X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে ভিসি ভবন ছাড়লেন ফারজানা ইসলাম

ওয়াজহাতুল ইসলাম, জাবি প্রতিনিধি
২৬ এপ্রিল ২০২২, ১১:৩৪আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২২, ১১:৩৯

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ভিসি ভবন ছেড়েছেন। সোমবার (২৫ এপ্রিল) বিকালে তার ছেলে ও পুত্রবধূ বাসার চাবি বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুর রহমান জানান, ‌‘শুনেছি গত ৭-৮ দিন ধরে ম্যাডাম (ফারজানা ইসলাম) অসুস্থ। কবে বাসা ছাড়ছেন তা জানি না। তবে সোমবার বিকালে উনার ছেলে ও ছেলের বউ বাড়ির চাবি বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন।’

নতুন উপাচার্য বাসভবনে কবে ‍উঠছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাসা কেবল বুঝে পেলাম। চুনকাম করতে হবে। অনেক কিছু মেরামত করতে হবে। এরপর হয়তো উঠবেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপাচার্যের বাসার এক কর্মচারী বলেন, ‘ম্যাডাম গত দুই সপ্তাহ ধরে বাসায় ছিলেন না। যতটুকু শুনেছি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। গত শনিবার দুটি বড় পিকআপে এবং রবিবার দুটি কাভার্ডভ্যানে বাসার সব মালামাল নিয়ে গেছেন। সোমবার রেজিস্ট্রার ম্যাডাম ও আব্দুর রহমান স্যারের উপস্থিতিতে উনার ছেলে ও পুত্রবধূ বাসার চাবি বুঝিয়ে দিয়েছেন।’

গত ২ মার্চ উপাচার্যের দ্বিতীয় মেয়াদের দায়িত্ব পূর্ণ করেন অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একাংশ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাসভবনের সামনে গেলে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ তাদের সরে যেতে অনুরোধ করেন।

আরও পড়ুন: ভিসি ভবনে তিন স্তরের নিরাপত্তায় অধ্যাপক ফারজানা 

এরপর সেদিন বিকালে শিক্ষকরা উপাচার্যের বাসভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলে ৪-৫ দিনের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়ে আসবেন বলে জানান তিনি। কিন্তু গত ১৭ এপ্রিল উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নুরুল আলমকে উপাচার্যের সাময়িক দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হলে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়।

২০১৪ সালের ২ মার্চ প্রথম মেয়াদে উপাচার্য পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন ফারজানা ইসলাম। প্রথম মেয়াদে শিক্ষার্থীবান্ধব ও সংস্কৃতিমনা হিসেবে পরিচিতি পেলেও দ্বিতীয় মেয়াদে দুর্নীতি ও অনিয়মের নানা অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন জাবির ১৮ তম এই উপাচার্য। দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকে ভিসিবিরোধী আন্দোলনের মুখে পড়েন তিনি।

যেসব কারণে সমালোচিত ফারজানা ইসলাম

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৯ সালের নভেম্বরের মধ্যে জাকসু নির্বাচনের ঘোষণা দেন ফারজানা ইসলাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেবছর পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরীকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হলেও, কোনও পদক্ষেপই নেননি তিনি। বরং গত বছর অধ্যাপক মান্নান এলপিআরে (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটি) চলে যাওয়ায় অনিশ্চয়তায় পড়ে জাকসু নির্বাচন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালে। সাবেক এই উপাচার্য ২০২০ সালের শেষের দিকে ষষ্ঠ সমাবর্তনের কথা জানালেও শেষ পর্যন্ত তা আয়োজনে ব্যর্থ হয়েছেন। এতে শিক্ষার্থীদের অসন্তোষের শিকার হন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের-১২ এর ৬ ধারা অনুযায়ী, ‘উপাচার্য প্রয়োজনে উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ বাদে সব পদে অনধিক ছয় মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত হিসেবে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিতে পারেন।’ ফারজানা ইসলাম তার প্রশাসনে সবচেয়ে বেশি ভারপ্রাপ্তদের দ্বারা পরিচালনা করেছেন। তার আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার থেকে শুরু করে প্রক্টর, ডিন, প্রধান প্রকৌশলী, কম্পট্রোলার, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন এবং জনসংযোগ অফিসের মত গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোর ২২টি পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তদের ছয় মাসের মেয়াদ অনেক আগে পার হলেও, তারা এখনও স্বপদে বহাল রয়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের লঙ্ঘন হলেও নির্বিকার ছিলেন ফারজানা প্রশাসন। এছাড়া অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য প্রশাসনকে নিজের অনুগত রাখতে কাউকে পূর্ণ ক্ষমতা না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে দফতরগুলো চালিয়েছেন।

করোনা মহামারির অজুহাতে ৬৪০ দিন সশরীরে দাফতরিক কাজে অনুপস্থিত ছিলেন ফারজানা ইসলাম। মেয়াদের শেষ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম সশরীরে চালু হলেও, অ্যাকাডেমিক-সিন্ডিকেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ সভাগুলো পরিচালনা করেছেন ঘরে বসে।

জাবির সাবেক এই ভিসি সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে। ১৪৪৫ কোটি টাকার ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে’ শুরু থেকেই অনিয়ম ও নির্মাণকাজকে অপরিকল্পিত বলে আন্দোলন করে আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগ দিয়ে হামলা করিয়ে সেটাকে ‘গণঅভ্যুত্থান’ আখ্যা দেওয়ায় ব্যাপক সমালোচিত হন তিনি।

এছাড়া নির্মাণকাজে ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা ঈদ-সালামি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এ অভিযোগের জের ধরে পদ হারান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। ২০১৭ সালে একটি ঘটনায় আন্দোলনকারী ৬৪ শিক্ষার্থীর নামে মামলা করে ফারজানা ইসলামের প্রশাসন। এই আন্দোলনে সাবেক এই উপাচার্য কাঁঠাল তত্ত্বের উদ্ভব ঘটান বলে জানা যায়।

/এসএইচ/
সম্পর্কিত
মাদক বহনের সময় দুর্ঘটনা, এরপর থেকে নষ্ট হচ্ছে জাবির ৬০ লাখ টাকার অ্যাম্বুলেন্সটি
জাবির ডিন নির্বাচন ১৫ মে
আট বছর পর জাবিতে ডিন নির্বাচন
সর্বশেষ খবর
বিএনপি গণতন্ত্রে অকার্যকর ডামি রাজনৈতিক দল: ওবায়দুল কাদের
বিএনপি গণতন্ত্রে অকার্যকর ডামি রাজনৈতিক দল: ওবায়দুল কাদের
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
এবার ঘুমটা ভালো হবে ডু প্লেসির
এবার ঘুমটা ভালো হবে ডু প্লেসির
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী