X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

দুই মেয়র বিদেশে: দক্ষিণে ভারপ্রাপ্ত, উত্তরে কে?

শাহেদ শফিক
১৪ অক্টোবর ২০১৯, ০২:৪০আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১৪:৩৯

সাঈদ খোকন ও আতিকুল ইসলাম

সি-ফর্টি বিশ্ব মেয়র সম্মেলনে যোগ দিতে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে রয়েছেন ঢাকার দুই মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এই সম্মেলনে যোগ দিতে উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম রবিবার (৬ অক্টোবর) দিবাগত রাত ও দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকা ত্যাগ করেন। সাঈদ খোকন একজন কাউন্সিলরকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তবে উত্তর সিটিতে দুই জন প্যানেল মেয়র থাকলেও কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাননি আতিকুল ইসলাম। ফলে তার অবর্তমানে নিয়মিত কাজ পরিচালিত হচ্ছে না।

বিষয়টিকে অসাংবিধানিক উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এ জন্য মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন উভয় প্রতিষ্ঠানই দায়ী।’

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, ‘অনুপস্থিতি কিংবা অসুস্থতা বা অন্য কোনও কারণে মেয়র দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে তিনি পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত এই আইনের ধারা ২০ অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে মেয়রের প্যানেলের কোনও সদস্য মেয়রের সব দায়িত্ব পালন করবেন।’ কিন্তু ঢাকা উত্তর সিটিতে প্যানেল মেয়র থাকার পরও মেয়র আতিকুল ইসলাম তাদের দায়িত্বভার দিয়ে যাননি।

অপরদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্যানেল মেয়র নির্বাচন হয়নি। আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর অনুষ্ঠিত প্রথম সভার একমাসের মধ্যে কাউন্সিলররা অগ্রাধিকারক্রমে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি মেয়রের প্যানেল নির্বাচন করবেন। তবে শর্ত থাকে যে, নির্বাচিত তিন জনের মেয়র প্যানেলের মধ্যে একজন অবশ্যই সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর হতে হবে। মেয়রের প্যানেল নির্বাচিত না হলে সরকার মেয়র প্যানেল মনোনীত করবে। কিন্তু ডিএসসিসি প্যানেল মেয়র নির্বাচন করতে না পারলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও সেটি করে দেয়নি। এই কারণে সংস্থাটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন তার অনুপস্থিতিতে একজন কাউন্সিলরকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। এতে মেয়রের অবর্তমানে দক্ষিণ সিটিতে নিয়মিত রুটিং ওয়ার্ক পরিচালিত হলেও উত্তর সিটিতে তা হচ্ছে না। এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উত্তর সিটির প্যানেল মেয়রের দায়িত্বে থাকা দুই কাউন্সিলর।

ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, এবার সংস্থাটির ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিককে এ দায়িত্ব দিয়ে গেছেন মেয়র।

অপরদিকে, উত্তর সিটিতে মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর প্যানেল মেয়র নির্বাচন করা হয়। তখন সংস্থাটির ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রয়াত ওসমান গণি, ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জামাল মোস্তফা ও সংরক্ষিত ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলেয়া সারোয়ার ডেইজি প্যানেল মেয়র নির্বাচিত হন। নতুন মেয়র (আতিকুল ইসলাম) আসার আগপর্যন্ত প্রথমে ওসমান গণি এবং তার মৃত্যুর পর জামাল মোস্তফা দায়িত্ব পালন করেছেন। ওসমান গণি ২০১৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

বর্তমানে মেয়রের অবর্তমানে সংস্থা পরিচালনার জন্য দুই জন প্যানেল মেয়র থাকলেও তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় না। এই বছরের ৭ মার্চ আতিকুল ইসলাম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ৮ মাসে চার থেকে পাঁচবার দেশের বাইরে গেছেন। প্রতিবার তিনি তিন থেকে ১০ দিন দেশের বাইরে ছিলেন। এ সময় তিনি কোনও প্যানেল মেয়রকে দায়িত্ব দিয়ে যাননি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

জানতে চাইলে প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উনি (আতিকুল ইসলাম) যতবার বিদেশে গেছেন, একবারও আমাদের দায়িত্ব দিয়ে যাননি। কেন দেননি, সেটা তিনিই আর মন্ত্রণালয় জানেন। আইন অনুযায়ী তো আমাদের দায়িত্ব দিয়ে যাওয়ার কথা।’

জানতে চাইলে অপর প্যানেল মেয়র আলেয়া সারোয়ার ডেইজি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী মেয়রের অবর্তমানে প্যানেল মেয়ররাই দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু আমরা সেই দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। আমি বিষয়টি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকেও জানিয়েছি। তিনি কোনও উত্তর দেনি। এটা তো হতে পারে না।’

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইনের ধারাটি আমার জানা নেই। বিষয়টি জেনে জানাতে হবে।’

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই ঠিক হচ্ছে না। মেয়ররা যখন বিদেশ বা অন্য কোথাও যান, তখন মন্ত্রণালয় থেকে ছুটি নিয়েই যান। মন্ত্রণালয় কেন জানতে চাইলো না তার অনুপস্থিতিতে কে দায়িত্ব পালন করবে? ছুটির ফরমে তো সেটা উল্লেখ থাকার কথা। ছুটির আদেশে মন্ত্রণালয় বলে দেবে, মেয়রের অনুপস্থিতিতে কে দায়িত্ব পালন করবে। এর কিছুই নিয়মের মধ্যে হচ্ছে না। নিয়মের ধারে-কাছেও যাচ্ছে না সিটি করপোরেশন। তারা ইচ্ছেমতো চলছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে একাধিকবার ফোন করেও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি।

 

/এনআই/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মাইলফলক: পার্বত্য উপদেষ্টা
জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মাইলফলক: পার্বত্য উপদেষ্টা
ইলিশের দাম অস্বাভাবিক বাড়ানো যাবে না: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
ইলিশের দাম অস্বাভাবিক বাড়ানো যাবে না: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাময়িক বরখাস্ত
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাময়িক বরখাস্ত
জুভেন্টাসের বিপক্ষে এমবাপ্পেকে পাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ?
জুভেন্টাসের বিপক্ষে এমবাপ্পেকে পাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ?
সর্বাধিক পঠিত
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
প্রশাসনে থামছে না আন্দোলনঅন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট