X
রবিবার, ২২ জুন ২০২৫
৮ আষাঢ় ১৪৩২

আলোচনায় ‘ডিজিটাল গুপ্তচর’

উদিসা ইসলাম
৩১ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:১৭আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৮:৪৮

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সাংবাদিকই ব্যবহার করছেন ‘#আমি গুপ্তচর’ হ্যাশট্যাগটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর কয়েকটি ধারা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়ার ঝড় উঠেছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে প্রস্তাবিত আইনটির ৩২ নম্বর ধারা। এই ধারাটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন সাংবাদিকরা। এই ধারায় উল্লেখ করা ‘ডিজিটাল গুপ্তচর’ শব্দযুগলও এর মধ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করেছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হ্যাশট্যাগ লিখতে শুরু করেছেন, ‘আমি গুপ্তচর’।
কী আছে ৩২ ধারায়?
প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ৩২ ধারায় বলা আছে, যদি কোনও ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে কোনও সরকারি, আধা-সরকারি স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ কোনও সংস্থার কোনও ধরনের অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা করতে সহায়তা করেন; তাহলে ওই ব্যক্তির এই কাজ কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে মানিক মুনতাসিরের স্ট্যাটাস ৩২ ধারায় সংঘটিত এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। কেউ যদি এই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করেন, তাহলে তার সেই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা বলছেন সাংবাদিকরা
মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রকাশের পর বিশেষ করে এই আইনের ৩২ নম্বর ধারা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এই আইন পাস হলে সাংবাদিকরা কতটা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চালিয়ে যেতে পারবেন— তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাদের অভিযোগ, কোনও সাংবাদিক যদি ঘুষ লেনদেনের মতো কোনও অন্যায়-অবিচার গোপনে ধারণ করেন, এই আইনের ফলে তার সেই অনুসন্ধানকেও ‘ডিজিটাল গুপ্তরচরবৃত্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব। ফলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সুযোগ সংকুচিত হয়ে যেতে পারে।
কাবেরী মৈত্রেয়ি তার ফেসবুকে ‘#আমিগুপ্তচর’ হ্যাশট্যাগ লিখে ছবি তুলে পোস্ট করেছেন
একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক কাবেরী মৈত্রেয় তার ফেসবুকে ‘#আমিগুপ্তচর’ হ্যাশট্যাগ লিখে ছবি তুলে পোস্ট করেছেন। তিনি বলছেন, মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ নম্বর ধারার এই অপরাধ আমি আমার সাংবাদিকতা জীবনে বহুবার করেছি। যেহেতু আমি আমার অনেক সহকর্মীর মতো এই পেশা এখনও ছেড়ে যাইনি, বিদেশে পাড়ি দেইনি এবং যেহেতু আগামী দিনগুলোতেও সাংবাদিকতা করেই যেতে চাই; সেহেতু আমি নিজেকে আইনের ভাষায় ‘গুপ্তচর’ হিসেবে ঘোষণা করলাম। আজ থেকে শুরু হোক #আমিগুপ্তচর স্লোগানের আন্দোলন। আসুন, স্বঘোষিত এই ‘গুপ্তচর’কে গ্রেফতার করুন এবং সাংবাদিকতার গলা টিপে হত্যা করার মিশনে সফল হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান।
সিনিয়র সাংবাদিক গাজী নাসির উদ্দিন আহমেদের ফেসবুক পোস্ট
সিনিয়র সাংবাদিক ও বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক গাজী নাসির উদ্দিন আহমেদ তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সাংবাদিক সহকর্মীদের প্রতি বলছি, ভাত-কাপড়ের আন্দোলনের চেয়ে নিজেদের পেশাকে টিকিয়ে রাখার জন্য কথা বলা বেশি জরুরি। সাংবাদিকরা অরগানিক ইন্টেলেকচুয়াল। ডিজিটাল আইনের টুঁটি চেপে ধরা ধারা পাস হলে সাংবাদিকতা পেশাই শুধু আক্রান্ত হবে না, দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অবাধ রাজত্বে দেশ ভেসে যাবে।’
মানিক মুনতাসির লিখেছেন, ‘৫৭ আর ৩২-এর খেলা না খেলে সাংবাদিকতাকে বিলুপ্ত পেশা ঘোষণা করা হোক।’
ঘুষ লেনদেনের অনুমতি চেয়ে কাল্পনিক আবেদনপত্র পোস্ট করেছেন নিয়াজ মোর্শেদ
সাংবাদিক নিয়াজ মোর্শেদ তার ফেসবুকে একটি কাল্পনিক আবেদনপত্র লিখেছেন। যেখানে কীভাবে ঘুষ লেনদেনকালে ভিডিও করার অনুমতি চাওয়া যেতে পারে, তার একটি খসড়া তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। ওই কাল্পনিক আবেদনপত্রে তিনি যে কার্যালয়ের ঘুষ লেনদেনের চিত্র তুলতে চান, সেই কার্যালয়ের দুর্নীতিবাজের কাছে ওই লেনদেনের ঘটনা ধারণের অনুমতি চাইছেন।
যদিও সাংবাদিকদের এসব আশঙ্কাকে ‘অহেতুক’ বলে মনে করছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সাংবাদিকদের বলেন, ‘গুপ্তচরবৃত্তি তো আগেও আইনে অপরাধ ছিল। এ আইনের মধ্যে যেটা করা হয়েছে, সেটা হলো— কম্পিউটার সিস্টেম বা ইনফরমেশন টেকনোলজির সিস্টেমের মাধ্যমে যদি কেউ গুপ্তচরবৃত্তি করে, সেটা অপরাধ হিসেবে ধরা হয়েছে।’
আশরাফুল আলম খোকনের ফেসবুক স্ট্যাটাস
এই বিতর্ক নিয়ে সাংবাদিকরা যখন মুখর, তখন প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা আর গুপ্তচরবৃত্তি কিন্তু এক না। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করে দুর্নীতি-অনিয়ম বের করে নিয়ে আসা আর গুপ্তচরবৃত্তি করে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট গোপনীয় তথ্য বাইরে বিক্রি করা সম্পূর্ণই আলাদা বিষয়। নতুন আইনে শেষের বিষয়টিকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে নয়। আপনিই ভালো বুঝবেন আপনি কোন শ্রেণির মধ্যে পড়েন।’

/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চাপের মুখে তৈরি পোশাক শিল্প: প্রবৃদ্ধির ধারা কতটা টেকসই?
চাপের মুখে তৈরি পোশাক শিল্প: প্রবৃদ্ধির ধারা কতটা টেকসই?
বিপুল পরিমাণ মাদকসহ রোহিঙ্গা তরুণ আটক
বিপুল পরিমাণ মাদকসহ রোহিঙ্গা তরুণ আটক
শেষ গ্রুপ ম্যাচে এমবাপ্পেকে পাওয়ার আশা রিয়ালের
শেষ গ্রুপ ম্যাচে এমবাপ্পেকে পাওয়ার আশা রিয়ালের
পারমাণবিক অগ্রগতি থামাবে না ইরান
পারমাণবিক অগ্রগতি থামাবে না ইরান
সর্বাধিক পঠিত
ট্রাম্পের সমালোচনার পর ইরান নিয়ে সুর পাল্টালেন তুলসি গ্যাবার্ড
ট্রাম্পের সমালোচনার পর ইরান নিয়ে সুর পাল্টালেন তুলসি গ্যাবার্ড
ট্রাম্পের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন মোদি, জানালেন কারণ
ট্রাম্পের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন মোদি, জানালেন কারণ
ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র, মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট মানছেন না ট্রাম্প
ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র, মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট মানছেন না ট্রাম্প
‘জুলাই যোদ্ধাকে’ মারধরের অভিযোগে এসআই বরখাস্ত
‘জুলাই যোদ্ধাকে’ মারধরের অভিযোগে এসআই বরখাস্ত
থানায় থাকা ট্রাঙ্কের তালা খুলে বের করা হয় এইচএসসির প্রশ্নপত্র
থানায় থাকা ট্রাঙ্কের তালা খুলে বের করা হয় এইচএসসির প্রশ্নপত্র