X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভিক্ষুকমুক্ত এলাকায় ভিক্ষুক!

আমানুর রহমান রনি
১৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:০৬আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:৫১

বিজয় সরণীর সিগন্যালে ভিক্ষা করছেন একজন নারী

প্রায় সাত বছর আগে ঢাকা মহানগরীকে ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিলো সমাজসেবা অধিদফতর। কিন্তু সেই উদ্যোগের সুফল পাওয়া যায়নি। রাজধানীর কয়েকটি এলাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হলেও এখন সেখানেই চলছে ভিক্ষাবৃত্তি।

২০১০ সালের আগস্টে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদফতর ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন ও রাজধানীকে ভিক্ষুকমুক্ত করার লক্ষ্যে ‘ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠির পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান’ নামে একটি একটি কর্মসূচি গ্রহণ করে। ভিক্ষুকদের আবাসন, ভরণ-পোষণ ও বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নেওয়া হয় এই উদ্যোগ।

তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই কর্মসূচি বর্তমানে কোনও রকমে চলছে। গত প্রায় সাত বছরে ভিক্ষুকদের ধরতে মাত্র ১১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা, হোটেল সোনারগাঁও, হোটেল রূপসী বাংলা, হোটেল রেডিসন, বেইলি রোড, কূটনৈতিক অঞ্চল ও দূতাবাস এলাকা থেকে ভিক্ষুকদের আটক করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়। ওই এলাকাগুলোকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করে সাইনবোর্ডও লাগানো হয়। তবে বর্তমানে সেই সব এলাকায় প্রকাশ্যেই চলছে ভিক্ষাবৃত্তি।

সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা মহানগরকে ১০টি অঞ্চলে ভাগ করে আলাদা দশটি এনজিওকে দিয়ে মাত্র একদিনে ১০ হাজার ভিক্ষুকের ওপর জরিপ করে একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হয়। এদের মধ্যে দুই হাজার ভিক্ষুককে নিজ জেলায় পুনর্বাসনের জন্য নির্বাচিত করা হয়। এরপর ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলার ৬৬ জন ভিক্ষুককে রিকশা, ভ্যান ও ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার জন্য পুঁজি দেওয়া হয়। তবে ময়মনসিংহের সাহায্যপ্রাপ্ত ভিক্ষুকরা রিকশা, ভ্যান বিক্রি করে আবার ঢাকায় চলে এসেছে। জামালপুরের ভিক্ষুকরা অবশ্য স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে।

বিজয় সরণীর সিগন্যালে ভিক্ষুক

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১০-১১ অর্থবছরে সরকার ৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। জরিপ ও অন্যান্য খাতে ১৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয় করা হলেও কাউকে পুনর্বাসন করা হয়নি। পরের অর্থবছরে ৬ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেলেও খরচ হয় ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ওই অর্থবছরে ময়মনসিংহের ৩৭ জন ও জামালপুরের ২৯ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসিত করা হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেও ব্যয় হয়েছিলো মাত্র ৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা। সে বছরও কোনও ভিক্ষুককে পুনর্বাসিত করা হয়নি।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে এক কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও এই কর্মসূচিতে কোনও অর্থ ব্যয় হয়নি। পরের অর্থবছরে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও কোনও ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা যায়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী, ওই অর্থবছরে ৭ লাখ ৯ হাজার টাকা ব্যয় করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ফুটপাথে বসবাস করা ছিন্নমূল মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে অবশ্য ভিক্ষুক পুনর্বাসনে বেশ সফল সমাজসেবা অধিদপ্তর। ওই অর্থবছরে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দের ৪৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকাই খরচ হয়েছিলো। গোপালগঞ্জে ৯২, সুনামগঞ্জে ৫০, নড়াইলে ৯৪ ও জামালপুরে ১৫ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করাও হয়েছিলো। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আবার ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেলেও এ যাবত ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

হোটেল শেরাটনের পাশের ফুটপাতে একজন নারী ভিক্ষুক

প্রকল্পের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ২২ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেলেও ব্যয় হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৪০ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে ৬৬ জন ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৫১ জনকে পুনর্বাসন করা হয়। তবে তাদের মধ্যে ৩৭ জন ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরে আসায় কাগজে-কলমে পুনর্বাসিত হয়েছে মাত্র ২৮০ জন।

প্রকল্পটির পরিচালক ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সৈয়দা ফেরদাউস আক্তার অবশ্য নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের আসন মাত্র ১৯০০। কিন্তু বাংলাদেশে কি মাত্র ১৯০০ ভিক্ষুক? এতো ভিক্ষুক পুনর্বাসন করা সরকারের পক্ষে সম্ভব না, বেসরকারি উদ্যোগও প্রয়োজন।’

বরাদ্দকৃত টাকা খরচের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সচেতনতার জন্য প্রচারণা, মোবাইল কোর্ট ও পুনর্বাসনের জন্য খরচ হয়েছে। তবে পুনর্বাসনের পরও অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরে আসে। তাই এখানে অযথা টাকা খরচ করে লাভ নেই।’

অভিযোগ আছে, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ভিক্ষুকদের জোর করে আশ্রয়কেন্দ্রে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। জাতীয় অন্ধ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. আয়ুব আলী হাওলাদার এর বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের অনেকেই অসচ্ছল। তারা অন্য কোনও কাজ করতে পারেন না বলেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষা করেন। আমরা চাই তাদের সঠিকভাবে পুনর্বাসিত করে ভিক্ষুকমুক্ত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হোক।’

আরও পড়ুন:

 

নব্য জেএমবির নতুন কৌশল: কালোজিরা ও মধু বিক্রি

শীত আর অপুষ্টিতে বাড়ছে শিশুরোগের প্রকোপ

 নূর হোসেনের বিত্ত-বৈভব

/এএআর/আপ-এসটি

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