X
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২

ব্যক্তিগত পরিবহনে ঈদযাত্রা: জমেছে রেন্ট-এ-কার ব্যবসা

হাসনাত নাঈম
২৩ মে ২০২০, ২৩:০৪আপডেট : ২৪ মে ২০২০, ০১:৫৭

প্রাইভেট কারে চেপে এভাবেই ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

হাতে রয়েছে আর মাত্র একদিন। এরপরে শুরু হবে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। প্রতিবছর ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উৎসবটি পালিত হলেও এবার প্রাণহীন হয়ে গেছে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে। তবুও সরকার নাড়ির টানে বাড়ি যাওয়া ফেরাতে পারেনি সাধারণ মানুষের। সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুরোধ উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত ব্যবস্থায় ঈদ উদযাপনে বাড়ির পথ ধরেছে হাজারও মানুষ। আর সেই ব্যক্তিগত ব্যবস্থার প্রধান বাহন প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস। আর এ সুযোগটাই নিচ্ছে রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ীরা।

 মূলত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষ রাজধানী ছাড়তে পারবেন এমন নির্দেশনা দেওয়া পর পরই মানুষের সিদ্ধান্ত বদলে গেছে। যারা চিন্তা করেছিলেন গণপরিবহন না চলায় হয়তো এবার ঈদে আর বাড়ি যাওয়া হবে না, তারাও ব্যক্তিগত ব্যবস্থায় রওনা হয়েছেন বাড়ির পথে। আর সেই ব্যক্তিগত ব্যবস্থার প্রধান বাহন হয়ে উঠেছে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই যাত্রীরা রওনা হচ্ছেন বাড়ির পথে।

সরেজমিন গাবতলী এলাকায় দেখা গেছে, বাস বন্ধ হওয়ার কারণে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস চালকরা এই স্ট্যান্ডের সামনে তাদের গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় আছেন। এদের কেউ পুরো গাড়ি ভাড়া হওয়ার অপেক্ষায়, আবার অনেকে সিট অনুপাতেও যাত্রী তুলছেন বাসের মতো করে। একেক দূরত্বের ভাড়া একেক রকম।

ঢাকা থেকে বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন রকমের ভাড়ায় পরিচালিত হয় প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস। ধরুন কোনও একটা শহরের ভাড়া ঢাকা থেকে ৫০০০ টাকা। কিন্তু গত পরশু দিন থেকেই সে ভাড়াটি এখন ৮০০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। গাড়ির মালিকরা দাবি করছেন, আমরা মোটেও বেশি টাকা নিচ্ছি না। অতিরিক্ত টাকাটা ড্রাইভারকে ঈদ বোনাস হিসেবে দিতে হচ্ছে। কারণ, এরকম কঠিন সময়ে কেউ তো আর জীবনের ঝুঁকি নিতে চায় না। আবার অনেক মালিক ফিরতি পথ খালি আসতে হবে এই অজুহাতও দিচ্ছেন। ওদিকে যাত্রীদের কাছেও এটা নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই। তারা দর কষাকষি করছেন ঠিকই তবে খরচা মোটামুটি মিলে গেলেই রওনা হয়ে যাচ্ছেন বাড়ির পথে। এই চাহিদাটা হুট করেই শুরু হয়েছে শুক্রবার সকাল থেকে। চলবে হয়তো আরও বেশ কয়েক দিন। বিভিন্ন গাড়ির মালিক ও চালকের সঙ্গে কথা বলেই এমন তথ্য জানা গেছে। যদিও সবার মত পুরোপুরি এক রকম নয়।

 গাবতলী বাস স্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়ানো কয়েকটা ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কার।  

মাইক্রোবাস চালক সাইফুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেশ ক’দিন খুব কড়াকড়ি ছিল পুলিশের। আমরা গাড়ি নিয়ে বের হতে পারিনি। তবে শুক্রবার সকাল থেকেই একের পর এক ট্রিপ লেগে আছে। ভাড়া খুব একটা বেশি আদায় করা হচ্ছে না। তবে, ঈদের মৌসুম হওয়াতে হয়তো জায়গা ভেদে ১/২ হাজার টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। আমাদেরও তো একটা জীবন আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার। কিন্তু যাত্রীরা ঠাসাঠাসি করে গাড়িতে উঠে। তাদেরকে তো আর কিছু বলতে পারি না। তারা যা ভালো বোঝেন, তাই করেন। ১০ জন যাওয়ার কথা থাকলেও প্রায় সময় ১১-১২ জন ঠাসাঠাসি করে উঠে পড়ে। যাত্রীরা হিসাব করে তাদের খরচের, আমরা আমাদেরটা। ফলে আমি চালক হিসেবে স্বাস্থ্যবিধি মানলেও তারা গা ঘেঁষে সবাই উঠে পড়ায় একটু বিপদেই আছি। কিন্তু, পেশা তো আর বন্ধ করতে পারি না।’

গাড়ির মালিক জহির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার একটি প্রাইভেটকার ও একটি মাইক্রোবাস রয়েছে। বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল। কিন্তু সরকার বলার পর বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সেটির বুকিং চলছে। লোকজন ঢাকা ছেড়ে বিভিন্ন শহরের যাচ্ছে গাড়ি বোঝাই করে। আমি ড্রাইভারদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পিপিই কিনে দিয়েছি, হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক দিয়েছি। কিন্তু শুনেছি, যাত্রীরাই নাকি গাদাগাদি করে যায়। তবে এমন সময় ভাড়া খুব বেশি নেওয়া হচ্ছে না, অন্যান্য ঈদের মতোই যেমন ভাড়া হয়ে থাকে তেমনি চলছে।

তবে ব্যবসা করার সুযোগ পেলেও এই পরিস্থিতিকে জমজমাট ব্যবসা বলতে নারাজ রেন্ট-এ-কার সার্ভিস দানকারী ব্যবসায়ীরা। ঢাকা শহরে এ ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেছেন, অন্যান্য ঈদে এই সময় দিনে ২০-৩০ টা ট্রিপ থাকতো। আর এখন কপালগুণে হচ্ছে মাত্র ২-৩টা। এটাতো জমজমাট ব্যবসার মধ্যে পড়ে না।

 যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়ানো মাইক্রোবাস।

ঢাকা রেন্ট-এ-কার সার্ভিসের মালিক রাসেল মোল্লা রিপন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘গাড়ির তেমন একটা চাহিদা নাই। সরকার বলেছে প্রাইভেট গাড়ি চলার জন্য, কিন্তু কাস্টমার নাই। অন্যান্য সময় ঈদের আগে ২০ থেকে ৩০টি ট্রিপ হতো দিনে। কিন্তু গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত আমার এখানে হয়েছে মাত্র তিনটি। অন্যদের কাছেও শুনেছি ট্রিপ কম হওয়ার কথা।’

চালক, গাড়ির মালিক ও রেন্ট-এ-কার ব্যবসার মালিকদের ভিন্নমত থাকলেও শনিবার (২৩ মে) ভোর ৫টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত শুধু গাবতলী পয়েন্ট দিয়েই দুই শতাধিক প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসকে রাজধানী ছাড়তে দেখা গেছে।

প্রসঙ্গত: ঢাকাসহ সারাদেশে এখন ব্যক্তিগত গাড়ি আছে সাড়ে তিন লাখ। তবে এসব গাড়ির কতটা ভাড়ায় চলে তার সঠিক হিসেব বিভিন্ন চালক, গাড়ির মালিক ও রেন্ট-এ-কার সার্ভিসের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায়নি। তারা জানিয়েছেন, তাদের ব্যবসায়টি স্বাধীন। গাড়ির মালিকরা নিজ দায়িত্বে গাড়ি পরিচালনা করেন। তাদের কোনও কেন্দ্রীয় মালিক সমিতি নাই। তবে কয়েকজন মালিকের ধারণা, ঢাকা শহরের প্রতিটি জোনে যেমন গুলশান, উত্তরা, ধানমন্ডি প্রভৃতি এলাকায় স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক দেড় থেকে দুই হাজার প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস ভাড়ায় চলে।

 যাত্রীদের সঙ্গে দাম দর করছেন ভাড়ায়চালিত প্রাইভেট কারের চালকরা।

তবে রাজধানী তো বটেই দেশের প্রতিটি উপজেলা শহরেও এখন রেট-এ-কারের দোকান অহরহই দেখা যায়। আর রাজধানীর ব্যস্ত মার্কেট থেকে সব পাড়া মহল্লাতেই রেন্ট-এ-কার সার্ভিসের দোকান চোখে পড়ে। এছাড়াও রাজধানীতে রাইড শেয়ারিং অ্যাপস উবার, পাঠাও প্রভৃতি চালু হওয়ার পর প্রতিদিন অন কলে ঢাকার রাস্তায় চলতো কয়েক লাখ ব্যক্তিগত গাড়ি। তবে এসব সেবায় রাজধানীর বাইরে খুব বেশি এলাকায় কাভারেজ না থাকায় দূরের পথে বা একসঙ্গে পরিবারের অনেকে কোথাও গেলে গণ পরিবহনের পাশাপাশি রেন্ট-এ-কারের দোকানগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা ছিল সাধারণ মানুষের। ফলে পুলিশের এই ঘোষণায় রেন্ট-এ-কার সার্ভিসের লোকজনের সঙ্গে যারা রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি চালাতেন চালক উপস্থিত থাকলে তাদেরও অনেকেই ঈদের এই সময়টাতে বিভিন্ন জেলায় নিজের গাড়ি যাত্রী পরিবহনের জন্য উন্মুক্ত করেছেন। তবে এদের সংখ্যা কেমন হতে পারে তার কোনও সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম ও হাসনাত নাঈম

/এইচএন/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তিন শিক্ষা বোর্ডের আজকের পরীক্ষা বন্ধ
তিন শিক্ষা বোর্ডের আজকের পরীক্ষা বন্ধ
এক মোবাইল ফোন তুলতে গিয়ে একে একে চার জনের মৃত্যু
এক মোবাইল ফোন তুলতে গিয়ে একে একে চার জনের মৃত্যু
রইলো বাকি টি-টোয়েন্টি, শোধ নিতে পারবে বাংলাদেশ?
রইলো বাকি টি-টোয়েন্টি, শোধ নিতে পারবে বাংলাদেশ?
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ১১তম দিনের বৈঠক চলছে
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ১১তম দিনের বৈঠক চলছে
সর্বাধিক পঠিত
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ সরকারি চাকরিজীবীকে ওএসডি
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ সরকারি চাকরিজীবীকে ওএসডি
বেশির ভাগ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে ফিকশন পাওয়া যায়: গভর্নর
বেশির ভাগ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে ফিকশন পাওয়া যায়: গভর্নর
বগুড়ায় ঘরে ঢুকে শ্বশুর ও গৃহবধূকে হত্যা, ধর্ষণের অভিযোগ
বগুড়ায় ঘরে ঢুকে শ্বশুর ও গৃহবধূকে হত্যা, ধর্ষণের অভিযোগ
কল রেকর্ড বিবিসি উদ্ধার করেনি, করেছে তদন্তকারী কর্মকর্তা: তাজুল
কল রেকর্ড বিবিসি উদ্ধার করেনি, করেছে তদন্তকারী কর্মকর্তা: তাজুল
প্রশ্ন উঠছে এটা বন্যা নাকি খেসারত
প্রশ্ন উঠছে এটা বন্যা নাকি খেসারত