X
বুধবার, ১৫ মে ২০২৪
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

নম্বর টেম্পারিং ও শিক্ষার্থীদের দিয়ে টেবুলেশন শিট তৈরির অভিযোগ

রাবি প্রতিনিধি
২৪ আগস্ট ২০২৩, ০০:২১আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ০০:২১

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৯-২০ সেশনের মাস্টার্সের ফল প্রকাশিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়। তবে ফল প্রকাশের একদিন না যেতেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের দিয়ে মাস্টার্সের ফলের টেবুলেশন তৈরি ও নম্বর টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে এক শিক্ষার্থীকে এ গ্রেড থেকে এ প্লাস করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পরীক্ষা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু ২০২২ সালের জুন মাসে। পরীক্ষার প্রায় বছর খানেক পর চলতি বছরের জুনে বিভাগে অনানুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশিত হয়। চলতি মাসে থিসিস গ্রুপের ভাইভা হওয়ার পর গত ২২ আগস্ট গেজেট আকারে ফল প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

তবে অনানুষ্ঠানিক সেই ফল প্রকাশের পর থেকে ওই সেশনের শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের মেসেঞ্জার গ্রুপে নানা অসঙ্গতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। মো. দেলোয়ার হোসেন নামে থিসিস গ্রুপের শিক্ষার্থীর নাম নন থিসিস তালিকায় প্রকাশ করা হয়। সেসময় তালিকায় দেখা যায়, ১০৫১ নম্বর কোর্সে কেউ এ প্লাস পাননি। কিন্তু ওই তালিকা সংশোধন করে থিসিস গ্রুপের তালিকা প্রকাশ করা হলে সেখানে ওই কোর্সে মো. দেলোয়ার হোসেনকে এ প্লাস দেওয়া হয়।

এ ছাড়া অনানুষ্ঠানিক ফল প্রকাশের পর নিজেদের মেসেঞ্জার গ্রুপে মঞ্জুরুল ইসলাম হাসান নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি ফল প্রকাশ করার জন্য। না হলে এত সহজ ছিল না ফলের মুখ দেখা।’ ফল প্রস্তুত করতে সহায়তা করা শিক্ষার্থীর কাজ নয় বলে সহপাঠীরা সমালোচনা শুরু করলে মঞ্জুরুল ইসলাম হাসান গ্রুপে আরও লিখেছেন, ‘ফল যেন দ্রুত প্রকাশ হয়, তাই আমরা চেষ্টা করেছি। না হলে আরও অনেক দেরি হতো।’ 

অপর এক সহপাঠীর মন্তব্যের জবাবে তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি আমার কথা বলিনি, আমরা বলেছি। আমরা দুই দিন টানা কাজ করে ফল প্রকাশে সহায়তা করেছি।’

এসব বিষয়ে ওই সেশনের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, অনেক সময় স্যাররা কাজ করে শেষ করতে পারেন না। তখন আমাদের সহায়তায় টেবুলেশন শিট করিয়ে নেন। আমরা নম্বরগুলো টেবুলেশন শিটে তুলে দিই, স্যাররা চেক করে পাঠিয়ে দেন।’

দেলোয়ার হোসেন, ইমরান আলী জিহাদী ও মঞ্জুরুল ইসলাম হাসান টেবুলেশন শিটে কাজ করেছেন বলেও ওই শিক্ষার্থীরা জানান।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা টেবুলেশন শিটে কাজ করিনি। তবে স্যার আমাদের বলেছিলেন, কোর্স নম্বরের কোডগুলো বসাতে। আমি ল্যাপটপে সেভাবে কাজ পারি না। পরে ল্যাপটপে যারা কাজ পারে, তাদের দিয়ে বসিয়ে নিয়েছেন।’

আরেক শিক্ষার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম হাসান বলেন, ‘টেবুলেশন শিটের কাজ স্যাররা করেছেন। তবে সহায়তা করেছি বলতে বুঝিয়েছি, শিক্ষকরা বলেছেন শিক্ষার্থীদের নাম-রোল নম্বরগুলো সংগ্রহ করতে; যাতে ভুল না হয়।’ 

কোন শিক্ষক নাম-রোল নম্বর চেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইনস্টিটিউটকে জিজ্ঞেস করেন। আমি আপনাকে বলতে বাধ্য না।’ 

