X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

কথা রেখে ভারতীয় সৈন্যদের বিদায়

উদিসা ইসলাম
১২ মার্চ ২০২০, ০৭:৫৯আপডেট : ১২ মার্চ ২০২০, ০৭:৫৯

কথা রেখে ভারতীয় সৈন্যদের বিদায়

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগে ভারতে কিছুক্ষণের যাত্রাবিরতি নিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই সময় তিনি জানতে চান, ভারতীয় সেনাবাহিনীর কবে বাংলাদেশ ত্যাগ করবে?  ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কথা দিয়েছিলেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে সব সৈন্য ফিরিয়ে আনা হবে। এরপর স্বাধীনতার তিন মাসের মধ্যে ১৯৭২ সালের ১২ মার্চে ভারতীয় সৈন্যদের ফিরিয়ে নেওয়া হয়। ১৯৭২ সালের এই দিনে তাদের বিদায়ী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। একইসঙ্গে ১৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দীতে ইন্দিরা গান্ধীর জনসভা সফল করতে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছিল।

বিদায়ী কুচকাওয়াজ

১৯৭২ সালের ১২ মার্চ ছিল ভারতীয় সেনাদের বিদায়ী কুচকাওয়াজ। প্রায় তিন মাস বাংলাদেশে কাটিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার দিন ছিল এটি। সেসময়ে পত্রিকাগুলোর সংবাদে বলা হয়, এই দেশ ছিল তাদের কাছে এক অচিনপুরী। কালের পরিক্রমায় বাংলায় এসে আমাদের সঙ্গে মৈত্রী হল এবং একসঙ্গে অস্ত্র ধরে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধও হলো। উভয়ের সামনে একই পথ কিন্তু লক্ষ্য ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশ চেয়েছিল দেশকে শত্রুমুক্ত করতে আর ওরা চেয়েছিল মানবতার পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে। জয় বাংলা, জয় হিন্দ স্লোগানে সোচ্চার হয়ে বীর যোদ্ধারা জলপাই রঙের পোশাক পরে আসে। ওদের মুখের বুলির সঙ্গে আমাদের পরিচয় ছিল না। বাঙালি থেকে পাঞ্জাবি যুবক এসে দাঁড়িয়েছিল আমাদের পাশে।

সেসময়ে পত্রিকাগুলোর সংবাদে প্রকাশ করা হয় উচ্ছ্বাস। তাতে বলা হয়, পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য দেশের সেনাবাহিনীকে বরণ করার যে কয়টি নজির স্থাপিত হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ মিত্রবাহিনীর অভ্যুদয় অতুলনীয়, ইতিহাসে অনন্য।

কথা রেখে ভারতীয় সৈন্যদের বিদায়

সম্পাদকীয়তেও মিত্রবাহিনী

দৈনিক বাংলার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, আজকের বিদায় কুচকাওয়াজের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মিত্রবাহিনীর সৈন্য প্রত্যাহার সম্পন্ন হবে। যুদ্ধ শেষে মাত্র তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে মিত্রবাহিনীর প্রত্যাহারের মাধ্যমে ভারতের নেতৃত্ব ওয়াদা পালন করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।

ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি নির্দেশে বলা ছিল, বাংলাদেশে ভারতীয় বাহিনী তাদের কর্তব্য সমাধানের পর অতিরিক্ত একটি দিনও থাকবে না। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে একযোগে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের মাধ্যমে, হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে এদেশের স্বাধীনতাকে সুসংহত করার কাজে সাহায্য করে, এদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মিত্রবাহিনী তাদের কর্তব্য সম্পাদন করেছেন এবং তারা স্বদেশে ফিরে যাচ্ছেন।

