X
সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫
২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সচিবালয়ে ঢুকতে এখনও হাতে লেখা পাস

শফিকুল ইসলাম
০১ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৫৯আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০১৯, ২০:৫৯

বাংলাদেশ সচিবালয় (ছবি- সংগৃহীত) এখনও বদলানো যায়নি সচিবালয়ে ঢোকার গেট পাস ইস্যু ও বিতরণ ব্যবস্থা। হাতে লেখা গেট পাস দিয়েই সরকারের শীর্ষ প্রশাসনিক এই দফতরের ভেতরে ঢুকছেন অভ্যাগতরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হাতে লেখা গেট পাসের ক্ষেত্রে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। এ ক্ষেত্রে কিছু অনিয়মেরও অভিযোগ রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে গেট পাস ইস্যু ও বিতরণ ব্যবস্থা পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এখনও তা কার্যকর হয়নি। যদিও এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় মেশিন বসানোর কাজ শেষ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আশা করা হচ্ছে এ বছরের মাঝামাঝি নতুন এ ব্যবস্থা চালু হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ নতুন ডিজিটালাইজড সিস্টেম চালু হওয়ার কথা ছিল। তবে নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ব্যবস্থা চালু হলে জটিলতা, সময় ও ব্যস্ততা সবই কমবে। রেকর্ডও সংরক্ষিত থাকবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গেট পাস ব্যবস্থা বদলে ফেলার অংশ হিসেবে বসছে নতুন সার্ভার, চলছে অটোমেশনের কাজ। আর এ কাজ তদারকি করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগ।

উল্লেখ্য, প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিভিন্ন কাজ নিয়ে কয়েকশ’ মানুষ সচিবালয়ে আসেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আসেন সচিবালয়ে কর্মরত আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে। কেউ আসেন দাফতরিক কাজে। কেউ আসেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা মন্ত্রীর কাছে তদবিরের জন্য। আবার কেউ আসেন নিজের এলাকার উন্নয়নমূলক কাজের ব্যাপারে। তবে গেট পাস না থাকায় তাদের অনেকেই সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকতে পারেন না।

জানা গেছে, নতুন সিস্টেম চালু হলে আগামীতে আর হাতে লেখা পাস থাকবে না। পাস ইস্যুকারী কর্মকর্তা আগত ব্যক্তির নাম, পেশা, সচিবালয়ে আসার উদ্দেশ্য এবং মোবাইল নম্বর কম্পিউটারের মাধ্যমে সচিবালয়ের গেটের অভ্যর্থনাকেন্দ্রের সার্ভারে পাঠাবেন। সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে ইস্যু করা পাসগুলো ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব, সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্মসচিব— এই পদ অনুসারে জড়ো হবে সার্ভারে। অভ্যর্থনাকেন্দ্রে কর্মরত আনসার সদস্যরা তা নিয়মিত চেক করবেন। যাদের নামে পাস আসবে তারা কাউন্টারে খোঁজ নেবেন। সব তথ্য মিলে গেলে কাউন্টার থেকে একটি স্লিপ দেওয়া হবে যা কম্পিউটারের প্রিন্টার থেকেই বেরুবে। ওই স্লিপে আগত ব্যক্তির নাম-ঠিকানাসহ সব তথ্য থাকবে। গেটে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সেটি দেখিয়ে সচিবালয়ে ঢুকতে হবে।  

জানতে চাইলে সচিবালয়ের অভ্যর্থনাকেন্দ্রে কর্মরত তানজিলা খানম নামের একজন আনসার সদস্য জানান, তারাও শুনেছেন। এর জন্য কাজ চলছে। বসানো হয়েছে মেশিন। বিভিন্ন সময় কম্পিউটার কোম্পানির লোকজন এসে দেখে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে একজন কর্মকর্তার সর্বোচ্চ পাঁচটি পাস ইস্যু করার বিধান থাকলেও ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় এর বেশি হয়ে গেলে তা আমরা শনাক্ত করতে পারি না। তবে এ সিস্টেম পুরোপুরি ডিজিটালাইজড হলে এমন গরমিল বা ভুল হবে না। কেউ বেশি পাস ইস্যু করতে পারবেন না।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এ বছরের মাঝামাঝি চালু হতে পারে নতুন সিস্টেম।

কেন এত দিনের পুরনো এই সিস্টেমের পরিবর্তন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্রমশই বাতিল করা হচ্ছে পেপার। একসময় আসবে যখন কাগজে কোনও কাজই চলবে না। ইতোমধ্যে ই-ফাইলিং শুরু হয়েছে। তাই এ সিস্টেমটিও বদলে ফেলা প্রয়োজন বলেই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ তিনি জানান, এর ফলে জটিলতা, সময় ও ব্যস্ততা কমবে। রেকর্ডও সংরক্ষিত হবে।

উল্লেখ্য, সচিবালয়ে অফিস করেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং সচিবরা। এছাড়া সরকারের নীতি নির্ধারণী মিটিং এবং সেসব মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় এখানে। এ কারণে সরকারের এই শীর্ষ প্রশাসনিক দফতরের প্রবেশাধিকার থাকে নিয়ন্ত্রিত। এই প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করতেই গেট পাসের প্রচলন।

যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অতিরিক্ত সচিব নিজেরাই গেট পাস ইস্যু করতে পারেন। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত সচিব, সচিব, সিনিয়র সচিব, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের একান্ত সচিবরা সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য গেট পাস ইস্যু করার এখতিয়ার রাখেন। সিনিয়র সহকারী সচিব এবং উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারাও গেট পাস ইস্যু করতে পারবেন, যদি তিনি কোনও মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব, সচিব, সিনিয়র সচিব, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর একান্ত সচিব হন। সাধারণত ভারপ্রাপ্ত সচিব, সচিব এবং সিনিয়র সচিবদের একান্ত সচিব হিসেবে সিনিয়র সহকারী সচিব এবং মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালনের জন্য উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়।  

বর্তমানে একজন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ পাঁচটি গেট পাস ইস্যু করতে পারেন। একসময় একজন কর্মকর্তা অনির্দিষ্ট সংখ্যক ও অগ্রিম পাস ইস্যু করতে পারতেন। পরে তা বন্ধ করে সর্বোচ্চ ১০টি পাস ইস্যু করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তা আরও নিয়ন্ত্রণ করে সর্বোচ্চ সেটি পাঁচটি করা হয়।

 

/এইচআই/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খাবার স্যালাইন পানীয় নয়, ওষুধ
খাবার স্যালাইন পানীয় নয়, ওষুধ
গতবার যে চামড়া বিক্রি হয়েছিল ৬০০ টাকা, এবার সেটা ১০০ টাকা
গতবার যে চামড়া বিক্রি হয়েছিল ৬০০ টাকা, এবার সেটা ১০০ টাকা
গ্রেটা থুনবার্গকে বহনকারী ত্রাণবাহী জাহাজের দখল নিয়েছে ইসরায়েল
গ্রেটা থুনবার্গকে বহনকারী ত্রাণবাহী জাহাজের দখল নিয়েছে ইসরায়েল
চট্টগ্রাম বিভাগে মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে পৌনে ৮ লাখ চামড়া
চট্টগ্রাম বিভাগে মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে পৌনে ৮ লাখ চামড়া
সর্বাধিক পঠিত
এবার ৪৪ জন আমলাকে অপসারণের দাবিতে পোস্টার
এবার ৪৪ জন আমলাকে অপসারণের দাবিতে পোস্টার
লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে চান টিউলিপ সিদ্দিক
লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে চান টিউলিপ সিদ্দিক
দেশে ফিরেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
দেশে ফিরেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
মহিলা লীগ নেত্রীর কোরবানির মাংস ‘ভিক্ষা করার’ ভিডিও ভাইরাল
মহিলা লীগ নেত্রীর কোরবানির মাংস ‘ভিক্ষা করার’ ভিডিও ভাইরাল
সাবেক সংবাদ উপস্থাপক তরীর অস্বাভাবিক মৃত্যু
সাবেক সংবাদ উপস্থাপক তরীর অস্বাভাবিক মৃত্যু