X
মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
১০ আষাঢ় ১৪৩২

সরকারের থোক বরাদ্দ: কী কাজে লাগে, কারা বেশি পায়

শফিকুল ইসলাম
০৪ মার্চ ২০১৮, ১৮:২৬আপডেট : ০৪ মার্চ ২০১৮, ১৮:৩৭

থোক বরাদ্দ

সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবে ব্যয় করা যায় না বাজেটে দেওয়া থোক বরাদ্দ। এ কারণে অনেক সময় থোক বরাদ্দের অর্থ অপচয়ও হয়। চলে চুরি, লুটপাট। তারপরও প্রতিবছর বাড়ানো হয় থোক বরাদ্দ। চাহিদাও থাকে। বরাদ্দও দিতে হয়। যা বাজেটের মূল কাঠামোতে অনেকাংশেই উল্লেখ থাকে না। সবচেয়ে বেশি থোক বরাদ্দ দেওয়া হয় স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। এছাড়া, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতেও নানামুখী কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়। সরকারের বিশেষ কোনও উদ্যোগ বাস্তবায়নে অর্থের যোগান দিতেও রাখা হয় থোক বরাদ্দের। একই সঙ্গে সরকার সমর্থকদের নানামুখী আবদার মেটাতে দেওয়া হয় এই বরাদ্দ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও অর্থ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এই থোক বরাদ্দের অনুমোদন দেয়। বেশিরভাগ বরাদ্দ দেওয়া হয় জাতীয় সংসদ সদস্যদের নামে। এলাকার উন্নয়নে সাধারণ বরাদ্দের বাইরে এই বাড়তি বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কখনও কখনও সরকার দলীয় এমপিদের নামে বিশেষ কাজের জন্য বিশেষ এই বরাদ্দ দেওয়া হয়।

তবে অভিযোগ রয়েছে, প্রায়শই এই বরাদ্দ কোনও কাজে আসে না। থোক বরাদ্দের অর্থ ঠিকমতো ব্যবহার করা হয় না। পুরোটা ব্যয় করতে পারেন না এমপিরা। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকা এবং এ অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে যথাযথ জবাবদিহিতা না থাকায় থোক বরাদ্দের বড় অংশ অপচয় হয়। 

তবে সমাজের নানাভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে সরকারের থোক বরাদ্দ অনেক বড় ভূমিকা রাখে। বড় অবদান রাখে নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও। তাই অর্থনীতিবিদদের মতে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড সচল রাখতে সরকারের থোক বরাদ্দ থাকা উচিত। এ ক্ষেত্রে থোক বরাদ্দের অর্থ ব্যয়ের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও প্রয়োজন। প্রয়োজন সুষ্ঠু জবাবদিহিতার।  

চলমান ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সংসদ সদস্যদের জন্য থোক বরাদ্দ অতীতের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। যা নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। স্থানীয় সরকারের প্রয়োজনেই এই বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

থোক বরাদ্দ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিরোজপুরের সাবেক এমপি অধ্যক্ষ শাহ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘এলাকার নানামুখী উন্নয়নের প্রয়োজনে এমপিদের নামে থোক বরাদ্দ খুবই উপকারি। অনেক সময় বন্যা বাদলে রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজ ও পুল কালভার্ট ভেঙে যায়। এগুলো মেরামতে জরুরি বরাদ্দের প্রয়োজন হয়। সেই সময় এই জরুরি কাজগুলো করতেই থোক বরাদ্দ থেকে অর্থের যোগান দেওয়া হয়।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, থোক বরাদ্দ একটি প্রচলিত প্রথা। তবে এ অর্থ যাতে ঠিকমতো ব্যবহার হয়, অপচয় যেন না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে একটি নীতিমালা বা সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘থোক বরাদ্দের এই টাকা পুরোপুরিই ওয়েস্টেজ হয়। কারণ এমপি সাহেবরা যখন বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রস্তাব দেন, এলজিইডির (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর) প্রকৌশলীরা তখন কাজ করেন না। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশলীরা অনেক অজুহাত দাঁড় করান, যা বোগাস অজুহাত।’

বর্তমানে সংসদ সদস্যদের নামে ২০ কোটি টাকা করে থোক বরাদ্দ দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

অপচয় হওয়ার পরও এমপিদের নামে থোক বরাদ্দ দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে অনেক সমস্যা রয়েছে যা জনপ্রতিনিধি হিসেবে এমপিকে সমাধান করতে হয়। এলাকার অনেক রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ জরুরিভিত্তিতে উন্নয়ন ও মেরামতের কাজে টাকা লাগে। সেই জরুরি প্রয়োজন মেটাতেই এমপিদের নামে থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়। যেমন ধরুন, এক এলাকার একটা রাস্তা মেরামত করা হলো। কিন্তু আরেক এলাকার আরেকটি রাস্তা মেরামত করার প্রয়োজন, কিন্তু মেরামত করা হলো না। তখন ওই এলাকার জনগোষ্ঠীর দাবির মুখে এমপিকে ওই রাস্তা মেরামতের অর্থের যোগান দিতে হয়। কিন্তু সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ নেই। আর বরাদ্দ পেতে আবেদন ও প্রকল্প তৈরি করে জমা দিয়ে বরাদ্দ আনতে গেলে তা অনেক কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ। এমন সময় এমপি তার নামে থাকা থোক বরাদ্দ থেকে কাজটি করাতে অর্থের যোগান দেন। এ ধরনের সমস্যা না মেটালে এলাকায় গণ্ডগোল হয়। তাই তাদের নামে থোক বরাদ্দ থাকাটা জরুরি। তবে কাজের অর্থাৎ থোক বরাদ্দের অর্থ ব্যয়ের অগ্রাধিকার ঠিক করে দেওয়া হবে এবং একটা প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’

অর্থমন্ত্রী জানান, শুধু এমপিরাই টাকা খরচ করেন, ব্যাপারটা এমন নয়। উপজেলা এবং জেলা পরিষদ রয়েছে। এরা সবাই মিলেই টাকাটা ব্যয় করে।

তিনি জানান, জেলা পরিষদের খরচের পদ্ধতি নিয়েও সমালোচনা আছে। জেলা পরিষদে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তারা সেই বরাদ্দ খরচ শুরু করে বছরের শেষ দিকে, আর খরচগুলো পরের বছর নিয়ে যায়, যাতে চুরিচামারিতে সুবিধা হয়। তবে জেলা পরিষদের এই চুরিচামারি ও দুর্নীতি রোধে মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি বিভিন্ন বিভাগের বরাদ্দ বণ্টন করা হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে থোক বরাদ্দের পরিমাণ বেড়েছে। তবে কত বেড়েছে তা বাজেটে পরিষ্কার নয়। 

এদিকে, সরকারি উদ্যোগে এই অর্থবছরে প্রশাসনে কর্মরত এক হাজার ৫৪৯ জন উপসচিবের গাড়ি কিনতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ চাইলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ১০০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় খাত’ থেকে এই বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এর আগে আরও দুই দফা ৪০ কোটি ও ৩০ কোটি মিলিয়ে ৭০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে এ খাতে মোট বরাদ্দ দেওয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭০ কোটি টাকা।

একইভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে থাকা বিশেষ অর্থ নারী উদ্যোক্তা ও সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সুপারিশের ভিত্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থোক বরাদ্দ অনুমোদন করে।

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শুক্র-শনিবার খোলা থাকবে দক্ষিণ সিটির কার্যালয়, মিলবে সব সেবা
শুক্র-শনিবার খোলা থাকবে দক্ষিণ সিটির কার্যালয়, মিলবে সব সেবা
৫ আগস্টের পর কোনও পরিবর্তন দেখছি না: ফয়জুল করিম
৫ আগস্টের পর কোনও পরিবর্তন দেখছি না: ফয়জুল করিম
রিজার্ভ ২২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ
রিজার্ভ ২২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ
দুঃখ প্রকাশ
দুঃখ প্রকাশ
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরিজীবীদের বিশেষ সুবিধার সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি
সরকারি চাকরিজীবীদের বিশেষ সুবিধার সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি
প্রধান উপদেষ্টা ও দুদককে উকিল নোটিশ পাঠালেন টিউলিপ
প্রধান উপদেষ্টা ও দুদককে উকিল নোটিশ পাঠালেন টিউলিপ
কাতারের উদ্দেশে ছাড়া ফ্লাইট নামলো ওমানে, আবার ফিরছে ঢাকায়
দোহাগামী বিমানের সব ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণাকাতারের উদ্দেশে ছাড়া ফ্লাইট নামলো ওমানে, আবার ফিরছে ঢাকায়
খিলক্ষেতে রেলের জায়গায় মন্দিরের সাইনবোর্ড, অপসারণের দাবি স্থানীয়দের
খিলক্ষেতে রেলের জায়গায় মন্দিরের সাইনবোর্ড, অপসারণের দাবি স্থানীয়দের
দেশে প্রথমবারের মতো গুগল পে চালু হচ্ছে আজ, যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে
দেশে প্রথমবারের মতো গুগল পে চালু হচ্ছে আজ, যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে