X
শনিবার, ১০ মে ২০২৫
২৬ বৈশাখ ১৪৩২

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের জীবনাবসান

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৮:১১আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২৩:৪৩

সৈয়দ শামসুল হক

সাহিত্যের সব অঙ্গন সমান দক্ষতায় জয় করতে পারলেও ফুসফুসে জেঁকে বসা ক্যান্সারটাকে পরাজিত করা সম্ভব হলো না সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের।  রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মঙ্গলবার বিকাল ৫টা ২৬ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহে...রাজেউন)।

ইউনাইটেড হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান শুভ বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রী পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং শিল্প সাহিত্য ও নাট্যাঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। তাঁর মৃত্যুতে জেমকন গ্রুপ ও কাগজ প্রকাশনের পক্ষ থেকেও শোক প্রকাশ করা হয়েছে। শিল্প সাহিত্য ও নাট্যাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শোকাবহ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭০ তম জন্মদিনের সব কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।  

তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, বুধবার সকাল ১০টায় তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আই চত্বরে সৈয়দ হকের প্রথম জানাজা, পৌনে ১১টায় বাংলা একাডেমিতে দ্বিতীয় জানাজা, ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তৃতীয় ও বাদ যোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তার মরদেহ দাফনের উদ্দেশে গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে কুড়িগ্রামের সরকারি কলেজ মাঠে তার শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, মৃত্যুর আগে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। পরে মৃত্যু সংবাদ পেয়ে একে একে হাসপাতালে ছুটে আসেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, নাট্যব্যক্তিত্ব শহীদুল ইসলাম সাচ্চু, তারিক আনাম খান, নিমা রহমান প্রমুখ।

এছাড়া, রাতে সৈয়দ শামসুল হকের মরদেহ আত্মীয় স্বজনের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য গুলশানের বাসভবনে নেওয়া হবে। এরপর ফের ইউনাইটেড হাসপাতালে রাখা হবে।

এদিকে, কুড়িগ্রামে তাকে সমাহিত করার সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। কবির ইচ্ছানুযায়ী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে তাকে সমাহিত করা হবে।

কবির পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, গতবছর একবার প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে ও পরে আরও একবার কুড়িগ্রামে এসে মৃত্যুর পর এখানেই শায়িত হবেন বলে ইচ্ছা প্রকাশ করে গেছেন কবি। সে অনুযায়ী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ প্রাঙ্গনে কবরের স্থানও নির্বাচন করে গেছেন তিনি। সেসময় তার ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে তাঁর সমাধি নির্মাণের ব্যাপারে একটি রেজুলেশনও পাস করা হয় যাতে কবি নিজেই স্বাক্ষর করে গেছেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের মূল প্রবেশ গেটের দক্ষিণ পাশে তাঁর কবরের স্থান নির্বাচন করা হয়।

এদিকে, সব্যসাচী এই লেখক-কবির মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর কুড়িগ্রামে জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমীন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম, জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর আলী, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মীর্জা নাসির উদ্দিনসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা কুড়িগ্রাম কলেজ প্রাঙ্গনে এসে কবরের জায়গা নির্বাচন করেন।

এ সময় কুড়িগ্রামে জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমীন জানান, সরকারের নির্দেশে ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কবিকে দাফনের সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মীর্জা নাসির উদ্দিন জানান, কবিকে সর্বস্তরের মানুষ যাতে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন সেজন্য দাফনের আগে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ প্রাঙ্গনে তাঁর শেষ জানাজা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত ছিলেন বিশিষ্ট এই লেখক। এ কারণে টানা ৬ মাস লন্ডনে চিকিৎসা নেন। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে জানিয়ে দেন রোগমুক্তির সম্ভাবনা নেই তার। তাকে ৬ মাসের সময়ও বেঁধে দেন তারা। এরপরে ২৫ আগস্ট দেশে ফিরে এসে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।

উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্ম করেন। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প তথা সাহিত্যের সব শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য তাকে ‘সব্যসাচী লেখক’ বলা হয়। তিনি মাত্র ২৯ বছর বয়সে সাহিত্যিকদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান।

প্রখ্যাত এ সাহিত্যিক সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও হালিমা খাতুন দম্পতির আট সন্তানের প্রথম সন্তান। বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন পেশায় ছিলেন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক এ লেখক ব্যক্তিজীবনে প্রথিতযশা লেখকা ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হকের স্বামী।

সৈয়দ শামসুল হকের ভাষ্য অনুযায়ী, তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালের মে মাসে। ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘অগত্যা’ পত্রিকায়। সেখানে ‘উদয়াস্ত’ নামে তার একটি গল্প ছাপা হয়।

তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুলে। সেখানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুলে। এরপর ১৯৫০ সালে গণিতে লেটার মার্কস নিয়ে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

সৈয়দ শামসুল হকের পিতা চেয়েছিলেন ছেলে ডাক্তার হোক। কিন্তু, লেখক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর সৈয়দ হক মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার বদলে ১৯৫১ সালে বম্বেতে (বর্তমান মুম্বাই) পালিয়ে যান। সেখানে তিনি বছরখানেকের বেশি একটি সিনেমা প্রডাকশন হাউসে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এরপর ১৯৫২ সালে তিনি দেশে ফিরে এসে জগন্নাথ কলেজে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী মানবিক শাখায় ভর্তি হন। কলেজ পাসের পর ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। পরবর্তীতে স্নাতক পাসের আগেই ১৯৫৬ সালে সেখান থেকে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে বেরিয়ে আসেন। এর কিছুদিন পর তার প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’ প্রকাশিত হয়।

তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৬) ছাড়াও একুশে পদক (১৯৮৪), আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৯), অলক্ত স্বর্ণপদক (১৯৮২), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), ২০০৭ সালের জেমকন সাহিত্য পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।

/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নেতৃত্বে দুই শাহীন!
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নেতৃত্বে দুই শাহীন!
শনিবার সারা দেশে গণজমায়েতের ডাক হাসনাতের
শনিবার সারা দেশে গণজমায়েতের ডাক হাসনাতের
আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, ৭ কিলোমিটার যানজট
আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, ৭ কিলোমিটার যানজট
নন-ক্যাডারদের ‘অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা’ ইস্যুতে উত্তপ্ত হচ্ছে সচিবালয়
নন-ক্যাডারদের ‘অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা’ ইস্যুতে উত্তপ্ত হচ্ছে সচিবালয়
সর্বাধিক পঠিত
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
সাবেক শিবির নেতাদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ
সাবেক শিবির নেতাদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ
যেভাবে বানাবেন কাঁচা আমের টক-মিষ্টি-ঝাল আমসত্ত্ব 
যেভাবে বানাবেন কাঁচা আমের টক-মিষ্টি-ঝাল আমসত্ত্ব 
তিন শিক্ষক আর পাঁচ শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে সরকারি বিদ্যালয়
তিন শিক্ষক আর পাঁচ শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে সরকারি বিদ্যালয়
কলকাতায় যুদ্ধের প্রস্তুতি মমতা সরকারের
কলকাতায় যুদ্ধের প্রস্তুতি মমতা সরকারের