জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভিসির দায়িত্ব শেষ হলেও পুলিশ পাহারায় এখনও বাসভবনেই অবস্থান করছেন অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। এমনকি তিনি এখনও পাচ্ছেন তিন স্তরের নিরাপত্তা। ভিসির বাসভবন সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপক ফারজানা ভিসি থাকাকালে আন্দোলন দেখলে বাসার আশপাশে চারশ' পুলিশ সদস্য দিয়ে পাহারা দেওয়াতেন। আর আন্দোলন চলমান থাকলে টানা এক মাস ১২০ জন পুলিশ পাহারার দায়িত্বে থাকতেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফারজানা ইসলামের দুর্নীতির কারণে তিনি ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এজন্য তিনি পুলিশ প্রোটেকশনে থাকছেন।
ভিসির অফিস সূত্রে জানা যায়, ফারজানা ইসলাম বাসা না ছাড়ার পাশাপাশি ভিসির সব সুবিধা ভোগ করছেন। তার নিরাপত্তায় প্রতিদিন ৯ জন পুলিশ, ছয় জন আনসার ও ছয় জন গার্ড সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। এই নিরাপত্তার বিষয়টি আবার খবরদারি করেন ভিসিপুত্র প্রতীক হাসান। কোন গার্ড ও আনসার সদস্য ভিসির বাসায় ডিউটি দেবেন তার নিয়ন্ত্রণ করেন ভিসিপুত্র। এমনকি গার্ড ও আনসারদের সঙ্গে অনেক সময় তার খারাপ আচরণ করারও অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গার্ড বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরি করি। কিন্তু ভিসির ছেলে আমাদের ওপর অযাচিত খবরদারি করেন। তাকে স্যার না ডাকলে আমাদের শাস্তির আওতায় আনা হয়। এছাড়া বিয়ের জন্য মাত্র দুইদিন ছুটি মঞ্জুর করার মতো ধৃষ্টতাও দেখিয়েছেন ওই ভিসিপুত্র।
ভিসির বাসভবন সূত্রে জানা যায়, সাবেক ভিসি ফারজানা ইসলামের বাসায় অবৈধভাবে এখনও তিন জন ড্রাইভার, দুই জন বাবুর্চি, দুই জন ক্লিনার, চার জন মালি ও ৯ জন গার্ডসহ মোট ১৯ জন কর্মচারী রয়েছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করেন ভিসিপুত্র।
এসব বিষয়ে জানতে সাবেক ফারজানা ইসলাম, তার ছেলে প্রতীক হাসান ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজকে কল করা হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনি।
তবে বর্তমান রুটিন দায়িত্বে থাকা ভিসি অধ্যাপক নূরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নতুন কেউ নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সাবেক ভিসি বাসভবনে থাকতে পারবেন, এমন কোনও নিয়ম নেই। আমি রুটিন দায়িত্ব পালন করছি, আমার কাজ হলো অফিসের কাজ করা; উপাচার্যের বাসভবনে তো আর আমি উঠতে পারি না।
সাবেক ভিসি তাহলে কোন নিয়মে বাসভবনে আছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে নূরুল আলম মন্তব্য করতে চাননি।
এদিকে এক মাস আগে ভিসির দায়িত্ব শেষ হলেও ফারজানা ইসলামের বাসা না ছাড়া নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ভিসির আস্থাভাজন শিক্ষকরা বলছেন, আবারও তিনি ভিসি হওয়ার চেষ্টা করছেন। এজন্য আপাতত তিনি বাসা ছাড়ছেন না। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, একই ব্যক্তি তৃতীয় মেয়াদে ভিসি হওয়ার আইন নেই। জাবির সাবেক ভিসি তৃতীয় মেয়াদে নিয়োগ পেতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল। তবে আইন ও রীতি না থাকায় তার চিঠি নাকোচ করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও তিনি তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত ১ মার্চ দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর আবারও ভিসি হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন ফারজানা ইসলাম।