সাম্প্রতিক বন্যায় হাওর অঞ্চলের সাতটি জেলায় গড়ে ৭৫ ভাগ বোরো ফসল তলিয়ে গেছে পানিতে। এর সঙ্গে ধান, মাছ, সবজি, হাঁস মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় সর্বস্বান্ত হাওরবাসীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শনিবার (২৯ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা।
সংগঠনটির প্রতিনিধিদের সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় হাওর অঞ্চলের সাতটি জেলায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে মোট ১১ লাখ ৩৪ হাজার ৬০০ পরিবার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ জেলা। এই জেলায় প্রায় ৯৮ ভাগ ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এ বছর মোট ২২ লাখ টন ধান হারিয়েছেন হাওরের কৃষকরা। মাছ মারা গেছে ২ হাজার টন। সবজি নষ্ট হয়েছে প্রায় ১ হাজার টন। এছাড়া প্রায় ৩০ হাজার হাঁস মরেছে। সব মিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে মোট ১৩ হাজার কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘২০০১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই শতকের প্রথম ১৭ বছরেই হাওরে ফসলহানি হয়েছে আটবার। তবে এবার অনেক আগেভাগে বন্যা হওয়ায় এমন ভয়াবহ সংকট আগে দেখা যায়নি উল্লেখ করা হচ্ছে। গত বছরও ৬০ ভাগ হাওরের ফসল তলিয়ে গিয়েছিল। তাই এবার কৃষকদের ঋণ করে চাষ করতে হয়েছে। তাদের কেউ কেউ আগের বছরও ঋণ করেছিলেন। সেই ঋণও এখনও পরিশোধ করতে পারেননি তারা।’
হাওরের এ পরিস্থিতি থেকে উতরে আসতে হলে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু সুপারিশ হাজির করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এর মধ্যে আছে হাওর অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারের মাঝে সরকার ঘোষিত ৩০ কেজি করে চাল ও ৫০০ টাকা করে ত্রাণ বিতরণ; ভিজিডি, ভিজিএফসহ সব সরকারি সুবিধাবৃদ্ধি; সব সরকারি সহায়তা যেন প্রকৃত ভুক্তভোগীরা পান তা নিশ্চিত করা, কৃষিঋণ এবং এনজিওদের ঋণ আদায় বন্ধ রাখা এবং কৃষকদের নতুনভাবে সুদমুক্ত ঋণ প্রদান।
এবারের বন্যায় ফসল হারানোতে শুধু কৃষকদের খাবারের খোরাকই যায়নি, এ কারণে আগামী বছর দেখা দিতে পারে ধান বীজের সংকট। এতে করে আগামী বছর ধান চাষে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
এদিকে পানি দূষিত হওয়ায় মারা গেছে অনেক হাঁস। তাই হাঁসের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উল্লেখ করে সংগঠনটির সভাপতি কাসমির রেজা যেসব দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার সুপারিশ করেন সেগুলো হলো— নদী খনন, স্লুইচ গেট নির্মাণ ও কালভার্ট নির্মাণ, খুলফা বন্ধ করা, বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম বন্ধ করা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এএলআরডি’র প্রধান নির্বাহী শামসুল হুদা, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পীযূষ পুরকায়স্থ টিটু।
/ইউআই/জেএইচ/