X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ল্যান্ডিংয়ের সময় এখনও ভয়ে আঁতকে ওঠেন শাহরীন

চৌধুরী আকবর হোসেন
১২ মার্চ ২০১৯, ০৯:৫৯আপডেট : ১২ মার্চ ২০১৯, ১৯:৩৪

শাহরীন আহমেদ বিমানে করে কোথাও গেলে ল্যান্ডিংয়ের সময় এখনও ভয় আতঁকে ওঠেন শাহরীন আহমেদ। মনের মধ্যে ঘুরে ফিরে আসে এক বছর আগের বিমান দুর্ঘটনার ভয়াবহ স্মৃতি। ২০১৮ সালের ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভূবন বিমানবন্দরে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের একজন শাহরীন। ওই দুর্ঘটনায় ঢাকা থেকে নেপালগামী ইউএস বাংলার ফ্লাইটের পাইলট, ক্রু,যাত্রীসহ ৫১ জন নিহত হন।

রবিবার (১০ মার্চ)  বিকালে বারিধারায় শাহরীন আহমেদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সেসময় এসব কথা বলেন তিনি। জানান, এখনও শারীরিক কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে তাকে।

শাহরীন বলেন, ‘আমি একাই নেপালে বেড়াতে গিয়েছিলাম। এটা শুনে অনেকে প্রশ্ন করেন, একটা মেয়ে একা কেন নেপালে বেড়াতে যাবে? আমরা যখন আকাশে তখনও কেউ বুঝতে পারিনি কী ঘটতে যাচ্ছে। পাইলট বেশ কয়েকবার ল্যান্ড করার চেষ্টা করেছিলেন। প্রথমবার ল্যান্ড করতে গিয়েও ওপরে উঠে গেল। তখন আমার পাশের সিটের যাত্রীকে বললাম ল্যান্ড করতে পারলো না কেন? কাঠমান্ডু এয়ারপোর্ট যে বিপজ্জনক সেটা আমার আইডিয়া ছিল না। দ্বিতীয়বার ল্যান্ড করার চেষ্টা করেও পারেননি পাইলট। শেষবার ল্যান্ডিংয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে বিমানটা বাম পাশে কাত হয়ে গেল। তখন আমি চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম, বাম দিকে কেন কাত হলো? ক্র্যাশ করবে তো। বলতে বলতেই মাটিতে খুব জোরে বিমানটি ধাক্কা খেলো। আমার এখনও ওই আওয়াজটা কানে ভাসে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ধাক্কা লাগার অনেক পর অনেক দূর বিমানটি ছেঁচড়িয়ে যায় বিমানটি। এরপর আগুন ধরে যায়। আমার পিছে হাসি (ইমরানা কবির হাসি) ছিলেন। তিনি আগুন আগুন বলে চিৎকার করে ওঠেন। তখন আমরা আশেপাশে দেখতে লাগলাম। হাসির কাছে জানতে চাইলাম তার স্বামী কোথায়, সে বললো- নেই। চারপাশে তাকিয়ে দেখি বের হওয়ার কোনও রাস্তা নেই। তখন আমি হাসিকে বললাম, যত জোরে পারেন চিৎকার দেন, না হলে কেউ বুঝবে না আমরা যে বেঁচে আছি। হাসি আর আমি চিৎকার করতে থাকলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের উদ্ধার করতে কেউ আসলো। হাসি, আমি আর একজন ভদ্রলোক আমরা তিনজন সেখানে ছিলাম। পুরোটা সময় আমি সব দেখছি, বুঝতে পেরেছি।’

মায়ের সঙ্গে শাহরীন আহমেদ বিমানের ভেতরে নিজের অবস্থান প্রসঙ্গে শাহরীন বলেন, ‘আমরা সিটটা বাকা হয়ে পড়ে গেছে। আমার গায়ের ওপর ব্যাগ রাখার কম্পার্টমেন্ট ভেঙে পড়েছিল। সিটটা ঠিক থাকলে আমি সিট বেল্ট খুলে দ্রুত বের হয়ে যেতে পারতাম। আমার সিট ছিল একরকম উইং বরাবর। ভেতর থেকে দেখি আগুন। সে আগুন নেভাতে বাইরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন কাজ করছে। এক পর্যায়ে আগুন আমার সিট বরাবর চলে আসে। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম গরম লাগছে। তাকিয়ে দেখি আগুন আমার গায়ে। আমি হাত দিয়ে নেভালাম। পরে দেখলাম আমার চুলেও আগুন। চুলের আগুন নিভিয়ে সিটের মাঝে মাথা নিচু করেছিলাম। পুরো আগুন নেভানোর পর আমাদের উদ্ধার করতে ভেতরে আসে। বিধ্বস্ত হওয়ার পর আনুমানিক ২৫ মিনিটি সময় লেগেছিল উদ্ধার করতে। আমাকে যখন অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যায় দেখলাম অনেক দূর পর্যন্ত আগুন ছড়ানো।’

চিকিৎসা প্রসঙ্গে শাহরীন বলেন, ‘গত বছর ১৬ মার্চ আমি ঢাকায় ফিরি। নেপাল থেকে দেশের আনার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ২৫ দিনের মতো চিকিৎসা নিয়েছি। আমার পা ভেঙে গিয়েছিল,শরীর পুড়ে গিয়েছিল।’

সহযাত্রীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা এয়ারপোর্টে দেখেছিলাম নেপালের মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের। আমি যখন নেপালের হাসপাতলে তখন তাদের স্বজনরা আমার কাছে জানতে চাইতো তার সন্তানকে দেখেছি কিনা। কিন্তু তাদের বলার মতো কিছু ছিল না। এখনও বারাবার সেসব দিনের কথা মনে পড়ে।’

আরও পড়ুন:
ইউএস বাংলার বিমান বিধ্বস্ত: আইনি জটিলতায় আটকে আছে ক্ষতিপূরণ

/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ধানের বাম্পার ফলনেও ‘অখুশি’ কৃষকেরা
ধানের বাম্পার ফলনেও ‘অখুশি’ কৃষকেরা
সালথা উপজেলায় ওয়াদুদের প্রার্থিতা বহাল, নির্বাচনে বাধা নেই
সালথা উপজেলায় ওয়াদুদের প্রার্থিতা বহাল, নির্বাচনে বাধা নেই
খারকিভে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া: ইউক্রেন
খারকিভে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া: ইউক্রেন
‘অধিকার দিতে হবে না, কেড়ে না নিলেই হবে’
‘অধিকার দিতে হবে না, কেড়ে না নিলেই হবে’
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক