibagrus menoda (Hamilton) নামে মাগুর থাকলেও এটি আসলে ক্যাটফিস প্রজাতির মাছ। অঞ্চল ভেদে একে ঘাগলা বা গাং টেংরাও বলা হয়। একসময় এ মাছ বাংলাদেশের নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। কিন্তু নদী ও অন্যান্য জলাশয়ের দূষণ ও নির্বিচারে মৎস্য আহরণের কারণে এ মাছটি প্রায় বিপন্ন হবার পথে। গত বছর নেত্রকোনার জেলার ঝানঝাইল এলাকা বিধৌত কংশ নদী থেকে ৭০ টি পুরুষ ও স্ত্রী মাছ সংগ্রহ করা হয়। তারপর এ মাছগুলোকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ ফিল্ড ল্যাবরেটরী কমপ্লেক্সের পুকুরে ডমেস্টিকেশন করা হয়।
রেনু পোনাগুলোর সঠিক পরিচর্যা পদ্ধতি উদ্ভাবনের পাশাপাশি চাষ-পদ্ধতি উদ্ভাবনের গবেষণা কাজ চলমান রয়েছে। আগামী ২০১৭ সালের মধ্য গাং মাগুর মাছের পোনা উৎপাদন ও চাষ-পদ্ধতির পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ চাষীদের দৌড়গোরায় পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।
ইব্রাহীম শেহু বলেন, নাইজেরিয়াতে আফ্রিকান মাগুর চাষের প্রচলন অত্যন্ত বেশি। বাংলাদেশে গাং মাগুরের পোনা উৎপাদন ও চাষ-পদ্ধতির পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ তৈরি হলে এ মাছ আফ্রিকান মৎস্য চাষীদের কাছেও সমাদৃত হবে বলে আশা করি।
গবেষণায় সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন কৃত্রিম প্রজননে এ সফলতার ফলে গাং মাগুর মাছটি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে এবং মাছটি ভোক্তাদের নিকট সহজলভ্য হবে, এবং আমিষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
/এফএএন/