বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার গাড়ি অক্ষত আছে, তাহলে হামলাটা হলো কোথায়- বলে প্রশ্ন তুলেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘সংবাদপত্রে দেখলাম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা। কিন্তু তিনি ও তার গাড়ি অক্ষত আছে। তাহলে হামলাটা হলো কোথায়? কিভাবে হলো?’
রবিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়া বিমানে না গিয়ে সড়ক পথে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ দিতে গেলেন। আর নিজেরা নিজেরা মারামারি করে সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। এটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে, তা দেশবাসী জানেন। যখন দেখছেন জনতার ঢল নামছে না তখন তারা ফেনীতে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। নিজেরা নিজেদের সঙ্গে মারামারি করেছে। এই হামলা ঘটিয়ে একটি বড় সংবাদ কাভারেজ পাওয়াই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ। এতো হামলা হলো কিন্তু তাদের কোনও নেতাই তো আহত হলেন না। আর সাংবাদিকদের গাড়িতে হামলা করার উদ্দেশই ছিল কাভারেজ পাওয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যদি উখিয়া যেতেন তাহলে তিনি বিমানে যেতে পারতেন। তিনি সড়ক পথে কেন গেলেন? এর আগে দলের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরও গেছেন। কিন্তু তখন তো কোনও সমস্যা হয়নি? লন্ডন থেকে ফেরার পর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়া চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখেই দেশে চলে এসেছেন। সেই অসুস্থ নেত্রী এই দীর্ঘ পথ সড়কে কেন পাড়ি দিতে গেলেন? এর মাধ্যমে পরিষ্কার বোঝা যায় উনার উখিয়া যাওয়ার উপলক্ষ্য মানবিক কিন্তু উদ্দেশটা রাজনৈতিক। গত সাড়ে আট বছরে সাড়ে আট মিনিটিও আন্দোলন করতে পারেনি বিএনপি। কিন্তু তিনি মনে করেছিলেন সড়ক পথে গেলে তাকে দেখতে লাখ লাখ মানুষের ঢল নামবে। ১৫০টি গাড়ির বহর নিয়ে তিনি গেলেন কিন্তু সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষও জড়ো হয়নি।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার যাত্রাপথে বাধা দিলে ক্ষতি আমাদের আর লাভ হবে বিএনপির। আমরা কেন নিজেদের দলের সেই ক্ষতি করতে যাবো। আমরা শান্তিতে দেশ চালাচ্ছি, কেন আমরা অশান্তি ডেকে আনবো?’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া সড়ক পথে চট্টগ্রামে যাবেন এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি গেছেন সড়ক পথে, আসবেনও নাকি সড়ক পথে। এই তিনদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট থাকবে। এটা তিনি বিবেচনা করেননি।’
তিনি বলেন, ‘ ফেনী পর্যন্ত পাঁচ হাজার লোকও জড়ো হয়নি। ফেনী পর্যন্ত কোনও সমস্যা হয়নি। ফেনীতে প্রবেশের আগে হঠাৎ করে একদল মোটরসাইকেল আরোহী ইট-পাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর করেছে। মিডিয়ার গাড়িতে আক্রমণ করেছে। আমার প্রশ্ন আওয়ামী লীগের কর্মীরা কেন গণমাধ্যমের গাড়িতে হামলা করবে?’
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘কিছুদিন আগে দেখলাম নিজেদের দলের আইনজীবীরা হাতাহাতি করছেন। তারা একে অপরকে সরকারের দালাল বলে গালিগালাজ করেন। এটি নতুন কোনও ঘটনা নয়। সদস্য সংগ্রহের জন্য ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরিশালে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রকাশ্যে নয় একটি ঘরের মধ্যে অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলেন। সেখানেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল, মারামারি, হামলা হয়েছে। পরে ছয় ঘণ্টা সফর কমিয়ে তিনি ঢাকায় ফেরেন। সারা বাংলাদেশে নিজেদের কোন্দল ও মারামারি ছাড়া কবে কোন অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে তারা করতে পেরেছেন?’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন প্রশ্ন তিনি কত ত্রাণ দেবেন? উনার কারণে তিনদিন সাধারণ মানুষের ত্রাণবাহী গাড়ি উখিয়া যেতে পারছে না। সরবরাহ পথ বন্ধ করে তিনি উখিয়া যাচ্ছেন। তার মতো দায়িত্বশীল নেতার কাছে এ আচরণ শোভন নয়। তিনদিন সড়ক বন্ধ করে দিলেন তিনি।’
এদিকে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ হামলায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি খবর নিয়েছি পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদল ও যুবদল এ হামলা করেছে। পরে তারা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ওপর দায় চাপাচ্ছে।’
আরও পড়ুন:
প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলা: ১১ জনকে ২০ বছরের কারাদণ্ড, একজন খালাস