X
বুধবার, ০৭ মে ২০২৫
২৪ বৈশাখ ১৪৩২

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ঢাকার দুই সিটির লাইব্রেরি, বেশিরভাগই বন্ধ

শাহেদ শফিক
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:২১আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৯:২২

ডিসিসির লাইব্রেরি কাগজে-কলমে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের লাইব্রেরির সংখ্যা ১২টি। সংস্থা দুটির ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে সেগুলোর ঠিকানা। কিন্তু সেই অনুযায়ী গিয়ে লাইব্রেরির কোনও অস্তিত্ব মেলে না। দুই-একটির সাইনবোর্ড পাওয়া গেলেও সপ্তাহের অর্ধেকেরও বেশি সময় খোলা হয় না সেগুলো। তার ওপর নেই পর্যাপ্ত বই কিংবা পড়ার পরিবেশ। রাখা হয় না পত্রিকাও। এ কারণে এসব গ্রন্থাগারে বছরজুড়ে পাওয়া যায় না ডজনখানেক পাঠকও! অধিকাংশ লাইব্রেরির ভবনও ঘোষণা করা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ।

সংশ্লিষ্টদের দাবি— জনবল সংকট, জরাজীর্ণ ভবন, মানসম্পন্ন বই না থাকা ও পাঠকের অনীহার কারণেই লাইব্রেরিগুলো জমে উঠছে না। সাধারণ পাঠকদের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী বই না পাওয়া, পড়ার পরিবেশ না থাকা ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণেই কেউ সিটি করপোরেশনের লাইব্রেরিতে যেতে চায় না।

সূত্র জানিয়েছে, একসময় অবিভক্ত সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে লাইব্রেরি ছিল। এখন সেখানে ৯৩টি ওয়ার্ডে কাগজে-কলমে ডিএসসিসিতে ৭টি ও ডিএনসিসিতে ৫টি মিলিয়ে আছে ১২টি লাইব্রেরি। অথচ বাস্তবে দেখা গেলো দুই সিটিতে সব মিলিয়ে মাত্র তিনটি লাইব্রেরির অস্তিত্ব রয়েছে। ২০১১ সালে বিভক্ত হওয়ার সময় ১৫টির মতো লাইব্রেরির অস্তিত্ব ছিল ডিএনসিসি ও ডিএসসিসিতে। বর্তমানে ডিএসসিসির তিনটি লাইব্রেরির কার্যক্রম দেখা গেলেও ডিএনসিসিতে একটি লাইব্রেরিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে ধরা পড়েছে এমন চিত্র। তবুও প্রতি বছর উন্নয়নের নামে অর্থবরাদ্দ দেওয়া হয়। এ বছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) কাউন্সিলর অফিস ও লাইব্রেরির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ কোটি টাকা। গত বছর এই খাতে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হলেও খরচ গেছে ৪৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে চলতি বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

দুই সিটি করপোরেশন সূত্র আরও জানায়, ২০০২ সালে বিশেষ একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সব ওয়ার্ডেই কাউন্সিলররা লাইব্রেরি চালু করেন। সেই অনুযায়ী সংস্থার বাজেট বরাদ্দও রাখা হচ্ছে। কিন্তু ধীরে ধীরে নানা অব্যবস্থাপনার কারণে বন্ধ হয়ে পড়েছে অধিকাংশ লাইব্রেরি।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ঢাকার দুই সিটির লাইব্রেরি, বেশিরভাগই বন্ধ

১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত পুরান ঢাকার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী নর্থব্রুক হল পাবলিক লাইব্রেরির অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। লাইব্রেরি ভবনে এখন জীর্ণদশা। দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। ছাদে দেখা দিয়েছে ফাটল। বৃষ্টি হলেই লাইব্রেরিতে হাঁটুসমান পানি জমে যায়। তবে এরপরেও বেশকিছু আলমিরা দেখা গেছে। এগুলোতে শত বছরের পুরনো কয়েক হাজার বইও আছে। কিন্তু পড়ার পরিবেশ না থাকায় পাঠক শূন্যতায় ভুগছে বইঘরটি। অথচ এই লাইব্রেরিতে আগমন ঘটেছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। সাহিত্যে নোবেল জয়ের পর তাকে এখানেই সংবর্ধিত করেন ঢাকাবাসী। সংস্কারের অভাবে বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত সেই পাঠাগার ভবনে কিনা এখন জীর্ণদশা!

তবে ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, ঐতিহ্যবাহী এই লাইব্রেরি সংস্কারের জন্য একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সবশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কমিটি বেশকিছু সুপারিশ করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

২০ বছরের পুরনো হাজারীবাগের খলিল সর্দার লাইব্রেরিতেও রয়েছে পাঁচ শতাধিক বই। কিন্তু অব্যবস্থার কারণে পাঠক আসে না এখানেও। পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত রোকনপুর পাবলিক লাইব্রেরির অবস্থাও একই। এটি রোকনপুর কমিউনিটি সেন্টারের পাঁচতলায় অবস্থিত। কিন্তু দেখে মনে হবে না এখানে কোনও লাইব্রেরি আছে বা ছিল! কক্ষের ভেতরে কিছু পুরানো মালামাল পড়ে আছে।

ডিসিসির লাইব্রেরি

ওয়ারীতে অবস্থিত আবদুর রহিম স্মৃতি পাঠাগারের চিত্রও অভিন্ন। ফকির চাঁন কমিউনিটি সেন্টারের দ্বিতীয় তলার অপ্রশস্ত একটি কক্ষে শ’দুয়েক বই নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এটি।

এদিকে কাগজে-কলমে ডিএনসিসিতে পাঠাগারের সংখ্যা পাঁচটি। তবে এর মধ্যে চারটিরই কোনও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। অন্যটিও পাঠকের অভাবে নিষ্প্রাণ। করপোরেশনের তালিকায় মোহাম্মদপুর টাউন হল সংলগ্ন স্থানে কমিশনার রাজু মেমোরিয়াল পাবলিক লাইব্রেরির অবস্থানের কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সেখানে কোনও লাইব্রেরির অস্তিত্ব নেই। প্রায় একযুগ আগেই এটি বন্ধ হয়ে গেছে। কমিশনার অফিসের তিনতলায় অবস্থিত পাঠাগার কক্ষে বইপত্র যা ছিল সেগুলোও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া সিটি করপোরেশনের লাইব্রেরিগুলো দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা। লাইব্রেরিতে সাধারণ বইয়ের পাশাপাশি দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক পত্রিকার সংগ্রহশালা থাকার কথা। বাস্তবে কোনোকিছুই নেই এসব লাইব্রেরিতে। 

কার্যত বন্ধ রয়েছে সূত্রাপুরের জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও পাঠাগার। সেখানকার কর্মচারীরা জানান, এতে কোনও লাইব্রেরিয়ান নেই। চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারী মাঝে মধ্যে এক-দুই ঘণ্টার মতো সময় দিয়ে চলে যান।

এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসি’র প্রধান সমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা এস এম তুহিনুর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জনবল সংকট ও ভবন সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণেই লাইব্রেরিগুলোর নাজুক অবস্থা। তবে বেশকিছু নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

 

 

/জেএইচ/আপ-এসটি
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কলাপাড়ায় খাল থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার
কলাপাড়ায় খাল থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার
পাকিস্তানে ভারতের হামলা: দরপতনের ঝুঁকিতে ভারতীয় রূপি
পাকিস্তানে ভারতের হামলা: দরপতনের ঝুঁকিতে ভারতীয় রূপি
ইন্টারের কোচ হয়ে আমি ভীষণ আনন্দিত: ইনজাগি 
ইন্টারের কোচ হয়ে আমি ভীষণ আনন্দিত: ইনজাগি 
শিল্প খাতে বাড়ছে সংকট, ঘুরে দাঁড়ানোর কৌশল কী
শিল্প খাতে বাড়ছে সংকট, ঘুরে দাঁড়ানোর কৌশল কী
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসছে নতুন আইন
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসছে নতুন আইন
ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন, দুই শনিবার খোলা থাকবে অফিস
ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন, দুই শনিবার খোলা থাকবে অফিস
৩০ পেরোনোর পর বলিরেখা আটকাতে এই ৫ টিপস মেনে চলা জরুরি
৩০ পেরোনোর পর বলিরেখা আটকাতে এই ৫ টিপস মেনে চলা জরুরি
শব্দচয়ন ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’, হেফাজতের দুঃখপ্রকাশ
শব্দচয়ন ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’, হেফাজতের দুঃখপ্রকাশ
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর খবরদারি না করার আহ্বান ইউজিসির
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর খবরদারি না করার আহ্বান ইউজিসির