X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

হলে ডাইনিং বন্ধ, সেহরি-ইফতার নিয়ে বিপাকে জাবির শিক্ষার্থীরা

ওয়াজহাতুল ইসলাম, জাবি প্রতিনিধি
২৯ মার্চ ২০২৩, ১৭:৩৫আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৩, ১৮:৫৩

পবিত্র রমজান, বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর, গ্রীষ্মকালীন অবকাশ উপলক্ষে গত সোমবার (২৭ মার্চ) থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছুটি শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ছুটি পেয়ে কিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছাড়লেও অনেকেই পরীক্ষা, টিউশন, চাকরির পরীক্ষার পড়াশোনার জন্য আবাসিক হলগুলোতে অবস্থান করছেন। তবে শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করলেও এবার ছুটি শুরুর দিন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ডাইনিংগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন হলে থাকা শিক্ষার্থীরা।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের জন্য মোট ১৭টি আবাসিক হল রয়েছে। হলগুলোতে ডাইনিংয়ের পাশাপাশি ক্যান্টিনের ব্যবস্থা আছে। তবে শিক্ষার্থী অনুপাতে পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহের সক্ষমতা নেই ক্যান্টিনগুলোর। এতে রমজানে, বিশেষ করে সেহরির সময় খাবার খেতে গিয়ে ঝামেলায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া রমজানে ছাত্রীদের দুয়েকটি হলে রাতে ডাইনিং খোলা থাকলেও সেহরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলেই ডাইনিং বন্ধ রয়েছে।

হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিন ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ও চারটি হলের পাশে খাবারের কিছু হোটেল রয়েছে। তবে রমজানে দিনে ক্রেতা না থাকায় বেশিরভাগ হোটেলই এই মাসে বন্ধ রেখেছেন দোকানিরা। এছাড়া হোটেল ও আবাসিক হলগুলোর ক্যান্টিনের চেয়ে ডাইনিংয়ের খাবারের দাম তুলনামূলক কম। যেখানে অন্যান্য সময়ে একবেলা খাবার খেতে ক্যান্টিনে সর্বনিম্ন ৩৫-৪০ টাকা ও হোটেলে ৫০-৭০ টাকা খরচ হয়, সেখানে ডাইনিংয়ে একবেলা খাবার খেতে খরচ হয় ২৫-৩০ টাকা। এজন্য ডাইনিংগুলো মধ্য ও নিম্নবিত্ত শিক্ষার্থীদের খাদ্যের জোগানের শেষ আশ্রয়স্থল। সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনই খাবারের  পেছনে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে পরিচালন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘বটতলার হোটেল ও ক্যান্টিনগুলো থেকে ডাইনিংয়ে খাবারের দাম কম। ডাইনিংগুলোতে একদিন আগে টোকেন কিনে রাখতে হয়। টোকেনের ক্রেতার অনুপাতে খাবার রান্না করা হয়। এজন্য সেহরি কিংবা অন্যান্য সময় খাবারের সংকট হওয়ার ভয় থাকে না। এছাড়া প্রতি বেলায় হোটেলে কিংবা ক্যান্টিনে খেতে গেলে খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে খাবারের দাম বাড়ায় ব্যয় বেড়ে গেছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। এই অবস্থায় ডাইনিংগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত হলের ও লোকপ্রশাসন বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিকী তায়েফ বলেন, ‘ডাইনিংয়ে কম খরচে খাওয়া যায়। খাবারের মান অপেক্ষাকৃত ভালো। বটতলায় খাবারের দাম অনেক বেশি এবং খাবার টাটকা কিনা তা নিয়ে অনেক সন্দেহ আছে। পাশাপাশি সারা দিন রোজা রেখে হলের বাইরে খেতে যাওয়া কষ্টকর। হলের ভেতরে ডাইনিং চালু থাকলে আমাদের কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হয়ে যেতো।’

গত সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৯ দিনের ছুটি শুরু হলেও অনেক বিভাগে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের ইনকোর্স ও চূড়ান্ত পরীক্ষা চলমান রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে জানা যায়, শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ইংরেজি, পরিবেশবিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন, অর্থনীতি, পদার্থবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিদ্যা, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমসহ বিভিন্ন বিভাগগুলোর চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে। এজন্য অনেক শিক্ষার্থীই বর্তমানে হলে অবস্থান করছেন।

এই অবস্থায় হলের ডাইনিং ও বটতলার অধিকাংশ খাবার দোকান বন্ধ থাকায় রাতে ও সেহরির খাবারের সময় ক্যান্টিন ও হোটেলগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা বেড়ে গেছে। অনেক সময় সেহরিতে হোটেল বা ক্যান্টিনে যেতে দেরি হলে খাবার পাওয়া যায় না।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে অসংখ্য শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে রয়েছেন। দুঃখজনক বিষয় হলো, এদের সেহরি ও ইফতারের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়। এতে বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী ভুগছে পর্যাপ্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ব্যবস্থাপনার অভাবে। আজ তিন জায়গায় ঘুরে তারপর সেহরি করলাম। ক্রেতার এত চাপ। ক্লাস না থাকলেও পরীক্ষার্থী, টিউশন ও চাকরিপ্রত্যাশীদের বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে ক্যাম্পাসে।’

সরেজমিন দেখা যায়, বটতলায় ২০টি খাবার হোটেল থাকলেও সেহরির সময় তিন থেকে চারটি দোকান খোলা থাকে। এর বাইরে শহীদ সালাম-বরকত হলের সামনে একটি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের পাশে দুটি ও শহীদ রফিক-জব্বার হলের পাশে তিনটি খাবারের দোকান খোলা থাকতে দেখা যায়। সেহরির সময়ে এসব দোকানে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। আবার অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেহরি শেষ করতে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে দৌড়াদৌড়ি করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ জাবি শাখার সভাপতি জহির ফয়সাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রশাসন ক্লাস বন্ধ করলেও পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ করেনি। আবার ডাইনিংগুলোও বন্ধ রেখেছে। এতে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়েই হলে থাকছে। তাদের এই দ্বৈতনীতির কারণে রমজানে সেহরি ও ইফতারে শিক্ষার্থীরা পড়েছে বিপাকে। প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ডাইনিংগুলো চালু করে দেওয়া এবং পর্যাপ্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করা।’

শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থানের পরেও ডাইনিং বন্ধ রাখাকে অমানবিক হিসেবে দেখছেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে। তারা কোনও না কোনও প্রয়োজনেই হলে অবস্থান করছে। আর হল ভ্যাকেন্টও দেওয়া হয়নি। তাদের অবস্থান সত্ত্বেও ডাইনিংগুলো বন্ধ করে দেওয়াটা অমানবিক। শিক্ষার্থীদের খাবারের সমস্যা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে হলের ডাইনিং ও বটের দোকানগুলো চালু করার ব্যবস্থা করা।’

এদিকে খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ হলে ক্যান্টিন চালু থাকলেও শহীদ রফিক-জব্বার হল, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল এবং ২১নং হলে ডাইনিং ও ক্যানটিনের কোনোটিই চালু নেই। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। সেহরিতে খাবারের জন্য অন্য হলের ক্যানটিন কিংবা বটতলার খাবারের দোকানগুলোর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১নং হলের ও গণিত বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘হলে ক্যান্টিন ও ডাইনিং না থাকায় আমাদের সেহরি খাওয়ার জন্য অনেক আগে ঘুম থেকে উঠে যেতে হচ্ছে। হয়তো বটতলা নয়তো অন্য হলের ক্যান্টিনে খেতে হয়। অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরা ৩টায় উঠলে আমাদের আড়াইটায় ঘুম থেকে উঠতে হয়। রাতের ওই সময়ে হেঁটে অন্য কোথাও খাবার খেতে যাওয়াটা খুবই কষ্টকর। আর একটু দেরি করে গেলে খাবার পাবো সেই নিশ্চয়তা থাকে না। ডাইনিং বা ক্যান্টিন চালু থাকলে এই কষ্টটা করা লাগতো না।’

হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিন না থাকার কারণ জানতে চাইলে শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ক্লাস বন্ধ থাকলে ডাইনিং বন্ধ থাকে। আর রোজার সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সব হলেই ডাইনিং বন্ধ হয়ে গেছে। এটা প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি ও উপাচার্যের নির্দেশনাক্রমে আমরা করেছি। আর আমাদের ক্যান্টিন নেই। আমরা চেষ্টা করছি এটি চালু করার জন্য। হলের পাশে থাকা দোকানিদের পর্যাপ্ত খাবার রান্নার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করার পরেও ডাইনিংগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে কেন জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, ‘প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ক্লাস বন্ধ থাকলে ডাইনিং বন্ধ থাকে। এজন্য এবারও ডাইনিং বন্ধ রয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। এছাড়া অফিস চলাকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বোর্ডের মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়নি।

/এমএস/
সম্পর্কিত
মাদক বহনের সময় দুর্ঘটনা, এরপর থেকে নষ্ট হচ্ছে জাবির ৬০ লাখ টাকার অ্যাম্বুলেন্সটি
জাবির ডিন নির্বাচন ১৫ মে
আট বছর পর জাবিতে ডিন নির্বাচন
সর্বশেষ খবর
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা, টানা ৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা, টানা ৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
১০ জন নিয়েও কৃত্রিম আলোয় ইয়ংমেন্সের উৎসব
১০ জন নিয়েও কৃত্রিম আলোয় ইয়ংমেন্সের উৎসব
পোড়া রোগীদের যন্ত্রণা বাড়াচ্ছে তাপপ্রবাহ
পোড়া রোগীদের যন্ত্রণা বাড়াচ্ছে তাপপ্রবাহ
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট