X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাতি হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশের দিন আজ

পাভেল হায়দার চৌধুরী
১৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ০০:০১আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ০০:০১

মহান বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর, আজ  জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হবার, জয় বাংলা বলে আরেকবার বলিয়ান হওয়ার দিন। সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে যারা পরাধীনতার গ্লানি মোচন করতে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন- সেইসব বীর সন্তান, লাখো শহীদদের স্মরণ করবার দিন, পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের দিন। বাঙালি বীরের জাতি হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করার দিন।

আজ  ১৬ ডিসেম্বর (শনিবার),মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে মুক্তিকামী লড়াকু বাঙালির কাছে পরাজয় মেনে নিয়ে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বরকে বাঙালিরা বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘যার যা কিছু আছে’ তা নিয়েই প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেদিন বজ্র কণ্ঠে তিনি বলেন ‘এবারের সংগ্রাম- আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম- স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ পরে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন তিনি। তার আগেই  বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয় দিবস শুরু হবে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিনের প্রথম প্রহরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে  পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢল নামবে জনতার। বিনম্র শ্রদ্ধায় জাতি লাখো শহীদের প্রতি নিবেদন করবে অর্ঘ্য। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের ভাষণ আর মুক্তিযুদ্ধের জাগরণী গানে আকাশ-বাতাস হবে মুখরিত। এবারের বিজয় দিবসে স্বস্তিও রয়েছে। কারণ, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের ঘাতক এবং একাত্তরের মানবতাবিরোধী শীর্ষ অপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। এই বিচার কাজ অব্যাহত আছে।

বিজয় দিবস সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সরকারি ভবন জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো হবে। আজ  রাত থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সংবাদপত্র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। পাশের দেশ ভারত ও ভুটান, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করে। অবশেষে বাঙালি দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়ে ছিনিয়ে আনে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার লাল সুর্য।

বিজয়ের এই ৪৬ বছরে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে জাতি। কখনও সামনে এগিয়েছে, আবার পিছিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক টানাপড়েনে। বিলম্বে হলেও শুরু হয়েছে ইতিহাসের দায়-মোচনের প্রচেষ্টা। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। চলছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এছাড়া, বাঙালি অর্থনৈতিক-সামাজিক বিভিন্ন সেক্টরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উড়াচ্ছে বিজয় পতাকা। চলছে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার কর্ম প্রচেষ্টা। পাশাপাশি চলছে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে রূপান্তর করার নিরন্তর সংগ্রাম।

বিজয় দিবসের কর্মসূচি

প্রথম প্রহরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে একাত্তরের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকরা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর আমন্ত্রিত সদস্যরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সকাল ১০টায় তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে  সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম ভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন  সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে।

বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সব শিশু পার্ক ও জাদুঘর বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে।

বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে কর্মসূচি পালন করা হবে।

এছাড়া, বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরামসহ  বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে।

এদিকে, বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি রয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ছয়টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল  দশটায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। বিকাল তিনটায় বিজয় শোভাযাত্রা সহকারে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হওয়া এবং শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদন। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে বিজয় র‌্যালি শুরু হবে।

 

 

 

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কেএনএফ দমন অভিযান: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি
কেএনএফ দমন অভিযান: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি
জিএসটির ‘এ’ ইউনিটের ফল প্রকাশ, পাসের হার ৩৩.৯৮ শতাংশ
জিএসটির ‘এ’ ইউনিটের ফল প্রকাশ, পাসের হার ৩৩.৯৮ শতাংশ
নির্দেশনা না মেনে বিদ্যালয় খোলা রাখলে ব্যবস্থা: শিক্ষামন্ত্রী
নির্দেশনা না মেনে বিদ্যালয় খোলা রাখলে ব্যবস্থা: শিক্ষামন্ত্রী
২০০ টাকায় দেখা যাবে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজ
২০০ টাকায় দেখা যাবে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজ
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
আওয়ামী লীগ নেতাকে হারিয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা রউফ জয়ী
আওয়ামী লীগ নেতাকে হারিয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা রউফ জয়ী
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম