X
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
৩০ বৈশাখ ১৪৩২

দেশে সাড়ে ১০ কোটি মানুষ এখনও দরিদ্র!

গোলাম মওলা
১৯ নভেম্বর ২০১৬, ০৭:৪৮আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০১৬, ০৭:৫৯

বাংলাদেশের কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১০ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ এখনও দরিদ্র। যা মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ। এছাড়া মোট জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ বা ৫ কোটি এক লাখ মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণির। আর ৪৪ লাখ বা মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ ধনী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের ‘বাংলাদেশে কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ শীর্ষক এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার এই গবেষণাটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। গবেষণায় বলা হয়েছে, গত ৩০ বছরে (১৯৮৪-২০১৪) দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৪ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আবুল বারকাত ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দরিদ্র মানুষ বাড়ার এই প্রবণতা জাতীয় উন্নয়নের ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন এবং গরিব ও মধ্যবিত্তের স্বার্থবিরোধী রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নির্ভর উন্নয়ন ধারা গত ৩০ বছরে বাংলাদেশে ৪ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৮৪ সালে দেশে ৬ কোটি মানুষ দরিদ্র ছিল। এখন সেটি ১০ কোটি ৫৫ লাখে এসে পৌঁছেছে।’

ড. বারকাত তার গবেষণায় উল্লেখ করেছেন, ‘দেশের মোট দরিদ্র মানুষের ৮২ শতাংশ বসবাস করে গ্রামে এবং ১৮ শতাংশ বাস করে শহরে।’  গ্রামে বসবাসকারী ৬০ শতাংশ মানুষ খানা ভূমিহীন (যার নিজস্ব জমির পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫০ ডেসিমেল, সেটিকে ভূমিহীন খানা হিসেবে বিবেচনা করা হয়)। এছাড়া ৫০ শতাংশ খানাতে এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। শতকরা ৬৫ জন মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত।’

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ‘১৯৬০ সালে এদেশে ভূমিহীন খানার সংখ্যা ছিল মোট খানার ১৯ শতাংশ। ২০০৮ সালে এটি হয়েছে ৫৯ শতাংশ। অন্যদিকে ১৯৬০ সালে দেশে ১ শতাংশ ধনী ভূস্বামীর মালিকানায় ছিল মোট কৃষি জমির ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু ২০০৮ সালে সেটি হয়েছে ১২ শতাংশ।’

ড. বারকাতের গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘দেশে বর্তমানে কার্যত ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা দেশের মোট পরিবারের প্রায় ৬০ শতাংশ। অথচ তাদের হাতে আছে মোট জমির মাত্র ৪ দশমিক ২ শতাংশ। দেশের মোট পরিবারের মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ২ শতাংশ পরিবার ধনী। অথচ এই ৬ শতাংশ ধনীর পরিবারের মালিকানায় রয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ জমি।’

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘২০১৪ সালে ধনী (উচ্চ শ্রেণি) জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ লাখ। ১৯৮৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ধনিক শ্রেণির বৃদ্ধি হয়েছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে ২০ শতাংশ ধনী যারা মোট জন সংখ্যার ২ দশমিক ৭ শতাংশ নিজেদের সুপার ধনী হিসাবে পরিচিত করেছে। যারা নিয়ন্ত্রণ করে মোট ধনীদের সম্পদের ৮০ শতাংশ সম্পদ।’

অবশ্য পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রতিবেদনে (২০১৪ সাল পর্যন্ত) দারিদ্র্যের হারের সর্বশেষ চিত্রে বলা হয়েছে, ‘দেশে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৫৭ লাখ, যা মোট জনগোষ্ঠীর ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ।’

উল্লেখ্য, খানা আয় ও ব্যয় জরিপ করে দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি তুলে ধরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বিবিএসের ২০১০ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দারিদ্র্য পরিস্থিতির হালনাগাদ এ তথ্য তৈরি করেছে জিইডি।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০০২ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৩৮ দশমিক ৪ শতাংশে নেমেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯ থেকে ২০১৩ মেয়াদকালে দারিদ্র্যের হার ৩৩ দশমিক ৪ থেকে ২৬ দশমিক ২ শতাংশে নেমেছে। এ সময়ে দারিদ্র্য কমেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আর ২০১৪ সালে দারিদ্র্য কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৪৭ শতাংশে।

তবে বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এক-চতুর্থাংশ অর্থাৎ ৪ কোটি মানুষ দরিদ্র। এর মধ্যে ২ কোটি হতদরিদ্র। ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে দেশে ২ কোটি ৮০ লাখ অর্থাৎ ১৮ শতাংশ হতদরিদ্র মানুষ ছিল, সেখানে সাত বছরের ব্যবধানে প্রায় ৮০ লাখ হতদরিদ্র অতি দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে এসেছে। গত অর্থবছরে অতিদারিদ্রের হার দেশের মোট জনসংখ্যার ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে, দেশে এখন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি। এর মধ্যে ২ কোটি হতদরিদ্র। যা অনেক বড় সংখ্যা। এছাড়া যে ৪ কোটি দরিদ্র মানুষের কথা বলা হচ্ছে তাদের অবস্থাও ভালো না।’

আবুল বারাকাতের ‘বাংলাদেশে কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ শীর্ষক এই গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘গত ৩০ বছরে (১৯৮৪-২০১৪) দেশে মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৬০ শতাংশ। কিন্তু ৩০ বছরে বিত্তহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৬ শতাংশ। আর মধ্যবিত্ত শ্রেণির ধারক বর্তমানে ৫ কোটি ৭১ লাখ মানুষ। যার মধ্যে ২ কোটি ৭১ লাখ মানুষ  নিম্ন মধ্যবিত্ত, এক কোটি ৫৬ লাখ মানুষ মধ্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণির এবং বাকি ৭৫ লাখ উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণির।

/জিএম/এসএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিমানবন্দরে তিন উপদেষ্টা, জেরার মুখে দায়িত্বরতরা
সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগবিমানবন্দরে তিন উপদেষ্টা, জেরার মুখে দায়িত্বরতরা
৮ বছর পর আসছে নেমেসিসের নতুন অ্যালবাম
৮ বছর পর আসছে নেমেসিসের নতুন অ্যালবাম
ঢাকা মেডিক্যালে কারাবন্দির মৃত্যু
ঢাকা মেডিক্যালে কারাবন্দির মৃত্যু
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি আকিজসহ ১৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি আকিজসহ ১৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
সর্বাধিক পঠিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
স্বর্ণের দাম আবার কমলো
স্বর্ণের দাম আবার কমলো
হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল ইতিহাসে এটাই প্রথম: প্রধান বিচারপতি
হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল ইতিহাসে এটাই প্রথম: প্রধান বিচারপতি
পাকিস্তানে ভারত হামলা করলে সহায়তা করবে বালুচ লিবারেশন আর্মি
পাকিস্তানে ভারত হামলা করলে সহায়তা করবে বালুচ লিবারেশন আর্মি