ভারতের কূটনৈতিক আউটরিচের অংশ হিসেবে আয়োজিত ‘রাইসিনা ডায়ালগে’ অংশ নিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এসে পৌঁছেছেন। চার দিনের এই সফরে তিনি বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও।
২০১৬ সালে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সে দেশের নামি স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্ক ট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছিল রাইসিনা ডায়ালগের প্রথম পর্ব। সংলাপের সেই আসরেও বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর গত বছরের (২০১৭) সংলাপে আমন্ত্রিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। রাইসিনা ডায়ালগের তৃতীয় আসরে সামিল হতে এ বছর আবারও দিল্লিতে এলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।
তিন দিনের এই সংলাপ-পর্বের ফাঁকেই তিনি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সারবেন তার ভারতীয় কাউন্টারপার্ট সুষমা স্বরাজের সঙ্গে। ভারতের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, বুধবার ভারতীয় সময় বেলা সোয়া বারোটা নাগাদ ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন কার্যালয় জহরলাল নেহরু ভবনে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে ওই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে সুষমা স্বরাজ ঢাকায় গিয়েছিলেন, তার পর তিন মাসও কাটেনি। এর মধ্যেই ফের আগামীকাল দিল্লিতে এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে তার (সুষমা স্বরাজ) মুখোমুখি বৈঠকের সুযোগ হচ্ছে– নতুন বছরে এই প্রথমবার।
গত এপ্রিলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে ২০১৮ সালের মধ্যেই বহু প্রতীক্ষিত তিস্তা ক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা। ফলে নতুন বছরে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে প্রথম বৈঠকে সেই বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আলোচনা হবে রোহিঙ্গা সংকট এবং দ্বিপাক্ষিক আরও নানা জরুরি বিষয়েও।
রাইসিনা ডায়ালগেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী থাকছেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি আলোচনার প্যানেলে। আর সেই আলোচনা দুটি অনুষ্ঠিত হবে সম্মেলনের তৃতীয় তথা শেষ দিনে, ১৮ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার)।
এর মধ্যে প্রথমটির শিরোনাম হলো– ‘একটি বঙ্গোপসাগরীয় সমাজ গড়ার লক্ষ্যে– উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি ও নিরাপত্তা।’ বঙ্গোপসাগরীয় উপকূলবর্তী দেশগুলোকে নিয়ে যে বিমস্টেক জোট গড়া হয়েছিল, তার বয়স কুড়ি বছর পেরিয়ে এলেও তাতে কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা ও সমঝোতা এখনও অর্জিত হয়নি।
সেই লক্ষ্যে কিভাবে পৌঁছনো যায়, তা নিয়েই ওই প্যানেল আলোচনা করবে, যাতে মাহমুদ আলী ছাড়াও থাকবেন শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বসন্ত সেনানায়েকে, নেপালের পররাষ্ট্রসচিব শঙ্করদাস বৈরাগী, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) প্রীতি শরণ। আলোচনাটি সঞ্চালনা করবেন ভারতের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ বৈজয়ন্ত পান্ডা, যিনি আবার বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী রাজ্য উড়িষ্যা থেকে নির্বাচিত একজন এমপি।
একই দিনে নৈশভোজের সেশনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও একটি প্যানেলে নেতৃত্ব দেবেন। এতে আলোচনা হবে একুশ শতকে ‘কমনওয়েলথ’কে নতুন করে কিভাবে আবিষ্কার করা যায়, তা নিয়ে। ভারত, বাংলাদেশ, মরিশাস, মালাউইসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা তাতে থাকবেন।
‘রাইসিনা ডায়ালগ’ উদ্যোগের প্রথম পর্ব থেকেই ভারত নিবিড়ভাবে বাংলাদেশকে এই উদ্যোগে সামিল করতে চেয়েছে। সম্মেলনের তৃতীয় পর্বে এসে সেই অংশীদারিত্ব যে আরও দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।