আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) প্রশাসন ও বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে হট্টগোল এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ ঘটনা ঘটে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, দিবসটি উপলক্ষে শোকপদযাত্রা ও শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পদযাত্রাটি প্রশাসনিক ভবন থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। পরবর্তীতে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে শহীদ মিনার চত্বরে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ফুল দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও রকম নিয়মনীতি অনুসরণ না করে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আহ্বান করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ফুল দেওয়া নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য একে-একে নাম ঘোষণা করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগ। কিন্তু ক্রমান্বয়ে নাম ঘোষণা না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষক সমিতির পর শাখা ছাত্রলীগের নাম ঘোষণা করা হয়। শিক্ষক সমিতির পর নোবিপ্রবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নাম ঘোষণা না করায় তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ অবস্থায় সবার শেষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। অব্যবস্থাপনার কারণে হট্টগোল এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘যেকোনো দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাদামাটাভাবে আয়োজন করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ এক শতাংশও নিশ্চিত হয় না। উল্টো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।’
মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমন্বয় ছিল না বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈম রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান শুভ। তারা জানিয়েছেন, আমাদের যখনই সুযোগ দেওয়া হতো, তখনই শ্রদ্ধা নিবেদন করতাম। দিবসের কর্মসূচি পালনে সব সময়ের মতো সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে। আশা করি, জাতীয় দিবসের কর্মসূচি পালনে সামনে আরও সচেতনভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন পলাশ ও সাধারণ সম্পাদক ইবনে ওয়াজেদ ইমন জানান, এখানে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আশা করছি, পরবর্তীতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না।
নোবিপ্রবির জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির নির্দেশনায় আন্তর্জাতিক দিবসের আয়োজনের সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেছে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগ। এ বিষয়ে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. বিপ্লব মল্লিক বলেন, ‘ভাষা দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার ক্ষেত্রে হট্টগোল এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে আমাদের সংশ্লিষ্টটা ছিল না। আমরা নির্দেশিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল বাকী বলেন, ‘প্রশাসনিক কিছু বিষয়ে সমস্যা হলে পুরো নোবিপ্রবির নাম চলে আসে। তাই আমাদের সবাইকে এই বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। পরবর্তীতে আরও সতর্কতার সঙ্গে কর্মসূচির আয়োজন করবো।’
এমন পরিস্থিতি নিয়ে দিবসের আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, ‘শুরুর দিকে কিছুটা সমস্যা হয়েছে; যা আমাদের ব্যথিত করেছে। আশা করছি, পরবর্তীতে সঠিকভাবে শ্রদ্ধাবোধের সঙ্গে দিবসগুলোর কর্মসূচি পালন করতে পারবো।’