নির্বাচনের সময় বলবৎ সরকারে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী থাকতে আইনত কোনও বাধা নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, মন্ত্রিসভায় কখন কে থাকবে, না থাকবে তা সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনি চাইলে যেকোনও সময় যে কোনোভাবে তার মন্ত্রিসভা সাজাতে পারেন। তিনি এখন যেমন মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী রাখছেন, নির্বাচনের সময়ও চাইলে বর্তমান কেবিনেট থেকে নির্ধারিত সংখ্যক টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী রাখতে পারেন। আবার চাইলে ওই সময় নতুন করেও নিয়োগ দিতে পারেন। তবে তিনি কী করবেন, এটা সম্পূর্ণ তার ব্যাপার।
এদিকে সরকারের তরফ থেকে বার বার নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলা হলেও সংবিধানে এ ধরনের কোনও সরকারের অস্তিত্ব নেই বলে মন্তব্য করেন আইনজীবীরা। তারা বলেন, বিদ্যমান সরকারই নির্বাচনের সময় চলমানভাবে দায়িত্ব পালন করে যাবে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় এ সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে সার্বিকভাবে সহায়তা করবে।
প্রসঙ্গত, সরকারের সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার (৩ মে) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ‘নির্বাচনকালীন‘ সরকারে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী রাখার সুযোগ আছে কী নাই, তা তার জানা নেই বলে মন্তব্য করেন। সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কদের বলেন, ‘পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বকারী দল নয়, এমন কাউকে নির্বাচনকালীন সরকারে আমন্ত্রণ জানানোর কোনও চিন্তা-ভাবনা সরকারের নেই। সংবিধানে এমন কোনও সুযোগ আছে বলেও আমার জানা নেই।’ দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলেও তিনি এসময় মন্তব্য করেন। এবারের নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানোর কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
নির্বাচনকালীন সরকারে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী রাখার বিধান সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকার বলে কোনও বিধান নেই। বর্তমান সরকারই নির্বাচনের সময় তাদের দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে। কাজেই ওই সময় সরকারে টেকনোক্র্যাট কোন মন্ত্রী থাকতে আইনি বাধা নেই। চাইলে নতুন কাউকেও টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী নিয়োগ দিতে পারে। তবে এটি করবেন কী করবেন না, তা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়াও একই ধরনের মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘সংসদ ভেঙে নির্বাচন হোক বা না হোক সরকারের মন্ত্রিসভা কিন্তু চলমান থাকবে। সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকারের কোনও কথা নেই। সরকার যে অবস্থায় আছে, নির্বাচনের সময় সেই অবস্থায় দায়িত্ব পালন অব্যাহত থাকবে। ওই সময়ে সরকারে টেকনোক্র্যাট কোনও মন্ত্রী থাকলেও আইনি ব্যত্যয় হবে না।’
আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও আইনজীবী স ম রেজাউল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংবিধানের বিধান অনুসারে নির্বাচনের সময় যে সরকার থাকবে, সেই সরকারের একদশমাংশ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী থাকতে আইনি বাধা নেই। তবে এটি থাকবে কী থাকবে না, তা নির্ভর করবে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। তিনি তার মন্ত্রিসভা কিভাবে সাজাবেন, সেটা তার নিজের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তিনি চাইলে বর্তমানের (মন্ত্রিসভা) থেকে মোট সদস্যের এক দশমাংশের বেশি নয়, এমন এক বা একাধিক টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী রাখতে পারেন। চাইলে নতুন করে নিয়োগ দিতে পারেন। আবার ইচ্ছা করলে টেকনোক্র্যাট কাউকে নাও রাখতে পারেন।’
নির্বাচনের সময়কার সরকারের বিধান কী হবে সেক্ষেত্রে সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকতে; এই অনুচ্ছেদের কোনও কিছুই অযোগ্য করবে না।’ আর ৫৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকলে, মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করেছেন বলে গণ্য হবে। তবে এই পরিচ্ছেদের বিধানাবলী-সাপেক্ষে তাদের উত্তরাধিকাররা কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তারা (বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যরা) স্ব স্ব পদে বহাল থাকবেন।’
এদিকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধনের বিধান ৫৬-তে বলা আছে- ১. একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেরূপ নির্ধারণ করবেন, সেরূপ অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। ২. প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দান করবেন। তবে শর্ত থাকে যে, তাদের সংখ্যা অন্যূন নয়-দশমাংশ সংসদ-সদস্যদের মধ্য হতে নিযুক্ত হবেন এবং অনধিক এক-দশমাংশ সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হবার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য হতে মনোনীত হতে পারবেন।