X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সৌদি আরবের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সংবিধানবিরোধী: মেনন

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:০০আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:০৪

রাশেদ খান মেনন (ফাইল ছবি)

সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সমঝোতা স্মারক নিয়ে সংসদের বৈঠকে প্রশ্ন তুলেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এই চুক্তি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দলের এই নেতা ও সাবেক মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ইয়েমেন সীমান্তে মাইন অপসারণের নামে জীবন দেবে; যেটাকে বাংলাদেশের সংবিধান অনুমোদন করে না।’ এ নিয়ে তিনি সংসদে স্পিকারের রুলিং ও ৩০০ বিধিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন। এদিকে, এই বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম দাবি করেন, ‘সংসদ চলমান রয়েছে। অথচ এই চুক্তির বিষয়ে সংসদকে অবহিত করা হয়নি; সংসদকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সংসদের বৈঠকে ‘পয়েন্ট অব অর্ডারে’ দাঁড়িয়ে এই দুই সদস্য এসব কথা বলেন। এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বাংলাদেশের সঙ্গে ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

‘ডিফেন্স কো-অপারেশন বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড সৌদি অ্যারাবিয়া’ নামের সমঝোতা চুক্তিটিতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আমর্ড ফোর্সেস ডিভিশনের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান। সৌদি আরবের পক্ষে এতে সই করেন দেশটির সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুতলাক বিন সালিম আল উজাইমিয়া।

সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘এই চুক্তির আওতায় ইয়েমেন সীমান্তে বাংলাদেশ সেনাবহিনীর সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাইন অপসারণের কাজ করবে। এটা বিরোধপূর্ণ এলাকা।’

তিনি বলেন, ‘সবাই জানে, ইয়েমেনে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে প্রতিমুহূর্তে আক্রমণ চালাচ্ছে হুতি বিদ্রোহীদের প্রতিহত করতে। জাতিসংঘের মহাসচিব স্পষ্ট করে বলেছেন, ইয়েমেনের ঘটনা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয়। সেখানে আমাদের সেনাবাহিনী সীমান্তে মাইন অপসারণ করবে কার জন্য? যারা একদিন ইরাকি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কুয়েতে মাইন অপসারণ করে সুনাম কুড়িয়েছিল; তারা কেন আজকে মাইন অপসারণের নামে সেখানে জীবন দেবে? কেবল তাই নয়, ইয়েমেন সীমান্তে যখন আমাদের সেনাবাহিনী থাকবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই একটি বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি হবে। সংবিধানে বলা আছে, কোনও বিরোধপূর্ণ অবস্থানে বাংলাদেশ অংশ নেবে না।’

সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে ‘জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা, অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আন্তর্জাতিক আইনের ও জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা –এই সকল নীতি হইবে রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি এবং এই সকল নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র (ক) আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তিপ্রয়োগ পরিহার এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জন্য চেষ্টা করিবেন; (খ) প্রত্যেক জাতির স্বাধীন অভিপ্রায় অনুযায়ী পথ ও পন্থার মাধ্যমে অবাধে নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারণ ও গঠনের অধিকার সমর্থন করিবেন; এবং (গ) সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ বা বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে সমর্থন করিবেন।’

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘বিবিসির সংবাদে প্রতিরক্ষা চুক্তি সইয়ের কথা বলা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার-অস্বীকার কোনোটাই করেননি। এর আগে জনগণের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা নিরসন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, সৌদি আরবে মক্কা-মদিনার মসজিদ দুটি যখন আক্রমণের কবলে পড়বে, তখনই কেবল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাঠাবে। এর বাইরে কখনও  কোনও সেনাবাহিনী সৌদি আরবে পাঠাবে না।’

তিনি বলেন, ‘এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদিও স্পষ্টভাবে কিছু বলছে না, কিন্তু আমরা যেটা জেনেছি, ইতোমধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন পর্যায়ে এবং এর মধ্যদিয়ে আমাদের সংবিধানের ২৫ বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা সেটা অবশ্যই পরীক্ষা করা প্রয়োজন। সংবিধানে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে বলা হয়েছে। দুই দিক থেকে এই চুক্তি পর্যালোচনার দাবি রাখে। প্রথম হচ্ছে সেনাবাহিনী মোতায়েন জাতিসংঘের সঙ্গে সম্পর্কিত কিনা, সংগতিপূর্ণ কিনা। দ্বিতীয়ত, সেনাবাহিনীর বিদেশে উপস্থিতিতে রাজনৈতিক ভাবমূর্তি কী হবে?’ তিনি এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করেন। একইসঙ্গে সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এই বিষয়ে স্পিকারের রুলিং দেওয়ারও দাবি জানান।

তার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে ফখরুল ইমাম বলেন, ‘সংসদ হচ্ছে সব কিছু নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এখন সংসদ চলছে। আজ টেলিভিশনে দেখলাম, একটা চুক্তি হচ্ছে, সামরিক চুক্তি। এটা সংসদে আলোচনা করলে কী অসুবিধা ছিল? পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগেই জানতেন এই চুক্তি হবে। সংসদে না জানিয়ে, পাশ কাটিয়ে, সংসদকে মূল্যহীন ভেবে এগুলো করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?’

 

/ইএইচএস/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত
উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত
চট্টগ্রামে লরি চাপায় মৃত্যু বেড়ে তিন
চট্টগ্রামে লরি চাপায় মৃত্যু বেড়ে তিন
রাজধানীতে রিকশাচালকের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার
রাজধানীতে রিকশাচালকের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার
স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, স্বামীর লাশ উদ্ধার
স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, স্বামীর লাশ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
গরমে সুস্থ থাকতে কোন কোন পানীয় খাবেন? ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন জরুরি?
গরমে সুস্থ থাকতে কোন কোন পানীয় খাবেন? ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন জরুরি?