X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বজনহারাদের বেদনার প্রার্থনা

এস এম নূরুজ্জামান, সাভার থেকে
২৪ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:৫২আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:৫২

বেদিতে দুধ ঢেলে দিচ্ছেন এক স্বজন সোমবার (২৪ এপ্রিল) সকাল থেকে মেঘাচ্ছন্ন ভোরের আকাশ। মেঘের ভিড়ে ভোরের আলো তখনও ফোটেনি ঠিকভাবে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেবল পুলিশ ও পুলিশের জলকামান। রানা প্লাজার শহীদ বেদি তখনও শুন্য। এরই মধ্যে ধীরপায়ে এগিয়ে এলেন কয়েকজন নারী। হাতে ফুল ও আগরবাতি। তাদেরই একজন পরম যত্নে বেদিতে সেই ফুল রাখলেন। বেদির পাশে একজন জ্বালিয়ে দিলেন আগরবাতি। আরেক বয়স্ক নারী বোতলে করে আনা দুধ পরম মমতায় ঢেলে দিলেন শহীদ বেদিতে। এরপর সবাই মিলে প্রার্থনা করে চলে গেলেন।

ফিরে যাওয়ার পথে কথা হলো তাদের একজনের সঙ্গে। তার নাম আয়েশা। রানা প্লাজা ধসে তিনি হারিয়েছেন একমাত্র ভাইকে। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বললেন, ‘রানা প্লাজা আমার ভাইকে কেড়ে নিয়েছে। সেই থেকে মা কথা বলেন না ঠিকভাবে। শুধু কাঁদেন।’ কথাগুলো বলে সাভারের কোর্টবাড়ি থেকে ফজরের নামাজ পড়েই চলে আসা আয়েশা আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে চলে যান বাড়ির পথে।

রানা প্লাজা ধসের চার বছর পূর্ণ হওয়ার দিনে আয়েশার মতো আরও অনেকেই এসেছেন এখানে নির্মিত বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতে। তাদের মধ্যে অনেকে যেমন হারিয়েছেন স্বজনদের, তেমনি অনেকেই এখনও খুঁজে ফিরছেন ভাইবোন কিংবা সন্তানদের। রানা প্লাজা ধসে অনেক শ্রমিকই যে এখন নিখোঁজ!

বেদিতে ফুল দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এক স্বজন সাভারের ওমরপুর থেকে রানা প্লাজায় এসেছেন কাসেম আলী-সালমা বেগম দম্পতি। ভবনটির পরিত্যক্ত জমির সামনে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছিলেন তারা। কাসেম আলী বললেন, ‘রানা প্লাজা আমার দুই ছেলে ও এক ছেলের বউকে কাইড়া নিছে। এক ছেলে উজ্জ্বল ও ছেলের স্ত্রী খাদিজার লাশ মিললেও আরেক ছেলে আফজালের লাশ এখনও খুঁজে পাইনি। ওরে খুঁজতেই আসছি। জানি ওরে হয়তো পাবো না। কিন্তু মন তো মানে না। তাই এইখানে ফিরে ফিরে আসি।’

রানা প্লাজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভবনগুলোর দিকে তাকিয়ে বিলাপ করতে করতে সালমা বেগম বলছিলেন, ‘ওই বিল্ডিংগুলা তো ভাঙে নাই। এই বিল্ডিংই কেন ভাঙলো?’ এ সময় কাশেম আলী বাড়ি ফেরার জন্য তাড়া দিলে সালমা বেগম বলেন, ‘আমি ছেলেকে না নিয়ে কোথাও যাবো না।’

রানা প্লাজা ধসের চার বছর পূরণ হওয়ার দিনটিতে এখানে আরও অনেকেই হাজির হয়েছেন নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে। দিনভর রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে হারিয়ে যাওয়া মানুষদের খুঁজে ফিরেছেন তাদের স্বজনরা। কারও কারও হাতে চার বছরেও খুঁজে না পাওয়া সন্তান, ভাই বা বোনের ছবি। তারা জানেন, হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের হয়তো আর সন্ধান পাওয়া যাবে না। তবু মনকে সান্ত্বনা দিতে পারেন না তারা। বছরের এই দিনটিতে ছুটে আসেন রানা প্লাজার সামনে।

জামালপুর জেলার হাজিপুর গ্রাম থেকে এসেছিলেন খোরশেদা বেগম। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি ছেলের লাশ পাইছি। টাকাও পাইছি। কিন্তু মন মানে না। শেষে আজ ছেলের মরণের জায়গাটা দেখতে আইছি।’

/টিআর/জেএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে