X
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
১৫ আষাঢ় ১৪৩২

৪২ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

রুমি নোমান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
২২ নভেম্বর ২০২০, ১৮:২৪আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২০, ১৮:২৭

বাংলাদেশে ইসলামী গবেষণা বা শিক্ষার প্রসারে ১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার দেশে একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ১৯৭৭ সালের শুরুর দিকে মক্কায় অনুষ্ঠিত প্রথম মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান প্রত্যেক মুসলিম দেশে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য একটি প্রস্তাব পেশ করেন। পরবর্তীতে প্রস্তাবটি গৃহীত হলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও একটি আন্তর্জতিকমান সম্পন্ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এম এ বারীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রস্তাবিত রিপোর্টের ভিত্তিতে ২২ নবেম্বর ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সরকার কুষ্টিয়ার শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
পরবর্তীতে স্থান পরিবর্তনসহ নানা চরাই উতরাই পেরিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করে ১৯৮৫ সালে। প্রথম ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ড. এ.এন.এম মমতাজ উদ্দীন। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের অধীনে আল কুরআন-ওয়া উলুম কুরআন ও উলুমত তাওহীদ ওয়াদ্ দাওয়াহ নামে দুটি বিভাগ এবং মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
বর্তমানে ৮ টি অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগ, ১টি ইনিস্টিটিউট, প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষার্থী, ৪০৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা, ৩২০ জন কর্মকর্তা, ১৮১ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ৩০০ জন সাধারণ কর্মচারী নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ তম ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম।
দেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়টি ২২ নভেম্বর ৪১ বছর শেষে ৪২ বছরে পদার্পণ করছে। স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠাকালীন থেকেই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
বর্তমানে ১৭৫ একর আয়তনের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে ২টি প্রশাসনিক ভবন, ৬টি একাডেমিক ভবন, ৫টি ছাত্র হল, ৩টি ছাত্রী হল, ১টি অত্যাধুনিক মিলনায়তনসহ ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (টিএসসিসি) ও ক্যাফেটেরিয়া, গ্রন্থাগার, উপাচার্যের বাসভবন, শিক্ষক- কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক কোয়ার্টার, একটি আধুনিক ব্যায়ামাগার, বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ,  জাতির পিতার স্মৃতি স্মারক ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক মুক্তবাংলা, ভাষা শহীদদের স্মারক শহীদ মিনার, একটি স্মৃতিসৌধ, একটি ডাকঘর, ইবি থানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও সুদৃশ্য মফিজ লেক। এছাড়াও বর্তমান ৫৩৭ কোটি টাকার মেগাপ্রজেক্টের অধীনে  একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ প্রকল্প বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত বহিরাবরণ অনেকাংশেই পাল্টে দেবে বলে আশাবাদী সকলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরির ডিজিটালাইজেশনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার জন্য উন্নতমানের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে দূর হয়েছে সেশনজট নামক অভিশাপ। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত নওরীন  বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পূর্বে সেশনজটের ভয়াবহতার কথা শুনেছিলাম, কিন্তু ভর্তি হওয়ার পর দেখলাম অবস্থা পুরোপুরিই পাল্টে গেছে। কিন্তু করোনার জন্য সামনের দিন গুলি নিয়ে আমরা কিছুটা চিন্তিত।’
এছাড়া আন্তর্জাতিকমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার লক্ষ্যে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এখন ইন্টারনেটের আওতায়। এছাড়া আধুনিক শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় বিদেশী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের শিক্ষকরাও আসছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে প্রায় ৪০ জন বিদেশী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।
তবে এতকিছুর মাঝেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ক্ষেত্র যেন আজও অপরিপূর্ণতায় ধুকছে। পিয়াস পান্ডে নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণার ক্ষেত্র কিংবা পরিবেশ সংকীর্ণ। এছাড়া এত বছর পেরিয়ে গেলেও একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের ২৫ কি.মি দূর থেকে যাতায়াত করতে হয় প্রতিনিয়ত তবুও পরিবহণ সমস্যা বিদ্যমান। এখনও পর্যন্ত ছাত্র সংসদ আলোর মুখ দেখেনি। এ বিষয়গুলো বাস্তবায়িত না হলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বান্ধব হওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শূন্য অবস্থায় এসব অনুষ্ঠান রঙহীন উদযাপন হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নব নিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তার নানান পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমার মূল পরিকল্পনা এ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা। এখানে শিক্ষা ও গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করার পাশাপাশি এক্ষেত্রে আর্থিক সন্নিবেশ সুনিশ্চিত করা।’ 
তিনি আরো বলেন, ‘আমার একার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে সার্বিক বিষয়গুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্টেক হোল্ডারদের সহযোগিতা।’
শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার। কিন্তু দেশের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সমস্যার কারণে অনেক সময় এটি হয়ে ওঠে না। আমি সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে সচেষ্ট হবো।’

এনএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জীবিত মাকে মৃত দেখিয়ে ছেলের ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ, মায়ের সংবাদ সম্মেলন
জীবিত মাকে মৃত দেখিয়ে ছেলের ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ, মায়ের সংবাদ সম্মেলন
নেতানিয়াহুর দুর্নীতি মামলায় ইসরায়েলি প্রসিকিউটরদের তীব্র সমালোচনা ট্রাম্পের
নেতানিয়াহুর দুর্নীতি মামলায় ইসরায়েলি প্রসিকিউটরদের তীব্র সমালোচনা ট্রাম্পের
চরম অচলাবস্থায় বাণিজ্য, প্রতিদিন ২৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির শঙ্কা
আজও এনবিআরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’চরম অচলাবস্থায় বাণিজ্য, প্রতিদিন ২৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির শঙ্কা
বজ্রঝড়ের পর ৯ মিনিটের গোল উৎসবে কোয়ার্টার ফাইনালে চেলসি
বজ্রঝড়ের পর ৯ মিনিটের গোল উৎসবে কোয়ার্টার ফাইনালে চেলসি
সর্বাধিক পঠিত
খুলনা প্রেসক্লাবে প্রেস সচিবকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ
খুলনা প্রেসক্লাবে প্রেস সচিবকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছিলেন অফিস সহকারী হয়ে, বেরোলেন এমবিএ’র সনদ নিয়ে
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছিলেন অফিস সহকারী হয়ে, বেরোলেন এমবিএ’র সনদ নিয়ে
সরকারি গাড়িতে দাওয়াতে গেলো ইউএনও’র পরিবার
সরকারি গাড়িতে দাওয়াতে গেলো ইউএনও’র পরিবার
মুরাদনগরে গলায় ছুরি ধরে নারীকে ধর্ষণ, থানায় মামলা
মুরাদনগরে গলায় ছুরি ধরে নারীকে ধর্ষণ, থানায় মামলা
‘সরকার দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে আন্দোলন ঘোষণা করবো’
‘সরকার দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে আন্দোলন ঘোষণা করবো’