X
রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫
২২ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভুট্টোকে স্মরণ করিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু

উদিসা ইসলাম
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:৪৬আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:৫০

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভুট্টোকে স্মরণ করিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোকে বাস্তবতা মেনে নিয়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার (বঙ্গবন্ধু) সঙ্গে কোনও আলাপ বা সাক্ষাতের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ‘স্বীকৃতি দান’-কেই শর্ত হিসেবে জোর দিয়ে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭২ সালের এই দিনটি গণঅভ্যুত্থান দিবস পালনের প্রস্তুতি ছিল। এই দিনে ছাত্রসমাজ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, স্বাধীনতাকামী মানুষ নিষেধাজ্ঞা ভেঙে রাজপথে মিছিল নিয়ে নেমেছিল।

বাংলাদেশ ভালো থাকবে

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পাকিস্তানের চাইতে ভালো থাকবে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইউপিআই এর প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘পাকিস্তান তাঁত শিল্পের জন্য সাড়ে সাত কোটি লোকের একটি বাজার হারিয়েছে। কাজেই শেষ পর্যন্ত আমাদের অবস্থান ভালো হবে। আমাদের কিছু কিছু জায়গা চালু আছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার মতো কাঁচামাল আমাদের রয়েছে, আমাদের সম্পদ আছে, আমাদের একটি অর্থনীতি গড়ে উঠবে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের মূল সমস্যা হচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।’ সাক্ষাতের বিষয়ে সোর্স লিখছেন, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে শেখ মুজিবুর রহমান জোর দিয়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতির বিষয়টিকেই শর্ত হিসেবে সামনে আনেন। তিনি ভুট্টোকে বাস্তবতা মেনে নিয়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে বলেন।

 

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভুট্টোকে স্মরণ করিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু

শর্তযুক্ত সাহায্য গ্রহণে অস্বীকৃতি

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রায় সবকিছুই ধ্বংস করেছে। ৩০ লাখ লোক এবং আমাদের বুদ্ধিজীবী হত্যা করা ছাড়াও আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, গ্রামগুলো ধ্বংস করেছে। তারা ধ্বংস করেছে আমাদের বাড়িঘর, আমাদের গবাদিপশু, আমাদের খাদ্যগুদাম। তাছাড়া এখন ভারত থেকে আমাদের প্রায় ১এক কোটি লোক দেশে ফিরে আসছে। তাদের সাহায্যের দরকার।’ তিনি বলেন, ‘দুই-তিন মাসের মধ্যে আমাদের এখানে বর্ষাকাল আসবে। কাজেই অবিলম্বে আমার বিপুল পরিমাণ সাহায্যের দরকার। আমাকে আমার দেশবাসীর জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।’ শেখ মুজিবুর রহমান বলেন,‘সাহায্যের প্রয়োজন থাকলেও তিনি রাজনৈতিক অথবা অন্য কোনও শর্তযুক্ত সাহায্য গ্রহণ করবেন না।’

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভুট্টোকে স্মরণ করিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু

 

নিক্সন প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ

যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের প্রতি বঙ্গবন্ধু বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব থাকলেও তিনি নিক্সন প্রশাসনের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারছেন না। নিক্সন প্রশাসন বাস্তবতাকে মেনে নেয়নি। ঢাকা সফরকালে ইউপিআই এর প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের জনগণকে হত্যা করছিল যখন, তখন নিক্সন প্রশাসন পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহের নীতি গ্রহণ করেছিল।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘কীভাবে একটি সরকার এ ধরনের সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে পারে।’

তিনি বলেন, পূর্ব বাংলায় মার্কিন সরকারের প্রতিনিধিত্ব ছিল সেসময়। কাজেই তারা নিশ্চয়ই ঘটনাবলী সম্পর্কে জানতো। সিনেটর কেনেডি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করার সময় বাংলাদেশের জনগণ তাকে তাদের মনোভাব জানিয়ে দিয়েছে।’

বাঙালিদের ফেরত পাঠাতে প্রস্তুত পাকিস্তান

পাকিস্তান পররাষ্ট্র দফতরের বিভাগীয় প্রধান এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিদেশি সাংবাদিকদের জানান, পাকিস্তানে প্রায় চার লাখ বাঙালি রয়েছে এবং এদের বেশিরভাগই বাংলাদেশে ফিরে যেতে চায়। বাংলাদেশে অবস্থানকারী সংখ্যালঘু বিহারিদের একমাত্র সর্বশেষ উপায় হিসেবে পাকিস্তান গ্রহণ করতে রাজি হবে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ১০ লাখেরও বেশি বিহারি রয়েছে।’ পররাষ্ট্র দফতরের এই মুখপাত্র বলেন, ‘পাকিস্তান সরকার এখন বাঙালিদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছে। অবশ্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ যদি তাদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকে।’

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভুট্টোকে স্মরণ করিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু

গণঅভ্যত্থান দিবস পালিত

এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় অনেককিছু। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রচণ্ড বিস্ফোরণে রাজপথে নেমে আসে ঢাকা শহরের জনতা। পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক জান্তার একটানা কারফিউর নিগড় ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলো তারা। রাইফেল ও স্টেনগানকে উপেক্ষা করে রাজধানীর রাস্তায় নেমে আসলো জনতার স্রোত। ১৮ ফেব্রুয়ারির এ রাতটি বীর বাঙালির গণঅভ্যুত্থানের মুখে এক অনন্য রাত। সেদিন সকালে রাজশাহীতে বর্বর সামরিক বাহিনীর গুলিতে নিহত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা। এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি ক্যান্টনমেন্টে সামরিক বাহিনীর গুলিতে শহীদ হয়েছেন সার্জেন্ট জহুরুল হক। পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি পল্টনের জনসভায় পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। সন্ধ্যা সাতটা থেকে শহরে কারফিউ জারি হয়। একটানা কারফিউর মধ্যে ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতের প্রথম প্রহরে বেতার ও টেলিভিশনে ড. জোহা ও অপর এক ছাত্রের মৃত্যুর খবর প্রচার করা হয়। রাত ১০টায় হঠাৎ জনতা জেগে ওঠে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে রাজপথে বের হয়। ঢাকা জেগে উঠেছিল ‘জ্বালো জ্বালো-আগুন জ্বালো’ শ্লোগানে।

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
মুজিব বর্ষ উদযাপনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের খরচ ১২৬১ কোটি
ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরার ৬ উপজেলা, প্রস্তুত ৩৬৪টি ঘর
‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে’
সর্বশেষ খবর
‘প্রত্যেক শিল্পীরই অভিনয়ে নিজেকে উন্নত করা জরুরি’
‘প্রত্যেক শিল্পীরই অভিনয়ে নিজেকে উন্নত করা জরুরি’
বিশেষ অভিযানে সারা দেশে গ্রেফতার ১৪৫৪
বিশেষ অভিযানে সারা দেশে গ্রেফতার ১৪৫৪
ট্রাম্পের সঙ্গে সর্বশেষ ফোনালাপকে সবচেয়ে ফলপ্রসূ বললেন জেলেনস্কি
ট্রাম্পের সঙ্গে সর্বশেষ ফোনালাপকে সবচেয়ে ফলপ্রসূ বললেন জেলেনস্কি
গ্লোবাল সুপার লিগে দুবাইয়ের সাকিব
গ্লোবাল সুপার লিগে দুবাইয়ের সাকিব
সর্বাধিক পঠিত
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু
সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় হাত: চাপের মুখে প্রবীণ ও মধ্যবিত্তরা
সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় হাত: চাপের মুখে প্রবীণ ও মধ্যবিত্তরা
আসছে নতুন কারিকুলাম: ফ্রেমওয়ার্ক ডিসেম্বরে, ‘বড় পরিসরে’ থাকবে জুলাই
আসছে নতুন কারিকুলাম: ফ্রেমওয়ার্ক ডিসেম্বরে, ‘বড় পরিসরে’ থাকবে জুলাই
কনস্টেবলকে ‘স্যার’ ডেকে ধরা পড়লেন ভুয়া এসআই
কনস্টেবলকে ‘স্যার’ ডেকে ধরা পড়লেন ভুয়া এসআই
আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে প্রতীকী কফিন মিছিল
আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে প্রতীকী কফিন মিছিল