কথা রেখে ভারতীয় সৈন্যদের বিদায়

চট্টগ্রামের শরণার্থীরা ভাল নেই

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া শরণার্থীরা ফিরে এসে মানবেতর দিন কাটাতে শুরু করেন। বেশিরভাগ জায়গা থেকে সেসময় তাদের দুর্দশার খবর আসছিল। ১৯৭২ সালের ১২ মার্চের পত্রিকায় চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থানে ভারত থেকে ফিরে আসা শরণার্থীদের দুর্বিষহ জীবনের কথা প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, অধিকাংশের বর্তমানে কিছু নেই। যাদের বাসগৃহ আগুনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে, তাদের ঘরে আসবাবপত্র চিহ্নমাত্র নেই। ঘরের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে হাড়ি-পাতিল সব লুট হয়ে গেছে। অনেকে গৃহের অভাবে গ্রামের স্কুলে একসঙ্গে দিনযাপন করছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, শরণার্থীদের ভেতরে যারা এই শহরে আগের দোকানপাট করতেন তাদের অনেকেই আগের দোকানঘর ফিরে পাননি।

কথা রেখে ভারতীয় সৈন্যদের বিদায়

ইন্দিরা গান্ধীর সমাবেশ সফল হোক

ইন্দিরা গান্ধীর সংবর্ধনা সফল করতে, তার বক্তব্য যারা শুনতে আসতে চান তাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ১৬ ও ১৭ মার্চ বিশেষ ট্রেন ও লঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরে এসে সেদিন বিকেল সাড়ে তিনটায় রমনা রেসকোর্স ময়দানে আয়োজিত এক জনসভায় ভাষণ দেওয়ার কথা। সে অনুযায়ী জনসভাকে সফল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছিল। বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের এই নেত্রীর ভাষণ শোনার জন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় এসেছিল।

একাত্তরের এইদিনে

১৯৭১ সালের এই দিনে ছিল অসহযোগ আন্দোলনের পঞ্চম দিন। বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের পঞ্চম দিন চতুর্থ দিনের মতো শান্তিপূর্ণ কেটেছে। বিশ্বের ইতিহাসে এমন অভূতপূর্ব সাফল্যজনক অসহযোগ আন্দোলনের নজির নেই। জনসাধারণ যাতে আন্দোলনের ফলে অযথা কষ্ট ভোগ না করে তার জন্য বঙ্গবন্ধু যেসব বিধি-নিষেধের নির্দেশ দেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়।

এতদিন পর্যন্ত যে আমলাতান্ত্রিক সিএসপি পাকিস্তানের শাসক ও শোষক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করতো তারা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনও আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানায়। এছাড়া এদিন সরকারি, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পালনের ব্যাপারে শপথ নেয়। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ছাত্র নেতা  নূরে আলম সিদ্দিকী শাহজাহান সিরাজ, আসম আব্দুর রব, আব্দুল কুদ্দুস মাখন বৃহৎ ব্যবসায়ী ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে দ্রব্যমূল্য না বাড়ানোর জন্য হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সতর্ক করে দেন। এদিনই ময়মনসিংহ থেকে মাওলানা ভাসানী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানান।

/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দলের কেউ অপরাধ করলে কঠোর ব্যবস্থা: রিজভী
দলের কেউ অপরাধ করলে কঠোর ব্যবস্থা: রিজভী
আইএস নেটওয়ার্ক ভেঙে দিলো মালয়েশিয়া, জড়িত বাংলাদেশি শ্রমিকরা
আইএস নেটওয়ার্ক ভেঙে দিলো মালয়েশিয়া, জড়িত বাংলাদেশি শ্রমিকরা
ফ্যাসিস্ট হটানোর পরে দেশে আবার সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে: নাহিদ ইসলাম
ফ্যাসিস্ট হটানোর পরে দেশে আবার সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে: নাহিদ ইসলাম
জুলাইকে উৎসর্গ করে ১১ জুলাই থেকে ‘অন্যদিন…’
জুলাইকে উৎসর্গ করে ১১ জুলাই থেকে ‘অন্যদিন…’
সর্বাধিক পঠিত
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল