জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য নিয়োগে নিজের প্রভাব খাটিয়ে অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে চেয়ারে বসিয়েছেন বলে নৈতিক স্খলনে অভিযুক্ত এক শিক্ষকের করা মন্তব্য অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের চূড়ান্ত অসম্মান হয়েছে বলে দাবি করে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে সংগঠনটি এক প্রেস বিবৃতিতে উপাচার্য নিয়োগে অনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সুরাহার জন্য রাষ্ট্রের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান নেতারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অনৈতিক সম্পর্ক ও অর্থের বিনিময়ে নারী শিক্ষার্থীদের ফলাফল ও নিয়োগে বেআইনি প্রভাব বিস্তারের অপরাধে অভিযুক্ত ‘একজন শিক্ষক’ উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছেন বলে নিজেই স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার অনুগ্রহে চেয়ারে বসে আমাকেই ভুলে গেছে জাবি উপাচার্য।’ তার এই স্বীকারোক্তির ফলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আর্থিক অনিয়মের যে অভিযোগ ইতোপূর্বে উঠেছিল, তা মজবুত ভিত্তি পেলো। এছাড়াও প্রকাশিত অডিওতে তিনি অত্যন্ত অশালীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাষায় উপাচার্যকে গালাগালি করেছেন। এই অভিযোগ সত্যি হলে বর্তমান উপাচার্য তার পদে থাকার নৈতিক ভিত্তি হারিয়েছেন।’
এতে আরও বলা হয়, ইতোপূর্বে প্রশাসনপন্থি একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। তবে এর সুষ্ঠু সুরাহা না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। তাই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত নৈতিক অসচ্চরিত্রতার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ’ অনুযায়ী অবিলম্বে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাই। তা নাহলে উদ্ভূত যে কোনও সংকটময় পরিস্থিতির দায় উপাচার্যকেই বহন করতে হবে।
এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে একই বিভাগের একাধিক ছাত্রীকে শিক্ষক বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ উঠে। তাছাড়া গত বছরের ২১ নভেম্বর মাহমুদুর রহমান জনি ও একই বিভাগের প্রভাষক আনিকা বুশরা বৈচির একটি অন্তরঙ্গ ছবি (সেলফি) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিং করা হয়। তার প্রেক্ষিতে জনির বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। পরে ৮ ডিসেম্বর একাধিক ছাত্রীর সাথে নৈতিক স্খলনের অভিযোগে জনির বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে পদত্যাগ করেন শিক্ষক জনি। তবে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উত্থাপনের পর প্রায় একবছর অতিবাহিত হলেও জনির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, এ ঘটনার সত্যতা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় শিক্ষক জনিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার চিন্তা করছেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম।
এদিকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর কুরিয়ারের মাধ্যমে একটি খামে উপাচার্যকে গালিগালাজ করার অডিও ক্লিপসহ ডিভিডি, একটি দায়মুক্তিপত্র প্রত্যাহারের আবেদন ও একটি উড়োচিঠি সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো হয়। ৫২ সেকেন্ডের ওই অডিও ক্লিপে মাহমুদুর রহমান জনিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শোনা যায়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার-পাঁচটা মুখ শেষ করে দেবেন বলে হুমকি দেন তিনি। এমনকি তার কারণেই অধ্যাপক মো. নূরুল আলম উপাচার্যের চেয়ারে বসেছেন বলে অডিওতে মন্তব্য করেন শিক্ষক জনি।