X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপত্তায় নিজস্ব উদ্যোগ, তবুও শঙ্কা

উদিসা ইসলাম
২৮ এপ্রিল ২০১৬, ১৬:১৩আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০১৬, ১৬:১৮

মহল্লার গলিতে গেট ‘পুলিশ ঘরে ঘরে পাহারা দিতে পারবে না, নিজেদেরও নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে’ পুলিশ প্রধানের এমন বক্তব্যের পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে ব্যক্তিগত বা সমষ্ঠিগত নিরাপত্তা বলয় তৈরির চেষ্টা। কিন্তু বাস্তবতা হলো- এসব চেষ্টার মাধ্যমে কাজের চেয়ে ভোগান্তি বাড়ছে বেশি। তাছাড়া এসবের মাধ্যমে মানুষের মনে ‘নিরাপত্তা বোধ’ অনুভবের বদলে সৃষ্টি হচ্ছে শঙ্কা আর অনিশ্চয়তা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নাগরিকরা নিজ নিজ এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নতুন নতুন কৌশল নিচ্ছেন এলাকাবাসী। গলির মুখে গেট লাগিয়ে রাত ১০টা বা কাছাকাছি সময়ে তা বন্ধ করে, নিজেদের ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তাপ্রহরী আর নাইটগার্ড নিয়োগ করে, এমনকি নিজেদের চলাচলের পরিধিও কমিয়ে দিয়ে ‘নিরাপত্তা বোধ’ আনার চেষ্টা করছেন তারা।
একের পর এক হত্যার ঘটনায় ‘নিরাপদ বোধ’ আনতে রাজধানীবাসী গেট লাগিয়ে দেওয়ায় কখনও কখনও বিপাকেও পড়ছেন অন্য এলাকার মানুষ। কারণ রাজধানীতে দু-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া আবাসিক এলাকা বলে পৃথক কোনও এলাকা গড়ে ওঠেনি।
অনেকেই বলছেন, রাত ১০টার পর গেট লাগানোর কারণে পাড়া মহল্লার নিরাপত্তা কতটুকু নিশ্চিত হয়, তা প্রশ্নের ব্যাপার। কারণ কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটলো সন্ধ্যার একটু আগে। আর সারাদিন লোকজনের আসা যাওয়া পর্যবেক্ষণ করাও সম্ভব নয়, প্রহরীদের সেই প্রশিক্ষণও নেই।

আরও পড়ুন: আইএস'র নামে ষড়যন্ত্র হচ্ছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, নিরাপত্তাতো একটা ‘বোধ’। আপনাকে সিসি ক্যামেরাসহ যাবতীয় কিছু দিয়েও ‘নিরাপদ বোধ’ আনা সম্ভব না। রাষ্ট্রকে তার নাগরিকদের মধ্যে নিরাপদ বোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। তারা নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে পারবেন না- এমন বক্তব্য তাদের আরও বেশি ভঙ্গুর করে তুলবে। আবার নিজেদের এলাকা নিরাপদ করতে গেট লাগিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিলে অন্য অনেকের অসুবিধা হবে। ফলে সেটিও কোনও সমাধান নয়।

রাত দশটা বাজে গাড়ি নিয়ে পশ্চিম রাজাবাজারে গলি দিয়ে ঢুকে রাজাবাজার টিএনটি অফিসের পেছন দিয়ে খামারবাড়ি যাওয়ার রাস্তায় আটকা পড়লো। গলিতে গেট লাগিয়ে দেওয়া। গেটে লোক আছে কিন্তু গেট খোলা যাবে না। প্রেসের গাড়ি দেখার পরও গেট খোলা যাবে না জানিয়ে দেন সাফ। ঘুরে যেতে হবে। সেই রাতে অন্ধ গলি ঘুরে আবারও পরের গলি দিয়ে বের হতে হয় আফজাল হোসেনকে।

রাসনা রিজওয়ান স্বামী সন্তান ভাই নিয়ে থাকেন রাজধানীর মোহম্মদপুর ইকবাল রোডে। তিনি বলেন, আমাদের বাসার প্রধান দরজায় আইহোল লাগানো আছে দশবছর হলো। কেউ বেল দিলে সেখানে চোখ দিয়ে দেখে দরজা খুলতে হবে এটা মাথায়ই থাকতো না। কিন্তু এখন পরিবারের সব সদস্যকে বলে দেওয়া হয়েছে না দেখে দরজা খোলা যাবে না। আইহোলের ওপারে কাউকে দেখা না গেলে ‘কে’ জিজ্ঞেস করে দরজা খুলতে হবে’। তিনি আরও বলেন, যে দেশের পুলিশ প্রধান বলেন, তিনি বাসাবাড়িতে নিরাপত্তা দিতে পারবেন না, সে দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ারই কথা।

সন্ধ্যা নামলেই জেঁকে বসে শঙ্কা কেবল মোহাম্মদপুর বা রাজাবাজার এলাকায় না, একেকটি গলির মুখে গেট লাগিয়ে দেওয়া আছে উত্তরা, আদাবর, শ্যাওড়াপাড়া, বনশ্রী থেকে শুরু করে বেশকিছু জায়গায়। অথচ এগুলোর কোনটিই কেবল আবাসিক অঞ্চল নয়। মানুষ আতঙ্কিত হয়ে নিজেরা উদ্যোগ নিচ্ছে ঠিকই কিন্তু সেগুলো শেষবিচারে কাজে আসছে না। বরং অবিশ্বাস বাড়ছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের বহু মানুষ বিচার পায় না: প্রধানমন্ত্রী
নিরাপত্তার জন্য রাজধানীর উত্তরায় রাত দশটার পর প্রবেশ করতে গেলে বেশকিছু জায়গায় নিজের পরিচয় দিয়ে যেতে হয়। কেউ কেউ সেখানে হয়রানিও শিকারও হয়ে থাকেন বলে অভিযোগ আছে। উত্তরা নিবাসী জিয়া সুলায়মান বলেন, যারা গেট লাগিয়েছেন, নিয়মিত তাদের মনিটরিং থাকা উচিত। পাহারাদাররা কী ধরনের আচরণ করেন তা দেখা উচিত। যারা বাইরে থেকে ওই এলাকায় ঢুকতে চান বা আত্মীয়ের বাসা থেকে রাতে বের হন তাদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করতে হয় তা প্রহরীরা জানেন না। কাউকেই ঢুকতে দেবেন না, এ ধরনের আচরণ করতে থাকেন। অথচ কেউ ধমক দিলে গেট খুলে দেওয়ার রেওয়াজও আছে। তাহলে কেউ যদি অসৎ উদ্দেশ্যে আসে সে কি ধমক না দিয়ে এমনি গেট খুলতে বলবে। আর এসব প্রহরীদের গেট খোলা ও লাগানো ছাড়া অন্যকোনও প্রশিক্ষণও নেই।
রাজধানীর কলাবাগানের লেক সার্কাসে নিজের বাসায় সোমবার বিকেলে খুন হন ইউএসএআইডির কর্মকর্তা সমকামী অধিকার কর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয়। এরপর খুনি ধরতে ব্যর্থতার সমালোচনার মধ্যেই পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, পুলিশ ঘরে ঘরে পাহারা দিতে পারবে না, নিজেদেরও নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে।

পরপর বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতের চিহ্নিত করতে পুলিশের ব্যর্থতা মানতে নারাজ পুলিশ প্রধান নিরাপত্তার বিষয়ে নাগরিকদের সতর্ক হওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি ব্যক্তির সেন্স অব সিকিউরিটি থাকতে হবে। তার নিজের নিরাপত্তা, প্রতিবেশীর নিরাপত্তা, এলাকার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, নিরাপত্তার জন্য মানুষ তার প্রতিবেশীর সঙ্গে মিলে একটা ব্যবস্থা নেবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটাই সব না এবং সেটার ওপর নির্ভর করে মানুষ নিরাপদ বোধও করে না। ছোট ছোট নিরাপত্তা ব্যুহতো ছিলোই। তারপরও তো হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে।

আরও পড়ুন: ব্রিটিশ হাইকমিশনার হত্যাচেষ্টা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

/এজে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মুশফিকদের বন্ধু ফুটবলার হীরকের অকস্মাৎ মৃত্যু
মুশফিকদের বন্ধু ফুটবলার হীরকের অকস্মাৎ মৃত্যু
খিলগাঁওয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু
খিলগাঁওয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু
‘দাবদাহের মধ্যে কষ্ট হলেও মানুষ ভোট দিতে আসবে’
‘দাবদাহের মধ্যে কষ্ট হলেও মানুষ ভোট দিতে আসবে’
ইরফান খান: জীবনের মোড় ঘুরেছিল ২০০ রুপির অভাবে!
প্রয়াণ দিনে স্মরণইরফান খান: জীবনের মোড় ঘুরেছিল ২০০ রুপির অভাবে!
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড