X
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫
২০ বৈশাখ ১৪৩২
মুক্ত গণমাধ্যম দিবস

‘কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা ছাড়া গণমাধ্যম স্বাধীন হবে না’

এস এম আব্বাস
০৩ মে ২০২৫, ১০:০০আপডেট : ০৩ মে ২০২৫, ১০:০২

‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ এলেই দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমকর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি হয়। দাবি ওঠে স্বাধীন গণমাধ্যম ও কর্মীদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সক্ষমতা ও চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে। বাংলাদেশে এ বছর দিবসটি পালিত হচ্ছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। বর্তমান সরকারের দাবি, গণমাধ্যম যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। আর সংস্কার কমিশন বলছে, স্বাধীনতা ও আর্থিক নিরাপত্তা নির্ভর করবে অংশীজনের ওপর। টেকসই আর্থিক মডেল ছাড়া গণমাধ্যম স্বাধীন হবে না।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের মুক্তভাবে লিখতে পারা ও চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশন গত ২২ মার্চ সরকারের কাছে গণমাধ্যম সংস্কারের নাতিদীর্ঘ প্রতিবেদন দাখিল করে। এই প্রতিবেদনের মূল সুপারিশ নিয়ে গণমাধ্যমে আগেই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার জানিয়ে দেওয়া হয়, এই প্রথম বাংলাদেশে গণমাধ্যম সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছে।

যদিও বর্তমান সরকারের এই বক্তব্যের সমালোচনা করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দেশে প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এই ঘটনায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশ প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের অনেক সিনিয়র সাংবাদিক। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পর সম্প্রতি সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করার ঘটনায় তিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার রেশ ধরে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে।

তবে এই ঘটনা গণমাধ্যমের মালিকদের স্বাধীন ইচ্ছায় ঘটেছে এমন আলোচনা রয়েছে সরকার ও সাংবাদিকদের একাংশের মধ্যে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে কোনও ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, এমনকি ফোনও করা হয়নি এই ঘটনায়।

সম্প্রতি এসব ঘটনার কারণে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে অভিযোগ উঠলেও সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে দেশের মানুষ বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মতো প্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করছেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম দাবি করেন, ‘এখন মানুষ মন খুলে লিখছেন, সমালোচনা করছেন, গালিও দিচ্ছেন। কাউকে কিছু বলা হচ্ছে না। অনেকে আবার বলছেন, স্বৈরাচারের দোসরদের প্রতি সফট হচ্ছি। কিন্তু আমরা তো আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারি না। আমরা কোনও কলম ভেঙে দিইনি, কোনও প্রেসে তালা দিইনি।’

শুক্রবার (২ মে) সকালে চট্টগ্রাম ‘জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশ: গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এই দাবি করেন।

বর্তমান সরকারের গঠন করা গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন বলছে, সরকার যদি সুপারিশ বাস্তবায়ন করে তাহলে গণমাধ্যমে একটা পরিবর্তন আসবেই। তবে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং সরকার ও মালিকপক্ষের সদিচ্ছা ছাড়া যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের চাকরি ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না তাও বলা হচ্ছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকার যদি কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে তাহলে তো পরিবর্তন আসবেই। সেই পরিবর্তন টেকসই হবে কি না তা নির্ভর করবে অংশীজনের ওপর। অংশীজন মানে মালিক, সাংবাদিক। অধিকার আদায় করে নিতে পারবো কিনা, সেটা রক্ষা করতে পারবো কিনা তার ওপর। আমরা বলেছি, সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা দরকার, তেমনি গণমাধ্যমের একটি টেকসই আর্থিক ব্যবসায়িক মডেল দরকার। এটা না হলে স্বাধীন গণমাধ্যম ও মুক্ত সাংবাদিকতা থাকবে না।’

অন্যের পৃষ্ঠপোষকতা, অন্যের দয়ার ওপর যখর নির্ভর হয়ে যাবেন, তখনই আপনি আপস করবেন, সেটা সাংবাদিকও করবে, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানও করবে, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও বস্তুনিষ্ঠতা ক্ষুণ্ণ হবে মন্তব্য করেন কমিশন প্রধান। তিনি বলেন, ‘প্রশ্নটা হচ্ছে, আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টা যাতে নিশ্চিত করা যায়। সে জন্যই আমরা যেসব সুপারিশ করেছি তা বাস্তবায়ন হয় তাহলে পরিস্থিতি বদল হবে, আর বদল হলে সেই পরিস্থিতিকে টিকিয়ে রাখা, অর্থাৎ মুক্তগণমাধ্যমের পরিবেশকে ধরে রাখা, স্বাধীনতাকে ধরে রাখা, তাহলে আমরা যারা গণমাধ্যমে কাজ করি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।’

প্রতিবছর ৩ মে মুক্ত সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের দাবিতে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালিত হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সাহসী নতুন বিশ্বে রিপোর্টিং- স্বাধীন গণমাধ্যমে এআই এর প্রভাব’।

প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ অনুসারে ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর থেকে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমকর্মীরা দিবসটি পালন করছেন।

সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত ও জীবনদানকারী সাংবাদিকদের স্মরণ ও তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় এই দিবসে।

/এফআর/ইউএস/
সম্পর্কিত
বগুড়ায় দুই সাংবাদিকদের ওপর হামলা: নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা গ্রেফতার
গণমাধ্যমকে ‘মব হুমকি’, যা বললেন প্রেস সচিব
ন্যাশনাল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স পলিসি চূড়ান্ত করার আহ্বান
সর্বশেষ খবর
কুড়িগ্রামে জামায়াতের রুকনসহ দুই জন বহিষ্কার
কুড়িগ্রামে জামায়াতের রুকনসহ দুই জন বহিষ্কার
টিএসসিতে নারী প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ, সমালোচনার ঝড়
টিএসসিতে নারী প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ, সমালোচনার ঝড়
মাওলানা রইস উদ্দিন হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ
মাওলানা রইস উদ্দিন হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ
খিলগাঁওয়ে ভবন থেকে পড়ে নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু
খিলগাঁওয়ে ভবন থেকে পড়ে নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
কেন আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা?
কেন আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা?
শুকনো মরিচের দাম কেজিতে কমলো ১০০ টাকা
শুকনো মরিচের দাম কেজিতে কমলো ১০০ টাকা
৩০০ ফিট দিয়ে রামপুরা করিডোর চালুর পরিকল্পনা ডিএনসিসির
৩০০ ফিট দিয়ে রামপুরা করিডোর চালুর পরিকল্পনা ডিএনসিসির
‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি ঘৃণা উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’
‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি ঘৃণা উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’
‘সাময়িক’ ফ্লাইট বন্ধ করলো নভোএয়ার
‘সাময়িক’ ফ্লাইট বন্ধ করলো নভোএয়ার