এদিকে, ১০৫১ নম্বর কোর্সে মো. দেলোয়ার হোসেন এ প্লাস পাওয়া না পাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক আরিফুর রহমান বলেন, ‘এক বছর আগে আমি ওই কোর্সের সবগুলো খাতা জমা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে এসেছি। তবে এই বিষয়টি আমার মনে আছে। কারণ, ওই সময় খাতা দেখতে গিয়ে দেখলাম একজন ছাত্র ৭৯ নম্বর পেয়েছে। তাই সিমপ্যাথিটিক ওয়েতে খাতাগুলো দ্বিতীয়বার দেখেছি। তবে কোনোভাবেই এ প্লাস পাওয়া মতো লেখেনি। এটা আমার মাইন্ডসেট হয়ে আছে, আমি ওই ছাত্রকে এ প্লাস দিতে পারিনি।’

এ বিষয়ে ওই ইনস্টিটিউটের প্রভাষক ও পরীক্ষা কমিটির সদস্য এন এ এম ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বিভাগের কোনও কোর্সের খাতা তৃতীয় কোনও শিক্ষক দেখার নিয়ম নেই। কোর্স টিচার যে নম্বর দেবেন, সেটাই থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি পরীক্ষা কমিটির সদস্য। তবে পরীক্ষার ফল সংক্রান্ত কোনও প্রক্রিয়ায় আমাকে রাখা হয়নি। শুধু স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। তবে মাঝে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তখন সে বলেছিল, পরীক্ষার টেবুলেশন শিটে কাজ করেছে। এই সময় আমার পাশে আরেকজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। অথচ এই কাজ করার দায়িত্ব কিন্তু পরীক্ষা কমিটির সদস্যদের।’

কোর্স শিক্ষকের দেওয়া নম্বর পরিবর্তন করে শিক্ষার্থীকে এ প্লাস দেওয়া ও টেবুলেশনে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের সহায়তা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর রুবাইয়াৎ জাহান বলেন, ‘ওই কোর্সের শিক্ষক এখানে এসেছিলেন এবং বলেছিলেন, সম্ভব হলে নম্বরটা বাড়িয়ে দিয়েন। আর চেয়ারম্যান চাইলে পয়েন্ট ফাইভ বাড়াতে পারেন। আমি সেটাই করেছি। কিন্তু ওই কোর্স টিচার এখন অস্বীকার করছেন।’

শিক্ষার্থীদের দিয়ে টেবুলেশন শিটে কাজ করানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘না-না-না। তাদের দিয়ে টেবুলেশন শিটে কাজ করানো হয়নি। শুধু বাংলা নামগুলো কারেক্ট করিয়ে নিয়েছি। ভিন্ন ভিন্ন ডিসিপ্লিনের সাবজেক্ট কোর্ডগুলো লিখিয়ে নেওয়া হয়েছিল।’

নাম সংগ্রহ কিংবা কোড লেখার কাজটি শিক্ষার্থীদের কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি শিক্ষকদেরও কাজ নয়। পুরোটাই কর্মকর্তাদের কাজ। তবে জনবল সংকট থাকায় আমরা কাজটি করিয়েছি।’

পরীক্ষা কমিটির সদস্যদের দিয়ে কাজ না করানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘টেবুলেশনের কাজ যেমন সবাইকে নিয়ে করতে হয়, ঠিক আমি সবাইকে নিয়েই কাজ করেছি। একেকজন একেকভাবে কাজ করেছেন।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়টি পরীক্ষা কমিটি দেখভাল করে। নম্বর টেম্পারিং কিংবা শিক্ষার্থীদের দিয়ে টেবুলেশন শিট তৈরির বিষয়টি জানি না। তবে এ ধরনের অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

/এএম/
সম্পর্কিত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়নির্মাণকাজ শেষ হয় না, রাস্তাও ঠিক হয় না
ছেলেরা কেন পিছিয়ে তা জানতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
রাবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ
সর্বশেষ খবর
যে কারণে রাজশাহীর তিন প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল
যে কারণে রাজশাহীর তিন প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল
টিভিতে আজকের খেলা (১৫ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৫ মে, ২০২৪)
আইএফআইসি ফার্স্ট কোয়ার্টার ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট
আইএফআইসি ফার্স্ট কোয়ার্টার ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট
সর্বাধিক পঠিত
শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল
শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল
সাকিব-তামিমের কারণে দলের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে: ইমরুল 
সাকিব-তামিমের কারণে দলের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে: ইমরুল 
সোনার অলংকার কেনাবেচায় নতুন হার নির্ধারণ
সোনার অলংকার কেনাবেচায় নতুন হার নির্ধারণ
পেঁয়াজ আমদানি শুরু
পেঁয়াজ আমদানি শুরু
তাসকিনকে সহ-অধিনায়ক করে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা
তাসকিনকে সহ-অধিনায়ক করে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা